বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন

কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান 'এলএসডি' আসক্ত কিনা?

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
কীভাবে বুঝবেন আপনার সন্তান 'এলএসডি' আসক্ত কিনা?

দেশে নতুন আতঙ্কের নাম ভয়ংকর মাদক 'এলএসডি'। সম্প্রতি এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর ঘটনায় তদন্তের জের ধরে সামনে আসে তরুণদের মধ্যে এলএসডি বা লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড ব্যবহারের প্রবণতার খবর। পুলিশের দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ওই শিক্ষার্থী বন্ধুদের সাথে মাদক এলএসডি সেবন করে একজন ডাব বিক্রেতার দা নিয়ে নিজেই নিজের গলায় আঘাত করেন।

এই ঘটনার তদন্তের জেরে পুলিশ আরো যেসব তথ্য দেয় তা হচ্ছে, বাংলাদেশে বেশ কয়েকটি চক্র এই মাদক কেনাবেচার সাথে জড়িত।

এছাড়া অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে এই মাদক বিক্রির তথ্যও জানানো হয়। এদিকে মাদক বিষয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এলএসডি গ্রহণ করে ভুল রাস্তা দেখে দুর্ঘটনার শিকার হওয়া, বাড়ির জানালা দিয়ে লাফিয়ে পড়া বা অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে দুর্ঘটনার শিকার হওয়ার বেশ কিছু ঘটনা নথিবদ্ধ রয়েছে।

এলএসডি কী?
যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের অধীনস্থ মাদক বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব ড্রাগ অ্যাবিউজের তথ্য অনুযায়ী, ডি-লাইসার্জিক অ্যাসিড ডায়েথিলামাইড বা এলএসডি রাসায়নিক সংশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি একটি পদার্থ যা রাই এবং বিভিন্ন ধরণের শস্যের গায়ে জন্মানো এক বিশেষ ধরণের ছত্রাকের শরীরের লাইসার্জিক অ্যাসিড থেকে তৈরি করা হয়।

এটি স্বচ্ছ, গন্ধহীন একটি পদার্থ।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের মতে এটি পাউডার, তরল, ট্যাবলেট বা ক্যাপসুলের আকারে পাওয়া যায়। সংস্থাটির মতে, এটি মানুষের মস্তিষ্কের সেরোটোনিন নামক রাসায়নিকের কার্যক্রম প্রভাবিত করে ব্যবহার, অনুভূতি এবং পারিপার্শ্বিকতা সম্পর্কে ধারণা পরিবর্তন করে। এলএসডি নেয়ার পর সাধারণত মানুষ 'হ্যালুসিনেট' করে বা এমন দৃশ্য দেখে যা বাস্তবে নেই। অনেক সময় অলীক দৃশ্য দেখার কারণে মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে।

তবে কেউ এলএসডি ব্যবহার করছে কিনা তা বোঝার উপায় সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা নানা ধরণের মত দিয়েছেন। জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইন্সটিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মেখলা সরকার বলেন, ইয়াবা আর হেরোইনের মতো মাদক দ্রব্যের তুলনায় এলএসডিতে আসক্তিকর উপাদান কম থাকে। তবে তার মানে এই না যে, এতে আসক্তি তৈরি হয় না। একাধিকবার বা দীর্ঘসময় ধরে ব্যবহার করতে থাকলে এলএসডির প্রতিও আসক্তি তৈরি হয়। তবে ব্যক্তিভেদে এই আসক্তির মাত্রা বা এলএসডির প্রতিক্রিয়া আলাদা হয়।

বেশিরভাগ ক্ষেত্রে যারা মাদক হিসেবে এলএসডি গ্রহণ করেন তারা একক মাদক হিসেবে একে গ্রহণ করেন না। বরং অন্য মাদকের সাথে সাথে এলএসডিও গ্রহণ করে থাকেন। তাই অন্য মাদকদ্রব্যে আসক্তির কারণে যে ধরণের বৈশিষ্ট্য ব্যবহারকারীর মধ্যে দেখা যায় এলএসডির ক্ষেত্রেও বৈশিষ্ট্য অনেকটা একই রকম হয়। আবার অনেকেই নিয়মিত গ্রহণ না করে বরং মাঝে মাঝে বা কৌতূহলবশত এলএসডি ব্যবহার করে থাকেন। সেক্ষেত্রে তাদের মধ্যে আলাদা করে কোন বৈশিষ্ট্য তৈরি হয় না।

