রোজা ঘিরে রেকর্ড নিত্যপণ্য আমদানি হয়েছে। এ সময়ের বাড়তি চাহিদা মেটাতে এরই মধ্যে ছোলা, খেজুর, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, চিনি, ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের বিপুল মজুদ নিশ্চিত করেছেন ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা। ফলে রোজায় অতিমুনাফালোভী চক্র যেভাবে পণ্যের দাম বাড়িয়ে ভোক্তার পকেট কাটে, এবার এ আশঙ্কা নেই; বরং দাম আরো কমতে পারে। তথ্য-উপাত্ত এবং ব্যবসায়ী ও আমদানিকারকরা এমন আভাসই দিচ্ছেন।
সরবরাহ বেশি, সংকটের শঙ্কা কম
সজীব আহমেদ

তবে পর্যাপ্ত আমদানির মধ্যেও চোখ রাঙাচ্ছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। বাজারে এ পণ্যটির সংকট এখনো কাটেনি। হাতেগোনা দু-একটি দোকানে বোতলজাত তেল পাওয়া গেলেও সরকার নির্ধারিত দরের চেয়ে বেশি রাখা হচ্ছে। বোতলজাত সয়াবিন তেল সংকটে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেলও।
বাংলাদেশ ব্যাংকের এলসি নিষ্পত্তির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত চার মাসে দেশে ৯টি ভোগ্যপণ্যের মোট আমদানি হয়েছিল ১৪ লাখ ৭৫ হাজার ৭১৩ টন। আর চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের একই সময় আমদানি হয়েছে ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৪৫০ টন।
গত অক্টোবর-জানুয়ারি সময়ে আগের বছর একই সময়ের তুলনায় ছোলা আমদানি বেড়েছে ৬৪ শতাংশ, সয়াবিন তেল ৩৪ শতাংশ, খেজুর ২৩ শতাংশ, চিনি ২০ শতাংশ, ডালজাতীয় পণ্য ৪৪ শতাংশ, রসুন ২০ শতাংশ ও আদা আমদানি ৫৬ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের সরবরাহ বৃদ্ধি এবং পণ্যের দাম কমানোকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নানামুখী পদক্ষেপ নেয় অন্তবর্তী সরকার। আমদানি বাড়ানো ও মূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভোজ্যতেল, ছোলা, চিনি, পেঁয়াজ, আলু, খেজুরসহ বিভিন্ন পণ্যে শুল্ক ছাড় দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে আমদানিতে উৎসাহ বাড়ায় এবার ব্যাপক হারে ভোগ্যপণ্য আমদানি করেছেন আমদানিকারকরা।
গতকাল রবিবার রাজধানীর সবচেয়ে বড় বাজার কারওয়ান বাজার ঘুরে ও ভোগ্যপণ্য ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ভোজ্যতেল ছাড়া সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে।
কারওয়ান বাজারের মেসার্স হাজী স্টোরের ব্যবসায়ী মো. কামাল গাজী কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার সব পণ্যের দাম কম আছে। অন্যান্য বছর রোজার আগে আগে হঠাৎ করে বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যেত, এবার সেটা নেই। কারণ এবার বাজারে কোনো ঘাটতি নেই। শুধু সয়াবিন তেল নিয়ে কিছুটা ঝামেলা চলছে। কম্পানিগুলো চাহিদামতো তেল দিচ্ছে না। চাহিদা ১০ কার্টনের, কম্পানিগুলো দিচ্ছে এক কার্টন।’ তিনি বলেন, গত বছর রোজায় বুটের বেসন কেজি ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল। এবার অ্যাংকরের বেসন কেজি ৯০ টাকায় ও বুটের বেসন ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ইসবগুলের ভুসি কেজি ১৪৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছর রোজায় ১৮৫০ থেকে ১৯০০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছিল।’
রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) গত ২৩ জানুয়ারি এবং ২৩ ফেব্রুয়ারির বাজার দরের তথ্য পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এক মাসের ব্যবধানে ছোলা কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ১০৫ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে। দেশি পেঁয়াজ কেজিতে ৫ থেকে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, দেশি আদা কেজিতে ১০০ টাকা পর্যন্ত কমে ১০০ থেকে ১৫০ টাকায়, খোলা সয়াবিন তেল লিটারে ১৫ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত বেড়ে ১৮৫ থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। মসুর ডাল ও চিনির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। দেশি মসুর ডাল কেজি ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায় এবং চিনি কেজি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
