কিছু কাজ মানুষকে জান্নাতের পথ দেখায়, মানুষকে জান্নাতে পৌঁছতে সহায়ক হয়। মানুষকে আল্লাহর নেক বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে। আবার কিছু কাজ মানুষকে আল্লাহর রহমত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়, মানুষকে জাহান্নামের দিকে ঠেলে দেয়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
যে দুই গুণে মানুষ বেশি জান্নাতি হবে
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা

তিনি বলেন, ‘আল্লাহভীতি (তাকওয়া) ও উত্তম চরিত্র। ’ আবার তাঁকে প্রশ্ন করা হলো, কোন কাজটি সবচেয়ে বেশি পরিমাণ মানুষকে জাহান্নামে নিয়ে যাবে। তিনি বলেন, ‘মুখ ও লজ্জাস্থান। ’ (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৪)
উপরোক্ত হাদিসে প্রিয় নবীজি (সা.) জান্নাতে যাওয়ার মৌলিক দুটি কাজের কথা উল্লেখ করেছেন, যা অধিক পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নিয়ে যাবে।
আল্লাহভীতি
তাকওয়া বা আল্লাহভীতি হচ্ছে সব ভালো কাজের উৎস, পুণ্য কাজের জন্য পথের দিশারি। তাকওয়া হচ্ছে ভালো কাজের মাধ্যমে আল্লাহর আজাব থেকে বেঁচে থাকা। আগের ও পরের সব উম্মতকে তাকওয়া অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আমি নির্দেশ দিয়েছিলাম তোমাদের আগে যাদের কিতাব দেওয়া হয়েছিল তাদের এবং তোমাদেরও; যেন তোমরা তাকওয়া অবলম্বন করো।
উত্তম চরিত্র
যে কাজগুলো অধিক পরিমাণ মানুষকে জান্নাতে নেবে, তার মধ্যে দ্বিতীয়টি হলো উত্তম চরিত্র। আমাদের মহানবী (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর নিশ্চয়ই আপনি মহান চরিত্রের ওপর অধিষ্ঠিত। ’ (সুরা : কালাম, আয়াত : ৪)
মহৎ চরিত্র কী? এর অর্থ নির্ধারণে কয়েকটি অভিমত আছে। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, মহৎ চরিত্রের অর্থ মহৎ দ্বিন।
উত্তম চরিত্রের কিছু শাখা রয়েছে, যেগুলো মানুষকে প্রকৃত মুত্তাকি হতেও সাহায্য করে। নিম্নে সেই শাখাগুলো তুলে ধরা হলো—
সুবিচার বা ইনসাফ : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তোমরা সুবিচার করো। কেননা তা তাকওয়ার নিকটবর্তী। ’ (সুরা : মায়িদা, আয়াত : ৮)
ক্ষমাশীলতা : পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুকে উদ্দেশ করে বলছেন, ‘আপনি ক্ষমাশীলতা অবলম্বন করুন এবং মানুষকে ভালো বিষয়ের আদেশ করুন। আর মূর্খদের উপেক্ষা করুন। ’ (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৯৯)
নবীপ্রেম : নবীজি (সা.)-এর প্রতি ভালোবাসা, শ্রদ্ধা ও তাঁর অনুসরণ মানুষকে উত্তম চরিত্র অবলম্বন করতে বাধ্য করে এবং প্রকৃত মুত্তাকিতে রূপান্তর করে। নবীজির প্রতি শ্রদ্ধার গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা আল্লাহর রাসুলের সামনে নিজেদের কণ্ঠস্বর নিচু করে, আল্লাহ তাদের অন্তরকে তাকওয়ার জন্য পরিশোধিত করেছেন। তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও মহা পুরস্কার। (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৩)
