<p>গোল করা যেন তাঁর নেশা হয়ে গেছে। বয়সভিত্তিক হোক কিংবা জাতীয় দল, গোল করেই চলেছেন তহুরা খাতুন। বয়স মাত্র ২১, এরই মধ্যে বাংলাদেশের জার্সিতে এই ফরোয়ার্ডের গোলসংখ্যা ৫৫। যুব ও জাতীয় দল মিলিয়ে গোলের দিক দিয়ে সাবিনা খাতুনের পরই আছেন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রাম থেকে উঠে আসা তহুরা।</p> <p>গতকালই শেষ হওয়া সাফ চ্যাম্পিয়নশিপেও তহুরার পায়ে ছুটেছে গোলের ফোয়ারা। চার ম্যাচে গোল করেছেন পাঁচটি।  গ্রুপ পর্বে ভারতের বিপক্ষে জোড়া এবং সেমিফাইনালে ভুটানকে উড়িয়ে দেওয়ার ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক।</p> <p>তহুরার গোলের নেশা সেই কিশোরী বয়স থেকেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিজের দ্বিতীয় টুর্নামেন্ট এএফসি এশিয়ান আঞ্চলিক টুর্নামেন্টেই মাত করে দেন এই ফরোয়ার্ড। বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে ৪ ম্যাচে করেন ১০ গোল। সেমিফাইনালে ভারত ম্যাচে করেন হ্যাটট্রিক। ফাইনালে তাজিকিস্তানের বিপক্ষেও হ্যাটট্রিকে রাঙান নিজেকে।</p> <p>সেই যে তিন গোলের প্রেমে মজে গেলেন তহুরা, এরপর বয়সভিত্তিকে আরো চারবার হ্যাটট্রিকের দেখা পেয়েছেন। সিনিয়র জাতীয় দলেও হ্যাটট্রিক করেছেন একবার, এবারের সাফে ভুটানের বিপক্ষে।<br /> এক ম্যাচে চার গোলের কীর্তিও আছে তহুরার। ২০১৯ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ এশিয়ান কাপ বাছাইয়ে ফিলিপিন্সের জালে একাই চারবার বল পাঠিয়েছিলেন। তহুরা নামটি নিশ্চিত মনে রেখেছে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরাও।</p> <p>ওই একই টুর্নামেন্টে জোড়া গোল করে বাংলাদেশকে এনে দিয়েছিলেন মহাগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। ওই ম্যাচ জিততেও পারত বাংলাদেশের কিশোরীরা। থাইল্যান্ডের চনবুরিতে দুবার এগিয়ে গিয়েও শেষ পর্যন্ত ম্যাচে ফিরে আসে অস্ট্রেলিয়ার মেয়েরা।</p> <p>২০১৮ সালে ঢাকায় চার জাতির জোকি কাপে বাংলাদেশকে চ্যাম্পিয়ন করতে অনবদ্য অবদান রাখেন তহুরা। তিন ম্যাচে তাঁর পা থেকে আসে আট গোল। হংকং ও ইরানের বিপক্ষে করেন হ্যাটট্রিক। মালয়েশিয়া ম্যাচে করেন দুই গোল। বয়সভিত্তিকের নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতা তহুরা টেনে এনেছেন সিনিয়র জাতীয় দলেও। ২০১৮ সালে অভিষেক হওয়ার পর এখন পর্যন্ত করেছেন ১২ গোল। শুরুর দিকে কৃষ্ণা রানী সরকার, সিরাত জাহান স্বপ্নাদের ভিড়ে সেভাবে সুযোগ পাননি তিনি। ২০২২ সালের সাফেও বদলি হিসেবেই খেলেছেন। </p> <p>কিন্তু এবারের সাফে সেই তহুরাই নিজেকে মেলে ধরলেন ভিন্ন রূপে। সাবিনা-ঋতুপর্ণা-কৃষ্ণাদের ছাপিয়ে আক্রমণভাগের মধ্যমণি হয়ে গেলেন তহুরা। কোচ পিটার বাটলারের ভীষণ পছন্দের এই ফরোয়ার্ড। শিষ্যকে এভাবে বিশ্লেষণ করেছেন বাটলার, ‘সে নিখুঁত একজন ফিনিশার। দেখতে ছোটখাটো হলেও ফিনিশিং দক্ষতা ওকে আলাদা করেছে। আমার বিশ্বাস, সে অনেক দূর যাবে।’</p> <p>তহুরা নিজেও এখানে থামতে চান না। বিশ্ব মঞ্চে বাংলাদেশের হয়ে আরো গৌরব অর্জন করতে চান। সাফের ফাইনালের আগে কালের কণ্ঠকে তহুরা বলেছেন, ‘গোল করতে ভালোবাসি। সব সময় গোল করতে চাই। কখনো পারি আবার কখনো পারি না গোল করতে। আমার শুধু একটাই চাওয়া, বাংলাদেশের নাম আরো উঁচুতে নিয়ে যাওয়া।’ এই লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যেতে যেতেই ময়মনসিংহের মুক্তাগাছার সেই প্রত্যন্ত কলসিন্দুর গ্রাম থেকে উঠে আসা তহুরা বাংলাদেশের ‘গোল মেশিন’ও হয়ে উঠেছেন।</p>