চোখ রাঙাচ্ছে বোতলজাত ভোজ্যতেল
বাজারে এখনো সংকট বোতলজাত সয়াবিন তেলের। রাজধানীর বিভিন্ন দোকান ঘুরেও বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পারছেন না ক্রেতারা। আর কবে নাগাদ বাজারে সরবরাহ ঠিক হবে, সেটিও জানাতে পারছেন না বিক্রেতারা। রাষ্ট্রয়াত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, গত এক মাসের ব্যবধানে খোলা সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ১৫ থেকে ১৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বিক্রেতারা জানান, গত নভেম্বর মাস থেকেই বাজারে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সংকট চলছে। মাঝের সময়ে সয়াবিন তেলের দাম লিটারে আট টাকা বাড়ানোর পরে সরবরাহের সংকট কিছুটা কমেছিল। তবে রোজা সামনে রেখে চলতি মাসের শুরু থেকে আবারও সংকট শুরু হয়।
কারওয়ান বাজারের একটি কম্পানির ডিলার মো. ইয়াসিন কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা কম্পানির কাছ থেকে চাহিদামতো তেল পাচ্ছি না, যার কারণে দোকানগুলোতেও পর্যাপ্ত তেল দিতে পারছি না। এখন তেলের ক্রাইসিসটা মূলত কী কারণে, সেটি কম্পানিগুলো আমাদের জানাচ্ছে না। তবে শিগগিরই তেলের বাজারের সংকট কেটে যাবে বলে কম্পানিগুলো আমাদের আশ্বস্ত করেছে।’
আমদানি বাড়ার পরও বাজারে ভোজ্যতেলের সরবরাহ না বাড়ার বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, ‘বড় গ্রুপগুলোর পণ্য এখনো পৌঁছেনি। পথে রয়েছে। তারা প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২৫ তারিখের পর সরবরাহ বাড়বে। এ প্রতিশ্রুতি যেন তাঁরা রাখেন, সে বিষয়টি নিশ্চিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে ভূমিকা রাখতে হবে। কারণ প্রতিশ্রুতি রক্ষা না হলে ভোক্তাদের ভোগান্তি বাড়বে, আর তুলনামূলক ছোট ব্যবসায়ীদের বদনাম হতে থাকবে। ভোজ্যতেলের সরবরাহ ঠিক রাখার বিষয়ে সরকারের নিবিড় পর্যবেক্ষণ প্রত্যাশা করছি।’
ছোলার দাম কমছে
গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাসে ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। এতে বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ বেড়ে দামও কমতে শুরু করেছে। গত এক মাসের ব্যবধানে ছোলা কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত কমে ১০৫ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হচ্ছে।
কারওয়ান বাজারের মাসুদ জেনারেল স্টোরের ব্যবসায়ী মাসুদ রানা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘বাজারে ছোলার সরবরাহ সংকটের কারণে দাম বাড়তি ছিল। এখন রোজাকে ঘিরে বিপুল পরিমাণ ছোলা আমদানি হওয়ায় দামও কমতে শুরু করেছে।’
খেজুরের বাজার স্থিতিশীল
গত বছরের রমজানে খেজুরের বাজার ছিল বেশ অস্থিতিশীল। গত অর্থবছরের অক্টোবর থেকে জানুয়ারি মাসের তুলনায় চলতি অর্থবছরে খেজুর আমদানির ২৩ শতাংশ পর্যন্ত বেশি হয়েছে। বাজার ঘুরেও খেজুরের পর্যাপ্ত সরবরাহের চিত্র দেখা গেছে।
জানতে চাইলে বাংলাদেশ ফ্রেশ ফ্রুটস ইমপোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘এবার খেজুর ব্যাপকভাবে আমদানি হওয়ার কারণে বাজার নিম্নমুখী। আগের চেয়ে খেজুরের দাম অনেক কমে গেছে। রোজার মধ্যে খেজুরের দাম বাড়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। কারণ রোজায় সর্বোচ্চ খেজুরের চাহিদা ৬০ হাজার টন, এরই মধ্যে খেজুর আমদানি হয়ে গেছে প্রায় এক লাখ টন। আমদানিতে শুল্ক সুবিধার কারণে অনেক ছোট আমদানিকারকরাও এবার প্রচুর খেজুর আমদানি করেছে। তাই এবার খেজুরের বাজার অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে থাকবে।’
চড়া লেবুর দাম
