ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫
২৫ চৈত্র ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ০৮ এপ্রিল ২০২৫
২৫ চৈত্র ১৪৩১, ০৮ শাওয়াল ১৪৪৬

ওজোনস্তর রক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা প্রয়োজন

বিধান চন্দ্র দাস
বিধান চন্দ্র দাস
শেয়ার
ওজোনস্তর রক্ষার চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করা প্রয়োজন

সূর্য ও মহাজাগতিক উৎস থেকে পৃথিবীর দিকে ধাবিত ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মিসহ অতি ক্ষুদ্র তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের প্রায় সব রশ্মির বেশির ভাগ আটকে দেয় ভূপৃষ্ঠের ওপরে থাকা ওজোনস্তর। ফলে মানুষ তথা জীবজগৎ সেই সব শক্তিশালী ও ভয়ানক ক্ষতিকর রশ্মির সরাসরি সম্পাতজনিত অভিঘাত থেকে রক্ষা পায়। ওজোনস্তর আছে বলেই আমাদের ত্বক, চোখ, সামুদ্রিক জীব, গাছপালা, ফসলসহ অন্য অনেক জিনিস রক্ষা পাচ্ছে। কিন্তু আমাদের কর্মকাণ্ডের ফলে একসময় ওজোনস্তরে ওজোনের পরিমাণ আশঙ্কাজনকভাবে কমে গিয়েছিল।

গত শতকের শেষের দিকে অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের ওপরে ওজোনস্তরে বিশাল এক গহ্বর তৈরির প্রথম দুঃসংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল। ১৬ মে ১৯৮৫ সালে প্রভাবশালী বিজ্ঞান জার্নাল নেচার সেই দুঃসংবাদ প্রকাশ করার পর টনক নড়ে বিশ্বের সংশ্লিষ্ট মহলের। ত্বরান্বিত হয়েছিল ওজোনস্তর রক্ষার জন্য ঐতিহাসিক মন্ট্রিয়ল চুক্তি। ওজোনস্তর রক্ষার জন্য ১৯৮৭ সালে হওয়া মন্ট্রিয়ল চুক্তি (কার্যকর ১৯৮৯) ছিল এক ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

মূলত এই চুক্তির মাধ্যমে মানুষ তথা জীবজগতের জন্য অতি প্রয়োজনীয় ওজোনস্তর রক্ষার প্রচেষ্টা গ্রহণ করা হয়। চুক্তির পরে এর বাস্তবায়ন প্রক্রিয়াও এগিয়ে নেওয়া হয়। পরবর্তী সময়ে এই চুক্তিতে কিছু সংশোধনী (লন্ডন সংশোধনী ১৯৯১, কার্যকর ১৯৯২; বেইজিং সংশোধনী ১৯৯৯, কার্যকর ২০০২; কিগালি সংশোধনী ২০১৬, কার্যকর ২০১৯) এনে সেই মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণের ফলে পৃথিবীতে ওজোনস্তর ক্ষয়কারী পদার্থগুলোর (ওজোন ডিপ্লেটিং সাবস্ট্যান্স—ওডিএস) উৎপাদন লক্ষণীয়ভাবে বন্ধ করা সম্ভব হয়েছে। জাতিসংঘের সর্বশেষ (২০২২) প্রতিবেদনে ক্ষয় হওয়া ওজোনস্তর পূরণ ঠিকমতোই হচ্ছে বলে বলা হয়েছে।

মন্ট্রিয়ল চুক্তির এই সাফল্যের জন্য এ বছর আন্তর্জাতিক ওজোনস্তর রক্ষা দিবসের (১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৩) প্রতিপাদ্য করা হয়েছে, ‘মন্ট্রিয়ল প্রটোকল : ওজোনস্তর ঠিক করা ও জলবায়ু পরিবর্তন হ্রাসের সফল দলিল।’ আশা করা হচ্ছে, আগামী ২০৬৬ সালের মধ্যে ওজোনস্তর গত শতকের আশির দশকে থাকা ওজোনস্তরের সমান পুরুত্ব লাভ করবে। তবে সেই প্রত্যাশা পূরণ করতে হলে ভবিষ্যতে বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। আমাদের মনে রাখা দরকার, মন্ট্রিয়ল চুক্তি ও পরবর্তী সংশোধনীর সব কাজ এখনো শেষ করা সম্ভব হয়নি।

