মহানবী (সা.) যে সময় মক্কায় ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন তখন পৃথিবীর অন্যতম সুপার পাওয়ার ছিল পারস্য। পারস্যের লোকজন ছিল জরথুস্ট্র ধর্মের অনুসারী। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, জরথুস্ট্র নবী ছিলেন। তার ওপর প্রেরিত আসমানি গ্রন্থের নাম জেন্দাবেস্তা।
মহানবী (সা.) যে সময় মক্কায় ইসলাম নিয়ে এসেছিলেন তখন পৃথিবীর অন্যতম সুপার পাওয়ার ছিল পারস্য। পারস্যের লোকজন ছিল জরথুস্ট্র ধর্মের অনুসারী। কোনো কোনো ঐতিহাসিক বলেন, জরথুস্ট্র নবী ছিলেন। তার ওপর প্রেরিত আসমানি গ্রন্থের নাম জেন্দাবেস্তা।
চিঠি পাঠিয়েছেন কুল কায়েনাতের সম্রাট নবীয়ে মুস্তফা মুহাম্মদ (সা.)। সিরাত গবেষকরা বলেন, ষষ্ঠ হিজরির জিলহজ মাসে নবীজি পারস্যসহ সমসাময়িক শক্তিধর রাজাদের কাছে রিসালাতের দাওয়াত সম্পর্কিত চিঠি পাঠান। সম্রাট পারভেজের কাছে পাঠানো চিঠিটি ছিল এ রকম—‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম। শান্তি বর্ষিত হোক তার প্রতি, যে হিদায়াতের অনুসারী, আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের প্রতি বিশ্বাসী এবং যে সাক্ষ্য দেয়, আল্লাহ ছাড়া কোনো মাবুদ নেই, তিনি এক, তাঁর কোনো শরিক নেই, মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর বান্দা ও রাসুল।
পুরো চিঠি পড়ে রাগে ফেটে পড়লেন সম্রাট পারভেজ। টুকরো টুকরো করে ছিঁড়লেন প্রেমের নবীর দাওয়াতি চিঠিখানি। বললেন, ‘আমি পারস্যের সম্রাট। আরবের ওই মুহাম্মদ আমার গোলাম। আর সে আমাকে তার ওপর ঈমান আনার দাওয়াত দিচ্ছে!’ পুরো ঘটনা নবীজিকে বলেন আবদুল্লাহ ইবনে হুজায়ফা সাহমি (রা.)। নবীজি শুনে খুব কষ্ট পেলেন। নূরানি জবান দিয়ে বলেন, ‘আমার চিঠির মতোই তার সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে গেছে।’ এটি ছিল নবীজির ভবিষ্যদ্বাণী। তখনো কিসরা পারভেজ দোর্দণ্ড প্রতাপের সঙ্গে রাজ্য পরিচালনা করছেন। নবীজি কিন্তু বলেননি, তার সাম্রাজ্য ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যাবে। নবীজি বলেছেন, তার সাম্রাজ্য ভেঙে গেছে। অতীতকালের শব্দ দিয়ে বলেছেন। এর মানে হলো, নবীজির চিঠির সঙ্গে বেয়াদবির ফল কিসরা পাবেই পাবে।
পরের ঘটনা আরো মজার। কিসরা পারভেজ সিরিয়ার প্রশাসক বাজানকে নির্দেশ দিলেন আরবের মুহাম্মদকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে আসো। বাজান দুজন পুলিশ পাঠিয়ে দিল নবীজির কাছে। সঙ্গে একটি চিঠি। তারা এসে নবীজিকে বলল, ‘আপনি আমাদের সঙ্গে চলুন। সম্রাটের কাছে আত্মসমর্পণ করলে আপনার অপরাধ ক্ষমা করা হতে পারে।’ রাসুল (সা.) মুচকি হেসে বলেন, ‘তোমরা অনেক দূর থেকে এসেছ। আজ বিশ্রাম করো। তোমাদের সঙ্গে কাল সকালে কথা হবে।’ পরদিন সকালে তারা নবীজির কাছে আসলে নবীজি বলেন, ‘গতকাল রাতে সম্রাট কিসরার ছেলে শেরওয়াইহি তাকে খুন করে তার রাজত্ব কেড়ে নিয়েছে। তোমরা চলে যাও। তোমাদের প্রশাসক বাজানকে বলবে সে যেন ইসলাম কবুল করে।’ পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সত্যিই সম্রাট পারভেজ সে রাতে নিজ ছেলের হাতে খুন হয়েছে। (আল বিদায়া ওয়ান নিহায়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৬৮-২৭২ পৃষ্ঠা।)