এবার রোজার মাস খানেক আগে থেকেই চড়া লেবুর বাজার। এক মাস আগে রাজধানীর খুচরা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা হালি বিক্রি হওয়া লেবু দাম বেড়ে এখন বিক্রি হচ্ছে মানভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকা হালি। একটি লেবু কিনতেই খরচ পড়ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
বিক্রেতারা বলছেন, লেবুর মৌসুম শেষ হয়ে যাওয়ার কারণে বাজারে লেবুর সরবরাহ কিছুটা কমে গেছে, যার কারণে দাম বাড়তি। তবে লেবুর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় আগের তুলনায় বিক্রিও অনেক কমেছে বলে জানান বিক্রেতারা।
সম্পর্কিত খবর

লালমনিরহাট সীমান্ত
বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
লালমনিরহাট প্রতিনিধি

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার সিংগীমারী সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের গুলিতে হাসিবুল ইসলাম (২২) নামের এক বাংলাদেশি কৃষক নিহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার এ ঘটনা ঘটে। হাসিবুল সিংগীমারী গ্রামের জাহিদুল ইসলামের ছেলে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে হাসিবুলকে গুলি করে বিএসএফ।
ভুক্তভোগীর পরিবার জানায়, সীমান্ত এলাকায় নিজেদের জমিতে দুপুরে কাটতে যান হাসিবুল। এক পর্যায়ে কাঁটাতারের বেড়া পেরিয়ে বিএসএফের একটি টহলদল বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করে কোনো কারণ ছাড়াই হাসিবুলকে গুলি করে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন হাসিবুল।
ভুক্তভোগীর পরিবার ও ভারতীয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে কোচবিহারের এমজেএন মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হাসিবুলের মৃত্যু হয়েছে।
বিজিবি সূত্র জানায়, বাংলাদেশিকে গুলি করার ঘটনায় বিজিবির আহ্বানে গতকাল বিকেলে ওই সীমান্তে পতাকা বৈঠকে অংশ নেয় বিএসএফ।
হাতীবান্ধা থানার ওসি মাহামুদুন-নবী জানান, বাংলাদেশি এক যুবককে গুলি করে বিএসএফ ভারতে নিয়ে গেছে বলে খবর মিলেছে।

বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সংলাপ আজ
রাষ্ট্রের নাম বদলে বেশির ভাগ দলের আপত্তি
নিখিল ভদ্র

রাষ্ট্র সংস্কারে অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত সংস্কার কমিশনগুলোর করা সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের ১৬৬টির মধ্যে শতাধিক প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করেছে এযাবৎ মতামত প্রদানকারী সব রাজনৈতিক দল। তবে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের মতো গুরুত্বপূর্ণ কিছু সংস্কার প্রস্তাবে বেশির ভাগ রাজনৈতিক দল আপত্তি জানিয়েছে।
ঐকমত্য কমিশনে এ পর্যন্ত ৩৫টি রাজনৈতিক দল লিখিত মতামত দিয়েছে। এর মধ্য থেকে ১১টি রাজনৈতিক দল কমিশনের সঙ্গে সংলাপে অংশ নিয়েছে।
জুলাই-আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর গঠিত ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্র সংস্কারের লক্ষ্যে ১১টি সংস্কার কমিশন গঠন করে। এরপর সংস্কার কমিশনগুলোর সুপারিশ চূড়ান্ত করতে গঠন করা হয় জাতীয় ঐকমত্য কমিশন। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি কাজ শুরু করেছে এই কমিশন। প্রথম পর্যায়ে গঠিত ছয়টি সংস্কার কমিশনের মধ্যে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, বিচার বিভাগ, জনপ্রশাসন ও দুর্নীতি দমন কমিশন সংস্কার কমিশনের গুরুত্বপূর্ণ ১৬৬ সুপারিশ বিষয়ে ঐকমত্য কমিশন ১৬৬টি প্রস্তাব তৈরি করে ৩৮টি রাজনৈতিক দল ও জোটের মতামত আহবান করে।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ ও সমন্বয়ের দায়িত্ব পালন করছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী মনির হায়দার। তিনি কালের কণ্ঠকে জানান, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সুপারিশগুলো চূড়ান্ত করার লক্ষ্যে ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ চলছে।