মন্ট্রিয়ল প্রটোকলের কিগালি সংশোধনীর লক্ষ্য হলো হাইড্রোফ্লোরোকার্বন (এইচএফসি) উৎপাদন ও ব্যবহার কমিয়ে আনা।

কারণ সিএফসি (ক্লোরোফ্লোরো কার্বন) ও এইচসিএফসির বিকল্প হিসেবে শীতলীকরণ (এসি) কাজে বিপুল পরিমাণে ব্যবহার করা হয় এইচএফসি। এটি ওজোনস্তরের জন্য ক্ষতিকারক না হলেও তা কার্বন ডাই-অক্সাইডের থেকে প্রায় হাজার গুণ শক্তিশালী এবং অনেক বেশি বৈশ্বিক উষ্ণতা সৃষ্টি করছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন যে এইচএফসি কমাতে পারলে বিশ্বের তাপমাত্রা ০.৫ ডিসে হ্রাস পাবে। কাজেই জলবায়ু পরিবর্তন প্রশমনের জন্যও বিষয়টি জরুরি।

এটা ঠিক যে বর্তমান বাস্তবতায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে এসি ব্যবহার অনিবার্য হয়ে উঠেছে, বিশেষ করে খাদ্য ও ভ্যাকসিন সংরক্ষণ; গবেষণাগার ও হাসপাতাল; বিশেষ ধরনের শিল্প-কলকারখানাসহ নানা ধরনের কর্মকাণ্ড নির্বাহের জন্য এখন এসি ব্যবহার করতে হচ্ছে। কাজেই কিগালি প্রস্তাব অনুযায়ী এইচএফসির বিকল্প (আইসোবিউটেন, প্রোপেন ইত্যাদি) উল্লেখযোগ্য মাত্রায় ব্যবহার করা প্রয়োজন। সেই সঙ্গে প্রয়োজন আরো নতুন নতুন বিকল্প অনুসন্ধান এবং তা কার্যকর করা।

সাম্প্রতিক সময়ে ওজোনস্তর ক্ষয়ের জন্য দায়ী একটি বিষয় নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। গত ২০ এপ্রিল ২০২৩ নেচার জানাচ্ছে যে ক্ষুদ্র কৃত্রিম উপগ্রহ (কিউবস্যাট বা ন্যানোস্যাটেলাইটস) ওজোনস্তরের ক্ষতি করছে। ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদন (মার্চ ২০২৩) অনুযায়ী বর্তমানে হাজার হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে ঘুরছে। এগুলো সাধারণত স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা ওজোনস্তরের ওপরের দিকে অবস্থান করানো হয়। ভূপৃষ্ঠের ১০-১৫ কিলোমিটার (ট্রোপোস্ফিয়ার) ওপর থেকে শুরু করে প্রায় ৫০ কিলোমিটার ওপর পর্যন্ত বিস্তৃত এলাকাকে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা ওজোনস্তর বলা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কৃত্রিম উপগ্রহ সংখ্যার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তার আয়তনও বৃদ্ধি করে চলেছে। বর্তমানে ২৫০ গ্রাম থেকে শুরু করে দুই হাজার কিলোগ্রাম ওজনের কৃত্রিম উপগ্রহ পৃথিবীর কক্ষপথে অবস্থান করছে।

কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বেশির ভাগই তৈরি করা হয় অ্যালুমিনিয়াম দিয়ে। এগুলোর মধ্যে থাকে অসংখ্য ইলেকট্রনিক পার্টস, ব্যাটারি, কার্বনতন্তু, সিনথেটিক আঠা, বিভিন্ন ধরনের ধাতু (টাইটানিয়াম, ক্যাডমিয়াম, লিথিয়াম, নিকেল, কোবাল্ট ইত্যাদি)। এসব দ্রব্য ক্রমাগতভাবে মহাকাশে বিচ্ছিন্ন হতে থাকে এবং সেসব স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা ওজোনস্তরে নেমে আসে। গবেষকরা বলছেন যে এগুলো শেষ পর্যন্ত ওজোনস্তরের জন্য ক্ষতি ডেকে আনছে। মহাকাশে এরই মধ্যে কৃত্রিম উপগ্রহকেন্দ্রিক অনেক আবর্জনা তৈরি হয়েছে। কোনো কোনো কৃত্রিম উপগ্রহে ব্যবহৃত আয়োডিন ওজোনস্তরের ক্ষতি করে বলে জানা গেছে।

