<p style="text-align:justify">আজ বুধবার শুভ মহালয়া। দিনটি উদযাপনের মধ্য দিয়ে দেশের সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে আজ। মন্দির ও মণ্ডপে দেবী দুর্গার অনিন্দ্যসুন্দর রূপ দিতে প্রতিমা তৈরির কারিগররা ব্যস্ত সময় পার করছেন। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বিশ্বাস মতে, প্রতিবছর শরৎকালে দেবী দুর্গা একবার কৈলাস থেকে মর্ত্যে আসেন। </p> <p style="text-align:justify">মায়ের আগমনকে কেন্দ্র করে মর্ত্যের ভক্তরা মেতে ওঠেন উৎসবে। প্রতিবছরের মতো এবারও দেশজুড়ে শুরু হয়েছে দেবীবন্দনার প্রস্তুতি। মন্দিরে কারিগররা ফুটিয়ে তুলছেন দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, গণেশ-কার্তিক ও অসুরের প্রতিমা। কিছু কিছু মণ্ডপে প্রতিমা তৈরির কাজ শেষে রঙের কাজ শুরু হয়েছে। দেবী দুর্গাকে সাজিয়ে তুলতে তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন প্রতিমাশিল্পীরা।</p> <p style="text-align:justify">সায়ংকালে ধূপের ধোঁয়া, ঢাকঢোল, উলুধ্বনি আর কাঁসর-মন্দিরার সঙ্গে ভক্তিমন্ত্রে মেতে উঠবে পূজা মণ্ডপ। সরেজমিনে সেই প্রস্তুতিই দেখা গেছে রাজধানীর মন্দিরগুলোয়। ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালীমন্দির, রাজারবাগ কালীমন্দির, রামকৃষ্ণ মিশন ও রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী কালীমন্দিরে প্রতিমা তৈরির পাশাপাশি চলছে সাজসজ্জার কাজ। আলোকসজ্জা, প্যান্ডেল তৈরি, মণ্ডপ ও তার আশপাশে সাজসজ্জার কাজসহ নানা কাজে ব্যস্ত পূজার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা।</p> <p style="text-align:justify">দুর্গোৎসব উপলক্ষে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। কেনাকাটায় অনেকে ব্যস্ত সময় পার করছে। কেউ বা বাড়ি ও আশপাশের আঙিনা পরিষ্কার করছে। মণ্ডপের আশপাশের জমে থাকা বর্জ্য পরিষ্কারে ব্যস্ত অনেকে। বাড়ির শিশুরা বায়না ধরছে পূজায় নতুন জামা-জুতা কিনে দেওয়ার। কে কোন মণ্ডপে ঘুরতে যাবে তা নিয়েও চলছে পরিকল্পনা।</p> <p style="text-align:justify">আজ বুধবার ভোর সাড়ে ৫টায় মহালয়ার মধ্য দিয়ে শুরু হবে এ বছরের শারদ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা। পিতৃপক্ষের অবসান ও দেবীপক্ষের শুরুর তিথি এই মহালয়া। মহালয়ার অর্থ পরমাত্মা, বৃহৎ আলয়। সৌর আশ্বিনের কৃষ্ণপক্ষের নাম মহালয়। মহালয়া হলো শারদীয়া দুর্গাপূজার আগে অমাবস্যা, অর্থাৎ আশ্বিন মাসের কৃষ্ণপক্ষের অমাবস্যা। আর দুর্গোৎসবের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ পর্বের একটি মহালয়া। অপর দুটি হচ্ছে বোধন ও সন্ধিপূজা।</p> <p style="text-align:justify">দুর্গাপূজার প্রস্তুতি পর্ব বা মহালয়ার প্রথম প্রহরে শেষ হয় পিতৃপক্ষের, আর শুরু হয় দেবীপক্ষের। একই সঙ্গে দুর্গাপূজার মূল অংশের প্রস্তুতিপর্ব শুরু হয়। এ উপলক্ষে সারা দেশের মন্দির ও পূজা মণ্ডপে ধর্মীয় নানা আচার-অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকবে।</p> <p style="text-align:justify">রমনা কালীমন্দিরের পুরোহিত হরিচাঁদ চক্রবর্তী কালের কণ্ঠকে বলেন, বুধবার ভোর সাড়ে ৫টায় মহালয়ার মধ্য দিয়ে মর্ত্যে দেবীর আগমন ঘটবে। আগামী ৯ অক্টোবর মহাষষ্ঠী, ১০ অক্টোবর মহাসপ্তমী, ১১ অক্টোবর মহাষ্টমী এবং ১২ অক্টোবর মহানবমী পূজা হবে। এরপর ১৩ অক্টোবর বিজয়া দশমীর পূজা শেষে মা দুর্গা আবারও কৈলাশে ফিরে যাবেন। ওই দিন প্রতিমা বিসর্জনের মধ্য দিয়ে পাঁচ দিনব্যাপী দুর্গোৎসবের সমাপ্তি হবে।</p> <p style="text-align:justify">বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্য মতে, রাজধানীসহ সারা দেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি মণ্ডপে এবার দুর্গাপূজা উদযাপন করা হবে। গত বছর পূজা হয়েছিল ৩২ হাজার ৪০৮টি মণ্ডপে। পূজা সামনে রেখে এরই মধ্যে জেলা প্রশাসন প্রস্তুতিমূলক সভা করেছে। পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তা, আইন-শৃঙ্খলা সমুন্নত রাখা এবং প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সরকার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছে। এরই মধ্যে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ও কর্মকর্তাসহ বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, ঢাকা মহানগর সর্বজনীন পূজা কমিটিসহ বিভিন্ন অংশীজনরা বৈঠক করেছে।</p> <p style="text-align:justify">পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাঙালি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা। এই পূজার জন্য সবাই সারা বছর উদগ্রীব হয়ে থাকে। এরই মধ্যে পূজার প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। প্রতিমা তৈরি ও সাজসজ্জার পাশাপাশি পূজার নিরাপত্তা নিয়ে কাজ চলছে। এ নিয়ে এরই মধ্যে সরকারের সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে।’</p> <p style="text-align:justify">স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী গতকাল মঙ্গলবার সচিবালয়ে আইন-শৃঙ্খলা বিষয়ক উপদেষ্টা কমিটির সভা শেষে সাংবাদিকদের বলেন, আসন্ন দুর্গাপূজা যাতে নির্বিঘ্ন হতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি আশা করছেন, এবারের পূজা সবচেয়ে নির্বিঘ্ন ও সবচেয়ে ভালো হবে।</p>