জাতিসংঘের শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচির আওতায় নতুন করে কোনো শরণার্থীকে আপাতত গ্রহণ করবে না ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশ জার্মানি।
জাতিসংঘের পুনর্বাসন কর্মসূচিটি সাময়িকভাবে স্থগিত করেছে জার্মান সরকার। দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের বরাত দিয়ে মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে জার্মান বার্তাসংস্থা ডিপিএ।
স্থগিতাদেশের কারণ জানতে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
তবে তাৎক্ষণিকভাবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। বিষয়টি নিয়ে ইউএনএইচসিআরের প্রতিক্রিয়াও জানার চেষ্টা করছে রয়টার্স।
চলতি বছরের ২৩ ফেব্রুয়ারি জার্মানিতে অনুষ্ঠিত হয় পার্লামেন্ট নির্বাচন। এর আগে অভিবাসন ছিল দেশটির রাজনীতির সবচেয়ে আলোচিত বিষয়।
তারও আগে জার্মানিতে ঘটে যাওয়া কয়েকটি সহিংস হামলার সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে উঠে আসে শরণার্থী ও আশ্রয়প্রার্থীদের নাম। এর জের ধরে ভোটের মাঠে ভালো ফল করেছে অভিবাসনবিরোধী অতি-ডানপন্থী দল অল্টারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি)। সাধারণ নির্বাচনে ভোটের হিসাবে তাদের অবস্থান ছিল দ্বিতীয়।
ভোট শেষ হলেও অভিবাসন এখনো সমানভাবে আলোচিত।
ভোটের হিসাবে তৃতীয় স্থানে থাকা সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের নিয়ে জোট সরকার গঠনের আলোচনা করছে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ। সেখানেও অভিবাসন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে গত বছরের ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতিবেশী ৯টি দেশের সঙ্গে সীমান্ত নিয়ন্ত্রণ শুরু করে জার্মানি। এ বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সেই নিয়ন্ত্রণ জারি রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির বিদায়ী সরকার। সিডিইউ/সিএসইউ চায়, নিরাপদ দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জার্মানির সীমান্ত থেকেই ফিরিয়ে দিতে।
এ নিয়েও চলছে বিতর্ক।
সরকার গঠনের আলোচনা চূড়ান্ত না হলেও এই দুটি রাজনৈতিক দল কোনো কোনো বিষয়ে একমত হয়েছে। তেমন একটি নথি দেখেছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সেই নথি অনুযায়ী, নতুন করে কোনো ধরনের শরণার্থী পুনর্বাসন কর্মসূচি চালু না করতে সম্মত হয়েছে জার্মানি সম্ভাব্য সরকারের দুই শরিক দল। এ রকম যেসব কর্মসূচিগুলো জার্মানিতে চালু আছে, সেগুলোও যতটা সম্ভব বন্ধ করে দিতেও ঐকমত্যে পৌঁছেছেন দল দুটির শীর্ষ নেতারা।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পুনর্বাসন কর্মসূচির অংশ হিসাবে চলতি বছর ছয় হাজার ৫৬০ জন শরণার্থীকে গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানি। এই কর্মসূচির আওতায় সাধারণত মিশর, জর্দান, কেনিয়া, লেবানন, পাকিস্তান, লিবিয়াসহ বিভিন্ন দেশের শরণার্থী বা রাষ্ট্রহীন মানুষদের আশ্রয় দেওয়া হয়। আশ্রয় আবেদনের হিসেবে জার্মানি এখন আর ইইউর শীর্ষ দেশ নয়।
আশ্রয় আবেদন কমেছে জার্মানিতে
ইউরোপীয় ইউনিয়নে চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে জমা হওয়া আশ্রয় আবেদনের হিসাবেও জার্মানি এখন আর শীর্ষ দেশ নয়। বেশ কয়েক বছর পর এবার জার্মানিকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেছে ফ্রান্স ও স্পেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গোপন নথির বরাত দিয়ে সোমবার (৭ এপ্রিল) এ তথ্য জানিয়েছে জার্মান দৈনিক ভেল্ট আম জনটাগ।
এতে বলা হয়েছে, বছরের প্রথম প্রান্তিকে অর্থাৎ জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে ফ্রান্স এবং স্পেনে আশ্রয় চেয়ে বেশি আবেদন জমা হয়েছে।
ইইউ'র পরিসংখ্যান কার্যালয় ইউরোস্ট্যাটের ফেব্রুয়ারির পরিসংখ্যানেও তেমন আভাস মিলেছে। দেখা গেছে, এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে জার্মানিতে ১২ হাজার ৭৭৫টি নতুন আশ্রয় আবেদন জমা হয়েছিল। সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৬৫টি আবেদন জমা পড়েছে ফ্রান্সে এবং দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১২ হাজার ৯৭৫টি জমা হয়েছে স্পেনে।
৭ এপ্রিল জার্মানির অভিবাসন ও শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা (বিএএমএফ) জানিয়েছে, জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে জমা হওয়া প্রথমবারের মতো আশ্রয়ের আবেদনের সংখ্যা ২০২৪ সালের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ কমেছে। আশ্রয়প্রার্থীদের মধ্যে বরাবরের মতোই শীর্ষে রয়েছে সিরিয়া, আফগান ও তুরস্কের নাগরিকরা।
সংস্থাটি আরো জানিয়েছে, এ বছরের প্রথম তিন মাসে জার্মানিতে অন্তত ৪১ হাজার আশ্রয়ের আবেদন জমা পড়েছে। তবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যান্য দেশগুলোর কোনো তথ্য তারা প্রকাশ করেনি।
বিএএমএফ বলছে, মার্চে ৯ হাজারেরও কম আবেদন জমা পড়েছে। বেশ কয়েক বছর পর এই সংখ্যাটি প্রথমবারের মতো ১০ হাজারের নিচে নেমেছে।
এমনকি গত বছরেও আশ্রয় আবেদনের হিসাবে শীর্ষে ছিল জার্মানি। ২০২৪ সালে দুই লাখ ৫০ হাজার ৬১৫টি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছিল দেশটিতে। দ্বিতীয় অবস্থানে থাকা স্পেনে জমা হয়েছিল এক লাখ ৬৬ হাজার ১৭৫টি আবেদন। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইতালিতে জমা হয়েছিল এক লাখ ৫৮ হাজার ৬০৫টি আবেদন।