কৃত্রিম উপগ্রহ উৎক্ষপণের জন্য ব্যবহৃত রকেটগুলোতে বেশির ভাগ সময় জ্বালানি হিসেবে কেরোসিন ব্যবহার করা হয়। এই কেরোসিন ব্ল্যাক কার্বন (অসম্পূর্ণ দহনপ্রক্রিয়ায় সৃষ্ট ২.৫ মাইক্রোমিটার কিংবা তার চেয়েও কম কালো কণা) তৈরি করে। সেই ব্ল্যাক কার্বন সৌর বিকিরণ শোষণ করে এবং স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের উষ্ণতা বৃদ্ধি করে ওজোনস্তরের ক্ষতি করে থাকে। উড়োজাহাজে ব্যবহৃত কেরোসিন থেকে ব্ল্যাক কার্বন তৈরি হলেও আকাশে তার স্থায়িত্ব কয়েক সপ্তাহের বেশি থাকে না। কিন্তু রকেট থেকে তৈরি ব্ল্যাক কার্বন বছরের পর বছর থাকতে পারে। রকেট থেকে নির্গত ব্ল্যাক কার্বন সরাসরি ওজোনস্তরে পৌঁছায়। কিন্তু উড়োজাহাজ থেকে নির্গত ব্ল্যাক কার্বন ওজোনস্তরের নিচে চলে যায়। তা ছাড়া রকেট ইঞ্জিনগুলো বিমানের তুলনায় প্রতি লিটার জ্বালানিতে অনেক বেশি মাত্রায় ব্ল্যাক কার্বন তৈরি করে। এসব ইঞ্জিন থেকে বর্তমানে বছরে এক হাজার টন ব্ল্যাক কার্বন তৈরি হচ্ছে। ২০৪০ সালে এর পরিমাণ বছরে ১০ হাজার মেট্রিক টন হবে বলে বলা হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে গবেষকরা ওজোনস্তর ক্ষয়ের জন্য দাবানলকেও দায়ী করেছেন। নেচারে প্রকাশিত এসংক্রান্ত এক গবেষণা প্রবন্ধে (৮ মার্চ ২০২৩) বলা হয়েছে যে ঘন ঘন ও বিশাল এলাকাজুড়ে তীব্র দাবানল ওজোনস্তর পুনরুদ্ধার বিলম্বিত করতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দাবানল থেকে সৃষ্ট ধোঁয়া স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার বা ওজোনস্তর পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে এবং সেখানে ধোঁয়ার ক্ষতিকর কণাগুলো এক বছরেরও বেশি সময় পর্যন্ত অবস্থান করতে পারে। গত ডিসেম্বর ২০১৯ থেকে জানুয়ারি ২০২০ পর্যন্ত অস্ট্রেলিয়ায় সংঘটিত দাবানলের ওপর গবেষণায় এই ফল উঠে এসেছে। কাজেই ওজোনস্তর রক্ষায় দাবানল প্রতিরোধ করা প্রয়োজন। আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ, ক্যাম্পফায়ারে সতর্কতা অবলম্বন, শুকনো তৃণ থেকে যানবাহন দূরে রাখা, বাইরে ব্যবহৃত ইঞ্জিন রক্ষণাবেক্ষণ, আতশবাজি নিয়ন্ত্রণ, বাইরে রান্নার সময় সতর্কতা অবলম্বন, জ্বলন্ত কোনো কিছু যেখানে-সেখানে না ফেলা, সাবধানতার সঙ্গে ময়লা-আবর্জনা পোড়ানো ইত্যাদি বিষয় মেনে চললে দাবানল সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা অনেক কমে যায়।

বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে মন্ট্রিয়ল প্রটোকলে স্বাক্ষর করে। পরবর্তী সংশোধনীগুলোতেও (১৯৯৪, ২০০০, ২০০১, ২০১০ ও ২০২০) বাংলাদেশ স্বাক্ষর করেছে। বাংলাদেশ ওজোন সেলের ওয়েবসাইটে ‘প্রটোকলে স্বাক্ষরকারী হিসেবে ২০১০ সালের মধ্যে সিএফসি, হ্যালন ও কার্বন টেট্রাক্লোরাইড, ২০১৫ সালের মধ্যে মিথাইল ক্লোরোফর্ম, ২০৩০ সালের মধ্যে এইচসিএফসি এবং ২০৪০ সালের মধ্যে এইচএফসির আমদানি ও ব্যবহার পর্যায়ক্রমে বন্ধ করা বাংলাদেশের জন্য বাধ্যতামূলক’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

জাতিসংঘের পরিবেশ কর্মসূচির ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী ৩০ জুন ২০২৩ পর্যন্ত বহুপক্ষীয় তহবিল বাংলাদেশকে ১৭ লাখ ৫৭৪ হাজার ৫৮২ ডলার মঞ্জুর করেছে এবং ৩১ ডিসেম্বর ২০২১ পর্যন্ত মোট ১২ লাখ ৫৬০ হাজার ৫৬৮ ডলার ছাড় করেছে। সেই অনুযায়ী বাংলাদেশ ওজোনস্তর ধ্বংসকারী পদার্থগুলো নিয়ন্ত্রণের জন্য কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু সেই সব কাজের বিস্তারিত হালনাগাদ বিবরণ বাংলাদেশের ‘ওজোন সেল’ ওয়েবসাইটের ‘প্রকল্প’ সাবমেন্যুতে নেই। তবে প্রকাশনা সাবমেন্যুতে জুন ২০২২ পর্যন্ত কিগালি সংশোধনীভিত্তিক প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল ও কার্যক্রমসংক্রান্ত তথ্য পাওয়া যায়। প্রকল্প সাবমেন্যুতে তথ্য যুক্ত করা প্রয়োজন। এ ছাড়া অন্যান্য সাবমেন্যুতেও (যেমন : ওজোন হ্রাস সম্পর্কে প্রায়ই জিজ্ঞাসিত প্রশ্নাবলি, চলমান ও আসন্ন ঘটনাপ্রবাহ) তথ্য থাকা দরকার। ওজোনস্তর ক্ষয়কারী দ্রব্যগুলো ব্যবহারের বিরুদ্ধে ব্যক্তি পর্যায়ে সচেতনতা (সঠিক এসি ব্যবহার করা, ওজোন ক্ষয়কারী প্রসাধনী ব্যবহার না করা ইত্যাদি) বৃদ্ধির জন্যও কাজ করা প্রয়োজন।

আসলে ওজোনস্তর রক্ষা বা পুনরুদ্ধারের চ্যালেঞ্জ বহুমাত্রিক। এগুলো মোকাবেলা করার কৌশলও ভিন্ন ভিন্ন। এই কৌশলগুলোকে সমন্বিত করেই ওজোনস্তর রক্ষা বা পুনরুদ্ধারের কাজ এগিয়ে নিতে হবে।

লেখক : উপাচার্য, নর্থ বেঙ্গল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন

অনলাইন প্রতিবেদক
অনলাইন প্রতিবেদক
শেয়ার
১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীর প্রত্যাবর্তন
সংগৃহীত ছবি

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জৈবপ্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ‘কলোসাল বায়োসায়েন্সেস’ বিশ্বে প্রথমবারের মতো বিলুপ্ত কোনো প্রাণীকে পুনর্জীবিত করার দাবি করেছে। প্রতিষ্ঠানটি জানায়, প্রায় ১২,৫০০ বছর আগে বিলুপ্ত হওয়া বিশালাকৃতির ‘ডায়ার উলফ’ নেকড়েকে ক্লোনিং ও জিন সম্পাদনা প্রযুক্তির মাধ্যমে পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে।

কলোসালের বিজ্ঞানীরা প্রাচীন ডিএনএ বিশ্লেষণ করে ডায়ার উলফের মতো দেখতে তিনটি শাবক তৈরি করেছেন। এর মধ্যে দুটি পুরুষ শাবক ২০২৪ সালের ১ অক্টোবর জন্ম নিয়েছে এবং একটি স্ত্রী শাবক ২০২৫ সালের ৩০ জানুয়ারি জন্ম নিবে।

