ঢাকা, বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫
১৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, বুধবার ০৫ মার্চ ২০২৫
১৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ০৪ রমজান ১৪৪৬

আরো জোরদার করতে হবে

  • কেপিআইয়ের নিরাপত্তা
শেয়ার
আরো জোরদার করতে হবে

রাজধানী ঢাকা শুধু নয়, দেশের বিভিন্ন স্থানে বছরজুড়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। গত কয়েক বছরে রাজধানীতে বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। জানমালের ক্ষতি হয়েছে, কিন্তু প্রাণহানি না ঘটলেও বাংলাদেশ সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অনেকগুলো প্রশ্ন সামনে নিয়ে এসেছে। গত বুধবার দিবাগত মধ্যরাতে সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে।

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৭ নম্বর ভবনের চারটি তলার কয়েকটি দপ্তর পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। ফায়ার সার্ভিসের ১৯টি ইউনিট ছয় ঘণ্টার চেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হলেও পুরোপুরি আগুন নেভাতে সময় লেগে যায় ১০ ঘণ্টা। আগুন নিয়ন্ত্রণে ব্যবহৃত হোজপাইপ নিয়ে দ্রুত সচিবালয়ে ঢোকার সময় ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয়েছেন নয়ন নামের এক ফায়ারফাইটার।

সচিবালয়ে এর আগেও আগুনের ঘটনা ঘটেছে, কিন্তু এবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি অন্যগুলোর চেয়ে আলাদা।

আগুন লেগেছে ভবনটির দুই মাথায়। আগুনে দীর্ঘ সময় ধরে পুড়েছে পাঁচ মন্ত্রণালয় ও বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ নথি। দেশের প্রশাসনিক প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনের ষষ্ঠ থেকে নবম তলা পর্যন্ত চারটি ফ্লোর আগুনে পুড়ে গেছে। এতে ছাই হয়ে গেছে পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের নথি।
আগুন লাগা ৭ নম্বর ভবনের নবম তলার পুরোটিতেই রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের দপ্তর। ভবনের অষ্টম তলার পূর্ব অংশে রয়েছে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কয়েকটি দপ্তর। অর্থ মন্ত্রণালয়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দপ্তরও রয়েছে এখানে। সপ্তম তলায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়। ষষ্ঠ তলায় শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দপ্তর রয়েছে।
   

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেছেন, সচিবালয়ের ভেতরে থাকা সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের কারণ অনুসন্ধানে আট সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে সরকার। আগামী ৩০ ডিসেম্বরের মধ্যে প্রাথমিক প্রতিবেদন এবং পরবর্তী ১০ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ প্রতিবেদন দিতে হবে কমিটিকে। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, অগ্নিকাণ্ডের উৎস ও কারণ উদঘাটন করা, এর পেছনে কারো ব্যক্তিগত অবহেলা বা পেশাগত দায় কিংবা অন্য কোনো সংযোগ আছে কি না সেটি উদঘাটন এবং এমন ঘটনা প্রতিরোধে সুপারিশ করবে এই কমিটি। সচিবালয়ের সার্বিক নিরাপত্তার বিষয়েও সুপারিশ দেবে। এ ছাড়া সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডে ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দুটি কমিটি এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের পৃথক আরেকটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাটি মানবসৃষ্ট বিপর্যয়, নাকি ভিন্ন কিছুতার উত্তর নিশ্চয় মিলবে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের পর। কিন্তু কিছু প্রশ্ন তো জনমনে থেকেই যাবে। কারণ সচিবালয় হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাগুলোর (কেপিআই) একটি। বাংলাদেশ সচিবালয়ের নিজস্ব একটি নিরাপত্তাব্যবস্থা আছে। সেই নিরাপত্তাব্যবস্থাটি কি আদৌ কার্যকর, নাকি ব্যর্থ?

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বর্তমানে সারা দেশে কেপিআই আছে ৫৮৭টি। এগুলোর নিরাপত্তার কার্যক্রম দেখভাল করার জন্য রয়েছে সরকারের একটি শক্তিশালী নীতিমালা। কেপিআইয়ের নিরাপত্তাসংক্রান্ত নির্দেশনায় বলা হয়েছে, নিরাপত্তা বাড়ানোর পাশাপাশি তদারকি বাড়াতে হবে।

সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনার পর দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বা কেপিআইয়ের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, দেশের সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা আরো জোরদার করা হবে।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে

    রমজানে কিছু পণ্যে অস্থিরতা
শেয়ার
বাজারে নজরদারি বাড়াতে হবে

পবিত্র রমজান মাসে অতি প্রয়োজনীয় একটি পণ্য হচ্ছে ভোজ্যতেল। কয়েক মাস ধরেই ভোজ্যতেল নিয়ে এক ধরনের সংকট রয়েছে। প্রথম রোজার দিনও বাজারে ক্রেতারা চাহিদামতো পণ্যটি পায়নি। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাজধানীর কারওয়ান বাজারে সেদিন চাহিদার তুলনায় পণ্যটি মিলেছে মাত্র ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো।

