<p>লাউডগা সাপ, যার ইংরেজি নাম Common Vine Snake (Ahaetulla nasuta)। বাংলাদেশ দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশ কিছু দেশে খুব পরিচিত সাপ। এরা বৃক্ষচারী। দেখতে সবুজ রঙের। তাই গাছ-ঝোপঝাড় ও লতাপাতার ভেতরেই সহজেই নিজেকে লুকিয়ে রাখতে পারে। এদের শরীর দীর্ঘ ও সরু। এরা ছোট পাখি, ব্যাঙ এবং গিরগিটি শিকার করে। লাউডগা সাপের দৃষ্টিশক্তি খুব ভালো, এবং এরা শিকারকে তীব্র গতিতে আক্রমণ করে। এদের একটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হলো, এদের পিঠের দিকে মসৃণ এবং নিচের দিকে কিছুটা বক্রাকার দেহ, যা তাদের গাছের মধ্যে সহজে চলাচল করতে সহায়তা করে।</p> <p>লাউডগা সাপ নিয়ে কিছু ভুল ধারণা আছে আমাদের সমাজে। অনেকেই মনে করেন এই সাপ ভয়ানক বিষধর। এর এক কামড়েই তাৎক্ষণিক মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় ভুল ধারণাটা হলো, এই সাপ উড়তে পারে। উড়ে এসে মানুষের মাথায় কামড় দেয়। কেউ কেউ মনে করে, আসলে এই সাপ উড়তে পারে না, তবে লাফ দিতে পারে। তাই এই সাপ মানুষ দেখলেই গাছ থেকে লাফ দিয়ে মানুষের মাথায় পড়ে, এবং কামড় দেয়। মোদ্দা কথা হলো, মানুষ ভাবে এই সাপ মানুষ দেখলেই আক্রমণ করে। আর মাথায় কামড় দেয়, তাই সহজেই বিষ মাথায় উঠে মারা যায়। সত্যি বলতে কি, এ ধারণাগুলো সম্পূর্ণ ভূল।</p> <p>লাউডগা সাপ কিছুটা মারাত্মক বিষধর নয়, মুদৃ বিষধর। তবে এদের বিষ মানুষের জন্য প্রাণঘাতী নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তাদের বিষ ছোট প্রাণীর উপর প্রভাব ফেলে। মানুষের শরীরে গুরুতর কোনো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে না ।</p> <p>লাউডগা সাপ উড়তে পারে না। ওড়ার জন্য যে শারিরিক কাঠামো দরকার, তেমন কাঠামো এর নেই। ওড়ার জন্য ডানা থাকা জরুরি, আজ পর্যন্ত ডানাওয়ালা কোনো সাপ পৃথিবীতে পাওয়া যায়নি। এরা বৃক্ষচারী। তাই এ সাপের শরীরের কাঠামোও এর জন্য উপযোগী।</p> <p>এই সাপ অনেক লম্বা, তুলনায় অনেক সরু। ফলে এরা দ্রুত নড়াচড়া ও শিকার ধরতে পারে। আর শরীর সরু ও লম্বা হওয়ায় নির্দিষ্ট একক দৈর্ঘে এর ভর বা ওজনও খুব কম। তাই এরা সহজেই গাছের খুব সরু ডালে চলাফেরা করতে পারে। ইঁদুর, গিরগিটি বা বা ছোট পাখিরা অনেক সরু ডালে থাকলেও তাদের সহজে শিকার করতে পারে লাউডগা সাপ। এই সাপ লাফাতেও পারে না। আসলে কোনো সাপই লাফাতে পারে না।<br /> তাহলে, এদের নিয়ে এতগুলো মিথ তৈরি হলো কেন?</p> <p>আগেই বলেছি, এই সাপ খুব দ্রুত নড়াচড়া করতে পারে। এদের শরীরও বেশ লম্বা। তাই খুব দ্রুত ছোঁ মেরে এক ডাল থেকে আরেক ডালের শিকার কব্জা করতে পারে। এই দৃশ্য কোনো এককালে মানুষ হয়তো ভেবেছিল, এরা উড়তে পারে। সেই ধরাণা আজও রয়ে গেছে।<a class="stretched-link" href="https://www.kalerkantho.com/online/science/2024/08/20/1416871" target="_blank"> </a></p> <p>উড়ে উড়ে কামড়ানো বা লাফ দিয়ে মানুষের মাথায় কামড় দেওয়রার মিথটাও আসলে একইভাবে তৈরি হয়েছে। খুব দ্রুত চলাফেরা করলেও মাঝে মাঝে ভারসাম্য হারাবে না, এর তো কোনো মানে নেই। ধরা যাক, খুব চিকন একটা ডালে একটা পাখি বসে আছে। আরেক ডাল থেকে লাউডগা সাপ সেটা শিকার করতে চায়। দ্বিতীয় ডালটা হয়তো একটু দুরে। কিন্তু দ্রুত ছোবল দিতে গিয়ে ব্যর্থ হলো সাপ। পাখিটা উড়ে গেল। ডালটাও ছিল একটু বেশি চিকন। সাপের ভার সেই ডাল রাখ পারেনি। তাই সাপ ভারসাম্য হারিয়ে নিচে পড়তে থাকল। আর পড়বি পড় একেবারে মালির ঘাড়েই!</p> <p>কোনো কৃষক বা পথচারী গাছের নিচে বসে একটু জিরিয়ে নিচ্ছিল। তার ঘাড়েই পড়ল সাপটা। আর যাবে কোথায়, পথচারী দেখল একটা সাপ উড়ে বা লাফিয়ে তার মাথায় পড়েছে। এভাবেই এই সাপ নিয়ে মিথ তৈরি হয়েছে। এখন এই মিথে যারা বিশ্বাস করে, সত্যি সত্যি তাদের ঘাড়ে কোনোদিন যদি পড়ে সাপ, তাহলে সেটা মিথের আগুনে ঘি ঢালবে সেটাই স্বাভাবিক।</p> <p>লাউডগা সাপ মানুষের জন্য মোটেও ক্ষতিকর নয়। বরং এই সাপ মানুষের বন্ধু। এরা ইঁদুর এবং ক্ষুদ্র প্রাণী খেয়ে কৃষকদের জন্য সাহায্য করে। লাউডগা সাপের উপস্থিতি পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করে এবং ক্ষতিকারক প্রাণীর সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে রাখে।</p> <p>সূত্র: হাউ ইটস ওয়ার্কস<br />  </p> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <div class="d-flex justify-content-center"> <div class="col-12 col-md-10 position-relative"> <div class="d-flex justify-content-center"> </div> </div> </div> </div> </div> </div> </div> </div> </div> </div> </div>