আমরা জানি, ইলেকট্রনিক নেটওয়ার্ক বা ইন্টারভিত্তিক ব্যবসা-বাণিজ্য তথা ই-কর্মাস দেশে দিন দিন প্রসারিত হচ্ছে এবং এটা অবশ্যম্ভাবী। বিশেষত কভিড-১৯ আসার পর এর ব্যাপক প্রসার ঘটছে। এর মাধ্যমে ক্রেতা-বিক্রেতা দুই পক্ষেরই সুবিধা হয়। বিভিন্ন উপায়ে অর্থ লেনদেন ও পণ্য সরবরাহ করা হয় ই-কমার্সের মাধ্যমে।
ই-কমার্সের সুষ্ঠু বিকাশে প্রয়োজন নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ
ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ


ইভ্যালি বা এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে দেশে ই-কমার্সে যে ভয়াবহ অনিয়মগুলো দেখতে পাচ্ছি, তার উদ্ভব ঘটেছে সাম্প্রতিককালে। ইভ্যালি ২০১৮ সালে রেজিস্ট্রেশন নিয়েছে। এটি রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কম্পানির আওতাভুক্ত। তাদের অনুমোদিত মূলধন পাঁচ লাখ টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৫০ হাজার টাকা। এমন একটা কম্পানি অল্প দিনে ৩০০ থেকে ৪০০ কোটি টাকার ব্যবসা করে ফেলেছে।
যে বিষয়ে আমাদের এখন নজর দেওয়া দরকার সেটা হচ্ছে, এসব কম্পানি কিভাবে নিবন্ধিত হয়েছে এবং নিবন্ধিত হওয়ার পর এদের কেউ নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ করেছে কি না। এদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠানই বা কারা এবং কোনো রকম অভিযোগ থাকলে সেটা প্রতিকার বা প্রতিবিধানই কাদের করার কথা। ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর এই ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য করার আগেই আমাদের আইন এবং নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর নজরদারিতে আসা দরকার ছিল। ২০১৮ সালে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় একটি ন্যাশনাল ডিজিটাল কমার্স পলিসি করেছে। এরপর কথা ছিল একটা নিয়ন্ত্রণ সেল গঠন করা হবে, যা আজও হয়নি। ২০২০ সালে পলিসি সংশোধন করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, এসব প্রতিষ্ঠানের যারা রেজিস্ট্রেশন করেছে, জয়েন্ট স্টক কম্পানি বা অন্য যারাই হোক, তাদের দায়িত্ব ছিল বার্ষিক প্রতিবেদন এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিবেদন ও অডিট রিপোর্ট পর্যালোচনা করা। কিন্তু এখানে সুস্পষ্ট অস্বচ্ছতা দেখা গেল। ব্যাংকগুলোর অডিট রিপোর্ট বাংলাদেশ ব্যাংক দেখে। ক্যাপিটাল মার্কেটে লিস্টেড কম্পানিগুলোর অডিট রিপোর্ট সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন দেখে। কিন্তু ই-কমার্সের ব্যাপারে এমন কিছু হয়নি।
এই পরিস্থিতির মধ্যেই ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ—ই-ক্যাবের মতে, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কয়েক হাজার ছাড়িয়ে গেছে। অদ্ভুত একটা ব্যাপার। এত প্রতিষ্ঠান রেজিস্ট্রেশন হয়েছে এবং সব কটিই অনিয়ম করছে তা নয়। তবে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সুস্পষ্ট প্রশ্ন রয়েছে। এই পটভূমিতেই ইভ্যালির উত্থান এবং তাদের অনিয়মটাই প্রথম জোরেশোরে শোনা যায়। এখন শুনছি, ৩০ ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান আইন নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার তদন্তের অধীনে আছে। বোঝাই যাচ্ছে, গুরুতর অভিযোগই রয়েছে এদের বিরুদ্ধে।
এই খাতে হাজার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা। এখানে বহু মানুষ প্রতারিত হচ্ছে, টাকা হারাচ্ছে। স্বল্পবিত্ত, মধ্যবিত্ত, এমনকি গ্রামগঞ্জের লোকরাও এসবের ছলচাতুরীর শিকার হয়েছে। এটা ব্যক্তিগত ক্ষতি। কিন্তু জাতীয় ক্ষতি অপরিসীম। ব্যবসা-বাণিজ্যের সুন্দর একটি মাধ্যমের অপব্যবহার করা হয়েছে। এটা দেশের জন্য অনেক ক্ষতি।
যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত দেশগুলোতে দেখা যায়, তথ্য-প্রযুক্তি আইন সম্পর্কিত নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলো নজরদারি করে। আর আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত কোনো বিষয় থাকলে তা সংশ্লিষ্ট আর্থিক রেগুলেটরি প্রতিষ্ঠান করে তথা কেন্দ্রীয় ব্যাংক, সিকিউরিটিজ কমিশনের মতো প্রতিষ্ঠানগুলো দেখে। কিন্তু বাংলাদেশের এমনটা দেখা যায়নি। অর্থ জমা নিয়ে গ্রাহকদের বোনাস দেওয়ার মতো ‘ই-ওয়ালেট’ কার্যক্রম লাইসেন্স ছাড়া পরিচালনা করার কথা নয়। বাংলাদেশ ব্যাংক দুই বছর আগে এ বিষয়ে সতর্ক করে দিয়েছিল। অথচ ইভ্যালি ও ই-ওয়ালেট কার্যক্রম চালিয়েছে এবং ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বোনাসও ঘোষণা করে। এটা নিঃসন্দেহে বেআইনি। অথচ ইভ্যালি বলেছে যে তাদের কার্যক্রম ই-ওয়ালেটের মধ্যে পড়ে না। এটা নিছক একটা অজুহাত এবং একটা সময় পর্যন্ত তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিল।
বিশ্বের অনেক দেশ, এমনকি ভারতেও কোনো ই-কমার্স ফার্ম প্রতিষ্ঠা করার সময় জিএসটি রেজিস্ট্রেশনের দরকার হয়। যখনই জিএসটি রেজিস্ট্রি হয়, তখনই প্রতিষ্ঠানটি নজরদারিতে চলে আসে। তখন তারা যা লেনদেন করে, তা জিএসটিতে রেকর্ডেড হয়। কিন্তু বাংলাদেশে আমি কোনো দিন শুনিনি সব ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন আছে বা ইনকাম ট্যাক্স রেজিস্ট্রেশন আছে। এগুলো এনবিআর দেখে কি না বা এনবিআরের দৃষ্টিতে এসেছে কি না স্পষ্ট নয়। আরেকটা গুরুতর অভিযোগ হলো, ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানগুলোর অনেকেই এমএলএম কম্পানির মতো ব্যবসা করেছে। ঠিক পুরোপুরি না হলেও এমএলএমের কাছাকাছি ব্যবসা তারা করেছে। এখানে একজন ই-কমার্স প্রতিষ্ঠা করে এবং সে কয়েকজন এজেন্ট নিয়োগ দেয়। তারা আবার সাব-এজেন্ট নিয়োগ দেয়। এটা করে করে পিরামিডের মতো একটা কাঠামো দাঁড়িয়ে যায়। ওপরের দিকে কয়েকজন লোকের কাছেই প্রায় সব অর্থ চলে যায়। তারপর নিচের দিকে যারা সেলার বা এজেন্ট তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
সুতরাং সার্বিক দিক থেকে আমরা দেশের ই-কমার্স খাতের নিয়ন্ত্রণের বিষয়টাকে হালকাভাবে নিয়েছি। আগেকার দিনে আমরা দেখেছি, কোনো পণ্যের অর্ডার করলে উৎপাদক বা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান ডাকযোগে পাঠাত। এতে জিনিস বুঝে পাওয়ার পর সঙ্গে সঙ্গেই টাকা পরিশোধ করা হতো। কিন্তু সাম্প্রতিককালে দেখা গেল, ইভ্যালি বা অন্য প্রতিষ্ঠানের কাছে মানুষ টাকা আগেই দিয়ে দিচ্ছে। তারপর তাদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছে। এটাও সমস্যার কারণ হতো না, যদি নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ করার মেকানিজমটা থাকত।
এখানে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের দায় রয়েছে—কী করে একটা অনিয়ম এভাবে ছড়িয়ে পড়ল! বাংলাদেশ ব্যাংকেরও কিছু দায় আছে, যেহেতু অস্বাভাবিক লেনদেন হয়েছে। আবার ভোক্তা অধিকার আইন সম্পর্কিত অধিদপ্তর আছে, যারা গ্রাহকদের অধিকার বলবৎ করবে। তাদের আইনের ৪৫ ধারায় এমন একটা বিষয় আছে যে কেউ এ ধরনের প্রতারণা করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা অথবা এক বছরের কারাদণ্ড হবে। তারা বিষয়টি দেখল না। দেশে একটা প্রতিযোগিতা কমিশন আছে। তারা এখন বলছে যে তারা একটা মামলা দায়ের করেছিল। কিন্তু বেশি দূর এগোয়নি। প্রশ্ন হচ্ছে, আপনি যখন দেখলেন যে ৫০ হাজার টাকা দরের একটা ফ্রিজ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে, তখনই তো ফেয়ারপ্রাইসের নিয়মে ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার ছিল। ৫০০ টাকার একটা পেনড্রাইভ কিভাবে ১০ টাকায় বিক্রি হয়? এসব বিষয় তো প্রতিযোগিতা কমিশনের দেখা দরকার ছিল। তার মানে কোনো সংস্থাই সুষ্ঠুভাবে নজরদারি করেনি। এখন একেকজন নানা বক্তব্য দিচ্ছে। একটা বিষয় স্পষ্ট, আমাদের ই-কমার্সে নিয়ন্ত্রণকারী প্রতিষ্ঠান নেই বলা যাবে না। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠায় দায় কেউই অনুভব করেনি।