ডা. মেখলা সরকার বলেন, মানুষ মাদক গ্রহণ করতে থাকলে তার শরীরে এক ধরণের সহনশীলতা তৈরি হয়। অর্থাৎ আগে কোন মাদক যে পরিমাণ গ্রহণ করলে যতটা নেশা হতো পরবর্তীতে হয়তো সেই একই মাদকে আর সেই আগের মতো নেশা হচ্ছে না। তখন আসক্ত ব্যক্তি অন্য মাদক দ্রব্যের প্রতি ঝুঁকে পড়ে। এলএসডিও সে ধরণের মাদকদ্রব্য। যারা এলএসডি ব্যবহার করেন তাদের মধ্যে নানা ধরণের হ্যালুসিনেশন হয়ে থাকে। তার হয়তো মনে হয় যে সে এমন কোন রঙ বা ঘটনা দেখছেন যা আসলে বাস্তবে নেই। এছাড়া নানা ধরণের শব্দও শুনতে পান।

তবে কেউ যদি অন্যান্য মাদকের পাশাপাশি এলএসডি'র আসক্তিতেও ভোগেন তাহলে তার মধ্যে নানা ধরণের বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে। এমন কিছু বৈশিষ্ট্য দেখে নিতে পারেন:

১. অস্বাভাবিক আচরণ : জাতীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরুপ রতন চৌধুরী বলেন, এলএসডি গ্রহণের পর এর কার্যকারিতা সাধারণত ৩-৪ ঘণ্টা পর্যন্ত থাকে। তবে অনেক সময় এটি ২০ ঘণ্টা পর্যন্তও কার্যকর হতে পারে। এই সময়ে ব্যবহারকারীরা নানা ধরণের অস্বাভাবিক আচরণ করে থাকে। অনেক সময় মানুষ আত্মঘাতীও হয়ে উঠতে পারে। এ ধরণের বৈশিষ্ট্য যদি পরিবারের কারো মধ্যে দেখা যায় তাহলে সেক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে এবং প্রয়োজন হলে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।যারা এলএসডিতে আসক্ত, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা আক্রমণাত্মক হয়ে পড়ে। সেক্ষেত্রে খুব ছোট ঘটনায়ও সহিংস হয়ে উঠতে পারে।

২. ক্ষুধামন্দা : এলএসডিতে আসক্ত হলে তাদের মধ্যে ক্ষুধামন্দা দেখা দেয়।

৩. ঘুমের সমস্যা : ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিন এর তথ্য অনুযায়ী, এলএসডিতে আসক্তদের মধ্যে ঘুম নিয়ে ব্যক্তিভেদে নানা ধরণের সমস্যা তৈরি হয়। অনেকের মধ্যে চরম মাত্রায় অনিদ্রা দেখা দেয়। অনেকের মধ্যে অতিরিক্ত ঘুমের বৈশিষ্ট্যও দেখা দেয়। তারা কোনো ধরণের কারণ ছাড়াই ঘুমাতে থাকেন। এলএসডি সেবনের পর অনেক ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলে জানান বিশেষজ্ঞরা। ডা. মেখলা সরকার বলেন, যারা আসক্তিতে ভোগেন তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, রাতের বেলা তারা না ঘুমিয়ে জেগে থাকেন আবার দিনের বেলা ঘুমিয়ে থাকেন।

৪. শারীরিক পরিবর্তন : এলএসডিতে আসক্তদের যেসব শারীরিক পরিবর্তন ঘটে তার মধ্যে রয়েছে, চোখের মণিতে পরিবর্তন বিশেষ করে বড় হয়ে যাওয়া, শরীরের তাপমাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি হওয়া, শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুত হওয়া, হৃৎস্পন্দন বেড়ে যাওয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যায়। এছাড়া এলএসডি সেবনের পর অনেক ব্যবহারকারীর শ্রবণ এবং দর্শন ইন্দ্রিয় বেশি সক্রিয় হয়ে যায় বলেও জানান তিনি। এ কারণেই অনেক সময় যারা দীর্ঘক্ষণ ধরে গান করেন তারা এই মাদক গ্রহণ করে থাকেন। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল লাইব্রেরি অব মেডিসিনের তথ্য মতে, এলএসডি গ্রহণের কারণে দেহে অতিরিক্ত ঘামও হয়ে থাকে।

৫. জীবনযাত্রায় পরিবর্তন : ডা. মেখলা সরকার বলেন, মাদকে আসক্তির ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, ব্যবহারকারীর জীবনযাত্রায় নানা ধরণের পরিবর্তন ঘটেছে। তিনি হয়তো কারো সাথে মিশতে চাইছেন না বা বন্ধু বান্ধবের পরিমাণ কমে যেতে দেখা যায়। অনেক সময় আবার এর বিপরীতও দেখা যায়। আগের বন্ধুদের সাথে না মিশলেও নতুন করে বন্ধুও তৈরি হতে পারে। আর্থিক চাহিদা আগের তুলনায় বেড়ে যেতে পারে। নিজের প্রতি যত্ন নেয়ার বিষয়ে উদাসীনতা দেখা দেয়া, ক্লাসে ফাঁকি দেয়ার মতো বৈশিষ্ট্য দেখা যেতে পারে বলেও মনে করেন মিস সরকার।