নেকড়ে শাবক দুইটির নাম দেওয়া হয়েছে রোমিউলাস ও রেমিউস।

এই গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ১৩ হাজার বছর পূর্বের ডায়ার উলফের পুরোনো একটি দাঁত ও ৭২ হাজার বছর আগের একই প্রাণীর পুরোনো একটি খুলির ডিএনএ। সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির সাহায্যে এ প্রজাতির নেকড়ের কোষে ১৪টি জিনে ২০টি পরিবর্তন আনা হয়েছে।

বর্তমানে এই তিনটি শাবক গোপন স্থানে নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্যে রাখা হয়েছে।

যেখানে ১০ ফুট উঁচু বেড়া, ড্রোন, নিরাপত্তাকর্মী ও লাইভ ক্যামেরার মাধ্যমে নজরদারি চালানো হচ্ছে।

এ ছাড়া কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ম্যামথ, ডোডো ও তাসমানিয়ান টাইগারকে ফিরিয়ে আনার প্রকল্প নিয়ে কাজ করছে। তবে ডায়ার উলফের পুনর্জন্ম নিয়ে তাদের কাজ এখন পর্যন্ত গোপন ছিল। বিজ্ঞানীদের মতে, এই প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিজ্ঞানের নতুন একটি দিগন্ত খুলে দিয়েছে।

তবে এটি নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। 

অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, বিপন্ন প্রাণীদের রক্ষায় বেশি জোর দেওয়া উচিত। তাদের মতে, বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া প্রাণীকে ফিরিয়ে আনার অর্থ হচ্ছে প্রকৃতির নিজস্ব ভারসাম্য নষ্ট করা। যদিও কলোসাল বায়োসায়েন্সেস ভবিষ্যতে সিআরআইএসপিআর প্রযুক্তির মাধ্যমে আরো প্রাণী ফিরিয়ে আনার পরিকল্পনা করছে।

সূত্র : সি এন এন

মন্তব্য

সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সভ্যতা ও বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ বাংলাদেশের ‘শীতল পাটি’
সংগৃহীত ছবি

‘আসুক আসুক মেয়ের জামাই, কিছু চিন্তা নাইরে, আমার দরজায় বিছাই থুইছি, কামরাঙা পাটি নারে’—পল্লি কবি জসীম উদ্দিন তাঁর নকশী কাঁথার মাঠ কাব্যগ্রন্থে কামরাঙা নামক শীতল পাটির বর্ণনা এভাবে দিয়েছেন।

শীতল পাটি বাংলা সুপ্রাচীন এক কুটির শিল্পের নাম। আমাদের সভ্যতা ও ঐতিহ্যের অংশ এই শীতল পাটি। বাংলাদেশের শীতল পাটি বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

আগেকার দিনে গরমের সময়ে যখন বিদ্যুৎ ছিল না তখন হাত পাখা যেমন ব্যবহৃত হতো তেমনি শীতল পাটিও ছিল ঘরে ঘরে। কাঁথা বা তোশকের উপরে এই পাটি বিছিয়ে দেয়া হতো এবং এতে গা এলিয়ে দিলে হৃদয় মন সব শীতল হয়ে যেতো বলেই এর নাম শীতল পাটি। এই শীতল পাটির প্রধান উপাদান হলো মোরতা এবং এটি একটি নল খাগরা জাতীয় উদ্ভিদ। এ গাছ জঙ্গলে, ঝোঁপে ঝাড়ে, রাস্তার ধারে, পাহাড়ের পদতলে আপনা- আপনি জন্মায়।

এই গাছ থেকে এর বাকল পাতলা করে কেটে সংরক্ষণ করে বোনা হয় শীতল পাটি। 

শীতল পাটি বিভিন্ন ডিজাইনে বোনা হয়। বিভিন্ন রঙের সংমিশ্রণে কখনো ফুল, পাখি, লতাপাতা কখনো বা জ্যামিতিক আকৃতি আবার মসজিদ, মন্দিরের আকৃতিতেও বোনা হয়। কখনো বা রং ছাড়াও বোনা হয়।