অন্য খুচরা ও পাইকারি বাজারগুলোতেও বোতলজাত সয়াবিন তেলের জন্য হাহাকার চলছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল না পেয়ে অনেকে খোলা সয়াবিন কিনেছে। খোলা সয়াবিন তেলেরও সংকট রয়েছে এবং নির্ধারিত দামের চেয়ে লিটারপ্রতি ৩০ টাকা পর্যন্ত বেশি নেওয়া হচ্ছে। তবে আমদানিসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মতে, আগামী দু-এক দিনের মধ্যেই বাজারে ভোজ্যতেলের যে সংকট রয়েছে, তা কেটে যাবে।
প্রচুর পরিমাণে তেল আমদানি হয়েছে এবং সেগুলো দ্রুতই বাজারে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের প্রেস উইং থেকে গত শনিবার নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের দামের একটি তুলনামূলক মূল্যতালিকা দেওয়া হয়। এতে দেখা যায়, গত বছরের রমজান মাসের তুলনায় এবার আটা, ময়দা, চিনি, আলু, টমেটো, আদা ও পেঁয়াজের দাম কমেছে। তবে গত রমজানের তুলনায় এবার ভোজ্যতেলের দাম ১১ থেকে ২০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, গত রমজানের চেয়ে এবার বেশির ভাগ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে এসেছে, কমেছে। দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখতে পুরো রমজানে অন্তর্বর্তী সরকারের নজর থাকবে।

প্রকাশিত খবরে দেখা যায়, অন্যান্য সবজির দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে থাকলেও রমজানে বেশি প্রয়োজনীয় কিছু সবজির দাম বেড়ে গেছে। দুই সপ্তাহ আগেও যে লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকা ছিল, প্রথম রোজায় তার দাম দাঁড়ায় মানভেদে ৬০ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত। উন্নতজাতের লেবুর দাম ছিল আরো কিছুটা বেশি।

হাইব্রিড শসার কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকা, দেশি শসার কেজি ৯০ থেকে ১০০ টাকা এবং খিরার কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। বেগুনের কেজি মানভেদে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। মাছ, মাংস ও মুরগির দামও কিছুটা বেড়েছে।

গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত অপর একটি খবরে দেখা যায়, রমজান উপলক্ষে মধ্যপ্রাচ্যের বেশির ভাগ দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যে ব্যাপক ছাড় দেওয়া হয়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে ছাড়ের পরিমাণ ৭৫ শতাংশ পর্যন্ত। কিন্তু আমাদের এখানে রমজানে বেশি প্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়এটাই বরাবরের চিত্র। কিছু ব্যবসায়ীর অনৈতিক লাভের প্রবণতা রোধে সরকারকে আরো তৎপর হতে হবে। নজরদারি ও বাজারে হস্তক্ষেপ বাড়াতে হবে।

মন্তব্য

কঠোর ব্যবস্থা নিন

    মহাসড়কে ডাকাতি বেড়েছে
শেয়ার
কঠোর ব্যবস্থা নিন

অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে নানা অপরাধের ঘটনা। বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।

পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, হাইওয়েতে বর্তমানে দেড় হাজারের বেশি দুর্বৃত্ত সক্রিয়। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মহাসড়কের প্রায় চার হাজার কিলোমিটার ঘিরে এখন কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২০০৫ সাল থেকে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ডাকাতদলের তালিকায় এক হাজার ৪৪৬ জনের নাম রয়েছে। তাদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে আবারও ডাকাতি করছে।

গত শনিবার গভীর রাতে তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়ে গণডাকাতি হয়। এ সময় মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতদলের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে পাবনার সাঁথিয়ায় গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিদেশ থেকে আসা দুজন প্রবাসী ডাকাতদলের কবলে পড়েন।
দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কুমিল্লার মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির সময় দুই নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ মিলেছে। শুধু মহাসড়কেই নয়, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গত রবিবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের পুলিশ টাউন এলাকায় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের মানিব্যাগ, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়।
দুই সপ্তাহ আগে একই স্থানে বাসে যাত্রী ওঠানোর সময় তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।

পুলিশ বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও কুমিল্লার মহাসড়ক চান্দাইল, নারায়ণগঞ্জের সিমরাইলে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়েও বেশি ডাকাতি হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নির্জন সড়কে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে। পুলিশ বলছে, এসব এলাকায় অনেককে আগে থেকে টার্গেট করেও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের গাড়ি টার্গেট করছে ডাকাতদল। নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পথে-ঘাটে, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও মানুষ নিরাপত্তাহীন। এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধকোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না। 