সম্পর্কিত খবর

পরিবারের ৩৬ সদস্যকে হারিয়ে শোকে মুহ্যমান এক ফিলিস্তিনি নারীর চিঠি
ড. গাদা আদিল

ড. গাদা আদিল তৃতীয় প্রজন্মের একজন ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তু এবং প্যালেস্টাইন ফর আলবার্টার সক্রিয় কর্মী। বর্তমানে তিনি কানাডার আলবার্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অতিথি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্দেশে লেখা তাঁর একটি চিঠি আলজাজিরায় প্রকাশিত হয়। পাঠকদের জন্য তা অনুবাদ করেছেন মুহাম্মাদ হেদায়াতুল্লাহ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন, ২৬ অক্টোবর বৃহস্পতিবার গাজায় আরেকটি হত্যাযজ্ঞের খবর শুনে আমার ঘুম ভাঙে। এবার ইসরায়েল আমার নিজ পরিবারের সদস্যদের হত্যা করেছে। হত্যাকাণ্ডটি উত্তর অংশের নয়; বরং গাজা উপত্যাকার দক্ষিণ অংশের খান ইউনুস শরণার্থী শিবিরে ঘটেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর তথ্য অনুসারে যে স্থানটি নিরাপদ থাকার কথা ছিল। আমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা যে আবাসিক ভবনে ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে তা পুরোপুরি ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছে।
সেদিন এখানকার মানুষ যেন নতুন কোনো ভূমিকম্প অনুভব করেছিল। তারা মানুষের তৈরি ভয়াবহ ভূমিকম্প অনুভব করে। এতে ৪৭ জন পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়ে সৃষ্টিকর্তার কাছে ফিরি যায়। তাদের মধ্যে ৩৬ জন আমার পরিবারের সরাসরি সদস্য।
জনাব বাইডেন, আড়াই বছর আগে হোয়াইট হাউজে জর্জ ফ্লয়েডের বিচারে দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রসঙ্গে আপনি বলেছিলেন, ‘যথেষ্ট, যথেষ্ট হয়েছে। এই নির্বোধ হত্যাকাণ্ড যথেষ্ট হয়েছে।’ তখন আপনি ব্ল্যাক লাইভস ম্যাটার দাবিতে সোচ্চার হওয়া মানুষের সাধারণ উদ্দেশ্য সম্পর্কে কথা বলছিলেন। আর ওইসব লোক তখন কাঁদছিলেন।
তবে আজ আমার পরিবারের সদস্যদের হত্যা করা হয়েছে; অথচ আপনি স্বীকার করতেও রাজি নন যে এমন কোনো হত্যাকাণ্ড ঘটছে। বরং আপনি ইসরায়েলকে উৎসাহমূলক শব্দ উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। আজ আপনি বলছেন, ‘আরো, আরো, এসব অর্থহীন হত্যাকাণ্ড আরো বেশি হোক।’ আর ইসরায়েল আপনার ইচ্ছা পূরণ করতে পেরে খুবই খুশি।
আমেরিকার পুলিশ বাহিনীর হাতে যখন তাদের কেউ নিহত হয় তখন আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গরা ওই নিহত ব্যক্তির নাম উচ্চৈস্বরে বলে সম্মান জানায়। যেহেতু ইসরায়েলি বাহিনী আমার পরিবারকে হত্যা করছে আমি তাদের নাম উচ্চারণ করে তাদের সম্মান জানাতে চাই।
