<p style="text-align:justify">বন্যার কারণে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানি পণ্যবাহী পরিবহনে অচলাবস্থা কাটছে না। বিপুলসংখ্যক কনটেইনার তিন-চার দিন ধরে মহাসড়কে আটকে থাকার কারণে পুরো সরবরাহব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বন্যার পানি কমতে থাকায় সীমিত পরিসরে গাড়ি চলতে থাকলেও এখনো মহাসড়কে পণ্যবাহী কয়েক হাজার কনটেইনার আটকে রয়েছে। এর প্রভাবে সময়মতো রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনার বন্দরে পৌঁছতে পারছে না।</p> <p style="text-align:justify"><img alt="ভেঙে পড়েছে পণ্য পরিবহনব্যবস্থা" height="240" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/2024/08/28/1724789025-695a2d5ba0aa294400ee936adce175d4.jpg" style="float:left" width="400" />আবার আমদানি পণ্যবাহী কনটেইনার গন্তব্যে পৌঁছতেও বিলম্ব হচ্ছে। এতে একদিকে যেমন রপ্তানি পণ্যবাহী কনটেইনারের লিড টাইম বাড়ছে, অন্যদিকে আমদানি করা নিত্যপণ্যের সরবরাহ কমে বাড়ছে এর দামও। পণ্য পরিবহন খরচ বেড়েছে চার গুণ। এ অচলাবস্থার কারণে খাতুনগঞ্জে লেনদেন কমেছে অন্তত ৭০ শতাংশ।</p> <p style="text-align:justify">আর বন্দরে তৈরি হওয়া কনটেইনার জটও খুলছে না। রপ্তানিকারকরা অবিলম্বে মহাসড়কে যান চলাচল ব্যবস্থায় গতি ফেরানোর পাশাপাশি বিকল্প পরিবহনের ব্যবস্থা করার আহ্বান জানিয়েছেন।</p> <p style="text-align:justify">জানা যায়, বন্যার কারণে কুমিল্লা  চৌদ্দগ্রাম থেকে লেমুয়া সেতু পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার এলাকা যোগাযোগব্যবস্থা গত পাঁচ দিন একেবারে ভেঙে পড়েছিল। ফলে রাস্তায় যানজট, কনটেইনার ডিপোগুলোতে পণ্যবাহী কাভার্ড ভ্যান কমে যাওয়ায় প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে সরবরাহব্যবস্থা।</p> <p style="text-align:justify">গতকালও শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত পণ্যবাহী ট্রাকের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। এর ফলে প্রয়োজনীয় কাঁচামাল না থাকায় উৎপাদন প্রক্রিয়ায় বাধাগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি পণ্য রপ্তানি বিলম্বিত হচ্ছে, আর বাড়ছে পোর্ট ড্যামারেজ।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ)  সভাপতি খন্দকার রফিকুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, গত পাঁচ-ছয় দিন পণ্য পরিবহনব্যবস্থা ভেঙে পড়লেও গতকাল থেকে কিছুটা শুরু হয়েছে। তাতেও পরিস্থিতির খুব একটা উন্নতি হয়নি। এ জন্য বিকল্প মহাসড়ক, এক্সপ্রেসওয়ে এবং বন্দরের পণ্যে পৌঁছাতে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগব্যবস্থার উদ্যোগ নেওয়া যেতে পারে। এ ছাড়া পানগাঁও বন্দরকে পণ্য রপ্তানির জন্য সব সময় প্রস্তুত রাখতে হবে।</p> <p style="text-align:justify">বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান কালের কণ্ঠকে বলেন, জুলাাই মাস থেকে আগস্টের এ পর্যন্ত ছাত্র-জনতা আন্দোলনসহ বন্যায় বেশ কয়েকবার রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এ ছাড়া বন্যা পরিস্থিতির কারণে তৈরি পোশাকশিল্পের উদ্যোক্তারা নতুন করে সংকটে পড়েন।</p> <p style="text-align:justify">বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি, মো. ফজলুল হক কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম বন্দর পর্যন্ত পণ্য পরিবহনে যেখানে ১৫-২০ হাজার টাকা ছিল। এটা তিন থেকে চার গুণ বাড়িয়েছে পরিবহন মালিকরা।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে সড়ক দিয়ে কয়েক হাজার পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করছে খুবই ধীরগতিতে। এতে চাল, পেঁয়াজ, তেল, আটা, রসুন, মসলা ও মসুর ডালের মতো প্রয়োজনীয় পণ্য বিভিন্ন জেলায় না যেতে পারায় দেশের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ চেইন প্রায় ভেঙে পড়েছে। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, গত কিছু দিনের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বন্যায় খাতুনগঞ্জে লেনদেন কমেছে ৭০ শতাংশ পর্যন্ত।</p> <p style="text-align:justify">ঢাকা কালের কণ্ঠে’র মিরসরাই (চট্টগ্রাম) ও ফেনী প্রতিনিধি জানিয়েছেন, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের উভয় দিকে কয়েক হাজার যানবাহন আটকা পড়ে আছে। মহাসড়ক থেকে পানি নেমে গেলেও চট্টগ্রাম লেনের স্থানটি দেবে যাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে।</p> <p style="text-align:justify">এদিকে বন্যার কারণে মহাসড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় কুমিল্লার পদুয়ার বাজার বিশ্বরোড থেকে ফেনী লেমুয়া ব্রিজ পর্যন্ত দুই লেনেই প্রায় ৮৭ কিলোমিটার তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। এখন এসব সড়ক দিয়ে ধীরগতিতে চলাচল করছে পণ্যবাহী গাড়ি।</p> <p style="text-align:justify">চট্টগ্রাম বন্দর সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙরে একটি ক্রেনবিহীন কনটেইনার জাহাজকে তিন-চার দিনের স্থলে সাত দিন অপেক্ষার পর বন্দর জেটিতে ভিড়তে হচ্ছে। আর ক্রেনযুক্ত জাহাজকে ভিড়তে হয়েছে ছয় দিন অপেক্ষার পর। বহির্নোঙরে জাহাজকে বাড়তি অপেক্ষায় প্রতিদিন গড়ে ১০-১৫ হাজার মার্কিন ডলার পর্যন্ত আর্থিক ক্ষতি গুনতে হচ্ছে ব্যবসায়ীদের।</p> <p style="text-align:justify">চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহন মালিকদের সংগঠন চট্টগ্রাম প্রাইম মুভার ও ফ্লাটবেড ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য নিয়ে সারা দেশে কমপক্ষে ১৫ হাজার গাড়ি চলাচল করে। আজকেও (মঙ্গলবার) চট্টগ্রাম-ঢাকা মহাসড়কে দুই হাজারের বেশি গাড়ি আটকে আছে।</p> <p style="text-align:justify">চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের বন্দরবিষয়ক সম্পাদক লিয়াকত আলী কালের কণ্ঠকে বলেন, মহাসড়কে গাড়ির ধীরগতির কারণে চলাচল ১০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে।</p> <p style="text-align:justify">চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, বন্যার কারণ রেল-সড়কপথ বন্ধ থাকায় ডেলিভারি আবারও কমে গেছে। এতে কন্টেইনারের সংখ্যা আবারও বেড়েছে। আমরা এক সপ্তাহের মধ্যে পরিস্থিতি সমাধানের জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।</p> <p style="text-align:justify">খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক জামাল হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, চাক্তাই-খাতুনগঞ্জে এখন প্রায় ৭০ শতাংশ পর্যন্ত লেনদেন কমে গেছে। এভাবে চলতে থাকলে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহব্যবস্থায় ধস নামবে।</p>