ঐতিহাসিকরা বলেন, সম্রাট পারভেজকে হত্যা করার পর তার পেট কেটে তাকে টুকরো টুকরো করা হয়, যেভাবে সে নবীজির চিঠিকে টুকরো টুকরো করেছিল। (শাওয়াহেদুন নবুওয়াত, ১১৯-১২০ পৃষ্ঠা।)
লেখক : ধর্মীয় আলোচক ও উপস্থাপক, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশন
সম্পর্কিত খবর
আয়াতের অর্থ : ‘হে মুমিনরা! তোমরা নিজেদের ঘর ছাড়া অন্য কারো ঘরে গৃহবাসীদের অনুমতি না নিয়ে এবং তাদেরকে সালাম না করে প্রবেশ কোরো না। এটা তোমাদের জন্য শ্রেয়, যাতে তোমরা উপদেশ গ্রহণ করো।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ২৭)
আয়াতে অন্যের ঘরে প্রবেশের বিধান বর্ণনা করা হয়েছে।
শিক্ষা ও বিধান
১. মহান আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ যে তিনি মানবজাতিকে ঘর দান করেছেন এবং তাদের আব্রু ও একান্ত জীবনের গোপনীয়তা রক্ষার বিধান দান করেছেন।
২. আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, কারো ঘরে প্রবেশ করতে চাইলে প্রথমে সালাম দেবে, অতঃপর ঘরে প্রবেশের অনুমতি চাইবে। এভাবে বলবে, আসসালামু আলাইকুম! আমি কি প্রবেশ করতে পারি?
৩. সুন্নত হলো কারো ঘরে প্রবেশের জন্য তিনবারের বেশি অনুমতি না চাওয়া। একবার অনুমতি চেয়ে সামান্য অপেক্ষা করে দ্বিতীয়বার অনুমতি চাওয়া। তিনবার অনুমতি চেয়ে সাড়া না পেলে চলে যাওয়া।
৪. কেউ যদি শুধু সালাম দেয় এবং আলাদা করে অনুমতি না চায়, তবে তা জায়েজ আছে। তবে সালাম ছেড়ে দিয়ে শুধু অনুমতি চাওয়া উচিত নয়।
৫. কারো ঘরে উঁকি দেওয়া নিষেধ। দরজা আটকানো থাকলে মৃদু টোকা দেওয়া জায়েজ এবং ‘আমি’ বা ‘খুলুন’ ইত্যাদি না বলে নিজের নাম-পরিচয় বলাই নিয়ম।
সুরা আশ-শুআরা
এই সুরার সূচনায় এ কথা বলা হয়েছে যে কোরআন নাজিলের মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের হিদায়াত। কোরআনের আগের আরো নবী ও কিতাব এসেছে। তার মধ্যে মুসা (সা.)-এর ঘটনা সবিস্তারে বিবৃত হয়েছে। মুসা (আ.)-এর পর নুহ, হুদ, সালেহ, লুত ও শোয়াইব (আ.) সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. মানুষের সত্যবিমুখতা মুমিনের মর্মবেদনার কারণ। (আয়াত : ২)
২. দ্বিনি কাজে আল্লাহ মুমিনের সঙ্গী হন তাঁর দয়া, অনুগ্রহ ও সাহায্যের সঙ্গে।
(আয়াত : ১৫)
৩. কোনো ভালো কাজ অপর মন্দ কাজের বৈধতা দেয় না। (আয়াত : ২২)
৪. জীবন-মৃত্যু ও সুস্থতা আল্লাহর হাতে। (আয়াত : ৮০-৮১)
৫. মুমিন আল্লাহর কাজে জ্ঞান ও কর্মদক্ষতা চাইবে। (আয়াত : ৮৩)