মাদকাসক্তি বিষয়ক গবেষক ও ঢাকার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. এম ইমদাদুল হক বলেন, অনেক সময় দেখা যায় যে, সন্তানরা বাবা-মা থেকে আলাদা হয়ে পড়ছে বা তারা জীবন যাপনের ক্ষেত্রে ইচ্ছে করেই একাকী হয়ে পড়ছে। সে ক্ষেত্রে এলএসডির মতো আসক্তি ধরাটা কঠিন। সেক্ষেত্রে বাবা-মাকে সন্তানের সাথে দূরত্ব কমিয়ে আনতে হবে। ঘুমের সমস্যা বা খাবারের অরুচি, নতুন বন্ধু তৈরি মানেই কেউ মাদকাসক্ত নয়। সন্তানদের প্রতি যাতে বাবা-মা অযাচিতভাবে সন্দেহের আওতায় নিয়ে না আসে সেদিকেও লক্ষ্য রাখাটা জরুরি। আর এ কারণেই বাবা-মা এবং পরিবারের সদস্যদের সচেতন থাকতে হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন
সংগৃহীত ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে পুনর্জীবিত করার দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া বিশালাকৃতির ‘ডায়ার উলফ’ নেকড়েকে ক্লোনিং ও জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

কলোসালের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফের মতো দেখতে তিনটি শাবক তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুটি পুরুষ শাবক ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছে এবং একটি স্ত্রী শাবক ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম নিবে।

নেকড়ে শাবক দুইটির নাম দেওয়া হয়েছে রোমিউলাস ও রেমিউস।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ১৩ হাজার বছর পূর্বের ডায়ার উলফের পুরোনো একটি দাঁত ও ৭২ হাজার বছর আগের একই প্রাণীর পুরোনো একটি খুলির ডিএনএ। সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সাহায্যে এ প্রজাতির নেকড়ের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বর্তমানে এই তিনটি শাবক গোপন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে।

যেখানে ১০ ফুট উঁচু বেড়া, ড্রোন, নিরাপত্তাকর্মী ও লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। তবে ডায়ার উলফের পুনর্জন্ম নিয়ে তাদের কাজ এখন পর্যন্ত গোপন ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিজ্ঞানের নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষায় বেশি জোর দেওয়া উচিত। তাদের মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্য নষ্ট করা। যদিও কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ভবিষ্যতে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো প্রাণী ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

সূত্র : সি এন এন

মন্তব্য

সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’
সংগৃহীত ছবি

‘আসুক আসুক মেয়ের জামাই, কিছু চিন্তা নাইরে, আমার দরজায় বিছাই থুইছি, কামরাঙা পাটি নারে’—পল্লি কবি জসীম উদ্দিন তাঁর নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থে কামরাঙা নামক শীতল পাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন।

শীতল পাটি বাংলা সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ এই শীতল পাটি। বাংলাদেশের শীতল পাটি বিশ্ব ঐতিহ্যেরও অংশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আগেকার দিনে গরমের সময়ে যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন হাত পাখা যেমন ব্যবহৃত হতো তেমনি শীতল পাটিও ছিল ঘরে ঘরে। কাঁথা বা তোশকের উপরে এই পাটি বিছিয়ে দেয়া হতো এবং এতে গা এলিয়ে দিলে হৃদয় মন সব শীতল হয়ে যেতো বলেই এর নাম শীতল পাটি। এই শীতল পাটির প্রধান উপাদান হলো মোরতা এবং এটি একটি নল খাগরা জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ জঙ্গলে, ঝোঁপে ঝাড়ে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পদতলে আপনা- আপনি জন্মায়।

এই গাছ থেকে এর বাকল পাতলা করে কেটে সংরক্ষণ করে বোনা হয় শীতল পাটি। 

শীতল পাটি বিভিন্ন ডিজাইনে বোনা হয়। বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে কখনো ফুল, পাখি, লতাপাতা কখনো বা জ্যামিতিক আকৃতি আবার মসজিদ, মন্দিরের আকৃতিতেও বোনা হয়। কখনো বা রং ছাড়াও বোনা হয়।

অসম্ভব ধৈর্য আর চমৎকার নৈপুণ্যের কাজ করে থাকেন কারিগরেরা। নারী পুরুষ উভয়ে মিলিত হয়ে এ কাজ করে তবে বেশিরভাগ নারীরাই এই কাজ করে থাকেন