এখন করণীয় হচ্ছে সমন্বিত উপায়ে ই-কমার্সের অনিয়ম দূর করা। যারা দোষী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। সবাইকে নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনতে হবে। এ জন্য পৃথক রেগুলেটরি কমিশন করার কথা বলা হচ্ছে। আমার মনে হয় না এর কোনো প্রয়োজন আছে। এ ধরনের কমিশন করে লাভ নেই। দেশে বহু কমিশন আছে। তাতে খুব একটা কাজ হয় না এবং সরকারও খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। বরং ই-কমার্স নিয়ন্ত্রণ ও নজরদারি করার জন্য যেসব আইন আছে তা ঠিকঠাকমতো প্রয়োগ করা দরকার। সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান ঠিকঠাকমতো দায়িত্ব পালন করলেই কাজটা হয়ে যায়। মনে রাখা দরকার, দেশে ডিজিটাল লিটারেসি বা ইন্টারনেট সাক্ষরতা খুব কম। এমনিতে আমাদের সাক্ষরতার অভাব রয়েছে। এর মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তির সাক্ষরতা খুব কম। এখানে কিভাবে কাজ হয়, কী করলে ডিজিটাল বিজনেস বা ই-কমার্সকে আরো টেকসই করা যায়, ভোক্তা হিসেবে কিভাবে প্রতারণা থেকে রক্ষা পাওয়া যায় তা ঠিকমতো না জানায় লোকজন বিপদে পড়ে যায়। তাই ডিজিটাল লিটারেসি বাড়ানোর দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।
লেখক : সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
অনুলিখন : আফছার আহমেদ

নতুন শুল্ক স্থগিত : ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানালেন প্রধান উপদেষ্টা
অনলাইন ডেস্ক

আগামী ৯০ দিনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের ঘোষিত নতুন শুল্ক স্থগিত করায় দেশটির প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনূস। বুধবার (৯ এপ্রিল) দিবাগত রাতে প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এ ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা হয়।
ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলা হয়, ‘আমাদের অনুরোধে ৯০ দিনের জন্য নতুন শুল্ক স্থগিত করার সিদ্ধান্তে সম্মতি জানানোর জন্য আপনাকে ধন্যবাদ, মি. প্রেসিডেন্ট (ডোনাল্ড ট্রাম্প)। আমরা আপনার বাণিজ্যনীতি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রশাসনের সঙ্গে সহযোগিতা অব্যাহত রাখব।
এর আগে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর নতুন করে ৩৭ শতাংশ রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন। নতুন শুল্কের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের বড় বাজারটিতে পণ্য রপ্তানি, বিশেষ করে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে বড় ধাক্কার আশঙ্কাও করেন রপ্তানিকারকরা।
এতদিন বাংলাদেশের মোট পণ্য রপ্তানির ১৮ শতাংশের গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ শুল্ক ছিল।

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার দায়িত্বও পেলেন খলিলুর রহমান
অনলাইন ডেস্ক

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ খলিলুর রহমানকে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদেও নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (৯ এপ্রিল) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে জারি করা এক প্রজ্ঞাপনে খলিলুর রহমানকে এই নতুন দায়িত্ব দেওয়ার কথা জানানো হয়। রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে এই প্রজ্ঞাপনে সই করেছেন মন্ত্রিপরিষদসচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জাহেদা পারভীন।
এখন থেকে খলিলুর রহমানের পদবি হবে ‘জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা এবং রোহিঙ্গা সমস্যা বিষয়ক হাই রিপ্রেজেন্টেটি’।
২০২৪ সালের ১৯ নভেম্বর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গা সমস্যা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়াবলি সংক্রান্ত হাই রিপ্রেজেন্টেটিভ হিসেবে নিয়োগ পান খলিলুর রহমান।
