ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬
"দুর্ভাগ্যজনক"

ছয় মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি, লাখো মানুষের ভোগান্তি

তৌফিক মারুফ
তৌফিক মারুফ
শেয়ার
ছয় মন্ত্রণালয়ের গাফিলতি, লাখো মানুষের ভোগান্তি

২০১৮ সালের সংক্রামক ব্যাধি আইনের আওতায় এখন ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। না মানলে পরিষ্কারভাবেই শাস্তির বিধান রয়েছে। একই আইনের আওতায় শারীরিক দূরত্ব না মানা বা সরকার নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি না মানলেও শাস্তির কথা বলা আছে। অন্তত ছয়টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বিতভাবে এই আইন বাস্তবায়নে পরিবেশ সৃষ্টি ও প্রয়োগ করার কথা।

কিন্তু সেই দায়িত্ব পালনে কমবেশি সবাই শৈথিল্য দেখাচ্ছে বলে মনে করছে করোনা মোকাবেলায় গঠিত জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটি।

এই সময়ে মাস্ক ছাড়া ঘরের বাইরে বের না হতে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা থেকে শুরু করে সরকারের নিয়মিত বুলেটিনসহ প্রতিদিন প্রতি মুহূর্তে গণমাধ্যমে সতর্কতা উচ্চারণ করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, নির্দিষ্ট  সময়ের পরে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা, কেবল জরুরি প্রয়োজনে বিদেশ যাওয়া, হাটবাজার-রেস্টুরেন্ট-দোকাপাট পরিচালনার ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ আরো সব সতর্কতামূলক নির্দেশনা প্রচারের কমতি নেই। সর্বশেষ জাতীয় পরামর্শ কমিটির পক্ষ থেকে সুপারিশ করা হয়েছে ঢাকার দুই সিটি, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এলাকাসহ দেশের কোনো শহর এলাকার ভেতরে কোরবানির গরুর হাট না বসাতে।

গত রোজার ঈদের সময় নির্দেশনা ছিল শপিং মল না খোলার জন্য। এ ছাড়া ওই ঈদের সময় ঢাকা শহরের বাইরে যাতায়াতেও মানা করেছিল কারিগরি কমিটি; ঈদুল আজহার সময়ে একই সুপারিশ করা হয়েছে। কিন্তু এসবের অনেক কিছুই থেকে গেছে কেবলই কাগজে-কলমে। হচ্ছে না বাস্তবায়ন।

একশ্রেণির মানুষের যেমন নেই সচেতনতা, তেমনি সংক্রমণ প্রতিরোধে দেখা মিলছে না আইনের কোনো রকম প্রয়োগ। দেশে সংক্রমণ প্রত্যাশিত হারে নিয়ন্ত্রণে না আসা কিংবা কোরবানি ঘিরে আরো সংক্রমণের আশঙ্কা থেকে জাতীয় পরামর্শ কমিটির সদস্যরা এসব কারণে কমপক্ষে ছয়টি মন্ত্রণালয়ের শৈথিল্য ও সমন্বয়হীনতাকে চিহ্নিত করেছেন। এই বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে সংক্রমণের শুরু থেকেই এই গুরুত্বপূর্ণ ছয়টি মন্ত্রণালয়ের নানা ধরনের দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়ের ঘাটতি ও শৈথিল্যের নজির দেখা যাচ্ছে। যার পরিণতি ভোগ করতে হচ্ছে দেশের লাখো মানুষকে। গত ১০ জুলাই কভিড-১৯-সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভায়ও এসব বিষয়ে আলোচনা হয় এবং সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়কে আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়।
পরামর্শক কমিটির সদস্যদের মতে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে স্বাস্থ্য, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র, বাণিজ্য, স্থানীয় সরকার এবং বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে।

জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, দেশে সংক্রমণ প্রতিরোধে কেবল স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় একা কাজ করলে চলবে না, বরং মাঠপর্যায়ে অনেক কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্ব অন্যান্য মন্ত্রণালয়েরও। বিশেষ করে পাঁচ-ছয়টি মন্ত্রণালয়ের সরাসরি দায়িত্ব রয়েছে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি—এসব মন্ত্রণালয়ের কাজে অনেকটা শৈথিল্যের কারণেই দেশে সংক্রমণ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ঘুরছে।

কমিটির আরেক সদস্য অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান কালের কণ্ঠকে বলেন, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নীতিনির্ধারণ, রোগের পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিত্সাব্যবস্থা নিয়ে যতটা দায়িত্ব পালন করবে—মাঠপর্যায়ে সংক্রমণ প্রতিরোধে, স্বাস্থ্যবিধি কার্যকর করতে তার চেয়ে বেশি দায়িত্ব বর্তায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর। সেই সঙ্গে স্থানীয় পর্যায়ে এলাকাভিত্তিক সামাজিক সংক্রমণ রোধে পদক্ষেপ বাস্তবায়নে আরেক গুরুত্বপূর্ণ অংশ হচ্ছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়—তথা সিটি করপোরেশন, পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদ। আবার ব্যবসা-বাণিজ্যিক পরিসরকে সীমিত রাখা-স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বিষয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায় অনেক বেশি। বিদেশের সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগের মাধ্যমে উচ্চতর ঝুঁকিপূর্ণ দেশ থেকে কাউকে দেশে ফিরিয়ে না আনার বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার দায়িত্ব স্বাভাবিকভাবেই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। তা ছাড়া জরুরি কারণে আকাশপথে দেশে আসা বা যাওয়ার ক্ষেত্রে বিমানবন্দরগুলোর ব্যবস্থাপনা থেকে শুরু করে বিমানে যাত্রী ব্যবস্থাপনা, তাদের উপযুক্ত কাগজপত্র যাচাই-বাছাইসহ আনুষঙ্গিক বিষয়গুলো দেখভাল করবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

