ইউরোপের বড় বড় জ্বালানি তেল কম্পানিগুলো নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে। এতে জলবায়ু এজেন্ডা বেশ নড়বড়ে হয়ে গেছে। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে ইউরোপিয়ান ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো এমনিতেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে দেয়। ইউক্রেন যুদ্ধ হয়তো থেমে যেতে পারে।
কিন্তু ঘোষণামাফিক যুক্তরাষ্ট্র অপরিশোধিত তেল উৎপাদনে মনোযোগী হলে তখন বিশ্ব জ্বালানি পরিস্থিতি কেমন হতে পারে, সেটা নিয়েও এখন ইউরোপিয়ান তেল উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোকে ভাবতে হচ্ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ২০২৪ সালে ইইউভুক্ত দেশগুলো ক্লিন এনার্জি খাতে বিনিয়োগ কমানোর যে ধারা সূচনা করেছিল সেই ধারা ২০২৫ সালেও বজায় থাকবে।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২৪ সালে ইউরোপিয়ান দেশগুলো তেল ও গ্যাস খাতে বিনিয়োগ দ্বিগুণ করেছে। স্বল্পমেয়াদি লাভের জন্য কাজটি করা হলেও ২০২৫ সালে তারা জলবায়ু নিয়ে করা প্রতিশ্রুতি ধরে রাখতে পারবে বলে মনে করছেন না বিশ্লেষকরা।
২০২২ সালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বে জ্বালানি খাতে ব্যয় বেড়ে যায়। এতে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়ে যায় ইইউভুক্ত দেশগুলো। তারা বাধ্য হয়েই তাদের ক্লিন এনার্জি পলিসিতে পরিবর্তন আনে। ইউরোপের বড় বড় এনার্জি কম্পানিগুলো দেখতে পাচ্ছে, লাভের অঙ্কের দিক থেকে তাদের মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বী কম্পানি এক্সন ও শেভরন থেকে বেশ খানিকটা পিছিয়ে পড়ছে।
তাই তারা বাধ্য হয়েই তেল ও গ্যাসেই ফোকাস রেখেছে। নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতটি আপাতত তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না। ব্রিটিশ পেট্রোলিয়াম (বিপি) ও অ্যাংলো-ডাচ বহুজাতিক তেল-গ্যাস কম্পানি শেল ২০২৪ সালে বায়ু ও সৌরবিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ মারাত্মকভাবে কমিয়ে দেয়। বেশি লাভ হওয়ার কারণে তেল ও গ্যাস প্রকল্পগুলোতে তাদের মনোযোগ ও বিনিয়োগ বাড়ায়।
বিপি চলতি দশকেই নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ ২০ গুণ বাড়িয়ে ৫০ গিগাওয়াট নবায়নযোগ্য জ্বালানি উৎপাদনের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছিল।
কিন্তু ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে এসে বিপি তার প্রায় সব কয়টি অফশোর উইন্ড প্রকল্পগুলোতে জাপানের বিদ্যুৎ কম্পানি জেরাকে জয়েন্ট ভেঞ্চারের ভিত্তিতে ব্যাবসায়িক পার্টনার বানিয়ে নেয়। শেল কম্পানিও তাদের বেশির ভাগ অফশোর বায়ুকলে বিনিয়োগ বন্ধ করে দেয়। নরওয়ের বিখ্যাত এনকুইনর কম্পানিও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিনিয়োগ কমিয়ে দিয়েছে।
অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক বিখ্যাত গবেষণা এক্সেলা রিসার্চের বিশ্লেষক রোহান বোওয়াটার বলেন, ‘ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের মতো ভূ-রাজনৈতিক বিরোধে সিইও ইনসেন্টিভস (আপনি কত ব্যয় করছেন সেটি নয়, কিভাবে ব্যয় করছেন সেটিই মুখ্য) দুর্বল হয়ে যাওয়ার কারণে বায়ুমণ্ডলে কার্বন কমানো বৈশ্বিক মূল্যবোধটি অগ্রাধিকার পাচ্ছে না। এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশাও পাল্টে গেছে।’