কমিশন সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মতামত জানানো রাজনৈতিক দলগুলো শতাধিক প্রস্তাবে একমত প্রকাশ করেছে। তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু ইস্যুতে দলগুলো পরস্পরবিরোধী অবস্থান নিয়েছে। আবার কয়েকটি বিষয়ে বেশির ভাগ দল জোর আপত্তি জানিয়েছে। বিশেষ করে রাষ্ট্রের নাম পরিবর্তনের বিষয়ে আপত্তি এসেছে। কমিশনের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সংবিধানের প্রযোজ্য সব ক্ষেত্রে ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলোর পরিবর্তে ‘নাগরিকতন্ত্র’ ও ‘জনগণতন্ত্রী বাংলাদেশ’ শব্দগুলো ব্যবহার করা হবে। এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামীসহ বাম গণতান্ত্রিক জোট, গণতন্ত্র মঞ্চ এবং ১২ দলীয় জোটভুক্ত রাজনৈতিক দলগুলো। এমনকি জাতীয় নাগরিক পার্টিও (এনসিপি) ‘প্রজাতন্ত্র’ ও ‘গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ’ বহাল রাখার পক্ষে মত দিয়েছে।
সূত্র জানায়, এনসিপিসহ কয়েকটি দল সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি থেকে জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দিয়ে কমিশন প্রস্তাবিত ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক সুবিচার, বহুত্ববাদ ও গণতন্ত্র’ অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। এ ক্ষেত্রে জামায়াত শুধু ‘বহুত্ববাদ’ শব্দটি নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে। দলটি এর পরিবর্তে ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহর ওপর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস, ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ’—এই শব্দগুলো যোগ করার প্রস্তাব দিয়েছে। তবে বেশির ভাগ দল চার মূলনীতি বাদ দেওয়ার প্রস্তাবে আপত্তি জানিয়েছে। তারা গণপরিষদ ও গণভোটের বিষয়ে আপত্তি জানানোর পাশাপাশি সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর বহাল রাখার পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। একাত্তর আর চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থানকে একসঙ্গে মিলিয়ে ফেলা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিএনপিসহ বেশির ভাগ দল। কেউ কেউ এর সঙ্গে নব্বইকে যুক্ত করার দাবি জানিয়েছে। বিএনপি আপত্তি জানালেও অনেকেই সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থার সুপারিশ করেছে।
জানা গেছে, লিখিত মতামতে কোনো কোনো রাজনৈতিক দল কমিশন প্রদত্ত স্প্রেডশিট (ফরম) ব্যবহার করেনি। তারা আলাদাভাবে লিখিত মতামত দিয়েছে। শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিক সংস্কার ছাড়া বাকি সংস্কার নির্বাচিত সংসদ দ্বারা বাস্তবায়নের প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। বেশির ভাগ দলের পক্ষে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে যে অস্থিরতা ও সংকট বিরাজ করছে, তা উত্তরণের একমাত্র উপায় দ্রুত সংসদ নির্বাচন। তবে এনসিপি, গণ অধিকার পরিষদসহ কয়েকটি দল সামগ্রিক সংস্কার শেষ করার পর নির্বাচনের কথা বলছে। ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি আলী রীয়াজ বলেন, ‘আগামী মে মাসের প্রথম সপ্তাহে রাজনৈতিক দল ও জোটগতভাবে প্রথম পর্যায়ের সংলাপ শেষ হবে। এরপর আমরা দ্বিতীয় ধাপে প্রবেশ করতে পারব। সে ক্ষেত্রে যেসব বিষয়ে ভিন্নমত আছে বা কোনো ক্ষেত্রে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের প্রয়োজন আছে, সেগুলো নিয়ে আগামী মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহের মধ্যে আলোচনা করতে পারব।’

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক
মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন হলে আপত্তি এনসিপির
- ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিক গতকাল বৈঠক করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে
নিজস্ব প্রতিবেদক

