<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশের ভোগ্য পণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে বেচাকেনা স্বাভাবিকের তুলনায় ৯০ শতাংশ কমেছে। আড়তগুলোতে পর্যাপ্ত পণ্য মজুদ থাকলেও বিক্রি না হওয়ায় প্রতিদিন গড়ে ক্ষতি হচ্ছে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা। দুর্বৃত্তরা রাজধানী ঢাকায় ডাটা সেন্টার পুড়িয়ে দেওয়ায় ইন্টারনেটসেবা বন্ধ থাকা, সড়কে সহিংসতার ভয়ে খাতুনগঞ্জে ট্রাক কম আসা, গণপরিবহন না চলায় অনেক দোকানকর্মীর বাড়িতে গিয়ে আটকা পড়া ইত্যাদি কারণে এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এ চিত্র পাওয়া গেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের ভোগ্য পণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে হলে দ্রুত ব্যাংক লেনদেন চালু করে সরবরাহব্যবস্থা সচল রাখতে হবে। না হলে বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনোমতেই কাজ হবে না।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গত বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে টানা ১৩ দিন সারা দেশে হরতাল ও অবরোধ পালন করেছিল বিএনপি-জামায়াত। তখন খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের বেচাকেনা কমে গিয়েছিল ৬০ শতাংশ। তবে ওই সময় ইন্টারনেট সচল থাকায় বন্দরের আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম স্বাভাবিক ছিল। ব্যবসায়ীরা বন্দর থেকে পণ্য খালাস ও রপ্তানি পণ্য জাহাজীকরণ করতে পেরেছিলেন। এখন ইন্টারনেট না থাকায় বিল অব এন্ট্রি ও এক্সোর্ট এন্ট্রি করতে পারছেন না। আর ভয়ে মহাসড়কে গাড়ি নামাচ্ছেন না ট্রাক মালিকরা। ফলে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খাতুনগঞ্জের আড়তদার, কমিশন এজেন্ট ও আমদানিকারকরা জানিয়েছেন, সহিংসতার ভয়ে বেশির ভাগ ট্রাক মালিক গাড়ি বের করছেন না। কারফিউ থাকার কারণেও মহাসড়কে কমেছে পণ্য পরিবহন। আর চট্টগ্রাম বন্দরে পণ্য ওঠানামা ও খালাসও কমেছে। এ ছাড়া শুক্রবার ছুটি কাটাতে গিয়ে আড়তে ফিরতে পারেননি বেশির ভাগ কর্মচারী। খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্য কিনতে আসছেন না। বর্তমানে প্রায় ক্রেতাশূন্য খাতুনগঞ্জ। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">গতকাল সোমবার খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ, রসুন, আদা, ডাল, চাল, মসলাসহ বিভিন্ন পণ্যের প্রায় ১০ হাজার আড়ত, কমিশন এজেন্ট, পাইকারি দোকান আছে। এসব আড়তে আগে প্রতিদিন চট্টগ্রাম বন্দরসহ সারা দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে কমপক্ষে ৩৫০টি পণ্যবাহী ট্রাক চাক্তাই, খাতুনগঞ্জ ও আসাদগঞ্জে প্রবেশ করত। কিন্তু এখন পণ্যবোঝাই ট্রাকের সংখ্যা নেমে এসেছে ৫০টিতে। ট্রাক আসা কমেছে ৮৬ শতাংশ। এসব আড়তে স্বাভাবিক সময়ে গড়ে প্রতিদিন এক হাজার ১০০ কোটি টাকার বেচাকেনা হতো। এখন তা নেমে এসেছে ১০০ কোটি টাকায়। ওই হিসাবে খাতুনগঞ্জে কেনাবেচা কমেছে ৯০ শতাংশ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেখা গেছে, খাতুনগঞ্জে প্রায় ১০ হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে গুটিকয়েক খোলা। দুজন ক্রেতা রিকশায় করে পণ্য নিয়ে যাচ্ছেন। তবে ট্রাকের দেখা মেলেনি। মায়ের দোয়া ট্রেডার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি