পড়ার টেবিল সাজানো, বই খোলা, কিন্তু মন সেখানে নেই। মোবাইল ফোনে একবার ‘নোটিফিকেশন’ এলেই চোখ চলে যায় স্ক্রিনে। এরপর সময় কোথায় হারিয়ে যায়, বোঝাই যায় না। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম, গেম, ভিডিও কিংবা মেসেজিং—ফোন যেন এক নেশায় পরিণত হয়েছে অনেকের জন্য।
বিশেষ করে শিক্ষার্থীদের জন্য এটি পড়াশোনায় বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
কেন হয় এই আসক্তি?
স্মার্টফোন ব্যবহারের পেছনে কয়েকটি সাধারণ কারণ রয়েছে, যা ধীরে ধীরে এটি আসক্তিতে পরিণত করে।
ডোপামিন রিওয়ার্ড সিস্টেম : ফেসবুক, টিকটক বা ইউটিউবে স্ক্রল করলে মস্তিষ্কে ডোপামিন হরমোন নিঃসরণ হয়, যা আনন্দ দেয়। ফলে মানুষ বারবার ফোন ব্যবহার করতে চায়।
পড়াশোনার প্রতি অনীহা : কঠিন পড়াশোনার তুলনায় বিনোদনমূলক কনটেন্ট সহজেই আকর্ষণ করে।
ফোকাসের অভাব : দীর্ঘসময় ফোন ব্যবহারের ফলে মনোযোগের স্থায়িত্ব কমে যায়, ফলে বইয়ে মন বসানো কঠিন হয়ে পড়ে।
সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব : কেউ অনলাইনে সক্রিয় থাকলে তাকে ‘মিস’ করতে ইচ্ছা হয়, যার ফলে ফোন হাতছাড়া করা কঠিন হয়ে যায়।
কীভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন?
স্মার্টফোনের প্রতি অতিরিক্ত আকর্ষণ কমাতে কিছু সহজ উপায় অনুসরণ করা যেতে পারে।
স্টাডি প্ল্যান তৈরি করুন : নির্দিষ্ট সময়ে ফোন রেখে শুধু পড়াশোনায় মনোযোগ দিন। ২৫-৩০ মিনিট পড়ার পর ৫ মিনিটের ব্রেক নিতে পারেন।
ফোন দূরে রাখার অভ্যাস করুন : পড়ার সময় ফোন সাইলেন্ট বা অ্যারোপ্লেন মোডে রেখে দূরে রাখুন।
সোশ্যাল মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করুন : ফোনের ‘স্ক্রিন টাইম’ অপশন ব্যবহার করে নির্দিষ্ট অ্যাপের জন্য সময় বেঁধে দিন।
সঠিক বিনোদন বেছে নিন : পড়াশোনার ফাঁকে বই পড়া, হালকা ব্যায়াম বা পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
স্মার্টফোন ডিটক্স করুন : সপ্তাহে অন্তত একদিন নির্দিষ্ট সময়ের জন্য ফোন ব্যবহার একেবারে বন্ধ রাখার চেষ্টা করুন।
এটি শুধু শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় নয়, বরং সামগ্রিক মনোযোগ ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।প্রযুক্তির এই যুগে স্মার্টফোন ছাড়া জীবন কল্পনা করা কঠিন। তবে এটি যাতে আমাদের নিয়ন্ত্রণ না করে, বরং আমরাই এর সঠিক ব্যবহার করতে পারি, সেটি নিশ্চিত করাই সবচেয়ে জরুরি।