<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমাদের দেশের কিছু মানুষের কাছে সরকারি সম্পদ অবৈধভাবে ব্যবহার করা অপরাধের মধ্যে পড়ে না, বিশেষ করে ট্রেনে বিনা টিকিটে ভ্রমণ করাকে অনেকে জন্মগত অধিকার মনে করে। গণমাধ্যমের তথ্য মতে, শুধু ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশন থেকে ঢাকা বিমানবন্দর স্টেশনের দূরত্ব প্রায় ১৩ কিলোমিটার। এ পথে প্রতিদিন ১০৮টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল করে। একেকটি ট্রেনে গড়ে ৬০০ যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ (আসা-যাওয়া) করে। প্রতিদিন ১০৮টি ট্রেনে অন্তত ৩২ হাজার ৪০০ (যাওয়া-আসা মিলে অন্তত ৬৪ হাজার) যাত্রী বিনা টিকিটে ভ্রমণ করে। এ রুটে আন্ত নগর ট্রেনের ভাড়া ৫০ টাকা এবং মেইল ট্রেনের ৪৫ টাকা। এসব যাত্রীপ্রতি গড়ে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা ভাড়া আদায় হলে প্রতিদিন ৩১ লাখ টাকা আয় হতো রেলের, যা বছরে দাঁড়ায় ১১৩ কোটি ১৫ লাখ টাকায়। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ তো শুধু শহরের ভেতরের হিসাব, দূরপাল্লার ট্রেনগুলোর বিনা টিকিটে ভ্রমণকারী যাত্রীর সঠিক হিসাব বের করা গেলে তা হয়তো হাজার কোটি ছাড়াবে। যে হাজার কোটি টাকার মালিক বাংলাদেশের প্রত্যেক জনগণ। বিনা টিকিটে ট্রেন ভ্রমণ করা এক ধরনের খিয়ানত। খিয়ানতকারী কঠিন কিয়ামতের দিন সবার সামনে লাঞ্ছিত হবে। এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোনো নবীর জন্য শোভনীয় নয় যে তিনি খিয়ানত করবেন। আর যে ব্যক্তি খিয়ানত করবে সে কিয়ামতের দিন সেই খিয়ানত করা বস্তু নিয়ে উপস্থিত হবে। অতঃপর প্রত্যেকেই পরিপূর্ণভাবে পাবে, যা সে অর্জন করেছে। আর তাদের প্রতি কোনো অন্যায় করা হবে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৬১)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">রাষ্ট্রীয় সম্পদে প্রত্যেক জনগণের হক রয়েছে, তাই </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি মাল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> বলে তার অপব্যবহারের অধিকার কারো নেই। ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা.) কসম করে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নিশ্চয়ই এই (রাষ্ট্রীয়) সম্পদে কেউ কারো চেয়ে বেশি হকদার নয়। আমিও কারো চেয়ে বেশি হকদার নই। এই সম্পদে সব মুসলমানের অধিকার আছে, তবে মালিকানাধীন দাস ছাড়া।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(আল ফাতহুর রব্বানি, পৃষ্ঠা-৮৭)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরকারি সম্পদ জাতীয় সম্পদ। কোনো ব্যক্তিবিশেষের সম্পদ চুরি কিংবা আত্মসাৎ করা যেমন অপরাধ, জাতীয় সম্পদ চুরি করাও অপরাধ; বরং জাতীয় সম্পত্তি চুরি করা ব্যক্তিগত সম্পত্তি চুরির চেয়ে মারাত্মক অপরাধ, কেননা একজন ব্যক্তি থেকে তো কোনোভাবে মাফ নেওয়ার সুযোগ আছে, কিন্তু কোটি জনতা থেকে মাফ করানোর কী রাস্তা?</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">(আফ কে মাসায়েল আওর উনকা হল : ৭/১৮৬)</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">মুফতি শফি (রহ.) তাফসিরে মাআরেফুল কোরআনে সুরা আলে ইমরানের ১৬১ নম্বর আয়াতের তাফসিরে লেখেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গুলুল</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> শব্দটি সাধারণভাবে খিয়ানত অর্থে এবং বিশেষ করে গনিমতের মালে খিয়ানত করার অর্থেও ব্যবহৃত হয়। আর গনিমতের মাল চুরি করা কিংবা তাতে খিয়ানত করা সাধারণ চুরি অথবা খিয়ানত অপেক্ষা বেশি কঠিন। তার কারণ গনিমতের মালের সঙ্গে গোটা ইসলামী সেনাবাহিনীর অধিকার সংযুক্ত থাকে। কাজেই যে লোক এতে চুরি করবে, সে চুরি করবে শত-সহস্র লোকের সম্পদ। যদি কখনো কোনো সময় তার মনে তা সংশোধন করার খেয়াল হয়, তখন সবাইকে তাদের অধিকার প্রত্যর্পণ করা কিংবা সবার কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নেওয়া একান্তই দুরূহ ব্যাপার। পক্ষান্তরে অন্যান্য চুরির মালের মালিক (সাধারণত) পরিচিত ও নির্দিষ্ট হয়ে থাকে, কখনো কোনো সময় আল্লাহ যদি তওবা করার তওফিক দান করেন, তবে তার হক আদায় করে কিংবা তাঁর কাছ থেকে ক্ষমা করিয়ে নিয়ে মুক্ত হতে পারে। সে কারণেই কোনো এক যুদ্ধে এক লোক যখন উলের কিছু অংশ নিজের কাছে লুকিয়ে রেখেছিল, গনিমতের মাল বণ্টন করার কাজ শেষ হয়ে গেলে যখন তার মনে হলো, তখন সেগুলো নিয়ে গিয়ে রাসুল (সা.)-এর সমীপে উপস্থিত হলো। তিনি রহমাতুল্লিল আলামিন এবং উম্মতের জন্য পিতা-মাতা অপেক্ষা সদয় হওয়া সত্ত্বেও তাকে এই বলে ফিরিয়ে দিলেন যে এখন এগুলো কেমন করে আমি সমগ্র সেনাবাহিনীর মধ্যে বণ্টন করব? কাজেই কিয়ামতের দিনই তুমি এগুলো নিয়ে উপস্থিত হয়ো।... মুফতি শফি (রহ.) আরো বলেন, ওয়াকফ ও সরকারি ভাণ্ডারে চুরি করা গলুলেরই পর্যায়ভুক্ত।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অতএব, কোনো মুমিনের জন্য এ ধরনের শক্ত অপরাধকে হালকাভাবে নেওয়া উচিত নয়।</span></span></span></span></p>