ড. খলিলুর রহমান ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (পররাষ্ট্র) কাডারে যোগদান করেন। ১৯৮৩-৮৫ সময়কালে তিনি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষিণ এশিয়া বিভাগে এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৮৫ সালে তাকে নিউইয়র্কে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশনে বদলি করা হয়। সেখানে তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের অর্থনৈতিক ও আর্থিক কমিটিতে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করেন এবং স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) মুখপাত্র হিসেবে এ কমিটি ও জাতিসংঘের অর্থনৈতিক ও সামাজিক পরিষদে দায়িত্ব পালন করেন।
খলিলুর রহমান ১৯৯১ সালে জেনেভায় জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সম্মেলনে (আংকটাড) বিশেষ উপদেষ্টা হিসেবে জাতিসংঘ সচিবালয়ে যোগ দেন। জাতিসংঘে পরবর্তী ২৫ বছরে তিনি নিউইয়র্ক ও জেনেভায় বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে কর্মরত ছিলেন।
২০০১ সালে খলিলুর রহমান তৃতীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি লতিফুর রহমানের একান্ত সচিব হিসেবে কাজ করেন। তিনি ঢাকায় অবস্থিত ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা।

সৌদির বিদায়ি রাষ্ট্রদূতের সঙ্গে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার সৌজন্য সাক্ষাৎ
অনলাইন ডেস্ক

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.)-এর সঙ্গে সৌদি আরবের বিদায়ি রাষ্ট্রদূত ঈসা বিন ইউসুফ বিন আলদুহাইলানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ সময় বাংলাদেশ থেকে আরো বেশি জনশক্তি নিতে সৌদি রাষ্ট্রদূতকে আহ্বান জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সকালে সচিবালয়ে এ আহ্বান জানানো হয়।
বৈঠকে সৌদি আরবে বসবাসরত বৈধ পাসপোর্টবিহীন ৬৯ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকদের অনুকূলে পাসপোর্ট ইস্যু/রি-ইস্যুসংক্রান্ত বিষয়াদিসহ পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়।
বৈঠকের শুরুতে উপদেষ্টা বলেন, সৌদি আরব বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম বৃহৎ অংশীদার। একক দেশ হিসেবে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশি কাজ করছে। বর্তমানে সৌদি আরবে ৩.২ মিলিয়ন বাংলাদেশি বিভিন্ন সেক্টরে কর্মরত রয়েছে। এটিকে চার মিলিয়নে উন্নীত করতে তিনি রাষ্ট্রদূতের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরবের সর্বাত্মক সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে উল্লেখ করে সৌদি রাষ্ট্রদূত বলেন, জনশক্তি রপ্তানির পাশাপাশি দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, পর্যটন ও সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন খাতে প্রভূত সহায়তা বিদ্যমান। তিনি বলেন, সৌদি আরব সব সময় বাংলাদেশের পাশে ছিল, অদূর ভবিষ্যতেও থাকবে।
রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, রাজকীয় সৌদি সরকারের গৃহীত নীতি অনুযায়ী সে দেশে বসবাস ও চাকরি করাসহ আইনগত সুযোগ-সুবিধা পাওয়ার জন্য বৈধ পাসপোর্ট থাকা আবশ্যক। সৌদি সরকারের তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকে বিভিন্ন সময় বাংলাদেশি পাসপোর্ট/ট্রাভেল ডকুমেন্ট নিয়ে সে দেশে প্রবেশ করেছেন কিন্তু বর্তমানে কোনো বৈধ পাসপোর্ট নেই—এমন লোকের সংখ্যা আনুমানিক ৬৯ হাজার।
উপদেষ্টা বলেন, এ বিষয়ে দুই দেশের মধ্যে একটি প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছিল এবং এতে বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।

মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত, ১৮ জনই বিএনপির
নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে গত মার্চ মাসে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতায় ২৩ জন নিহত হয়েছেন। নিহতের এ সংখ্যা গত ফেব্রুয়ারি মাসের চেয়ে দ্বিগুণেরও বেশি। এর মধ্যে সহিংসতার ৮৮টি ঘটনা ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে। বিএনপির সঙ্গে অন্যান্য দলের সহিংসতায় নিহতদের মধ্যে ১৮ জন বিএনপি নেতা, কর্মী ও সমর্থক।
মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ সংস্থা হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) মাসিক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বুধবার সংস্থাটি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
এক মাসের মানবাধিকার পরিস্থিতি তুলে ধরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসেও মানবাধিকার পরিস্থিতির প্রকৃত অবস্থা ছিল হতাশাজনক। পবিত্র মাহে রমজান মাসে বিগত বছরগুলোর তুলনায় দ্রব্যমূল্য ও ঈদযাত্রা কিছুটা স্বস্তিদায়ক হলেও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির আশানুরূপ উন্নতি হয়নি।
মার্চে ৯৭টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় অন্তত ২৩ জন নিহত হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ সময়ে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৭৩৩ জন। আধিপত্য বিস্তার, রাজনৈতিক প্রতিশোধপরায়ণতা, চাঁদাবাজি ও বিভিন্ন স্থাপনা দখলকেন্দ্রিক অধিকাংশ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। নিহত ২৩ জনের মধ্যে বিএনপির ১৮ জন, আওয়ামী লীগের ৩ জন এবং ইউপিডিএফের ২ জন রয়েছে।
৯৭টি সহিংসতার ঘটনার ৮৮টিই ঘটেছে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ও বিএনপির সাথে অন্যান্য রাজনৈতিক দলের মধ্যে হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে সহিংসতার ৯৭টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তঃকোন্দলে ৬৪টি ঘটনায় ১৭ জন নিহত ও আহত হয়েছে ৫০২ জন।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্চ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার সংখ্যা ফেব্রুয়ারি মাসের তুলনায় কিছুটা কমলেও নিহতের সংখ্যা দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ১০৪টি রাজনৈতিক সহিংসতার ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৭৫৫ জন আহত হয়েছিল।
এতে বলা হয়, মার্চে রাজনৈতিক মামলায় কমপক্ষে ১ হাজার ৬৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যেখানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী অন্তত ১ হাজার ৬৪৪ জন। ওই সময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর কমপক্ষে ৩টি হামলার ঘটনায় ২ জন আহত এবং ২টি প্রতিমা ভাঙচুর করা হয়েছে।
কমপক্ষে ২৮৪ জন নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছে কমপক্ষে ১৩৩ জন, যাদের মধ্যে ৩০ জন দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যার শিকার হয়েছে ২ জন। যৌন নির্যাতনের শিকার ১৩৩ জনের মধ্যে ৮৩ জন ১৮ বছরের কমবয়সী শিশু। প্রতিবেদনে মাগুরায় ৮ বছরের এক শিশুকে তার বোনের শ্বশুর কর্তৃক ধর্ষণ এবং শিশুটি ৮ দিন পর চিকিত্সাধীন অবস্থায় মৃত্যুর ঘটনাটি উল্লেখ করা হয়।
এইচআরএসএসের তথ্য অনুযায়ী, গেল মাসে অন্তত ২৯টি ঘটনায় কমপক্ষে ৪১ জন সাংবাদিক নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্ততপক্ষে ২৩ জন সাংবাদিক। এ ছাড়া ৩টি মামলায় ৭ জন সাংবাদিককে অভিযুক্ত করা হয়েছে। মার্চে গণপিটুনির অন্তত ৪০টি ঘটনায় ১২ জন নিহত ও ৪৪ জন আহত হয়েছে।
একই সময়ে ২১টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় ৭ জন নিহতের তথ্য জানানো হয়। এর মধ্যে ১ জন শিশু গৃহকর্মী মালিকের নির্যাতনে নিহত হয়। এ ছাড়া মার্চ মাসে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে ৬টি হামলার ঘটনায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) গুলিতে ২ জন বাংলাদেশি নিহতের তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
সার্বিক বিষয়ে এইচআরএসএসের নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম বলেন, মার্চে রাজনৈতিক সহিংসতায় মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক। নারী ও শিশুদের ওপর নির্যাতন, সাংবাদিক নিপীড়নও তুলনামূলক বেড়েছে। আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে জনগণের মৌলিক ও সাংবিধানিক অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। ব্যত্যয় হলে দেশের সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি অবনতির দিকে যাবে।