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। অনেকে মনে করছেন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশের কাজের গতিহীনতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানায় হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি অনেক অপরাধীও বের হয়ে যায়। থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। তারাই এখন নতুন করে সংগঠিত হয়ে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি করছে।

সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা না গেলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তীব্র হবে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

মন্তব্য

ফুটপাত বেদখল

    রাজধানীতে অবৈধ পার্কিং
শেয়ার
ফুটপাত বেদখল

বিশ্বে বসবাসের অযোগ্য নগরীগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা অন্যতম। এর জন্য দায়ী যেসব কারণ, তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে যানজট। যাতায়াতে দীর্ঘ সময় লেগে যাওয়ায় কোটি কোটি টাকার অপচয় হচ্ছে। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাজধানী ঢাকার সড়ক ও ফুটপাত দখল এবং রাস্তার ওপর অবৈধ পার্কিংয়ের কারণে যানজট তীব্র আকার ধারণ করছে।

ফুটপাত হকারদের দখলে চলে যাওয়ায় পথচারীরা রাস্তা দিয়ে হাঁটতে বাধ্য হচ্ছে। অনেক গাড়িচালক সড়কের পাশেই যানবাহন রাখছেন, যা যানজটকে আরো প্রকট করে তুলছে। এই অবস্থা দিন দিন ভয়াবহ হয়ে উঠছে। নিউমার্কেটের দক্ষিণ গেটে পার্কিংয়ের কারণে মূল রাস্তাটি সরু হয়ে গেছে।
এলিফ্যান্ট রোডের বাটা সিগন্যাল রোড থেকে নিউমার্কেটে যাওয়ার পথে গাউছিয়া মার্কেটের সামনের সড়কে ভ্যান এবং মোটরসাইকেল পার্ক করা হয়। সুযোগ পেলে পার্ক করছে প্রাইভেট কারও। আর ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার দৌরাত্ম্যে সড়কের অবস্থা রীতিমতো ভয়াবহ। কারওয়ান বাজার হয়ে কাঁটাবনের দিকে যেতে সোনারগাঁও সড়কটি অনেক প্রশস্ত হলেও সরু হয়ে যায় সিরামিকের দোকানগুলোর সামনে পিকআপ, ভ্যান, প্রাইভেট কার পার্কিংয়ের কারণে।
চকবাজার, মৌলভীবাজার, মিটফোর্ড, ইসলামপুর, বাংলাবাজার, লক্ষ্মীবাজারসহ বিভিন্ন সড়কে গাড়ি পার্ক করায় যানজট নিয়মিত বিষয় হয়ে গেছে।

অনেক স্থানে সড়কের পাশে দোকান বসিয়ে গাড়ি চলাচলে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। পথচারীদের হেঁটে চলার পথ দখল করে বসানো শত শত অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ করা যেন কোনোভাবেই সম্ভব হচ্ছে না। কালের কণ্ঠে গতকাল প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, রাজধানীর গুলিস্তান এলাকার প্রায় সব সড়ক ও ফুটপাত হকারদের দখলে চলে গেছে। মিরপুর ১০ থেকে ১৪ নম্বরের দিকে যেতে বিআরটিএ অফিসের দিকে বাম পাশের পুরো ফুটপাত অবৈধ দোকানিদের দখলে।

আবার রাস্তা দখল করে ভ্যানের পাশাপাশি পার্কিংয়ের কারণে মিরপুর ১০ নম্বর মোড় থেকে সিগন্যাল পেলেও সরু রাস্তায় যানবাহন এগোতে পারে না।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সম্মিলিতভাবে কাজের উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেটি আলোর মুখ দেখেনি। গত সপ্তাহে গুলিস্তানে দুইবার অভিযান চালানো হয়েছে। দুপুরে উচ্ছেদ করলে বিকেলে আবার দখল হয়ে যাচ্ছে। ফুটপাত ছাড়িয়ে রাস্তায়ও অবৈধ দোকানপাট বসছে। ফুটপাত আর সড়ক দখলমুক্ত করলে আবার দখল হয়ে যাচ্ছে।

যানজটের একটি বড় কারণ যানবাহন চলাচল ছাড়া অন্যান্য কারণে সড়ক দখল করে রাখা। অবৈধ পার্কিংয়ের পাশাপাশি ফুটপাতে হকারদের পসরা সাজিয়ে বসাসহ আরো অনেক কারণেই যানজট তীব্রতা পায়। আমাদের প্রত্যাশা, রাজধানীর সব সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখল এবং পার্কিং মুক্ত করা হবে।

