সামাজিক মাধ্যমের দিকে চোখ রাখলেই এখন দেখা যায়, তেল ছাড়া মাছ, মাংস, তরকারি রান্না করার কৌশল। পরোটা হোক বা সবজি, কীভাবে তেল ছাড়া সুস্বাদু খাবার রান্না করা যায়, তা নিয়ে বর্তমানে অনেক আলোচনা হচ্ছে। অনেকের মতে, সুস্থ থাকতে গেলে জীবন থেকে তেল বাদ দেওয়া উচিত। এমনকি ওজন কমানোর সময় অনেকে ভোজ্য তেল ও চিনি এড়িয়ে চলেন।
তাই স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে অনেকেই নিয়মিত রান্নায় তেল বাদ দিচ্ছেন অথবা খুব সামান্য তেল ব্যবহার করছেন।
কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, তেল ছাড়া টানা দুই সপ্তাহ খাবার খেলে সত্যিই কি ওজন কমবে এবং তার উপকারিতা হবে? পুষ্টিবিদদের মতে, তেল নিয়ে সব ধারণা সঠিক নয়। তেল একেবারে বাদ দিলে শরীরের জন্য তা ক্ষতিকর হতে পারে। ভোজ্য তেল পুরোপুরি বাদ দিলে এবং ফ্যাট জাতীয় খাবার কম খেলে হজম ও বিপাকের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
একজন সুস্থ প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের দিনে ৩০ মিলিলিটার বা ৫-৬ চা চামচ তেল প্রয়োজন। অপরদিকে নারীদের জন্য এই পরিমাণ ১৫ মিলিলিটার বা ৩ চা চামচ হতে পারে। তেল না থাকলে নানা শারীরিক সমস্যা হতে পারে।’
তেল শরীরে কী প্রভাব ফেলে?
তেলে থাকা ফ্যাট ভিটামিন এ,ডি,ই,কে শোষণে সাহায্য করে।
ফ্যাটে দ্রবীভূত ভিটামিনগুলোর উপকারিতা পেতে হলে স্বাস্থ্যকর ফ্যাট খাওয়া জরুরি। যদি শরীরে একেবারে তেল না থাকে তবে বদহজম, পেটফাঁপা ইত্যাদি সমস্যা দেখা দিতে পারে। তেল বাদ দিলে ক্যালোরি কমে যায়, ফলে ওজন কমানোর জন্য এটি কার্যকর হলেও ক্ষুধা ও হরমোনের ভারসাম্যে প্রভাব পড়তে পারে। যদি প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরে না পৌঁছায় তবে ভিটামিন সি এর শোষণ কম হবে এবং রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। এ ছাড়া ভিটামিন ডি এর অভাবে হাড়ের স্বাস্থ্যও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
আর কী প্রভাব পড়বে শরীরে?
ত্বকের সজীবতা এবং লালিত্য ফ্যাট থেকেই আসে। তেল ফ্যাটি অ্যাসিড সরবরাহ করে। যদি শরীর প্রয়োজনীয় ফ্যাট না পায়, তবে ত্বক শুষ্ক হয়ে যেতে পারে এবং চুলের ঔজ্জল্য কমে যাবে।
শরীরের শক্তি উৎপাদনেও ফ্যাটের ভূমিকা রয়েছে। তেল পুরোপুরি বাদ দিলে মানুষের কাজের ক্ষমতা কমে যেতে পারে। ফ্যাটি অ্যাসিডের অভাব হলে নিউরোট্রান্সমিটারেও তার প্রভাব পড়তে পারে।
পুষ্টিবিদদের মতে, তেল ছাড়াও শরীরকে ফ্যাটি অ্যাসিডের জোগান দেওয়া সম্ভব। কেউ যদি কাঠবাদাম, আখরোট, মুরগির মাংস বা ডিম খাবারে রাখেন, তবে শরীর প্রয়োজনীয় ফ্যাট পেয়ে যাবে। বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বীজ ও সামুদ্রিক মাছে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড পাওয়া যায়। যা শরীরের জন্য উপকারী। তবে রান্নায় ভোজ্য তেল ব্যবহার করা সবচেয়ে ভালো। যেমন সরিষার তেল, সূর্যমুখী তেল, অলিভ অয়েল, সয়াবিন তেল, রাইসব্র্যান তেল এগুলো ব্যবহার করা যেতে পারে।
সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা