মা হওয়ার অনুভূতি নারীদের জীবনকে সম্পূর্ণরূপে বদলে দেয়। এই সময়টি একজন নতুন মায়ের জন্য আনন্দপূর্ণ। তবে এর সঙ্গে অনেক চ্যালেঞ্জও জড়িত থাকে। সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে একটি হলো শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণে স্তন্যপান করানো।
মাতৃদুগ্ধ খাওয়ানো কেবল শিশুর পুষ্টির সর্বোত্তম উৎসই নয়, এটি মা ও শিশুর মধ্যে একটি বিশেষ মানসিক সংযোগও তৈরি করে।
তবে অনেক সময় নতুন মায়েদের মাতৃদুগ্ধের অভাবের সমস্যার মুখোমুখি হতে হয়। এমন পরিস্থিতিতে সঠিক খাদ্য গ্রহণ মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ ও গুণমান উভয়ই বৃদ্ধিতে সহায়ক। জেনে নিন, কোন কোন খাবার মাতৃদুগ্ধের পরিমাণকে ঠিক রাখে।
ওটস
ওটস একটি পুষ্টিকর ও ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার, যা মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধিতে সহায়ক বলে মনে করা হয়। এতে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ভিটামিন বি এর মতো পুষ্টি উপাদান রয়েছে, যা একজন নতুন মায়ের শরীরে শক্তি সরবরাহ করে এবং দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করে। ওটসে উপস্থিত বিটা-গ্লুকান উপাদান প্রোল্যাকটিন হরমোনকে সক্রিয় করে, যা মাতৃদুগ্ধ উৎপাদনে সহায়ক। নতুন মায়েরা তাদের খাদ্যতালিকায় ওটস, খিচুড়ি বা স্মুদির আকারে অন্তর্ভুক্ত করতে পারেন।
আরো পড়ুন
পেট খারাপ হলে কী করবেন, কী করবেন না
মেথি বীজ
মাতৃদুগ্ধ বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক প্রতিকার হিসেবে মেথি বীজ শতাব্দী ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। এই বীজগুলোতে ফাইটোয়েস্ট্রোজেন ও ডায়োসজেনিনের মতো যৌগ থাকে, যা দুধ উৎপাদন বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। মেথি বীজ পানিতে ভিজিয়ে চা তৈরি করে অথবা খাবারে মশলা হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে এটি সীমিত পরিমাণে খাওয়া উচিত, কারণ অতিরিক্ত খেলে পেটে গ্যাস বা অন্যান্য সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
তিল
তিলের বীজে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম, আয়রন ও স্বাস্থ্যকর চর্বি থাকে, যা একজন নতুন মায়ের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
এই বীজগুলো মাতৃদুগ্ধের মান উন্নত করতে সাহায্য করে এবং শিশুর বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে। তিলের বীজ লাড্ডু, চিক্কি বা সালাদে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া তিলের তেল স্বাস্থ্যের জন্যও উপকারী।
সবুজ শাক-সবজি
পালং শাক, মেথি, সরিষার শাক ও ব্রকলির মতো সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন, ক্যালসিয়াম, ফোলেট ও ভিটামিন এ থাকে। এই সবজিগুলো নতুন মায়ের শরীরে পুষ্টি সরবরাহ করে এবং বুকের দুধের পরিমাণ বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। এগুলোতে উপস্থিত ফাইটোয়েস্ট্রোজেন দুধ উৎপাদনকে উদ্দীপিত করে। সবুজ শাক-সবজি স্যুপ, সবজি বা পরোটা আকারে খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে।
আরো পড়ুন
সবজি কাটার চপিং বোর্ডও হতে পারে বিপদের কারণ
বাদাম ও ড্রাই ফ্রুট
বাদাম, কাজু, আখরোট ও খেজুরের মতো ড্রাই ফ্রুট একজন নতুন মায়ের জন্য একটি দুর্দান্ত খাবার হতে পারে। এই বাদামগুলো স্বাস্থ্যকর চর্বি, প্রোটিন, ভিটামিন ও খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ, যা বুকের দুধের গুণমান উন্নত করে। বাদামে উপস্থিত ওমেগা-৩ ফ্যাটি এসিড শিশুর মস্তিষ্কের বিকাশের জন্যও উপকারী। এগুলো সরাসরি খাওয়া যেতে পারে অথবা দুধে মিশিয়েও খাওয়া যেতে পারে। রাতভর পানিতে খেজুর ভিজিয়ে রেখে সকালে খেলেও উপকার পাওয়া যেতে পারে।
রসুন
রসুন কেবল খাবারের স্বাদই বাড়ায় না, বরং এটি মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতেও সহায়ক। রসুনে উপস্থিত গ্যালাকট্যাগ নামক উপাদান দুধ উৎপাদনে সহায়তা করে। এ ছাড়া রসুনে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে, যা নতুন মায়ের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা শক্তিশালী করে। রসুন সবজি, স্যুপ বা ডালে মিশিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
আরো পড়ুন
ঘুরতে গিয়ে খরচ কমাবেন যেভাবে
এই প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্যগুলো শুধু ধারণা আর সাধারণ জ্ঞানের জন্যই লেখা হয়েছে। এগুলো অনুসরণের আগে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। যদি আগে থেকেই কোনো স্বাস্থ্য সমস্যা থেকে থাকে, তা আগেই চিকিৎসককে জানাতে হবে।
সূত্র : ইটিভি