অন্যদিকে করোনা মোকাবেলায় সরকার কঠিত জাতীয় কমিটির চেয়ারম্যান, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘পথেঘাটে যেভাবে মানুষজন বেপরোয়া হয়ে অসতর্কভাবে বা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে চলাফেরা করছে, সেটা বন্ধে আমরা তো মাঠে নেমে কিছু করতে পারব না। এ কাজ করবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। আমরা তাদের এ বিষয়ে জানিয়েছি। সিটি করপোরেশনও এ ক্ষেত্রে প্রশাসনকে সহায়তা করার কথা। কিন্তু এগুলো কিছুই দেখছি না। বিদেশ থেকে কে আসে-যায় সেটাও তো আমাদের দায়িত্ব না। এখন সবই যদি আমাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়, তবে তো কাজের কাজ কিছুই হবে না।’

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, সবার আগে মানুষের সচেতনতা বাড়াতে হবে। নয়তো আইন প্রয়োগ করে সব কিছু হয় না। মানুষকে আরো সচেতন করতে প্রচার চালানো উচিত।

সংক্রামক ব্যাধি আইনের আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ওপর দায়িত্বের বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ওই আইনে আমাদের কোনো ক্ষমা দেওয়া হয়নি। বরং আমরা এ ক্ষেত্রে ক্ষমতা চেয়েছি। এখন যা আছে সেটা কেবল স্বাস্থ্য বিভাগ আমাদের অনুরোধ করলে আমরা তা পালনের চেষ্টা করতে পারি। ওই আইনের শাস্তিও খুবই কম।’

কোরবানির হাট প্রসঙ্গে গতকাল স্থানীয় সরকার মন্ত্রী তাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কোরবানির হাটের সংখ্যা কমানোর পক্ষে নই। এবার হাটের সংখ্যা কমবে না। তবে সিটি করপোরেশন, জেলা, উপজেলা ও ওয়ার্ড পর্যায়ে ছোট ছোট আকারে হাট বসানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছি। শহর অঞ্চল ছাড়াও গ্রামগঞ্জে একটি বা দুটি জায়গায় কোরবানির পশু বেচাকেনা করার জন্য নির্ধারণ না করে একটি ওয়ার্ডে বা ইউনিয়নে বিস্তৃত স্থানে আয়োজন করলে করোনা সংক্রমণের বিস্তার রোধে ভূমিকা রাখবে। এতে করে একদিকে যেমন পশু কেনাবেচার ওপর কোনো প্রভাব পড়বে না, অন্যদিকে সাধারণ মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করা সম্ভব হবে।’

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে এ বছর ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কোরবানির পশুর হাট না বসানোর সুপারিশ করেছে জাতীয় পরামর্শক কমিটি। এ প্রসঙ্গে তাজুল ইসলাম বলেন, দেশের কোথায় কতটা হাট বসবে তা স্থানীয় প্রশাসনের ওপর নির্ভর করবে। এ বিষয়ে মাঠ প্রশাসনই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে যেসব এলাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বেশি বা যে এলাকাগুলোকে হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে সেসব এলাকায় পশুর হাট বসানো বর্জন করার আহ্বান জানান তাজুল ইসলাম।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. আব্দুল মান্নান গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়েই কভিড মোকাবেলায় সক্রিয় দায়িত্ব পালনের জন্য অনুরোধ জানিয়েছি। এমনকি এখন ৬৮ জন সচিবের অংশগ্রহণে কভিড ও বন্যা মোকাবেলার বিষয়ে এক সভা চলছে। সেখানেও আমি সংশ্লিষ্ট সব মন্ত্রণালয়ের সচিবদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছি কভিড মোকাবেলায় এগিয়ে আসার জন্য।’

করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতিতে সর্বশেষ গত ৩০ জুন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে এক দফা নির্দেশনা জারি করা হয়। এতে আগের প্রজ্ঞাপন অনুসারে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত করা হয়। এ ছাড়া বর্তমানে যেভাবে সীমিত পরিসরে অফিস চলছে, তা আগামী ৩ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে স্বাস্থ্যবিধি মেনে গণপরিবহনও চালু থাকবে। পাশাপাশি সবার মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক বলেও জানানো হয়।

