ঢাকা, বুধবার ০৯ এপ্রিল ২০২৫
২৫ চৈত্র ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ০৯ এপ্রিল ২০২৫
২৫ চৈত্র ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৬
সাদাকালো

এত বিষবৃক্ষ বাড়ে কিভাবে

আহমদ রফিক
আহমদ রফিক
শেয়ার
এত বিষবৃক্ষ বাড়ে কিভাবে

বাংলাদেশের সমাজ যে নীতিনৈতিকতা ও সুস্থ মূল্যবোধের বিচারে কী অবস্থায় পৌঁছেছে, গত কয়েক বছরের আমলনামা থেকে তা স্পষ্ট। গণমাধ্যম, বিশেষত সংবাদমাধ্যমের কল্যাণে সামাজিক অবক্ষয়ের চিত্রচরিত্রের সঙ্গে আমরা পরিচিত হতে পারছি। চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, প্রতারণা, জালিয়াতি থেকে শুরু করে কি না ঘটছে সমাজে।

কিছুদিন থেকে এর বাড়বাড়ন্ত রাজকীয় কায়দায় রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হয়ে।

বাস্তবিকই ‘সম্রাট’ নামক যুবনেতা যখন অফিসে তখন নিচে সশস্ত্র অশ্বারোহীর বদলে শখানেক সশস্ত্র মোটরসাইকেল আরোহী তার নিরাপত্তায় নিয়োজিত। দৈনিক পত্রিকাগুলোর সরস বয়ানপাঠে কেউ অবাক হয় না। যেন এমনটাই স্বাভাবিক।

এমন একাধিক ঘটনা রাজধানীতে এতটাই আলোচ্য বিষয় হয়ে উঠেছিল যে তা দলকে, সরকারকে বিব্রত করে।

স্বভাবতই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে দুর্নীতিবিরোধী অভিযান—সম্রাট ও তার সমসারির নেতাদের পতন; বিশ্রাম কারাগারে। এরই মধ্যে প্রকাশ পেল পুঁজিবাদী অপসংস্কৃতির প্রতীক ক্যাসিনোকাণ্ড পুলিশের প্রশ্রয়ে, নেপথ্য নায়কদের শক্তির জোরে।

কারো কারো বিশ্লেষণ, উন্নয়নের ধারায় বাংলাদেশ পুঁজিবাদী অর্থনীতি ও অপসংস্কৃতির ধারায় হাঁটতে শুরু করেছে। সমাজের একটি অংশ সেই চরিত্রে বলীয়ান ও গরিমামণ্ডিত।

তারই প্রকাশ পুঁজিবাদী বিশ্বের পাঁচতারা সংস্কৃতিতে, যেখানে মদ-মাদক-জুয়া-ক্যাসিনোসহ যৌন অনাচারের প্রকাশ, যা চুইয়ে পড়তে শুরু করেছে বাংলাদেশি সমাজের একাংশে।

সেই সঙ্গে অর্থবিত্ত লোভ-লালসার টানে নানা অনৈতিকতা ও দুর্নীতির প্রসার, ক্ষমতাবলয়ের প্রশ্রয়ে। নর-নারী-নির্বিশেষে বিশেষ বিশেষ দুর্নীতিকাণ্ডের উত্থান এক দিনে নয়, বেশ সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে, নিজস্ব মেধা ও চাতুর্যে এবং রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রশ্রয়ে। অখ্যাত নরসিংদীতে পাপিয়া উত্থান যখন খ্যাতির মগডালে উঠতে চাইছে চরম অনৈতিকতা ও দুর্নীতিতে ভর করে, তখন তার বিস্ফোরক প্রকাশ সংবাদমাধ্যমে সবার বিস্ময় উৎপাদন করে। সংগত কারণে আপাত-পতন।

তেমনি কুয়েতে সংসদ সদস্য পাপুলের গ্রেপ্তারে বিব্রত সরকার, বিব্রত সংসদ সদস্যরা, সমালোচনা সংসদে। কারণ অভিযোগ গুরুতর, মানবপাচার-মুদ্রাপাচার। এর আগে আমরা পাচারের বহুবিচিত্র ঘটনা নিয়ে লিখেছি, লিখতে গিয়ে অবাক হয়েছি ভেবে যে এতসব ভয়ংকর পাচার ঘটনা দিনের পর দিন ঘটছে কিভাবে? কোথায় আমাদের দক্ষ অনুসন্ধানী গোয়েন্দা বিভাগ?