অসম্ভব ধৈর্য আর চমৎকার নৈপুণ্যের কাজ করে থাকেন কারিগরেরা। নারী-পুরুষ একসাথে এ কাজ করে থাকেন। তবে বেশিরভাগ সময়ে নারীরাই শীতল পাটি বোনার কাজ করেন।

অতীতে জমিদার বাড়ি, সরকারি অফিস-আদালতে শীতল পাটির ব্যবহার ছিল। বর্তমানে শীতল পাটির ব্যবহার পূর্বের তুলনায় কমে গেছে।

কিন্তু শৌখিন মানুষের ঘরে এখনো শীতল পাটি লক্ষ্য করা যায়। যেমন সাজসজ্জার উপকরণ, সুকেস, ব্যাগ, চশমার খাপ ইত্যাদিতে শীতল পাটির ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিয়ের উপকরণ হিসেবে শীতল পাটির ব্যবহার হয়ে আসছে বহুযুগ ধরে। 

বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলার মধ্যে চট্টগ্রাম, খুলনা, পটুয়াখালী, সিলেট ও ঝালকাঠি অঞ্চলে এখনো শীতলপাটি তৈরি হয়। তবে সব থেকে উন্নত ও উৎকৃষ্ট মানের শীতল পাটি পাওয়া যায় চট্টগ্রাম ও সিলেটে। বর্তমানে শীতল পাটি উৎপাদন কম হওয়ার কারণ কারিগরেরা ন্যায্য মূল্য পায়না বলে অন্য পেশার সাথে তারা জড়িত হচ্ছে। যদি সরকারি ভাবে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কারিগরদের সুযোগ- সুবিধা দেওয়া সম্ভব হয় তবে আমাদের এই ঐতিহ্য টিকে থাকার সম্ভাবনা তৈরি হবে।

লেখক : বিলকিস নাহার মিতু
শিক্ষার্থী, সরকারি বিএল কলেজ, খুলনা

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
রেল উপদেষ্টার কাছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকের খোলা চিঠি
ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ।

অন্তর্বর্তী সরকারের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খানের কাছে খোলা চিঠি লিখেছেন ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরিফ। তিনি  রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীসম্পদ বিভাগের উপপ্রধান।

রেল উপদেষ্টাকে লেখা খোলা চিঠিতে তিনি বলেন, স্বাধীন বাংলাদেশের বয়স পেরিয়েছে ৫৪ বছর। অথচ এই দীর্ঘ সময়েও দেশের প্রতিটি বিভাগের সাথে রেল যোগাযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।

একবিংশ শতাব্দীর আধুনিক প্রযুক্তির যুগেও যখন দেশে মেট্রোরেল, হাই-স্পিড ট্রেন, উন্নত স্টেশনের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হচ্ছে, তখনও রাজশাহীর মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগ চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রেল যোগাযোগের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। এটি নিঃসন্দেহে দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের একটি বড় সীমাবদ্ধতা।

 ড. মো. হেমায়েতুল ইসলাম আরো বলেন, বিশেষ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম রেল যোগাযোগে কিছু সামান্য স্থানে ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন স্থাপনই কেবল যথেষ্ট, যেমন- আব্দুলপুর হতে রাজশাহী পর্যন্ত ডাবল ডুয়েল গেজ লাইন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা সংযোগ রেলপথে আপগ্রেড, এই রেলপথ চালু হলে রাজশাহী অঞ্চল তথা উত্তরাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি উৎপাদন, পর্যটন, শিক্ষা ও চিকিৎসা খাতে অভাবনীয় উন্নয়ন ঘটবে। বিশ্ববিদ্যালয় শহর, কৃষিভিত্তিক শিল্পাঞ্চল, মৎস্য ও আম রপ্তানির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে রাজশাহীর রয়েছে এক বিশাল সম্ভাবনা।

কিন্তু এই সম্ভাবনার দ্বার খোলার জন্য প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন ও সরাসরি রেল যোগাযোগ।