গত ১০ জুলাইয়ের জাতীয় পরামর্শক কমিটির সভায় কভিড-১৯-এর সংক্রমণ এখনো নিয়ন্ত্রণে না আসা সত্ত্বেও ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় অবাধ জীবনযাত্রায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। কমিটি ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় কঠোর নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমের পরামর্শ দেয়। ঈদুল আজহা উপলক্ষে শহরের ভেতরে পশুর হাট না বসানো এবং ডিজিটাল পদ্ধতিতে পশু কেনাবেচার ব্যবস্থা করার পরামর্শ দেয়। সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, অন্যান্য জায়গায় সংক্রমণ প্রতিরোধ নীতিমালা পালন সাপেক্ষে কোরবানি পশুর হাট বসানো যেতে পারে। কোরবানি পশুর হাট স্থাপন ও পশু জবাইয়ের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম পালন করার জন্য বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে, পশুর হাট খোলা ময়দানে হতে হবে, যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা এবং সংক্রমণ প্রতিরোধে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা সম্ভব। বয়স্ক ব্যক্তি (৫০ বয়সোর্ধ্ব) এবং অসুস্থ ব্যক্তির পশুর হাটে যাওয়া যাবে না। হাটে প্রবেশ ও বের হওয়া পৃথক রাস্তা থাকতে হবে। পশুর হাটে আসা সব ব্যক্তির মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। পশু জবাই বাড়িতে না করে শহরের বাইরে সিটি করপোরেশনের নির্ধারিত স্থানে করতে হবে।  অনলাইনে অর্ডারের মাধ্যমে বাড়ির বাইরে কোরবানি দেওয়া সম্ভব হলে তা করার জন্য উত্সাহিত করা হচ্ছে। কিন্তু সেদিকে গুরুত্ব না দিয়েই ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন এলাকায় ১১টি কোরবানির পশুর হাট চালুর অনুমতি দিয়েছে দুই সিটি কর্তৃপক্ষ।

মন্তব্য

নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা

আগামী ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শুল্ক স্থগিত করায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।

ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘আমাদের অনুরোধে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প)। আমরা আপনার বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।

এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাও করেন রপ্তানিকারকরা।

এতদিন বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

মন্তব্য

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

বুধবার (৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে খলিলুর রহমানকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।

এখন থেকে খলিলুর রহমানের পদবি হবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটি’।

পাশাপাশি তিনি প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত দায়িত্ব পালনেও সহযোগিতা করবেন।

২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান।

ড. খলিলুর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) কাডারে যোগদান করেন। ১৯৮৩-৮৫ সময়কালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

১৯৮৫ সালে তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মুখপাত্র হিসেবে এ কমিটি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।

খলিলুর রহমান ১৯৯১ সালে জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আংকটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে যোগ দেন। জাতিসংঘে পরবর্তী ২৫ বছরে তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।

 

২০০১ সালে খলিলুর রহমান তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি ঢাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

মন্তব্য

সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)-এর সঙ্গে সৌদি আরবের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন আলদুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি জনশক্তি নিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। 

বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে সৌদি আরবে বসবাসরত বৈধ পাসপোর্টবিহীন ৬৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যুসংক্রান্ত বিষয়াদিসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।

বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে। এটিকে চার মিলিয়নে উন্নীত করতে তিনি রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।

বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত সহায়তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, সৌদি আরব সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে।

রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সে দেশে বসবাস ও চাকরি করাসহ আইনগত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছেন কিন্তু বর্তমানে কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই—এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ৬৯ হাজার।

সরকারি বিভিন্ন পর্যায়ের আলোচনায় ৬৯ হাজার ব্যক্তির পাসপোর্ট ইস্যু /নবায়নের জন্য সৌদি কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশ সরকারকে অনুরোধ জানিয়ে আসছিল।

উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মন্তব্য

মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির
সংগৃহীত ছবি

দেশে গত মার্চ মাসে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের এ সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে সহিংসতার ৮৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে। বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক।

মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। 

এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশাজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।

আরো পড়ুন
ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

ট্রান্সশিপমেন্ট বাতিলে বাংলাদেশের রপ্তানিতে কোনো প্রভাব পড়বে না : ভারত

 

মার্চে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭৩৩ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ২৩ জনের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছে।

৯৭টি সহিংসতার ঘটনার ৮৮টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে সহিংসতার ৯৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছে ৫০২ জন।

বিএনপি-আওয়ামী লীগের মধ্যে ১১টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৫২ জন আহত হয়েছে। আর বিএনপি-জামায়াতের মধ্যে ১০টি সংঘর্ষে ১ জন নিহত ও ৮১ জন আহত হয়েছে। এ ছাড়া বিএনপি-এনসিপির মধ্যে ৩টি সংঘর্ষে ২ জন নিহত ও ৩১ জন আহত হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিল।

এতে বলা হয়, মার্চে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১ হাজার ৬৪৪ জন। ওই সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।

কমপক্ষে ২৮৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার ১৩৩ জনের মধ্যে ৮৩ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। প্রতিবেদনে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়।

এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী, গেল মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্চে গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে।

একই সময়ে ২১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১ জন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়। এ ছাড়া মার্চ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সার্বিক বিষয়ে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়নও তুলনামূলক বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয় হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