ঘটনাগুলোর বিশদ বিবরণে গেলে সে এক অনৈতিক ইতিহাস হয়ে দাঁড়াবে, যা নিয়ে বহু প্রশ্ন উঠতে পারে। যেসব প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিত বিচার করতে গেলে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি নিয়ে একটি দৈনিকে প্রকাশিত সংবাদ শিরোনামের সঙ্গে একমত না হয়ে পারা যাবে না।

পাপিয়ার অনৈতিক পাঁচতারাকাণ্ডের এক খবরে প্রকাশ, সেখানে রমণীয় জলসায় এক ডজন রুশ তরুণীও নাকি আমদানি করা হয়েছিল। তাই নিয়ে বর্তমান রুশ পুঁজিবাদী সংস্কৃতিকে ভালো রকম ধোলাই দিয়েছেন অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী তাঁর ‘নতুন দিগন্ত’ পত্রিকার সম্পাদকীয় পাতায় (এপ্রিল-জুন ২০২০)।

বাংলাদেশি সমাজে অনৈতিকতা ও আর্থ-সামাজিক দুর্নীতির শেষ নেই এবং তা নানা মাত্রায়। সম্প্রতি করোনাভাইরাস এসে দ্বিমুখী কাণ্ড ঘটিয়েছে। প্রথমত, করোনা উপলক্ষে নতুন করে দুর্নীতির বহুমুখী প্রকাশ, যার বিশাল অংশ স্বাস্থ্য খাত ঘিরে এবং তা নিয়ে দৈনিক পত্রিকাগুলোতে দিনের পর দিন খবর প্রকাশ ও নিবন্ধাদি লেখালেখি।

আমরা এর আগে পাপিয়া, পাপুল ইত্যাদি একাধিক কাণ্ডের কথা লিখেছি। করোনার অবদানে সম্প্রতি ঘটেছে ডা. সাবরিনা-আরিফকাণ্ড, যা নিয়ে কয়েক দিন ধরে পত্রিকাগুলোতে কী পরিমাণ লেখালেখি এবং পাঠককুলের স্বাদু ভূরিভোজ। কিন্তু ঘটনা তো আজকের নয়। ওই যে বলছিলাম, করোনার দ্বিতীয় সফলতা-পূর্ব দুর্নীতির সাতকাহন ফাঁস, যা এত দিন ধামাচাপা ছিল। সন্দেহ নেই ঘটনাগুলো চাঞ্চল্যকর। এত দিন যারা নিশ্চুপ ছিল, দুর্বোধ্য কারণে এখন তাদেরই অভিযানে সেই সব সামাজিক ক্ষত উদ্ঘাটিত হচ্ছে।

দুই.

এখন কয়েক দিন ধরে দৈনিক থেকে দৈনিকে সাবরিনা-আরিফকাণ্ড নিয়ে লেখালেখি। উদ্ঘাটিত হবে তাদের দুর্নীতির নানামাত্রিক কীর্তিকলাপ। গ্রেপ্তার হয়ে এরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ। কিন্তু সবাইকে ছাড়িয়ে গেছে করোনা সনদ জালিয়াতির অভিযোগে তার রিজেন্ট হাসপাতাল সিলগালাবদ্ধ করা উপলক্ষে ক্রমান্বয়ে উদ্ঘাটিত সাহেদনামা।

রিজেন্ট হাসপাতালের দ্বিতীয় সারির কর্তৃপক্ষ ও কর্মকর্তারা গ্রেপ্তার হলেও এত দিন অধরা মূল গায়েন সাহেদ এখন র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার, তাও বেশ নাটকীয় প্রেক্ষাপটে, বোরকা পরে সীমান্ত অতিক্রমকালে সাতক্ষীরা সীমান্তে। এ ঘটনার তাৎপর্য হলো, আমাদের নিরাপত্তারক্ষী বাহিনী প্রয়োজনে ঠিকই লক্ষ্যভেদে সক্ষম।

গত কয়েক দিনে এই সাহেদকে নিয়ে কত নাটক, কত ঘটনার প্রকাশ ফেসবুক থেকে টিভি ও সংবাদপত্রে। দিনকয় আগে ফেসবুকের খবর : সাহেদের বক্তব্য ‘আমি চার্টার প্লেনে বিদেশে পাড়ি জমালে কার সাধ্য আমাকে ধরে।’ প্রতারণা ও নাটক সৃষ্টিতে সিদ্ধ সাহেদ আত্মগোপনে থেকে চেষ্টা করেছে আইনি সংস্থার নজর ভিন্ন দিকে ফেরাতে।

