<p>প্রতিবন্ধকতা তাকে আটকাতে পারেনি। পারেনি স্কুল-কলেজ থেকে ঝেড়ে ফেলতে। উচ্চশিক্ষা নেওয়ার অদম্য ইচ্ছা তাকে পৌঁছে দিয়েছে সেখানে। ভালো রেজাল্ট নিয়ে এমবিএ পাস করেছেন তিনি। কিন্তু ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করলেও শুধু শ্রবণপ্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তার চাকরি মিলছে না কোথাও। যে কষ্ট কুরে কুরে খাচ্ছে তাকে। একটি সরকারি চাকরি পেলে তিনি প্রমাণ করে দিতে চান প্রতিবন্ধী হলেই পিছিয়ে থাকতে হবে- এটা ঠিক নয়। কিন্তু সেই সুযোগ তিনি কিভাবে পাবেন তাই নিয়ে চিন্তিত এখন। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতা কামনা করছেন।</p> <p>পড়াশোনার যুদ্ধে জয়ী সেই শ্রবণপ্রতিবন্ধীর নাম নাফিসা সাদাফ রহমান। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার পশ্চিম পাইকপাড়া মুন্সিবাড়ির মেয়ে। ১৯৯৬ সালের ৩ নভেম্বর জন্মেছেন তিনি। সাত মাস বয়সে জন্মগ্রহণ করায় জন্মের পরপরই তাকে কাটিয়ে উঠতে হয়েছে নানা জটিলতা। জন্মের পরপরই ঢাকা শিশু হাসপাতালে ইনসেফটিভ কেয়ারে ২০ দিন রাখা হয়। হাসপাতাল থেকে বাড়িতে এনে রুম হিটার পদ্ধতিতে রাখতে হয় আরো তিন মাস। এর পরও রোগশোক তার পিছু ছাড়েনি। ছয় মাস বয়সে পেয়ে বসে নিউমোনিয়ায়। তখন তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার একটি প্রাইভেট হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে ভুল চিকিৎসার কারণে শ্রবণশক্তি হারিয়ে ফেলেন নাফিসা। </p> <p>দেড় বছর পর বিষয়টি বুঝতে পারেন তার বাবা-মা। তখন তার বাবা-মা তাকে ঢাকার মহাখালীর সোসাইটি ফর অ্যাসিস্ট্যান্স টু হিয়ারিং ইম্পেয়ার্ড চিলড্রেনে (সাহিক) ভর্তি করান। যে প্রতিষ্ঠানটি বিশেষায়িত নাক, কান ও গলা হাসপাতাল নামেও পরিচিত। সেখানে তিন বছর স্পিচ থেরাপি ও চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে কথা শেখানো হয়। পরবর্তী সময়ে স্থানীয় সূর্যমুখী কিন্ডারগার্টেনে তাকে ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রথম শ্রেণিতে ভর্তি করা হয়। জীবনের প্রথম পরীক্ষায়ই নাফিসা প্রথম স্থান অধিকার করেন। বেড়ে উঠতে থাকেন তিনি।</p> <p><img alt=\"\" src=\"http://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/ckfinder/innerfiles/images/Harun/August-2021/01-08-2021/03-08-2021/04-08-2021/05-08-2021/07-08-2021/08-08-2021/09-08-2021/10-08-2021/11-08-2021/12-08-2021/14-08-2021/15-08-2021/16-08-2021/17-08-2021/18-08-2021/19-08-2021/21-08-2021/22-08-2021/23-08-2021/Nafisa-01_kalerkantho_pic.jpg\" /></p> <p>২০১১ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া গভঃ মডেল গার্লস হাই স্কুল থেকে জিপিএ ৪.৪৪ নিয়ে পাস করেন। এরপর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সরকারি মহিলা কলেজ থেকে এইচএসসিতেও ভালো রেজাল্ট নিয়ে পাস করেন ২০১৩ সালে। ২০১৮ সালে তিনি ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি থেকে সিজিপিএ ৩.১৮ (৪.০০ মধ্যে) পাস করেন। ২০১৯ সালে একই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সিজিপিএ ৪-এর মধ্যে ৩.২২ পেয়ে পাস করেন। </p> <p>জানা গেছে, পড়াশোনার সময় প্রতিটি ক্লাসে মনোযোগের সঙ্গে ক্লাস করতেন। স্যাররা কী বলছেন তিনি তা শুনতে পেতেন না। কিন্তু ঠোঁট নাড়ানো দেখেই ধরতে পারতেন কী বলছেন। আর এভাবেই তিনি এমবিএ পাস করেছেন ভালো রেজাল্ট নিয়ে। মেধাবী এই শিক্ষার্থীর স্বপ্ন নিজের পায়ে দাঁড়াবেন। প্রতিবন্ধী বলে তিনি সমাজে পেছনে পড়ে থাকতে চান না। এ কারণে চাকরি খুঁজছেন তিনি। কয়েকটি জায়গায় তিনি ইন্টারভিউও দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিবন্ধী হওয়ায় তাকে চাকরি দেওয়া হয়নি। যেটি বেশ কষ্ট দিচ্ছে নাফিসাকে।  </p> <p>নাফিসা মনে করেন, তিনি আর ১০ জন স্বাভাবিক মানুষের মতোই কাজ করতে সক্ষম। শুধু প্রতিবন্ধী হওয়ার কারণে তাকে পেছনে পড়ে যেতে হচ্ছে। তিনি মনে করেন, সরকারি কোনো চাকরি পেলে তিনি প্রমাণ করতে চান প্রতিবন্ধী হলেও তিনি পিছিয়ে থাকার পাত্রী নন। সম্প্রতি কথা হয় নাফিসার সঙ্গে। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেন, আমার একটাই চাওয়া আমি বড় হতে চাই। প্রতিবন্ধকতাকে জয় করতে চাই। এ অবস্থায় আমি একটি সুযোগ চাই। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করে দিতে পারেন।</p> <p>নাফিসা বলেন, প্রধানমন্ত্রী যদি আমার দিকে একটু সহানুভূতির দৃষ্টি দেন তাহলে আমার জীবনটা বদলে যাবে। চিরকৃতজ্ঞ ও ঋণী থাকব। চাকরির পরীক্ষা দিয়েও যখন চাকরি পাই না তখন মনটা খুব ছোট হয়ে যায়। তখন মনে হয়, লেখাপড়া আর করব না। নাফিসা আক্ষেপ করে বলেন, ‘আমি যদি সুস্থ হতাম তাহলে হয়তো আমার একটা ভালো চাকরি হতো। আমি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারতাম।’</p> <p>নাফিসাকে নিয়ে তার বাবা-মাও বেশ চিন্তিত। তাদের একমাত্র সন্তান নাফিসা। নাফিসার বিয়ের বয়স হয়েছে। একটি ভালো ছেলের সঙ্গে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন তাদের। কিন্তু শ্রবণ প্রতিবন্ধী বলে কোনো ভালো পাত্র যদি না পাওয়া যায় সেই ভয়ও কাজ করে তাদের মধ্যে। তার বাবা হাবিবুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘মেয়ে চাকরি করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। আর আমরা চাই তার জন্য একটি ভালো ছেলে। যার সঙ্গে ঘর-সংসার করে আমার মেয়েটা সুখে শান্তিতে থাকতে পারবে।’ </p>
