প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পরিবেশ সংস্কার কমিশন গঠনসহ ৯ দফা সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) ও বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র (ক্যাপস)। মঙ্গলবার (২২ এপ্রিল) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে ‘বিশ্ব ধরিত্রী দিবস ২০২৫ : বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণে করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই সুপারিশ বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানানো হয়েছে।
বাপা’র সভাপতি অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবিরের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বায়ুমন্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্রের (ক্যাপস) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার।
আরো পড়ুন
কাতারে ড. ইউনূসের সঙ্গে দেখা হলো হলিউড অভিনেতার
এ সময় উপস্থিত ছিলেন স্ট্যামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এমেরিটাস অধ্যাপক ড. এম. ফিরোজ আহমেদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. এম. শহীদুল ইসলাম, বাপা সহ-সভাপতি মহিদুল হক খান, যুগ্ম সম্পাদক হুমায়ুন কবির সুমন, নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. হালিম দাদ খান ও জাভেদ জাহান, জাতীয় কমিটির সদস্য নাজিম উদ্দিন, হাজী শেখ আনছার আলী, শাকিল কবির, তরিকুল ইসলাম রাতুল, মোনছেফা তৃপ্তি ও ফাহমিদা নাজনিন, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবি রাশেদুজ্জামান মজুমদার প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত সুপারিশে আরো বলা হয়, বায়ুদূষণকারী মেয়াদউত্তীর্ণ ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন বন্ধ করে বৈদ্যুতিক ও হাইব্রিড যানবাহনের ব্যবহার বাড়াতে হবে। বায়ু দূষণকারী পোড়ানো ইটের বিকল্প ব্লক ইটের উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। বর্জ্য পোড়ানো বন্ধ করে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন, যানবাহন, শিল্প কারখানা, গৃহস্থালি কাজসহ সকল স্তরে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার ক্রমান্বয়ে শূন্যের কোঠায় আনতে হবে।
বিদ্যমান জ্বালানি নীতিগুলোতে সংশোধন ও নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন করতে হবে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্প কারখানায় বিশ্বমানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং এর কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। সৌর, বায়ু এবং জলবিদ্যুৎ ও বায়োগ্যাস প্রকল্পে বিনিয়োগ বৃদ্ধি, গবেষণা ও উন্নয়নের উপর জোর দিতে হবে। গৃহঅভ্যন্তরীণ বায়ুদূষণ কমাতে গ্রামীণ পর্যায়ে জীবাশ্ম জ্বলানির পরিবর্তে সবুজ জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে।
আরো পড়ুন
শেখ হাসিনা ও টিউলিপকে দেশে ফেরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে : দুদক কমিশনার
মূল প্রবন্ধে ড. আহমদ কামরুজ্জমান মজুমদার বলেন, ঢাকায় গত ৯ বছরের ৩ হাজার ১১৪ দিনের মধ্যে ঢাকার মানুষ মাত্র ৩১ দিন নির্মল বা ভালো বায়ুতে নিঃশ্বাস নিতে পেরেছে। ২০২৪ সালের সবচেয়ে ভাল ও সবচেয়ে খারাপ বায়ুমানের দিনসংখ্যা হল যথাক্রমে ২ ও ৩৫ দিন। বিশ্ব ব্যাংকের ২০২২ সালের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২১ সালে বাংলাদেশে বায়ু দূষণের কারণে কমপক্ষে ২ লক্ষ ৩৬ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। সেন্টার ফর রিসার্চ অন এনার্জি অ্যান্ড ক্লিন এয়ার (সিআরইএ)-এর গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, বায়ু দূষণের কারণে প্রতিবছর ৫ হাজার ২৫৮ শিশুসহ এক লাখ ২ হাজার ৪৫৬ জন মানুষের অকালমৃত্যু ঘটে। বিশেষ করে, বায়ু ও সীসা দূষণসহ বিভিন্ন দূষণ পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুদের মস্তিষ্কের বিকাশে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।
যা শিশুদের আইকিউ হ্রাসের দিকে নিয়ে যাচ্ছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক নুর মোহাম্মদ তালুকদার বলেন, বায়ুদূষণ ও শব্দ দূষণের মাত্রা এতো বেশী মাত্রায় দাঁড়িয়েছে যে ঢাকা শহরে এখন বসবাস করার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। দিন দিন এই দূষণের তীব্রতা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এখনই এই দূষণ বন্ধ করতে না পারলে ভয়াবহ পরিণতি নেমে আসবে। তিনি আরো বলেন, বায়ু দূষণের শিকার সবচেয়ে বেশি শিশু ও বৃদ্ধ। ফলে বৃদ্ধ ও শিশুদের শ্বাসতন্ত্র জনিত সমস্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আসুন আমরা আমাদের ভবিষ্যত প্রজম্মের শিশুদের কথা চিন্তা করে দূষণ বন্ধ করি।
বাপা সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির বলেন, পরিবেশ দূষণ বন্ধে ফিটনেস বিহীন গাড়ী ও ইটভাটাগুলোকে প্রয়োজনে ভর্তুকী দিয়ে হলেও পরিবেশসম্মত গাড়িক্রয় ও পরিবেশ সম্মত উন্নত প্রযুক্তির ইটের ব্যবস্থা করা জরুরি। দেশের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় পরিবেশ সংস্কার কমিশন গঠন করার দাবি জানান তিনি।