হাজারটা সমস্যার সমাধান রয়েছে রসুনে। শুধু রান্নার স্বাদ বাড়ায় না, সংক্রমণজাতীয় রোগ ও ওজন কমানো থেকে সব কিছুরই সমাধান করে রসুন। রসুন হজমশক্তি উন্নত করে, বিপাক হার বাড়ায়। কোলেস্টেরল, ব্লাড সুগারেরও মোক্ষম দাওয়াই এই রসুন।
রসুন একটি শক্তিশালী অ্যান্টিবায়োটিক। সকালের নাশতায় রসুন খেলে ঠাণ্ডা লাগার সমস্যা কমে অনেকটাই। রসুনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট রক্তকে পরিশুদ্ধ করে। কিছু ভাইরাস ও সংক্রমণজনিত অসুখ, যেমন নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস, হাঁপানি, হুপিং কাফ প্রতিরোধ করে রসুন।
যক্ষ্মায় আক্রান্ত রোগীর ওষুধে সারা দিনে কয়েক কোয়া রসুন খাওয়ার পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে এত উপকার পেতে হলে কাঁচা রসুন খেতে হবে বিশেষ উপায়ে। কিভাবে রসুন খেলে উপকার পাবেন, চলুন জেনে নেওয়া যাক।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, রক্তে খারাপ কোলেস্টেরলের নিয়ন্ত্রণে রাখতে প্রতিদিন অন্তত একটি করে রসুনের কোয়া খাওয়া প্রয়োজন।
নিয়মিত রসুন খেলে মোট কোলেস্টেরল ও খারাপ কোলেস্টেরল এলডিএলের প্রায় ১০–১৫ শতাংশ কমে যায়।
রসুনের মধ্যে এলিসিন নামক যে উপাদান রয়েছে সেটিই রক্তে খারাপ কোলেস্টেরল, ট্রাইগ্লিসারাইডের সমতা বজায় রাখতে সাহায্য করে। রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকলে আচমকা স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাক হওয়ার ঝুঁকিও কমে।
রসুন ওজন কমাতে এক্সপার্ট। বিশেষ করে পেটের মেদ।
কাঁচা রসুনের মধ্যে থাকা সালফার শরীর থেকে টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে, খাবার হজম করায়, বিপাক হার উন্নত হয়। ফলে শরীরের ভেজাল মেটাবলিক রেট বাড়ে ও ওজন কমে ঝটপট।
আরো পড়ুন
ওয়াই-ফাইয়ের তরঙ্গ কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর?
রসুন রক্তে শর্করার পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ করে, ফলে ব্লাড সুগার রোগীদের জন্য রসুন খুব উপকারী। রসুন শরীর থেকে টক্সিন দূর করে। আমাদের শরীরে প্রচুর ফ্রি-র্যাডিক্যালস তৈরি হয়, যা হার্ট ও অন্যান্য অঙ্গের জন্য ক্ষতিকর। রসুনের অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট প্রপার্টি সেই ক্ষতির হাত থেকে শরীরকে বাঁচায়।
একাধিক গবেষণায় দেখা গেছে, রসুন হাই ব্লাড প্রেশার কমায়। রসুনের রস হার্টের জন্যও খুব উপকারী। ইউনিভার্সিটি অব কানেটিকাটের স্কুল অব মেডিসিনের কার্ডিওভাসকুলার রিসার্চ টিমের বিজ্ঞানীদের দাবি, কাঁচা রসুন খেলে হার্ট অনেক বেশি সুস্থ থাকে।
রসুন যকৃত ও মূত্রাশয়কে ভালো রাখে। রসুন পেটের নানা গোলমাল, হজমের সমস্যা, ডায়ারিয়া সারায়, ফলে যকৃত থাকে সুস্থ। পাশাপাশি, রসুন স্নায়বিক চাপ কমিয়ে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখে।
আরো পড়ুন
নিত্যদিনের যেসব অভ্যাসে হতে পারে ক্যান্সার
কতটা রসুন খাবেন
পূর্ণবয়স্কদের ক্ষেত্রে ২-৩টি রসুনের কোয়া খেতে বলছেন পুষ্টিবিদরা। প্রতিদিন সকালে এক কোয়া রসুন কাঁচা চিবিয়ে খেলে সবচেয়ে বেশি উপকার মেলে। তবে, একান্তই সকালে খেতে না পারলে কোনো ক্ষতি নেই। বিকেল-দুপুর বা রাতে খেতে পারেন। তবে খেতে হবে কাঁচা।
কিভাবে রসুন খেলে উপকার পাবেন
সকালে খালি পেটে কাঁচা রসুনের সঙ্গে ঈষদুষ্ণ পানি মিশিয়ে খান। কিংবা, রসুনের সঙ্গে লেবুর রস মিশিয়ে খান। রসুনের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলেও ওজন কমে ঝটপট। সামান্য একটু লবণ দিয়ে রসুন খেলেও পেটের মেদ ঝরে দ্রুত।
আয়ুর্বেদ শাস্ত্র মতে, সবচেয়ে ভালো ফল পেতে গেলে সাপ্লিমেন্ট না খেয়ে খেতে হবে কাঁচা রসুন। কাঁচা রসুনের যত উপকার, রান্না করার পর আর তত থাকে না। কাঁচা রসুনে থাকে এলিসিন, যা ওষুধের মতো কাজ করে।
আরো পড়ুন
আলু-পেঁয়াজ একসঙ্গে রাখলে কী ক্ষতি
রসুন কাটা বা বাটার পর সঙ্গে সঙ্গে খেয়ে না নিলে এলিসিন আস্তে আস্তে উবে যায়। সে জন্যই রসুন শুকিয়ে বা রান্নায় দিয়ে খেলে উপকার কমে যায়। প্যাকেটের রসুন বাটা বা সাপ্লিমেন্টেও এই উপকার থাকে না। তা ছাড়া অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টের মাত্রাও বেশি থাকে কাঁচা রসুনে।
সকালে খালি পেটে এক কোয়া কাঁচা রসুন খেতে পারলে ভালো হয়। না হলে গরম ভাতে অল্প কাঁচা রসুন বাটা মিশিয়েও খেতে পারেন। অনেকে কাচের শিশিতে মধু ভরে তার মধ্যে কাঁচা রসুনের কোয়া দিয়ে মজিয়ে রাখেন। সঠিক পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করতে পারলে তা সপ্তাহ দুয়েক পর্যন্ত ভালো থাকে। মধু আর রসুনের মিশ্রণ রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, হার্ট ভালো রাখে।
আরো পড়ুন
ইনস্টাগ্রামে ফলোয়ার বাড়ানোর কৌশল
সূত্র : নিউজ ১৮