<p style="text-align:justify">২১ নভেম্বর দিনটি চির-অম্লান হয়ে থাকবে আশরাফুল ইসলামের জীবনে। ষাটে পা দেওয়া এই রিকশাচালক জীবনভর পেডাল মেরে মানুষকে পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যে। সেদিন নিজের রিকশায় যাত্রীর আসনে বসেন তিনি। চালকের আসনে বসে একমাত্র ছেলে রাব্বি হোসেন তাকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ঘুরিয়ে দেখান! রিকশার পেডাল মেরে ঘাম ঝরিয়ে যে বাবা তাকে বড় করে তুলেছেন, তার স্বপ্ন তিনি পূরণ করেছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="বাবার পেডালে সন্তানের দিনবদল" height="67" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/11.November/30-11-2024/9999.jpg" style="float:left" width="259" />ছেলেকে বিদায় দিয়ে ক্যাম্পাস ছেড়ে আসার পর আশরাফুলের চোখের জল আর বাঁধ মানেনি। তার মনটা তখন ভরে ওঠে দুরন্ত আবেগ আর আনন্দে। নিজেকে তখন দুনিয়ার সবচেয়ে সুখী মানুষ মনে হচ্ছিল। তার স্বপ্ন আর সংকল্প পূরণ হয়েছে!</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="সীমাহীন দুর্নীতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুর, অধরা অভিযুক্তরা" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732934981-76eaff23521bb0f213a6512bf21b3ba9.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>সীমাহীন দুর্নীতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী বিপুর, অধরা অভিযুক্তরা</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/30/1452212" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify"><strong>কৈশোরেই পেডালে পা</strong></p> <p style="text-align:justify">লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা উপজেলার সানিয়াজান ইউনিয়নের বাসিন্দা আশরাফুল। আট ভাই-বোনের মধ্যে তিনি পঞ্চম। বাবা কৃষক। অভাবের কারণে পাঠশালায় যাওয়া হয়নি। বাবার সঙ্গে মাঠে কাজ করতেন। ১৫ বছর বয়সে রিকশার পেডালে পা। তত দিনে লালমনিরহাটে তিস্তা ব্যারাজের কাজ শুরু হলো। অন্য অনেকের মতো সেখানে কাজ জুটল আশরাফুলের। বছর দুয়েকের মতো দারোয়ান হিসেবে কাজ করেছেন। এরপর স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে ছিলেন আরো দুই বছর।</p> <p style="text-align:justify"><strong>ঠেকে আর ঠকে শেখা</strong></p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong><strong>আরো পড়ুন</strong></strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><strong><img alt="জানুয়ারির মাঝামাঝি ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে : ড. কবিরুল বাশার" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732934616-23617c4d8c531a7456aecb012abafc3c.jpg" width="100" /></strong></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p><strong>জানুয়ারির মাঝামাঝি ডেঙ্গুর প্রকোপ কমবে : ড. কবিরুল বাশার</strong></p> </div> </div> </div> <strong><a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/national/2024/11/30/1452211" target="_blank"> </a></strong></div> </div> <p style="text-align:justify">একসময় ওয়ার্কশপটা বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশে যোগ দেওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পড়াশোনা একেবারে না জানায় হয়নি। আশ্বিন-কার্তিক মাসে উত্তরবঙ্গের জেলাগুলোতে মঙ্গা লাগে। তখন কাজের সন্ধানে পরিচিত একজনের হাত ধরে আশরাফুল চলে আসেন ঢাকায়। ঠাঁই নেন শনির আখড়ায় এক রিকশা গ্যারেজে। একদিন রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন রাজপথে। ঢাকার পথঘাট সবই তখন অচেনা। তাই প্রথম প্রথম ভাড়া নিয়ে অনেক যাত্রী ঠকাত।</p> <p style="text-align:justify">এ ব্যাপারে আশরাফুল বলেন, ‘আমি তো সাইনবোর্ড দেখে পড়তে পারতাম না। অনেকে রায়েরবাগ বলে রায়েরবাজারে নিয়ে যেত। কিন্তু দূরত্ব অনুযায়ী ভাড়া দিত না।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচসহ আজকে টিভিতে খেলা ( ৩০ নভেম্বর)" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732935340-06aa4ddfd42c1299b27254ea17aab036.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>বাংলাদেশ-ওয়েস্ট ইন্ডিজ ম্যাচসহ আজকে টিভিতে খেলা ( ৩০ নভেম্বর)</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/sport/2024/11/30/1452213" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">গরমের এক দুপুরে প্রচণ্ড খিদে লেগেছে আশরাফুলের। গ্যারেজের দিকে যাওয়ার সময় যাত্রী জগন্নাথ হলে যেতে চাইল। আশরাফুল ভাবলেন, খ্যাপটা মেরে তারপর খেতে যাবেন। কিন্তু জগন্নাথ হলে নয়, সেই লোক কমলাপুর থেকে আশরাফুলকে নিয়ে গেল জগন্নাথ কলেজে (তখনো বিশ্ববিদ্যালয় হয়নি)। ভাড়াও দিল কম।