এ পর্যন্ত উদ্ঘাটিত খবরদারিতে দেখা গেছে, এমন কোনো দুর্নীতিবাজ নেই, যার সঙ্গে সাহেদের সম্পর্ক ছিল না। পাচার, অনৈতিকতা, দুর্নীতি, রোগ-রোগী স্বাস্থ্যবিষয়ক প্রতারণায় সিদ্ধহস্ত সাহেদের সঙ্গে নাকি পাপিয়ারও সম্পর্ক ছিল। শুধু সিদ্ধহস্ত কথাটা তার জন্য যথেষ্ট নয়। সত্যি বলতে কী সাহেদ কুপথে চালিত একটি বিস্ময়কর প্রতিভা। সে পারে না এমন কোনো কাজ নেই। লোক ভজাতে অসাধারণ পারঙ্গমতা তার।

কয়েক দিন আগে একটি দৈনিকের খবরে পড়েছিলাম : সাহেদের কুর্কীতি সত্ত্বেও কারো সাহস হতো না তার বিরুদ্ধে কিছু বলার। অনুরূপ একটি খবর এখন একটি দৈনিকে : ‘সাজা হলেও সাহেদকে জেলে যেতে হয়নি’। কারণ প্রথমত, তাকে ধরতে না পারা; দ্বিতীয়ত, তদন্ত বিভাগের গাফিলতি। ক্ষুব্ধ অ্যাটর্নি জেনারেলের মন্তব্য : ‘এখন সময় এসেছে প্রসিকিউশন বিভাগকে ঢেলে সাজানোর’। অর্থাৎ একাধিকবার আমরা যা বলেছি তাই; সরষের মধ্যে ভূত।

তিন.

এবার আমরা মূল প্রশ্নটিতে যাচ্ছি : এত আইনি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও এসব সামাজিক-সাংস্কৃতিক বিষবৃক্ষ জন্মায় ও বাড়ে কিভাবে? কেউ কেউ মহীরুহ হয়ে ওঠে কোন জাদুর খেলায়? এ প্রশ্নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সংবাদ শিরোনাম : ‘১৩ বছর কুকীর্তির পর অভিযানে ধরা সাহেদ’।

এ সংবাদের সংক্ষিপ্ত ভাষ্য : ‘ভুয়া হাসপাতাল, ব্যাংকঋণ পেতে চাকরি দেওয়া, পণ্য সরবরাহ ও কেনার নামে জালিয়াতি, এমএলএম কম্পানি খুলে ৫০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়া’ ইত্যাদি। সব শেষ কথা, তার নামে ছিল ৫৯টি মামলা। বেশির ভাগ মামলাই প্রতারণার। অর্থাৎ সাহেদ একজন ‘মাস্টার প্রতারক’।

প্রশ্ন : একজন চৌকস প্রতারক ১৩ বছর ধরে একের পর এক প্রতারণায় শত শত কোটি টাকা কামিয়েছে, তার বিরুদ্ধে এত মামলা থাকার পরও তাকে হাসপাতাল খোলার অনুমতি দেওয়া হয় কিভাবে, তাও করোনা চিকিৎসা ও পরীক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের হাসপাতাল। অন্য এক খবরে প্রকাশ—তাতে ছিল স্বাস্থ্য খাতের আশীর্বাদ।

যদি অনুমতি দেওয়াই হলো, সে ক্ষেত্রে দরকার ছিল কড়া নজরদারির। কিন্তু কোনো কিছুই করা হয়নি। আরেকটি ছোট্ট খবর : দুজন চিকিৎসক নাকি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে সতর্ক করে দিয়েছিল। তাতে কান দেওয়া হয়নি। দিনের পর দিন চলেছে জাল সনদ বিতরণ। কোনো কর্তৃপক্ষ কোনো কিছুতেই কান দেয়নি বা ব্যবস্থা নেয়নি।

কেন নেয়নি? জবাব খুব সহজ ও সরল এবং সবারই বোধের আওতায়। আমি শুধু অ্যাটর্নি জেনারেলের কথাটি স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলব, শুধু প্রসিকিউশনই নয়, সংশ্লিষ্ট সব খাতই ঢেলে সাজানো দরকার। কারণ তাদের সবার চোখের সামনে এসব বিষবৃক্ষের জন্ম ও প্রবৃদ্ধি। পরিবর্তন সর্বত্র দরকার।