৬. বাকপটুতাও আল্লাহর অনুগ্রহ।
(আয়াত : ৮৪-৮৫)
৭. বিপথগামী মা-বাবার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো। (আয়াত : ৮৬)
৮. অন্তরের বিশুদ্ধতা পরকালের পাথেয় ও মুক্তির উপায়। (আয়াত : ৮৮-৮৯)
৯. মানুষকে দূরে সরিয়ে দেওয়া মুমিনের কাজ নয়। (আয়াত : ১১৪-১১৫)
১০. দ্বিন প্রত্যাখ্যানের শাস্তি ধ্বংস।
(আয়াত : ১৩৯)
১১. সমকামিতা জঘন্যতম পাপ, যা সমাজ ও সভ্যতার জন্য ধ্বংস ডেকে আনে।
(আয়াত : ১৬৬)
১২. মাপে কম দিয়ো না এবং ত্রুটিপূর্ণ দাঁড়িপাল্লা ব্যবহার কোরো না।
(আয়াত : ১৮১-১৮২)
১৩. নিজ পরিবারকে দ্বিনের ব্যাপারে সতর্ক করা আবশ্যক। (আয়াত : ২১৪)
১৪. মুমিনদের প্রতি বিনয়ী হও।
(আয়াত : ২১৫)
সুরা নামল
এই সুরায় অন্যান্য মাক্কি সুরার মতো ইসলামের মৌলিক বিশ্বাস তাওহিদ, রিসালাত ও আখিরাত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে। মুসা, দাউদ, সুলায়মান, সালেহ ও লুত (আ.)-এর জীবনের আশ্চর্য ঘটনা তুলে ধরা হয়েছে। নবীরা কিভাবে নিজ নিজ উম্মত থেকে নিপীড়নের শিকার হয়েছে, সে বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। দাউদ ও সুলায়মান (আ.)-এর ওপর মহান আল্লাহ কত কত নিয়ামত দিয়েছেন, তার একটি বিবরণ রয়েছে এখানে। নবুয়ত ও রাজত্ব কিভাবে একসঙ্গে চলতে পারে, তার একটি চিত্র এই সুরায় তুলে ধরা হয়েছে। সুলায়মান (আ.)-এর অধীনে কিভাবে মানুষ, জিন ও পাখি কাজ করেছে, তার খণ্ডচিত্র এই সুরায় তুলে ধরা হয়েছে। বর্ণনা করা হয়েছে রানি বিলকিসের কথাও। কোরআন নাজিলের উদ্দেশ্য বর্ণনার মধ্য দিয়ে সুরা শেষ হয়েছে।
আদেশ-নিষেধ-হিদায়াত
১. অবিশ্বাসীরাই পার্থিব জীবনকে প্রাধান্য দেয়। (আয়াত : ৪)
২. মন্দ কাজের প্রতিবিধানে ভালো কাজ করো। (আয়াত : ১১)
৩. আল্লাহর নিদর্শন প্রত্যাখ্যান কোরো না। (সুরা : নামল, আয়াত : ১৪)
৪. জ্ঞান শ্রেষ্ঠত্ব লাভের উপায়।
(আয়াত : ১৫)
৫. চিঠিপত্রের শুরুতে বিসমিল্লাহ লেখা মুসলমানের নিয়ম। (আয়াত : ২৯-৩০)
৬. জাতীয় সংকটে পরামর্শ কোরো।
(আয়াত : ৩২)
৭. নির্বাহী ক্ষমতার অধিকারী ব্যক্তিই কোনো জাতীয় বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেবেন।
(আয়াত : ৩৩)
৮. যুদ্ধ মুসলমানের কাম্য নয়। কেননা তা জনজীবন বিপর্যস্ত করে। (আয়াত : ৩৪)
৯. যুদ্ধের সময় বীরত্ব প্রদর্শন কোরো। (আয়াত : ৩৭)
১০. নবী-রাসুলদের প্রতি সালাম পাঠ কোরো। (আয়াত : ৫৯)
১১. অন্তরের গোপন কথাও আল্লাহ জানেন। (আয়াত : ৭৪)
১২. নেক আমল কিয়ামতের ভয় দূর করবে। (আয়াত : ৮৯)
১৩. আল্লাহর অনুগত হও। (আয়াত : ৯১)
গ্রন্থনা : মুফতি আতাউর রহমান
বান্দার সৌভাগ্যের মূল ভিত্তি হলো, আল্লাহর ভালোবাসা। যার অন্তরে মহান আল্লাহর ভালোবাসা আছে, তার আত্মা প্রশান্ত হয়। তার অন্তরে হিদায়াতের আলো প্রজ্বলিত হয়। তার দুনিয়া ও আখিরাত সাফল্যমণ্ডিত হয়।