মন্তব্য

দাম নয় সরবরাহ বাড়ান

    গ্যাসসংকটে ধুঁকছে শিল্প খাত
শেয়ার
দাম নয় সরবরাহ বাড়ান

দেশের শিল্প খাত মারাত্মকভাবে ধুঁকছে। আর তার প্রধান কারণ গ্যাস-বিদ্যুতের সংকট। চাহিদার তুলনায় গ্যাস মিলছে অনেক কম। ফলে ব্যাপকভাবে উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে।

উৎপাদন কমে যাওয়ায় বেড়ে যাচ্ছে উৎপাদন খরচ। শ্রমিক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সময়মতো পরিশোধ করা যাচ্ছে না। ফলে বাড়ছে শ্রমিক অসন্তোষ। আবারও বন্ধ হয়ে যাচ্ছে উৎপাদন।
এভাবে উদ্যোক্তারা ক্রমাগত লোকসানের মুখোমুখি হচ্ছেন। এর ফলে বন্ধ হয়ে যাচ্ছে অনেক শিল্প-কারখানা। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, গ্যাসসংকটের কারণে বিভিন্ন শিল্পের উৎপাদন ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে গেছে বলে জানিয়েছেন শিল্পোদ্যোক্তারা। তাঁদের মতে, গত কয়েক মাসে কয়েক শ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।
কেবল আরএমজি সেক্টরেই ২০০ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে।

দেশে গ্যাসের চাহিদা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অন্যদিকে ক্রমাগতভাবে কমছে দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন। আপাতত তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) আমদানি খুব একটা বাড়ানোর উপায় নেই। আমদানি বাড়াতে হলে নতুন এলএনজি টার্মিনাল নির্মাণ করতে হবে।

আগামী দুই বছরেও নতুন টার্মিনাল স্থাপন ও চালু করার সম্ভাবনা কম। পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে দেশে গ্যাসের চাহিদা রয়েছে প্রায় চার হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। গত শনিবার গ্যাস সরবরাহ করা হয় দুই হাজার ৬৯১ মিলিয়ন ঘনফুট। ঘাটতি ছিল এক হাজার ৩০৯ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস। সরবরাহ করা গ্যাসের মধ্যে দেশীয় গ্যাসক্ষেত্র থেকে এসেছে এক হাজার ৯০৯ মিলিয়ন ঘনফুট এবং আমদানি করা এলএনজি থেকে এসেছে ৭৮১ মিলিয়ন ঘনফুট। এদিকে রমজান ও গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা অনেক বেড়ে যাবে। সেই বাড়তি চাহিদা পূরণে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে বেশি পরিমাণে গ্যাস সরবরাহ করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। এতে আগামী দিনে শিল্পে গ্যাসসংকট আরো বেড়ে যাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

গ্যাসসংকটে শিল্প খাত যখন প্রবল প্রতিকূলতা মোকাবেলা করছে, উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, রপ্তানি কমে যাচ্ছে, শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তখন বাড়তি গ্যাস সরবরাহের বদলে সরকার গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধি করছে। এরই মধ্যে শিল্পের জন্য নতুন করে আরো ১৫২ শতাংশ পর্যন্ত গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির প্রস্তাব নিয়ে গত বুধবার গণশুনানি করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। বর্তমানে শিল্প-কারখানার গ্রাহকদের প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৩০ টাকা এবং ক্যাপটিভ পাওয়ারে (শিল্পে ব্যবহৃত নিজস্ব বিদ্যুৎ) ৩০ টাকা ৭৫ পয়সা দিতে হয়। নতুন শিল্পের জন্য এটি বাড়িয়ে ৭৫.৭২ টাকা করার প্রস্তাবের ওপর শুনানি গ্রহণ করা হয়েছে। খাতসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, গ্যাসসংকটের পাশাপাশি জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর রাজনৈতিক অস্থিরতা, বাজার অস্থিতিশীলতা, সুদহার বৃদ্ধি, ঋণপত্র খোলার অভাবে কাঁচামালের অপর্যাপ্ততা, শ্রমিক অসন্তোষ ও উৎপাদন অপ্রতুলতায় বিপুলসংখ্যক কলকারখানা বন্ধ হয়েছে। যেগুলো টিকে আছে, সেগুলোও অস্তিত্বের সংকটে ধুঁকছে। এ অবস্থায় গ্যাসের দাম বাড়ানো হলে তা শিল্প খাতকে ধ্বংসের দিকে নিয়ে যাবে।

দেশে শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধি ব্যাহত হলে কর্মসংস্থানের ওপর প্রভাব পড়বে, অর্থনীতিতে বিপর্যস্ত হবে। তাই এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া কাম্য হবে না, যা শিল্প খাতের প্রবৃদ্ধিকে ব্যাহত করবে। আমরা মনে করি, গ্যাসের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত থেকে অবিলম্বে সরে আসা প্রয়োজন।

 

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