জনাব বাইডেন, আজ ৭৯ বছর বয়সী আমার নানা নায়েফ আবু শাম্মালা ও তাঁর ৭৬ বছর বয়সী স্ত্রী ফাতিয়াকে হারিয়ে গভীরভাবে শোকাহত।তারা উভয়ে ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল প্রতিষ্ঠার সময়ে ফিলিস্তিনিদের জাতিগত নির্মূল অভিযান ‘নাকাবা’ থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন।
ফিলিস্তিনের অন্য ৫৩০টি শহর গ্রামের সঙ্গে গাজার উত্তরে প্রায় ৩০ কিলোমিটার (প্রায় ২০ মাইল) দূরের বেইট দারাস গ্রামটি জাতিগতভাবে ধ্বংস করা হয়। নাকবা থেকে রক্ষা পাওয়া সাড়ে সাত লাখ শরণার্থীর অনেকের মতো ফাতিয়া ও নায়েফ খান ইউনিস শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নেন। নিজ গ্রামে ফেরা পর্যন্ত একমাত্র অস্থায়ী এ শিবিরে তাদের থাকার কথা ছিল। নায়েফ ও ফাতিয়া আর আমাদের মধ্যে নেই। জাতিসংঘ প্রদত্ত নিজ ভূমিতে ফেরার অধিকার প্রয়োগের আগেই তারা মারা গেছে।
বোমা হামলায় নিহদের মধ্যে তাদের তিন মেয়েও রয়েছ। খান ইউনিসের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী ও হাসিখুশি মুখের অধিকারী আয়েশা ও তার বোন দৌলত যে আমার পরিবারের সবচেয়ে সুন্দরী নারীদের একজন। কয়েকদিন আগে সে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে পরিবারকে দেখতে এসেছিল। এবং কনিষ্ঠ বোন উমাইমা তার মেয়ে মালাকের সঙ্গে এসেছিল। ক্রমাগত বোমাবর্ষণ থেকে রক্ষা পেতে তারা পরিবারের বাড়িতে ছিলেন।
নায়েফ ও ফাতিয়ার চার ছেলে হাসান, মাহমুদ, মোহাম্মদ ও জুহাইর এবং তাদের স্ত্রী ফাদিয়া, নিমা ও এশাকেও হত্যা করা হয়। ভাগ্যক্রমে একমাত্র জুহাইরের স্ত্রী বেঁচে যান। কারণ সে অন্য পরিবারের কাছে তাদের মৃতদের জন্য সমবেদনা জানাতে গিয়েছিলেন। নিহতদের মধ্যে হাসানের তিন সন্তান মোহাম্মদ, ইসমাইল ও সালমাও রয়েছে। নায়েফ ও ফাতিয়ার জীবিত ছেলে ইবরাহিম তার বড় ছেলে নায়েফকে হারিয়েছে। দাদার নামে তার নাম রাখ হয়। কেদেয়াহ ও আল্লাহাম পরিবারের সদস্যদের যারা আমার দাদার বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিল তাদের সবাইকেও হত্যা করা হয়েছে।
জনাব বাইডেন, যেন এটুকুই যথেষ্ট ছিল না। আমার দাদির বাড়িতেও বোমা হামলা হয়েছে। তার নাম উম সাইদ। ৯২ বছর বয়সী আমার দাদিও বেইত দারাস থেকে এসেছিলেন। তিনিও ৪৮ সালের নাকবা থেকে প্রাণে বেঁচেছিলেন। তিনি তার মেয়ে নাজাতকে নিয়ে খান ইউনিসের বাড়িতে থাকতেন। উভয়েই এখন ধ্বংসস্তূপের নিচে বিশ্রামের জায়গা খুঁজে পেয়েছেন। মানুষ তাদের লাশ বের করার চেষ্টা করছে তবে পারেনি। তার দুই ছেলে মারওয়ান ও আসাদ এবং মেয়ে মুনার পাশের বাড়িতেও বোমা হামলা হয়।
মারওয়ান বেঁচে গেলেও তার স্ত্রী সুহায়লা ও চার সন্তান মোহাম্মদ, মাহমুদ, আয়া, শাহদ মারা গেছেন। মুনাও তার দুই ছেলে আমজাদ ও মোহাম্মদের সঙ্গে মারা যান। আসাদ, তার স্ত্রী ইমতিয়াজ এবং তাদের ছেলে মেডিকেলের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র আবদুল রহমানও চলে গেছে।
