আগামী ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দিনক্ষণ এখনো ঠিক হয়নি। সরকার বলছে, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে এই নির্বাচন হবে। এই সময়টিকেই মনোনয়নপ্রত্যাশীরা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের হাতিয়ার হিসেবে দেখছেন। আগামী নির্বাচনে সংসদ সদস্য হতে যে জনসমর্থন ও দলের অনুকম্পার দরকার, তা এই সময়ের মধ্যে পূরণ করতে তোড়জোড় শুরু করেছেন রাজশাহী জেলার ছয়টি আসনের অর্ধশতাধিক প্রার্থী।
বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের দুঃশাসনে যাঁরা এলাকায় ঠিকমতো থাকতেও পারেননি বা রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যসহ নানা পেশায় মনোযোগ দিয়েছিলেন, তাঁরাও নেমেছেন মনোনয়ন দৌড়ে। তাঁদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মাঠে নেমেছেন বরাবরের মতোই তৃণমূলের ত্যাগী অনেক নেতাও। ফলে আগাম নির্বাচনী আমেজ দিয়েই ঈদ পার হয়েছে রাজশাহীর ছয়টি আসনে। ঈদ ঘিরে অনেকটা সরব হয়ে ওঠেন মনোনয়নপ্রত্যাশীরা।
আগামী সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজশাহীর বাতাসে এখন পর্যন্ত অর্ধশতাধিক নেতার নাম শোনা যাচ্ছে, যাঁদের কেউ কেউ এরই মধ্যে গত ঈদকে কেন্দ্র করে এলাকায় শুভেচ্ছা পোস্টার, ফেস্টুন ও ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা চালানোর চেষ্টা করেছেন। কেউ এলাকায় গিয়ে করেছেন ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে প্রচারণা। আবার কেউ ঈদসামগ্রীও বিতরণ করেছেন। দলীয় সভা-সমাবেশেও কেউ কেউ নিজেকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দিয়ে প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন।
আবার নিজ উদ্যোগেও এলাকায় নানা আয়োজন করছেন কেউ কেউ। নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে গিয়ে কোথাও কোথাও বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।
রাজশাহী-১ (তানোর-গোদাগাড়ী) : দলীয় সূত্র মতে, এই আসনে বিএনপি-জামায়াতের মোট সাতজন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল শরিফ উদ্দিনও।
বিএনপির বাইরে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে তৎপরতা শুরু করেছেন দলের নায়েবে আমির অধ্যাপক মজিবুর রহমান।
বিএনপি নেতা সুলতানুল ইসলাম তারেক বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে এলাকার মানুষের সঙ্গে আছি। যখন সবাই পালিয়েছিল, তখন আমি এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে কাজ করেছি। আমি দলীয় মনোনয়নের জন্য এখনো কাজ করে যাচ্ছি।’
রাজশাহী-২ (সদর) : বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টির মোট পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে রয়েছেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা, সাবেক এমপি এবং সাবেক সিটি মেয়র মিজানুর রহমান মিনু ও বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবীর রিজভী।
রাজশাহী সিটি করপোরেশনের আরেক সাবেক মেয়র এবং মহানগর বিএনপির সাবেক সভাপতি মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, ‘দেশের রাজনীতির পটপরিবর্তন হয়েছে। এখন কেন্দ্র যেভাবে সিদ্ধান্ত দেবে, আমাদের সেভাবেই এগিয়ে যেতে হবে। আমরা সেভাবেই কাজ করছি।’
রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) : বিএনপি, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি মিলে মোট ১০ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। এর মধ্যে বিএনপিরই হলেন আটজন।
পবার নওহাটা পৌরসভা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম রফিক বলেন, ‘অনেক প্রার্থীরই এখন নাম শোনা যাচ্ছে। যাঁরা এলাকায় কখনোই আসেননি, তাঁদেরও নাম শোনা যাচ্ছে। এখন দেখা যাক, দল কাকে মনোনয়ন দেয়।’
রাজশাহী-৪ (বাগমারা) : বিএনপি-জামায়াত মিলে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চসংখ্যক ১৩ জন প্রার্থীর নাম শোনা যাচ্ছে। বিএনপির ১২ জনের মধ্যে অন্তত পাঁচজন এবং জামায়াতের ঘোষিত এক প্রার্থী মাঠে প্রচারণা চালাচ্ছেন।
রাজশাহী-৫ (পুঠিয়া-দুর্গাপুর) : এ আসনে মনোনয়ন পেতে এরই মধ্যে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন বিএনপি-জামায়াতের ১০ জন প্রার্থী।
বিএনপি নেতা আব্দুস সাত্তার বলেন, ‘শহীদ জিয়ার আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে ছাত্রাবস্থায় বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। আমি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে কাজ করছি।’
রাজশাহী-৬ (বাঘা-চারঘাট) : এ আসনে বিএনপি, জামায়াত ও ইসলামী আন্দোলন মিলে এখন পর্যন্ত ৯ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী নানাভাবে তৎপরতা শুরু করেছেন। সম্ভাব্য প্রার্থীরা হলেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সাঈদ চাঁদ, জেলা বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, রাজশাহী জেলা বিএনপির সাবেক সহসভাপতি বজলুর রহমান, বাঘা উপজেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি নুরুজ্জামান মানিক, রাজশাহী জেলা যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক আনোয়ার হোসেন উজ্জ্বল ও রাজশাহী জেলা যুবদলের আহ্বায়ক মাসুদুর রাহাস সজনও বিএনপির দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশায় মাঠে নেমেছেন।
অন্যদিকে এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর ঘোষিত প্রার্থী হিসেবে মাঠে নেমেছেন জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ নাজমুল হক। ইসলামী আন্দোলনের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মো. সুরুজ্জামান ও জেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি শামসুদ্দিন রিন্টু নির্বাচনী এলাকার দুই উপজেলায় বিভিন্ন দলীয় ও সাংগঠনিক কর্মসূচিতে অংশ নিচ্ছেন।
এই প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেছেন দুর্গাপুর প্রতিনিধি গোলাম রসুল, তানোর প্রতিনিধি টিপু সুলতান ও বাঘা প্রতিনিধি লালন উদ্দিন।