তার চেয়েও বড় একটি প্রশ্ন : এসব বিষৃবক্ষের উত্থানের সুবিধাভোগী নেপথ্য নায়ক, অনুরূপ ক্যাসিনোকাণ্ডের; তারা কি আড়ালেই থেকে যাবে? তাদের স্বরূপ উন্মোচিত না হলে অনুরূপ ঘটনা ঘটতেই থাকবে। ভবিষ্যতে আরো পাপিয়া, পাপুল, সাবরিনা, সাহেদ জন্ম নেবে। তাই সময় থাকতে সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে সতর্ক হওয়ার ও ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানাই। এককথায় মন্ত্রণালয় ও প্রশাসন ঢেলে সাজানো এবং দুর্নীতির বিরুদ্ধে সার্বিক লাগাতার অভিযান।

লেখক : কবি, গবেষক ও ভাষাসংগ্রামী

মন্তব্য

১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন
সংগৃহীত ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে পুনর্জীবিত করার দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া বিশালাকৃতির ‘ডায়ার উলফ’ নেকড়েকে ক্লোনিং ও জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

কলোসালের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফের মতো দেখতে তিনটি শাবক তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুটি পুরুষ শাবক ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছে এবং একটি স্ত্রী শাবক ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম নিবে।

নেকড়ে শাবক দুইটির নাম দেওয়া হয়েছে রোমিউলাস ও রেমিউস।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ১৩ হাজার বছর পূর্বের ডায়ার উলফের পুরোনো একটি দাঁত ও ৭২ হাজার বছর আগের একই প্রাণীর পুরোনো একটি খুলির ডিএনএ। সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সাহায্যে এ প্রজাতির নেকড়ের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বর্তমানে এই তিনটি শাবক গোপন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে।

যেখানে ১০ ফুট উঁচু বেড়া, ড্রোন, নিরাপত্তাকর্মী ও লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। তবে ডায়ার উলফের পুনর্জন্ম নিয়ে তাদের কাজ এখন পর্যন্ত গোপন ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিজ্ঞানের নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষায় বেশি জোর দেওয়া উচিত। তাদের মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্য নষ্ট করা। যদিও কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ভবিষ্যতে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো প্রাণী ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

সূত্র : সি এন এন

মন্তব্য

সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’
সংগৃহীত ছবি

‘আসুক আসুক মেয়ের জামাই, কিছু চিন্তা নাইরে, আমার দরজায় বিছাই থুইছি, কামরাঙা পাটি নারে’—পল্লি কবি জসীম উদ্দিন তাঁর নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থে কামরাঙা নামক শীতল পাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন।

শীতল পাটি বাংলা সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ এই শীতল পাটি। বাংলাদেশের শীতল পাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আগেকার দিনে গরমের সময়ে যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন হাত পাখা যেমন ব্যবহৃত হতো তেমনি শীতল পাটিও ছিল ঘরে ঘরে। কাঁথা বা তোশকের উপরে এই পাটি বিছিয়ে দেয়া হতো এবং এতে গা এলিয়ে দিলে হৃদয় মন সব শীতল হয়ে যেতো বলেই এর নাম শীতল পাটি। এই শীতল পাটির প্রধান উপাদান হলো মোরতা এবং এটি একটি নল খাগরা জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ জঙ্গলে, ঝোঁপে ঝাড়ে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পদতলে আপনা- আপনি জন্মায়।

এই গাছ থেকে এর বাকল পাতলা করে কেটে সংরক্ষণ করে বোনা হয় শীতল পাটি। 

শীতল পাটি বিভিন্ন ডিজাইনে বোনা হয়। বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে কখনো ফুল, পাখি, লতাপাতা কখনো বা জ্যামিতিক আকৃতি আবার মসজিদ, মন্দিরের আকৃতিতেও বোনা হয়। কখনো বা রং ছাড়াও বোনা হয়।

অসম্ভব ধৈর্য আর চমৎকার নৈপুণ্যের কাজ করে থাকেন কারিগরেরা। নারী-পুরুষ একসাথে এ কাজ করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে নারীরাই শীতল পাটি বোনার কাজ করেন।

অতীতে জমিদার বাড়ি, সরকারি অফিস-আদালতে শীতল পাটির ব্যবহার ছিল। বর্তমানে শীতল পাটির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় কমে গেছে।