তাই তো নবীজি (সা.) মহান আল্লাহর ভালোবাসা বৃদ্ধির দোয়া করতেন। তিনি দোয়া করতেন—‘হে আল্লাহ! আমি আপনার ভালোবাসা, আপনার প্রেমিকদের ভালোবাসা এবং সেই আমলের ভালোবাসা চাই, যা আমাকে আপনার মহব্বতের নিকটবর্তী করবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৩২৩৫)
কারণ আল্লাহ যখন কোনো বান্দাকে ভালোবাসে তখন আসমানের অধিবাসীরাও তাকে ভালোবাসতে শুরু করে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তাআলা যদি কোনো বান্দাকে ভালোবাসেন তখন জিবরাইল (আ.)-কে ডাক দেন এবং বলেন, নিশ্চয়ই আমি অমুক লোককে ভালোবাসি, তুমিও তাকে ভালোবাস।
এই হাদিসটি দেখলে পবিত্র কোরআনের সেই আয়াতটি মনে পড়ে যায়, যেখানে আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই যারা ঈমান আনে এবং সত্ কাজ করে, পরম করুণাময় অবশ্যই তাদের জন্য (বান্দাদের হৃদয়ে) ভালোবাসা সৃষ্টি করবেন।’ (সুরা : মারইয়াম, আয়াত : ৯৬)
বর্তমান যুগে চারদিকে ফিতনা ছড়িয়ে পড়েছে, মানুষের মধ্যে গাফিলতি জেঁকে বসেছে, দুনিয়াবি আকর্ষণে মানুষের মনে আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের উচিত আল্লাহর দিকে ফিরে যাওয়া এবং তাঁর মহব্বত অর্জনের উপায় অনুসন্ধান করা।
নিম্নে আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের কিছু উপায় তুলে ধরা হলো—
কোরআন তিলাওয়াত : পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে গবেষণা মানুষকে কল্যাণের দিকে ধাবিত করে। তাই আল্লাহর প্রতি ভালোবাসা বাড়াতে বেশি বেশি কোরআন তিলাওয়াত করা যেতে পারে।
ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি নফল আমল করা : আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ বলেন, ...আমার বান্দা সর্বদা নফল ইবাদত দ্বারা আমার নৈকট্য লাভ করতে থাকবে। এমনকি অবশেষে আমি তাকে আমার এমন প্রিয় পাত্র বানিয়ে নিই যে আমিই তার কান হয়ে যাই, যা দিয়ে সে শোনে...। (বুখারি, হাদিস : ৬৫০২)
নিজের ইচ্ছার চেয়ে আল্লাহর ইচ্ছাকে অগ্রাধিকার দেওয়া : নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘তিনটি জিনিস যার মধ্যে পাওয়া যায়, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করবে—(১) আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে সর্বাধিক প্রিয় হওয়া, (২) কাউকে কেবল আল্লাহর জন্য ভালোবাসা, (৩) কুফরে ফিরে যাওয়া এতটাই অপছন্দ করা, যেমন—আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়া অপছন্দ করে।’ (বুখারি, হাদিস : ১৬)
আল্লাহর সুন্দর নাম ও গুণাবলি সম্পর্কে জানা : আল্লাহর গুণবাচক নাম সম্পর্কে জানা এবং সেগুলোর অর্থ ও গুরুত্ব অনুধাবনের চেষ্টা করা। কেননা মহান আল্লাহ বলেছেন, বান্দাদের মধ্যে কেবল জ্ঞানীরাই আল্লাহকে ভয় করে। (সুরা : ফাতির, আয়াত : ২৮)