আসাদের বাড়িসহ তার ছোট মুদির দোকান নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। আমরা দেশে বেড়াতে গেলে আমার ছেলে আজিজের কাছে স্থানটি খুবই প্রিয় জায়গা ছিল। খান ইউনুস শিবিরে আসাদ খুবই ভালো মানুষ হিসেবে পরিচিতি ছিলেন। কারণ তিনি খুবই অল্প মূল্যে জিনিসপত্র বিক্রি করতেন। তার কাছে মোটা খাতা থাকলেও প্রায়ই তিনি বাকির অর্থ সংগ্রহ করতে ভুলে যেতেন কিংবা ক্ষমা করে দিতেন। আজ আসাদের সুন্দর হাসি, তার বিনম্র আচরণ, তার পরিবার, তার দোকান সবই আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
বোমা বর্ষণের সময় আমাদের অনেক আত্মীয় ও প্রতিবেশী আসাদের দোকানে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে যায়। সে মানুষের ফোন ও ব্যাটারি বিনামূল্যে চার্জ করতে দিতে সৌর বিদ্যুৎ কিনেছিল। তখন অনেকে তার সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহার করতে তার দোকানে যায়। এখন সবাই আমাদের ছেড়ে চলে গেছে। নিহতদের মধ্যে আকরাম, রিমন, বৈরুত, ইমাদ, নেইমাসহ আরো কয়েকজন রয়েছে যাদের নাম মনে করতে পারছি না।
জনাব বাইডেন, আপনি কি বিশ্বাস করেন, একজন ইসরায়েলি মায়ের ব্যথা একজন ফিলিস্তিনি মায়ের ব্যথার চেয়ে বেশি আঘাত করে? একজন ইসরায়েলি শিশুর জীবন কি ফিলিস্তিনি শিশুর জীবনের চেয়ে বেশি মূল্যবান? গাজায় শিশুদের গণহত্যাকে উৎসাহিত করতে আপনি এখন যা করছেন আমার কাছে এটিই একমাত্র ব্যাখ্যা।
আমি যখন শিশুদের নিয়ে কথা বলি তখন আমি তাদের নিজস্ব নাম, মুখ, হাসি ও স্বপ্নসহ মানব শিশুদের কথা বলি। আপনার সহযোগিতায় ইসরায়েল চার হাজারের বেশি শিশুর জীবন কেড়ে নিয়েছে, যার মধ্যে নবজাতকও রয়েছে। চার হাজার সুন্দর আত্মাকে আমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তাদের মধ্যে আমার বোনের নাতনি জুলিয়া আবু হুসেন রয়েছে যার বয়স ছিল মাত্র তিন বছর। আমার ভাগ্নে আমজাদ ও তার স্ত্রী রাওয়ান জুলিয়াকে আমার বোন সামিয়ার পরিবারের সঙ্গে নিরাপত্তার খোঁজে খান ইউনিসে নিয়ে যান। গাজার উত্তরে তাদের বাড়ি থেকে সেখানে যেতে তিন দিন লাগে। অথচ তা ৩০ মিনিটেরও কম সময়ের দূরত্বে অবস্থিত। ইসরায়েলি সেনাদের স্থান ত্যাগের আহ্বান শোনা গেলেও তাদের কোনো নিরাপত্তা দেওয়া হয়নি।
বোমাবর্ষণ শুরু হওয়ার পর রাওয়ান জুলিয়াকে নিজ কোলে নিয়ে পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে রান্নাঘরে চলে যায়। ইসরায়েলি বোমায় আমাদের বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জানালাগুলো ভেঙে বেশ কিছু টুকরো ঘরে ঢুকে পড়ে। জুলিয়া তার মায়ের কোলে মারা যায়। আর তার খালা নাজাম মারাত্মকভাবে আহত হয়।
জনাব বাইডেন, অতএব এখানে এমন শিশু রয়েছে যার জীবন এমন যুদ্ধের সহিংসতায় কেড়ে নেওয়া হয়েছে যা আপনি আন্তরিকভাবে সমর্থন করেছেন। আপনি কি বিষয়টি কল্পনা করতে পারছেন? আপনি কি সত্যিই এসব ট্র্যাজেডির মাত্রা বুঝতে পারছেন? নাকি আপনি এখনও প্রশ্ন করতে চাচ্ছেন যে ইসরাইল কি ফিলিস্তিনিদের গণহত্যার জন্য দোষী?