খোলা পাওয়া গেল। দোকানটির কর্ণধার রনি বিশ্বাস বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পেটের দায়ে আড়ত খুলেছি। কিন্তু পরিবহন চলাচল বন্ধ থাকায় ক্রেতারা আসছেন না। আর এখানকার বেশির ভাগ কর্মচারী ছুটিতে বাড়িতে গিয়ে আটকে গেছেন। কারফিউয়ের কারণে আড়তে ফিরতে পারছেন না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কারফিউ জারি করা হয়। তবে কারফিউয়ের আগে খাতুনগঞ্জে পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছিল প্রতি কেজি ৯৪ থেকে ৯৫ টাকায়। এখন সেই পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১০০ থেকে ১০৫ টাকায়। কেজিতে বেড়েছে ছয় থেকে ১০ টাকা। রসুনের কেজি ছিল ১৫৫ থেকে ১৫৭ টাকা। এখন সেটা ১৭০ থেকে ১৭৭ টাকা। বেড়েছে ১৫ থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত। আদার দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত। আগে ছিল ২৭০ টাকা, এখন ২৮০ টাকা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খাতুনগঞ্জের ভোগ্য পণ্যের কমিশন এজেন্ট ও সাফা ট্রেডিংয়ের স্বত্বাধিকারী মো. সালাউদ্দিন মারুফ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমরা ব্যাংকের মাধ্যমে লেনদেন করে থাকি। এ ছাড়া বেশির ভাগ ব্যবসায়ী ব্যাংক থেকে লোন নিয়ে ব্যবসা করেন। এখন পণ্যবাহী ট্রাক না ঢোকায় আর মজুদ থাকা পণ্য বিক্রি না হওয়ায় অতিরিক্ত লোকসানে পড়ছি। এ অবস্থা চললে আমরা দেউলিয়া হয়ে যাব।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খাতুনগঞ্জের হামিদুল্লাহ মিয়া বাজার কল্যাণ সমিতির সভাপতি ও কাঁচা পণ্যের আড়তদার মোহাম্মদ ইদ্রিস বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভোগ্য পণ্য আমাদের প্রতিদিনই প্রয়োজন। এটি আমাদের জীবন ধারণের একটি অংশ। কিন্তু এখন সড়কে সহিংসতার ভয়ে ট্রাক মালিকরা সীমান্ত ও বন্দর থেকে খাতুনগঞ্জে ট্রাক পাঠাচ্ছেন না। আর ক্রেতাও নেই। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়বে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span> </span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলায়মান বাদশা বলেন, এই পরিস্থিতিতে মোকাম থেকে পণ্যবাহী কোনো গাড়ি আসছে না খাতুনগঞ্জে। ফলে বাজারে পণ্য সরবরাহ স্বাভাবিকের তুলনায় ৯০ শতাংশ কমেছে। বাজারে পর্যাপ্ত ভোগ্য পণ্য মজুদ আছে। তবে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে সংকট সৃষ্টি হবে। তখন দাম নিয়ন্ত্রণে কোনো মন্ত্রেই কাজ হবে না। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ভোগ্য পণ্যের পাইকারি বাজারে প্রতিদিন কত আর্থিক ক্ষতি হচ্ছে জানাতে চাইলে খাতুনগঞ্জ ট্রেড অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ ছগির আহমেদ বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">১০ হাজার আড়তের মধ্যে এখন ৯০ শতাংশ আড়তে কর্মচারীরা কাজে যোগ দিতে পারছেন না। তাঁরা বাড়িতে গিয়ে আটকে গেছেন। এই ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিন গড়ে এক হাজার কোটি টাকার কম হবে না। আমরা দাবি জানাচ্ছি, এ পরিস্থিতি দ্রুত নিরসনের। না হলে শুধু ব্যবসায়ীরা না, সারা দেশের মানুষকে এর ফল ভোগ করতে হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Arial Unicode MS Bold""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p>