<p>নিজের ভালো সবাই বোঝে। মহত্ত্বের ব্যাপার দাঁড়ায় যখন আমরা অন্যের দিকটাও বোঝার চেষ্টা করি। পারস্পরিক  কল্যাণকামিতার স্নিগ্ধতা আমাদের স্পর্শ করে। ইসলামে কল্যাণকামিতার অনেক গুরুত্ব। আছে বিশেষ তাৎপর্য। পারস্পরিক কল্যাণকামিতার চেনা-জানা এই রূপের বাইরেও ভিন্নরূপ আছে কল্যাণকামিতার। ইসলাম কল্যাণকামিতাকে ভিন্ন মাহাত্ম্য দিয়েছে, জন্ম দিয়েছে ভিন্ন বোধের। ফলে একজন মুমিনের কল্যাণকামিতার পরিধি বিশাল। কল্যাণকামিতা এখানে ব্যক্তির গণ্ডি পেরিয়ে স্পর্শ করে বিশ্বাসের জগৎ। আরবিতে এটাকে বলে নাসিহা। যার মর্ম হচ্ছে আন্তরিক কল্যাণ কামনা। জীবনের পথচলায় নবীজি (সা.) আমাদের নাসিহা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। পুরো দ্বিনের ভেতর ছড়িয়ে আছে নাসিহার সৌরভ। নাসিহার সুরভি মুমিনকে স্নিগ্ধ করে প্রতিনিয়ত।</p> <p>বিশিষ্ট সাহাবি তামিম দারি (রা.)। নবীজি (সা.)-এর কাছে তাঁর ইসলাম গ্রহণের সুযোগ হয়েছে হিজরতের আগেই। দীর্ঘ দিনের সান্নিধ্যধন্য তিনি। আজীবন ছড়িয়েছেন সান্নিধ্যের সৌরভ। তিনি বলেছেন, নবীজি (সা.) এক দিন বললেন, দ্বিন হচ্ছে আন্তরিক কল্যাণ কামনা। পরপর তিনবার বললেন। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কার জন্য কল্যাণ কামনা? তিনি বললেন, আল্লাহর জন্য, তাঁর কিতাবের জন্য, তাঁর রাসুলের জন্য, মুসলমানদের নেতাদের জন্য এবং মুসলিম জনসাধারণের জন্য। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯৫)</p> <p>উল্লিখিত হাদিসের আলোকে আমরা কল্যাণ কামনার এক ভিন্ন বোধের দেখা পাচ্ছি। নবীজি (সা.) আমাদের আদর্শ। আমাদের মূল্যবোধ ও নৈতিকতার উৎস আমাদের প্রিয় নবী (সা.)। নবীজি (সা.)-এর কথামালা ব্যাখ্যা করেছেন হাদিসের ইমামগণ।</p> <p>দ্বিনই কল্যাণকামিতা</p> <p>আন্তরিকতা কল্যাণ কামনার স্নিগ্ধতা ছড়িয়ে আছে পুরো দ্বিনজুড়ে। আন্তরিকতা ও কল্যাণকামিতার গুরুত্ব বোঝাতে এই উত্তম স্বভাবটির প্রশংসা করেছেন নবীজি (সা.)। ইমাম নববী (রহ.) বলেছেন, এটি অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ হাদিস। হাদিসটির ওপর দ্বিনের ভিত্তি। ইমাম ইবনে রজব হাম্বলি (রহ.) বলেছেন, হাদিসটি ইঙ্গিত দেয়, নাসিহা ইসলামের অনেক বৈশিষ্ট্যকে শামিল করেছে। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, ইখলাসের ইচ্ছা ছাড়া কোনো আমল করা হলে সেটা দ্বিন নয়। এ দিক থেকে আসলেও দ্বিন হচ্ছে নাসিহা।</p> <p> </p> <p>ইসলামে কল্যাণকামিতার নানা দিক</p> <p>হাদিসবিশারদরা কল্যাণকামিতার দিকগুলো এভাবে ব্যাখ্যা করেছেন—</p> <p>আল্লাহর জন্য নাসিহা : আল্লাহকে রব হিসেবে মেনে নেওয়া। শিরক থেকে দূরে থাকা। আল্লাহর হক আদায়ের চেষ্টা করা। পাপাচার থেকে বেঁচে থাকা। জীবনের পথচলায় প্রতিটি পদক্ষেপে তাঁর সন্তুষ্টি অন্বেষণ করা। ইমাম খাত্তাবি (রহ.)-এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, তাওহিদের বিশ্বাস সঠিকভাবে স্থাপন করা, ইবাদতের নিয়ত খাঁটি হওয়া। আবদুল্লাহ ইবনে মুবারক (রহ.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, শ্রেষ্ঠ আমল কোনটি? তিনি বলেন, আল্লাহর জন্য নাসিহা বা কল্যাণ কামনা।</p> <p>আল্লাহর কিতাবের জন্য নাসিহা : এর অর্থ হলো, কিতাবের ওপর যথাযথ ঈমান রাখা, হক আদায় করা। ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, (কোরআন) শেখা-শেখানো, সহিহ শুদ্ধ তিলাওয়াত, লিখিত চর্চা, অর্থ হৃদয়ঙ্গম করা, কিতাবের বিধি-বিধান মেনে চলা এবং ভ্রান্তদের বিকৃতি-ভ্রান্তিকে প্রতিহত করা।</p> <p>রাসুলের জন্য নাসিহা : রাসুলের প্রতি ঈমান আনা। হৃদয়ে তাঁর প্রতি ভালোবাসা-ভক্তি রাখা। তাঁর আদর্শ মনেপ্রাণে গ্রহণ করা। হাফেজ ইবনে হাজার (রহ.) আরো বলেছেন, নিজে শেখা এবং অপরকে শেখানোর মাধ্যমে সুন্নাহকে জিন্দা করা, নবীজি (সা.) ও সাহাবিদের ভালোবাসা।</p> <p>মুসলমানদের নেতার জন্য নাসিহা : নেতা বলতে এখানে যেকোনো মুসলিম নেতা বা শাসক উদ্দেশ্য নয়। ওই নেতা বা শাসক উদ্দেশ্য, যিনি মুসলমানদের নেতৃত্ব দেন। ইবনে হাজার (রহ.) এর ব্যাখ্যায় বলেছেন, তাদের দায়িত্ব পালনে তাদের সহযোগিতা করা। (হক বিষয়ে আনুগত্য বজায় রাখা)। গাফিলতির সময় সতর্ক করা। বিচ্যুতির সময় সম্পর্ক ত্যাগ করা।</p> <p>জনসাধারণের জন্য নাসিহা : মুসলিম জনসাধারণের জন্য আন্তরিক হওয়া। তাদের কল্যাণের জন্য চেষ্টা করা। তাদের ক্ষতি রোধ করা। তাদের জন্য উপকারী বিষয় তাদের শেখানো। ইবনে হাজার (রহ.) বলেছেন, তাদের জন্য তাই চাওয়া যা নিজের জন্য চাওয়া। তাদের জন্য ওই বিষয় অপছন্দ করা, যা নিজের অপছন্দ।</p> <p>নাসিহার এই স্নিগ্ধ ভুবন আল্লাহ তাআলা আমাদের উপলব্ধি করার তাওফিক দিন। আমিন।</p> <p>তথ্যঋণ : জামিউল উলুমি ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা-১৪৭, ফাতহুল বারি : ১/১৯৪)</p> <p> </p>