গাজায় প্রতিদিন আমার আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের নিহত হওয়ার কথা শুনছি। আমি নানা উপায়ে মৃত্যুর খবর বর্ণনার চেষ্টা করছি। মারা গেছে, চলে গেছে, তাদের আত্মা জান্নাতে গেছে এমন ভাষায় আমি মৃত্যুর খবর দিচ্ছি। এদিকে মিডিয়া আমাকে বলছে যে তারা হয় মৃত নয়; কিংবা তারা মৃত, তবে তারা সন্ত্রাসী।
গত গ্রীষ্মে গাজায় গেলে আমার দাদি উম সাইদ আমাকে তার এমব্রয়ডারি করা পোশাক দিয়েছিল। তিনি জোরাজুরি করে করেছিলেন যেন আমি তা নিয়ে কানাডায় ফিরি। আমি তার কথা রাখতে পেরে কৃতজ্ঞ। আজ উম সাইদও তার বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে পড়ে আছে। তাকে মনে রাখার জন্য আমার কাছে কেবল তার এমব্রয়ডারি করা পোশাকই রয়েছে।
আমি নিশ্চিত, বর্তমানে যা ঘটছে এসব ইতিহাস লেখা হলে আপনি তাতে এমন ব্যক্তি হিসেবে থাকবেন যে ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে ইসরায়েলি গণহত্যাকে উৎসাহ দিয়েছে ও শক্তি যুগিয়েছে। আপনাকে এমন একজন হিসেবে স্মরণ করা হবে যার সরকার সক্রিয়ভাবে যুদ্ধাপরাধে অংশ নিয়েছে।
জনাব প্রেসিডেন্ট, আরো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আপনি এমন ব্যক্তি যিনি সৃষ্টিকর্তার ওপর বিশ্বাস রাখেন। সেই হিসেবে আপনার হাতের রক্ত বৈধ করতে প্রার্থনায় আপনি তাঁকে কী বলেন?

কোরআন অবমাননার নিন্দা জানাল বার্লিন
ইসলামী জীবন ডেস্ক

মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় গ্রন্থ পবিত্র কোরআনের বিরুদ্ধে উসকানিমূলক কাজের নিন্দা জানিয়েছে জার্মান সরকার। এমন কাজকে দেশটি ‘অপমানজনক ও অনুপযুক্ত’ মনে করে বলে জানিয়েছেন জার্মান সরকারের উপমুখপাত্র ক্রিস্টিন হফম্যান। গত ১৬ আগস্ট রাজধানী বার্লিনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি।
তুরস্কভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আনাদোলু এজেন্সির এক প্রশ্নের পরিপ্রেক্ষিতে ক্রিস্টিন হফম্যান বলেন, ‘আমরা এ ধরনের কাজকে অসম্মানজনক ও অনুপযুক্ত বলে মনে করি।
গত কয়েক মাসে সুইডেন, ডেনমার্কসহ উত্তর ইউরোপীয় ও নর্ডিক দেশগুলোতে বারবার পবিত্র কোরআনের কপি পোড়ানো হয়। সর্বশেষ গত ১৪ আগস্ট সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে কোরআনের কয়েকটি পৃষ্ঠা পোড়ানো হয়। বাকস্বাধীনতার অজুহাতে পুলিশের নিরাপত্তায় এ ধরনের ঘটনা ঘটে।
গত ১২ জুলাই এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ধর্মীয় বিদ্বেষ রোধে জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদে (ইউএনএইচআরসি) একটি প্রস্তাব পাস হয়। সর্বশেষ গত ২৫ জুলাই জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ধর্মীয় গ্রন্থের প্রতি সহিংসতার বিরুদ্ধে একটি নিন্দা প্রস্তাব পাস করা হয়। তাতে এ ধরনের ঘৃণ্য কাজকে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘনের শামিল বলা হয়।
সূত্র : আনাদোলু এজেন্সি

রাশিয়ায় কোরআন অবমাননা শাস্তিযোগ্য অপরাধ : পুতিন

