অন্তর্বর্তী সরকারের সামনে এখনো প্রধান যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে, তার একটি হচ্ছে দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা। সারা দেশেই ঘটছে নানা অপরাধের ঘটনা। বেড়েছে ছিনতাই, চুরি-ডাকাতি। বিশেষ করে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা বেড়েছে উদ্বেগজনক হারে।
পুলিশ সূত্রের বরাত দিয়ে গতকাল কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, হাইওয়েতে বর্তমানে দেড় হাজারের বেশি দুর্বৃত্ত সক্রিয়। হাইওয়ে পুলিশ বলছে, মহাসড়কের প্রায় চার হাজার কিলোমিটার ঘিরে এখন কিছুটা আতঙ্ক বিরাজ করছে। ২০০৫ সাল থেকে মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনায় জড়িত ডাকাতদলের তালিকায় এক হাজার ৪৪৬ জনের নাম রয়েছে। তাদের অনেকেই জামিনে বের হয়ে আবারও ডাকাতি করছে।
গত শনিবার গভীর রাতে তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়ে গণডাকাতি হয়। এ সময় মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে ডাকাতদলের পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর আগে শুক্রবার মধ্যরাতে পাবনার সাঁথিয়ায় গণডাকাতির ঘটনা ঘটে। তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে কুমিল্লার চৌদ্দগ্রামে বিদেশ থেকে আসা দুজন প্রবাসী ডাকাতদলের কবলে পড়েন। দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কুমিল্লার মিয়াবাজার হাইওয়ে থানার ওসিকে প্রত্যাহার করা হয়। সম্প্রতি টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে রাজশাহীগামী একটি যাত্রীবাহী বাসে ডাকাতির সময় দুই নারীর শ্লীলতাহানির অভিযোগ মিলেছে। শুধু মহাসড়কেই নয়, রাজধানীসহ দেশের প্রতিটি জেলা ও থানা এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। গত রবিবার দুপুরে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে সাভারের পুলিশ টাউন এলাকায় চলন্ত বাসে ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। ছিনতাইকারীরা ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে যাত্রীদের মানিব্যাগ, মোবাইল ফোনসহ মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায়। দুই সপ্তাহ আগে একই স্থানে বাসে যাত্রী ওঠানোর সময় তিনজনকে ছুরিকাঘাত করে যাত্রীদের মোবাইল ফোন, মানিব্যাগসহ মূল্যবান জিনিস নিয়ে যায় ছিনতাইকারীরা।
পুলিশ বলছে, ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল ও কুমিল্লার মহাসড়ক চান্দাইল, নারায়ণগঞ্জের সিমরাইলে বেশি ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ ছাড়া তেঁতুলিয়া ও পঞ্চগড়েও বেশি ডাকাতি হচ্ছে। অপেক্ষাকৃত নির্জন সড়কে ডাকাতির ঘটনা বেশি ঘটছে। পুলিশ বলছে, এসব এলাকায় অনেককে আগে থেকে টার্গেট করেও ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। বিশেষ করে প্রবাসীদের গাড়ি টার্গেট করছে ডাকাতদল। নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়ার পরও পথে-ঘাটে, এমনকি নিজের বাসার ভেতরেও মানুষ নিরাপত্তাহীন। এক শ্রেণির মানুষ পুলিশ-প্রশাসন, বিচারব্যবস্থা, মানবিক মূল্যবোধ—কোনো কিছুরই তোয়াক্কা করছে না।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করেন, সাম্প্রতিক সময়ে পেশাদার অপরাধীদের তৎপরতা বেড়ে গেছে। অনেকে মনে করছেন এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পুলিশের কাজের গতিহীনতা। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের সময় সারা দেশে অনেক থানায় হামলা হয়। অস্ত্র, গোলাবারুদ লুট হয়। কয়েকটি কারাগারেও হামলা হয়। অস্ত্র লুটের পাশাপাশি অনেক অপরাধীও বের হয়ে যায়। থানা থেকে লুট হওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের একটি বড় অংশ এখনো উদ্ধার করা যায়নি। ধারণা করা হচ্ছে, সেসব আগ্নেয়াস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতে চলে গেছে। তারাই এখন নতুন করে সংগঠিত হয়ে সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি করছে।
সড়ক-মহাসড়কে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। মহাসড়কে ডাকাতির ঘটনা প্রতিরোধ করার পাশাপাশি সারা দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নয়ন করা না গেলে জনমনে নিরাপত্তাহীনতার বোধ তীব্র হবে। তাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীকে আরো তৎপর হতে হবে। আমাদের প্রত্যাশা, সড়ক-মহাসড়কে ডাকাতি বন্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।