কিন্তু শৌখিন মানুষের ঘরে এখনো শীতল পাটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন সাজসজ্জার উপকরণ, সুকেস, ব্যাগ, চশমার খাপ ইত্যাদিতে শীতল পাটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের উপকরণ হিসেবে শীতল পাটির ব্যবহার হয়ে আসছে বহুযুগ ধরে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী, সিলেট ও ঝালকাঠি অঞ্চলে এখনো শীতলপাটি তৈরি হয়। তবে সব থেকে উন্নত ও উৎকৃষ্ট মানের শীতল পাটি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বর্তমানে শীতল পাটি উৎপাদন কম হওয়ার কারণ কারিগরেরা ন্যায্য মূল্য পায়না বলে অন্য পেশার সাথে তারা জড়িত হচ্ছে। যদি সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কারিগরদের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় তবে আমাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লেখক : বিলকিস নাহার মিতু
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি
ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ। তিনি  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীসম্পদ বিভাগের উপপ্রধান।

রেল উপদেষ্টাকে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পেরিয়েছে ৫৪ বছর। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও দেশের প্রতিটি বিভাগের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও যখন দেশে মেট্রোরেল, হাই-স্পিড ট্রেন, উন্নত স্টেশনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে, তখনও রাজশাহীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।

 ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরো বলেন, বিশেষ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগে কিছু সামান্য স্থানে ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপনই কেবল যথেষ্ট, যেমন- আব্দুলপুর হতে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সংযোগ রেলপথে আপগ্রেড, এই রেলপথ চালু হলে রাজশাহী অঞ্চল তথা উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় শহর, কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল, মৎস্য ও আম রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর রয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনা।

কিন্তু এই সম্ভাবনার দ্বার খোলার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ও সরাসরি রেল যোগাযোগ।

বর্তমানে রাজশাহী হতে চট্টগ্রামগামী যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করতে হলে একাধিক বার ট্রেন বদল, সময় অপচয় এবং বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। এতে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ অনুৎসাহিত হন। আর এই বাধাগুলো দূর করতে হলে প্রয়োজন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন।

তিনি আরো লিখেছেন, মাননীয় উপদেষ্টা, রেল যোগাযোগ শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি একটি অঞ্চলের জীবনরেখা। এটি যেমন পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমায়, তেমনি পরিবেশবান্ধব ও জনবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও প্রশংসিত। রেলপথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিভাগকে একই সুঁতোয় গাঁথা সম্ভব।

আমরা চাই, আপনি এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করবেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি কার্যকর, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবেন। এটা কেবল একটি বিভাগের চাওয়া নয়—এটা দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

"রেল সংযোগ মানে অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রগতির সংযোগ"—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা, রাজশাহীসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জনগণ, আপনার সদয় দৃষ্টি ও ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করছি।

মন্তব্য

পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য
সংগৃহীত ছবি

অনেকেই রহস্যময় ও গা ছমছম করা জায়গায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। যা চলতি ভাষায় গোস্ট হান্টিং নামে পরিচিত। এমন স্থানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, তা রোমাঞ্চকর। পোল্যান্ডের ক্রুকেড ফরেস্ট এমনই একটি রহস্যময় স্থান।

পোল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে, পশ্চিম পোমেরানিয়ার গ্রিফিনো শহরের কাছে নোভা জার্নোভো গ্রামে অবস্থিত এই ক্রুকেড ফরেস্ট। দেখতে খুব সুন্দর এই অরণ্যটির প্রধান আকর্ষণ এর অদ্ভুত আকৃতির পাইনগাছ। প্রায় ৪০০টি গাছের মধ্যে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো এবং তারপর ওপরের দিকে সোজা হয়ে উঠেছে। এসব গাছের এই বিশেষ আকৃতিই তৈরি করেছে নানা রহস্য, যা পর্যটকদের প্রতিবছর আকর্ষণ করে।

ক্রুকেড ফরেস্টের এই গাছগুলোর অস্বাভাবিক আকৃতির কারণ আজও অজানা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে কোনোটি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। কথিত রয়েছে যে ১৯৩০ সালে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিরা বিশেষ উদ্দেশ্যে গাছগুলোকে বাঁকিয়েছিলেন। হয়তো নৌকা বা আসবাবপত্র তৈরি করতে।

তবে এর প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যময়। রহস্যে ঘেরা হলেও গাছগুলোর অসাধারণ সৌন্দর্য এটিকে পোল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত করেছে।

সূত্র : অল দ্যাটস ইন্টারেস্টিং

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