সুইডেনে কোরআন অবমাননার নিন্দা জানিয়ে এটিকে অপরাধ বলে মন্তব্য করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। গত ২৯ জুন স্বায়ত্তশাসিত দাগেস্তান অঞ্চলের ডারবেন্ট শহরের একটি প্রাচীন মসজিদ পরিদর্শনকালে তিনি এ কথা বলেন। এ সময় পবিত্র ঈদুল আজহার দিন মুসলিম প্রতিনিধিদের পক্ষ থেকে পুতিনকে পবিত্র কোরআনের একটি কপি উপহার দেওয়া হয়।
পুতিন বলেছেন, ‘কিছু দেশে কোরআনের অসম্মানকে অপরাধ হিসেবে দেখা হয় না।
তিনি আরো বলেন, ‘কোরআন মুসলিমদের জন্য পবিত্র। অন্যদের কাছেও তা পবিত্র হওয়া উচিত।
গত ২৮ জুন ঈদের দিন রাজধানী স্টকহোমের কেন্দ্রীয় মসজিদের সামনে পবিত্র কোরআন পুড়িয়েছেন সালওয়ান মোমিকা নামের এক ইরাকি অভিবাসী। বাকস্বাধীনতার নামে পুলিশের নিরাপত্তায় তাকে এই ন্যক্কারজনক কাজ করার অনুমতি দেন সুইডিশ আদালত।
এরপর গতকাল শুক্রবার পবিত্র কোরআন অবমাননার প্রতিবাদে সুইডেনের সংসদ ভবনের সামনে জুমার নামাজ আদায় করেছেন স্থানীয় মুসলিমরা।
এদিকে সুইডেনের এ ঘটনায় সৌদি আরব, তুরস্ক, মিসরসহ মুসলিম দেশগুলো নিন্দা জানিয়েছে। তা ছাড়া মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বেদান্ত প্যাটেল বলেন, ধর্মীয় গ্রন্থ পুড়িয়ে ফেলা অসম্মানজনক ও আঘাতমূলক। এটি বৈধ হলেও যথাযথ না।
সূত্র : টিআরটি ওয়ার্ল্ড

শুধুমাত্র নারী হজযাত্রী নিয়ে ভারতীয় বিমানের প্রথম ফ্লাইট
ইসলামী জীবন ডেস্ক

১৪৫ নারী হজযাত্রী নিয়ে ভারতীয় বিমানের একটি ফ্লাইট সৌদি আরব পৌঁছেছে। বিমানের সেই ফ্লাইটে কেবল যাত্রী নয়; বরং চালক ও বিমানবালাসহ সবাই ছিল নারী। গত বৃহস্পতিবার এয়ার ইন্ডিয়া এক্সপ্রেসের হজ ফ্লাইটে প্রথম বারের মতো এমন অভিনব দৃশ্যের অবতারণা ঘটে। সেদিন রাতে দক্ষিণাঞ্চলীয় কেরালা রাজ্যের কোঝিকোড় শহর ছেড়ে আসা বিমানটি জেদ্দায় পৌঁছে।
বিমানটির পরিচালনায় ছিলেন ক্যাপ্টেন কনিকা মেহরা, ফার্স্ট অফিসার গরিমা পাসি ও চার কেবিন ক্রু। বিমানবন্দরে নারী হজযাত্রীদের বোর্ডিং পাস বিতরণ করেন ভারতের সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রী জন বার্লা।
আরব নিউজ সূত্রে জানা যায়, এ বছর ভারত থেকে চার হাজার নারী মাহরাম (পুরুষ অভিভাবক) ছাড়াই হজ পালন করতে সৌদি আরবের মক্কা ও মদিনায় যাবেন।
এ বছর ভারত থেকে হজে অংশ নেবেন এক লাখ ৭৫ হাজার জন। কেরালা রাজ্য থেকে সর্বোচ্চ সংখ্যক লোক হজ পালন করবেন।
কেরালা হজ কমিটির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফয়েজি বলেন, ভারত থেকে মাহরাম ছাড়া হজ পালন করতে যাওয়া নারীদের অধিকাংশই কেরালা রাজ্যের। এখানকার প্রায় দুই হাজার নারী সৌদি আরব যাবেন।
উল্লেখ্য, ২০২১ সালে নারীদের হজ পালনে ‘মাহরাম’ বা পুরুষ অভিভাবকের শর্ত তুলে নেয় সৌদি আরব। ২০২২ সালের অক্টোবরে দেশটির হজ ও ওমরাহ বিষয়ক মন্ত্রী ড. তাওফিক আল-রবিয়াহ আনুষ্ঠানিকভাবে এই শর্ত তুলে নেওয়ার ঘোষণা দেন। এ বছর করোনা-পূর্ব সময়ের মতো বৃহৎ পরিসরে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তাই বিভিন্ন দেশের নারী হজযাত্রীদের একটি অংশ মাহরাম ছাড়াই হজ পালন করতে সৌদি আরব যাচ্ছেন।
সূত্র : আরব নিউজ