অতীতে বিদ্যুতের পাখার অবর্তমানে জমিদার বাড়ি, সরকারি অফিস-আদালতে শীতল পাটির ব্যবহার ছিল। বর্তমানে শীতল পাটির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় কমে গেছে কিন্তু শৌখিন মানুষের ঘরে এখনো শীতল পাটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন সাজসজ্জার উপকরণ, সুকেস, ব্যাগ, চশমার খাপ ইত্যাদিতে শীতল পাটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের উপকরণ হিসেবে শীতল পাটির ব্যবহার হয়ে আসছে বহুযুগ ধরে।

 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী, সিলেট ও ঝালকাঠি অঞ্চলে এখনো শীতলপাটি তৈরি হয়। তবে সব থেকে উন্নত ও উৎকৃষ্ট মানের শীতল পাটি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বর্তমানে শীতল পাটি উৎপাদন কম হওয়ার কারণ কারিগরেরা ন্যায্য মূল্য পায়না বলে অন্য পেশার সাথে তারা জড়িত হচ্ছে। যদি সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কারিগরদের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় তবে আমাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লেখক : বিলকিস নাহার মিতু
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি
ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ। তিনি  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীসম্পদ বিভাগের উপপ্রধান।

রেল উপদেষ্টাকে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পেরিয়েছে ৫৪ বছর। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও দেশের প্রতিটি বিভাগের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও যখন দেশে মেট্রোরেল, হাই-স্পিড ট্রেন, উন্নত স্টেশনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে, তখনও রাজশাহীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।

 ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরো বলেন, বিশেষ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগে কিছু সামান্য স্থানে ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপনই কেবল যথেষ্ট, যেমন- আব্দুলপুর হতে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সংযোগ রেলপথে আপগ্রেড, এই রেলপথ চালু হলে রাজশাহী অঞ্চল তথা উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় শহর, কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল, মৎস্য ও আম রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর রয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনা।

কিন্তু এই সম্ভাবনার দ্বার খোলার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ও সরাসরি রেল যোগাযোগ।

বর্তমানে রাজশাহী হতে চট্টগ্রামগামী যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করতে হলে একাধিক বার ট্রেন বদল, সময় অপচয় এবং বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। এতে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ অনুৎসাহিত হন। আর এই বাধাগুলো দূর করতে হলে প্রয়োজন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন।

তিনি আরো লিখেছেন, মাননীয় উপদেষ্টা, রেল যোগাযোগ শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি একটি অঞ্চলের জীবনরেখা। এটি যেমন পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমায়, তেমনি পরিবেশবান্ধব ও জনবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও প্রশংসিত। রেলপথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিভাগকে একই সুঁতোয় গাঁথা সম্ভব।

আমরা চাই, আপনি এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করবেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি কার্যকর, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবেন। এটা কেবল একটি বিভাগের চাওয়া নয়—এটা দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

"রেল সংযোগ মানে অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রগতির সংযোগ"—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা, রাজশাহীসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জনগণ, আপনার সদয় দৃষ্টি ও ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করছি।

মন্তব্য

পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য
সংগৃহীত ছবি

অনেকেই রহস্যময় ও গা ছমছম করা জায়গায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। যা চলতি ভাষায় গোস্ট হান্টিং নামে পরিচিত। এমন স্থানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, তা রোমাঞ্চকর। পোল্যান্ডের ক্রুকেড ফরেস্ট এমনই একটি রহস্যময় স্থান।

পোল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে, পশ্চিম পোমেরানিয়ার গ্রিফিনো শহরের কাছে নোভা জার্নোভো গ্রামে অবস্থিত এই ক্রুকেড ফরেস্ট। দেখতে খুব সুন্দর এই অরণ্যটির প্রধান আকর্ষণ এর অদ্ভুত আকৃতির পাইনগাছ। প্রায় ৪০০টি গাছের মধ্যে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো এবং তারপর ওপরের দিকে সোজা হয়ে উঠেছে। এসব গাছের এই বিশেষ আকৃতিই তৈরি করেছে নানা রহস্য, যা পর্যটকদের প্রতিবছর আকর্ষণ করে।

ক্রুকেড ফরেস্টের এই গাছগুলোর অস্বাভাবিক আকৃতির কারণ আজও অজানা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে কোনোটি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। কথিত রয়েছে যে ১৯৩০ সালে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিরা বিশেষ উদ্দেশ্যে গাছগুলোকে বাঁকিয়েছিলেন। হয়তো নৌকা বা আসবাবপত্র তৈরি করতে।

তবে এর প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যময়। রহস্যে ঘেরা হলেও গাছগুলোর অসাধারণ সৌন্দর্য এটিকে পোল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত করেছে।

সূত্র : অল দ্যাটস ইন্টারেস্টিং

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