‘আমরা ন্যূনতম সংস্কার নয় বরং মৌলিক সংস্কার ও রাষ্ট্রের গুণগত পরিবর্তনের জন্যই কাজ করছি। মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচনের দিকে গেলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হবে না। সেই নির্বাচনে জাতীয় নাগরিক পার্টি অংশগ্রহণ করবে কি না সেটাও বিবেচনাধীন থাকবে। গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে মার্কিন ডেপুটি অব মিশনের বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিকের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম।
তিনি বলেন, ‘মূলত বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, সংস্কার কার্যক্রম ও নির্বাচন বিষয়ে নিকোল চুলিকের প্রধান ফোকাস ছিল। এ ছাড়া দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তাসহ বাংলাদেশের সামনের রাজনীতি কোনদিকে যাবে এবং আমাদের রাজনৈতিক দলের গঠনপ্রক্রিয়া, সাংগঠনিক কার্যক্রম ও আদর্শিকতার বিষয়ে তাঁদের আগ্রহ ছিল। আমরা আমাদের জায়গা থেকে ব্যাখ্যা করেছি। আমাদের রাজনৈতিক দল কোন প্রেক্ষিতে কেন এবং কোন লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে, তা জানিয়েছি।
বর্তমান সময় নিরপেক্ষ আচরণ করছে না অভিযোগ করে তিনি আরো বলেন, ‘বর্তমান সময় মাঠ পর্যায়ে যে প্রশাসন রয়েছে সেই প্রশাসন আমাদের কাছে মনে হয়েছে নিরপেক্ষ আচরণ করছে না।
নিরপেক্ষ না বলতে বা প্রশাসন কার পক্ষে ভূমিকা পালন করছে বলতে আপনারা কী মনে করছেন জানতে চাইলে এনসিপির এই আহ্বায়ক বলেন, ‘প্রশাসন আমরা দেখছি অনেক জায়গায় প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপির পক্ষ অবলম্বন করছে। মাঠ পর্যায়ে যে ধরনের চাঁদাবাজি চলছে সে জায়গায়ও প্রশাসন আসলে নিশ্চুপ ভূমিকা পালন করছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক
আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন চায় জামায়াত
- ঢাকা সফররত যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিক গতকাল বৈঠক করেছেন বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপির সঙ্গে
বিশেষ প্রতিনিধি

আগামী রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক—বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী এমনটাই চায় বলে জানিয়েছেন দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান।
গতকাল বুধবার রাজধানীর গুলশানে মার্কিন ডেপুটি হেড অব মিশনের বাসভবনে যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি নিকোল চুলিকের সঙ্গে বৈঠক করেন জামায়াতের আমির। এ সময় জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারও উপস্থিত ছিলেন। বৈঠক শেষে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, ‘তারা (যুক্তরাষ্ট্র) জানতে চেয়েছে আমরা কবে নির্বাচন চাই।
বৈঠক নিয়ে জামায়াতের আমির আরো জানান, ‘তাঁদের সঙ্গে আমাদের খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। যদি ভবিষ্যতে আমরা দেশের দায়িত্ব গ্রহণ করি, তাহলে আমাদের অর্থনৈতিক ও বৈদেশিক নীতিমালা কী হবে তা জানতে চেয়েছেন তাঁরা। অঞ্চলভিত্তিক বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। আমরা সংখ্যালঘু, নারী অধিকার ও শ্রম অধিকার নিয়েও কথা বলেছি।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যুক্তরাষ্ট্রকে অনুরোধ করেছি, আমাদের দেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সময় পার করছে। এই সময় যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত ৩৭ শতাংশ শুল্ক যেন তারা পুনর্বিবেচনা করে। আমরা আশা করি, তারা সহযোগিতা করবে।’ বৈঠকে আওয়ামী লীগের বিচার নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে জানান ডা. শফিকুর রহমান। তিনি উল্লেখ করেন, ‘আমরা ন্যায়বিচারের ভিত্তিতেই আওয়ামী লীগের বিচার চেয়েছি।
উল্লেখ্য, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর এই প্রথমবারের মতো ঢাকা সফরে এসেছেন যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি চুলিক, পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলবিষয়ক ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি অ্যান্ড্রু হেরাপ এবং মায়ানমারে ভারপ্রাপ্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত সুসান স্টিভেনসন।