বর্তমানে রাজশাহী হতে চট্টগ্রামগামী যাত্রী বা পণ্য পরিবহন করতে হলে একাধিক বার ট্রেন বদল, সময় অপচয় এবং বাড়তি খরচ বহন করতে হয়। এতে উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী এবং সাধারণ মানুষ অনুৎসাহিত হন। আর এই বাধাগুলো দূর করতে হলে প্রয়োজন দ্রুত সময়ের মধ্যে রাজশাহী-চট্টগ্রাম সরাসরি রেল যোগাযোগ স্থাপন।

তিনি আরো লিখেছেন, মাননীয় উপদেষ্টা, রেল যোগাযোগ শুধু একটি যানবাহন নয়, এটি একটি অঞ্চলের জীবনরেখা। এটি যেমন পণ্য পরিবহনে ব্যয় কমায়, তেমনি পরিবেশবান্ধব ও জনবান্ধব যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবেও প্রশংসিত। রেলপথ উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের প্রতিটি বিভাগকে একই সুঁতোয় গাঁথা সম্ভব।

আমরা চাই, আপনি এই বাস্তবতাকে অনুধাবন করবেন এবং দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে রাজশাহী হতে চট্টগ্রাম পর্যন্ত একটি কার্যকর, আধুনিক ও নিরবচ্ছিন্ন রেল যোগাযোগ প্রতিষ্ঠা করবেন। এটা কেবল একটি বিভাগের চাওয়া নয়—এটা দেশের সার্বিক অগ্রগতির জন্য অপরিহার্য।

"রেল সংযোগ মানে অর্থনৈতিক সংযোগ, প্রগতির সংযোগ"—এই স্লোগানকে সামনে রেখে আমরা, রাজশাহীসহ সমগ্র উত্তরাঞ্চলের জনগণ, আপনার সদয় দৃষ্টি ও ত্বরিত পদক্ষেপ কামনা করছি।

মন্তব্য

পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
পোল্যান্ডের ভূতুড়ে বনের রহস্য
সংগৃহীত ছবি

অনেকেই রহস্যময় ও গা ছমছম করা জায়গায় ঘুরতে যেতে পছন্দ করেন। যা চলতি ভাষায় গোস্ট হান্টিং নামে পরিচিত। এমন স্থানগুলোতে ঘুরতে গিয়ে যে ধরনের অভিজ্ঞতা লাভ করা যায়, তা রোমাঞ্চকর। পোল্যান্ডের ক্রুকেড ফরেস্ট এমনই একটি রহস্যময় স্থান।

পোল্যান্ডের উত্তর-পশ্চিমে, পশ্চিম পোমেরানিয়ার গ্রিফিনো শহরের কাছে নোভা জার্নোভো গ্রামে অবস্থিত এই ক্রুকেড ফরেস্ট। দেখতে খুব সুন্দর এই অরণ্যটির প্রধান আকর্ষণ এর অদ্ভুত আকৃতির পাইনগাছ। প্রায় ৪০০টি গাছের মধ্যে প্রতিটি গাছের গোড়া থেকে ৯০ ডিগ্রি কোণে বাঁকানো এবং তারপর ওপরের দিকে সোজা হয়ে উঠেছে। এসব গাছের এই বিশেষ আকৃতিই তৈরি করেছে নানা রহস্য, যা পর্যটকদের প্রতিবছর আকর্ষণ করে।

ক্রুকেড ফরেস্টের এই গাছগুলোর অস্বাভাবিক আকৃতির কারণ আজও অজানা। এ ব্যাপারে বিভিন্ন তত্ত্ব দেওয়া হয়েছে, তবে কোনোটি সঠিকভাবে প্রমাণ করা যায়নি। কথিত রয়েছে যে ১৯৩০ সালে স্থানীয় কাঠমিস্ত্রিরা বিশেষ উদ্দেশ্যে গাছগুলোকে বাঁকিয়েছিলেন। হয়তো নৌকা বা আসবাবপত্র তৈরি করতে।

তবে এর প্রকৃত কারণ এখনো রহস্যময়। রহস্যে ঘেরা হলেও গাছগুলোর অসাধারণ সৌন্দর্য এটিকে পোল্যান্ডের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটনস্থল হিসেবে পরিচিত করেছে।

সূত্র : অল দ্যাটস ইন্টারেস্টিং

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