</p> <p style="text-align:justify">সেখানে এক রিকশাচালকের কাছে আশরাফুল জানতে চাইলেন, ‘এটা কোন জায়গা, ভাই?’ রিকশাচালকের উত্তরে বুঝলেন এবারও ঠকেছেন। টের পেলেন পড়াশোনা না জানার ফলটা এই। সেদিন প্রতিজ্ঞা করলেন—যত কষ্টই হোক, ছেলেমেয়েকে অনার্স-মাস্টার্স পাস করাবেন।</p> <p style="text-align:justify"><strong>এক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে, দুই মেয়ে কলেজে</strong></p> <p style="text-align:justify">সেই থেকে আশরাফুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বা আশপাশে রিকশা চালাতেন বেশি। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের ঘোরাফেরা দেখে ভাবতেন, একদিন তার সন্তানও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে। বললেন, ‘তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খ্যাপ মারতাম বেশি। আর দেখতাম এখানে ছাত্ররা কিভাবে পড়ালেখা করে। কিভাবে চলে। ভাবতাম, একদিন আমার ছেলেমেয়েরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়বে।’</p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"><strong>আরো পড়ুন</strong> <div class="card"> <div class="row"> <div class="col-4 col-md-3"><img alt="শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ" height="66" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/11/30/1732934493-1a6fcda445d68d1a332e182be8ef2409.jpg" width="100" /></div> <div class="col-8 col-md-9"> <p>শনিবার রাজধানীর যেসব মার্কেট বন্ধ</p> </div> </div> </div> <a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/dhaka/2024/11/30/1452210" target="_blank"> </a></div> </div> <p style="text-align:justify">আশরাফুলের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিন সন্তানের মধ্যে বড় মেয়ে তারজিনা আক্তার স্থানীয় কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে মাস্টার্সের ছাত্রী। ছোট মেয়ে এলমা আক্তার আলীমুদ্দিন সরকারি কলেজে বাংলায় অনার্সে পড়ছেন। একমাত্র ছেলে রাব্বি হোসেন এখন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান বিভাগে পড়ছেন। তিনি বলেন, ‘বাবা একজন সত্যিকারের যোদ্ধা। বার্ধক্যে এসেও আমাদের জন্য হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। যেদিন তাকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে পারব, সেদিন শান্তি মিলবে আমাদের।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>বিরুদ্ধ স্রোতের সঙ্গে লড়েছেন</strong></p> <p style="text-align:justify">তিন ছেলেমেয়েকে পড়াতে গিয়ে আশরাফুলকে অনেক কষ্ট করতে হয়েছে। বিশেষ করে মেয়েদের পড়ানোর ব্যাপারে বিপরীত স্রোতের সঙ্গে লড়তে হয়েছে। এসএসসির পর অনেকে বলেছিল, ‘মেয়েদের আর পড়িয়ে কী হবে? বিয়ে দিয়ে দাও।’</p> <p style="text-align:justify">বড় মেয়ে তারজিনা আক্তার বললেন, ‘আত্মীয়-স্বজন থেকে শুরু করে অনেকেই বিয়ের জন্য পীড়াপীড়ি করেছিল। আসলে বাবা না চাইলে কবেই আমার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যেত। এত পরিশ্রমের পরও তিনি কখনো আমাকে পড়াশোনার বাইরে অন্য কিছু ভাবতে বলেননি।’</p> <p style="text-align:justify">উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে আশরাফুল বলেন, ‘আমার যত অভাবই থাকুক, এখন মনের ভেতর আনন্দ লাগে। রিকশায় যেতে যেতে কেউ যখন জানতে চায়, ছেলেমেয়েরা কী করে, তখন বলতেও ভালো লাগে—এক ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ে, মেয়েরা কলেজে। যাত্রীরাও বাহবা দেয়।’</p> <p style="text-align:justify"><strong>ঘামে ভেজা জীবন</strong></p> <p style="text-align:justify">প্রায় ৩৪ বছর ধরে ঢাকায় রিকশা চালান আশরাফুল। বললেন, ‘মানুষ এখন অনেক বেশি টাকার পেছনে ছুটছে। আগে এমনটা ছিল না।’</p> <p style="text-align:justify">এখন ধলপুরে একটি রিকশা গ্যারেজে থাকেন তিনি। শরীর আর আগের মতো সায় দেয় না। বিছানায় গেলে ব্যথায় কাতরাতে হয়। প্যারাসিটামল খেয়ে তবেই রিকশা নিয়ে বের হন। অবশ্য আগের মতো গোটা দিন চালাতে পারেন না।</p> <p style="text-align:justify">দুপুরের খাবারের পর বের হন। ফিরতে ফিরতে রাত ১২টার মতো বেজে যায়। দৈনিক ৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মতো আসে। এই আয়ে সংসার চালাতে রীতিমতো হিমশিম খেতে হয়। তার ওপর ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার খরচ তো আছেই। বললেন, ‘দিন দিন জিনিসপত্রের দাম যে হারে বাড়ছে, চলতে খুব কষ্ট হয়।’</p> <p style="text-align:justify">আশরাফুল বলেন, ‘লোকে ধনসম্পদ গড়ে। আমি ছেলেমেয়েদের গড়েছি। ওরাই আমার সম্পদ। ওরা নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত হবে। সুখে-শান্তিতে থাকবে—এর বেশি কিছু চাওয়ার নাই আমার।’ </p>