আল্লাহর অসংখ্য নিয়ামতের কথা স্মরণ করা : কারণ আমাদের যা কিছু আছে, সব তাঁরই দেওয়া, ভালোবাসার উপযুক্ত একমাত্র তিনিই। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের কাছে যে কোনো নিয়ামত আছে, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে।’
(সুরা : নাহল, আয়াত : ৫৩)
আল্লাহওয়ালাদের সাহচর্য গ্রহণ করা : রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ তার বন্ধুর ধ্যান-ধারণার অনুসরণ করে থাকে, তাই তোমাদের প্রত্যেককে দেখা উচিত কাকে সে বন্ধু বানাচ্ছে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৩৭৮)
দক্ষিণ ইউরোপে অবস্থিত ভূমধ্যসাগরীয় দেশ ইতালিতে ইসলাম নবাগত কোনো ধর্ম নয়, বরং ইতালির ভাগ্যোন্নায়নের অনেক কিছু হয়েছে মুসলিমদের নেতৃত্বে। ইসলামের সোনালি যুগে ইতালির ‘সিসিলি’ দ্বীপপুঞ্জ মুসলিম শাসনাধীন ছিল। এখানেই জন্মগ্রহণ করেন বিখ্যাত মুসলিম কবি ও দার্শনিক ইবনে হামাদিস সিসিলি। ইতালির সমাজ আরব সভ্যতা ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত, বিশেষত পশ্চিম ইতালির যেসব দ্বীপ আরব রাষ্ট্রগুলোর নিকটবর্তী, সেখানে আরব রীতি-নীতি ও জীবনাচরণের ছাপ পাওয়া যায়।
ইতালি গোঁড়া ক্যাথলিক খ্রিস্টানদের প্রাণকেন্দ্র ভ্যাটিকানের দেশ হলেও সেখানে মুসলমানের আগমন হয়েছিল খুব সহজেই।
ইতালিতে মুসলিম সোসাইটির সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো, ইসলাম সম্পর্কে ইতালির শাসক ও রাজনীতিকদের স্বচ্ছ ধারণার অভাব। ফলে তারা ইসলাম বিষয়ে বেসরকারি টিভি চ্যানেল করার অনুমতি দেয় না।
রমজান মাসকে ইতালির মুসলিম ধর্মচর্চা ও ইবাদতের সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে। এ সময় তারা মুসলিম দেশে তৈরি পণ্য ও খাবার গ্রহণ করে। শহরের মুসলিম হোটেল ও রেস্তোরাঁয় ইফতার ও সাহরি খায়। রমজান মাসে ইতালির মুসলিমদের আরবীয় খাবারগুলো বিশেষভাবে জনপ্রিয়। রমজান মাসে আরব দেশগুলো থেকে প্রচুর ইফতারসামগ্রী ইতালিতে যায়। যার উল্লেখযোগ্য অংশ যায় উপহার হিসেবে। ইতালির মুসলিম কমিউনিটিগুলো রমজানে ইসলামী বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা করে। সেখানে সাধারণত আরব আলেমদেরই আমন্ত্রণ জানানো হয়।
রমজান মাসে ইতালির মুসলিম অধিবাসীরা এবং বিভিন্ন দেশের মুসলিম অভিবাসীরা পরস্পরের কাছে আসার সুযোগ লাভ করে। সাধারণত তারা সবাই সপরিবারে মসজিদে ইফতারি করে। ইফতার অনুষ্ঠানে অভিবাসীরা নিজ নিজ দেশের ঐতিহ্যবাহী খাবার তৈরি করে নিয়ে আসে। মসজিদে তারাবির নামাজ আদায় করে ঘরে ফেরে। রমজান মাসে ইতালীয় মুসলিমরা দুই হাত খুলে দান করে। তারা অনুন্নত ও দুর্দশাগ্রস্ত মুসলিম অঞ্চলের জন্য দান করতে বেশি পছন্দ করে। ফিলিস্তিন ও আফ্রিকার দরিদ্র্য অঞ্চলের জন্য মোটা অঙ্কের অর্থ প্রদান করে তারা।
সূত্র : অ্যারাব নিউজ ও ইসলাম ওয়েব ডটনেট