<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">৪ আগস্ট সকালে আমরা যখন গাইবান্ধা শহরের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সামনে আন্দোলন করছিলাম, তখন হঠাৎ করে পুলিশ ও কিছু লোক আমাদের ওপর আক্রমণ করে বসে। তখন তারা সেখানে নির্বিচারে আমাদের ওপর গুলি (ছররা গুলি) চালায়। আমি ও আমার পাঁচ বন্ধু সেই আন্দোলনে ছিলাম। আমার মাথায় সেদিন ১৭টি গুলি লেগেছিল। সেখানে আমি জ্ঞান হারিয়েছিলাম। পরে দেখি, আমি রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে। অপারেশনের পরও আমার মাথার ভেতরে এখনো একটি গুলি রয়ে গেছে। আগে অনেক ব্যথা করত। তবে এখন মাঝে মাঝে ব্যথা করে, তখন অনেক যন্ত্রণা হয়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কথাগুলো বলছিলেন গাইবান্ধা জেলার সাদুল্যাপুর উপজেলার মনগ্রামের বাসিন্দা আশরাফুল ইসলাম। আশরাফুল সবেমাত্র এইচএসসি পাস করে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তবে তাঁর আর বিশ্ববিদ্যালয়ে যাওয়া হয়নি। এখন তিনি পড়ছেন গাইবান্ধা সরকারি কলেজে। সরকার থেকে সাহায্য বলতে অপারেশনটুকুই হয়েছে বিনা মূল্যে। আশরাফুল কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমরা আন্দোলন করেছিলাম দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের জন্য, যার চাকরি তার জন্য; অথচ এখনো আমরা আগেরটায় আছি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সৈয়দপুরের নীলফামারীর বাসিন্দা আরিফ শাহ কবির। বয়স ১৮। সবেমাত্র এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে ভর্তি হয়েছিলেন কলেজে। গত ৪ আগস্ট আরিফ সৈয়দপুর জেলার পুলিশ ফাঁড়ির সামনে যখন আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন, তখন পুলিশের ছোড়া একটি গুলি এসে তাঁর পায়ে লাগে। এরপর হয় অপারেশন। কিন্তু এখনো সেরে ওঠেননি আরিফ। বেঁচে আছেন পঙ্গুত্ব নিয়ে। কথা হয় আরিফের চাচা মো. বুলুর রহমান শাহর সঙ্গে। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আরিফ পরিবারের একমাত্র ছেলে। তার বাবা একটি এনজিওতে চাকরি করেন। আরিফ আহত হওয়ার পর তাকে প্রথমে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে তাকে ঢাকা সিএমএইচে ভর্তি করা হয়। পরে অপারেশনও হয় সেখানে। তবে অরিফ এখনো সুস্থ হয়নি। হাঁটতে পারে না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বুলুর রহমান আরো বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আরিফের পরিবারটা খুবই অসহায়। আমরা সরকারের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো সহযোগিতা পাইনি। দেখেন তার জন্য কিছু করা যায় কি না।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">রংপুর সদরের বাসিন্দা সাদমান হোসেন (১৮)। ৪ আগস্ট তিনি আন্দোলনে অংশ নিয়েছিলেন শহরের টাউন হল এলাকায়। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সেদিন যখন আমরা আন্দোলন করছিলাম, আমাদের ওপর পুলিশ ও ছাত্রলীগ হামলা করেছিল। আমার হাতে ছাত্রলীগের লোকজন কোপ দিয়েছিল। এখনো হাতে চারটি সেলাইয়ের দাগ আছে। তবে আমরা চাই স্বাধীন দেশ, যেখানে আমরা মন খুলে কথা বলতে পারব, ন্যায্য অধিকার পাব।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">শুধু আশরাফুল, সাদমান বা আরিফ নয়, ৪ আগস্ট দিনের বেলা পুলিশ এবং ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের হামলায় কতজন আহত হয়েছে, তার সঠিক হিসাব কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে নেই। তবে বিভাগীয় শহর হওয়ায় বেশি চাপ ছিল রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে (রমেক)। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রমেক থেকে ২০৬ জন চিকিৎসা নিয়েছেন। সেই তালিকা এসেছে কালের কণ্ঠের কাছে। তাঁদের মধ্যে ১৮ জনের সঙ্গে টেলিফোনে কথা বলেছেন এই প্রতিবেদক। প্রত্যেকের দাবি, তাঁরা সরকারের কাছ থেকে কোনো সহযোগিতা পাননি। অনেকে বর্তমানে চিকিৎসার খরচ চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলার সখিপুর গ্রামের বাসিন্দা হাসনাইন সাহারিয়ার রিদয় বয়ে বেড়াচ্ছেন ছররা গুলির ক্ষত। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমি ৪ আগস্ট আহত হয়েছিলাম গাজীপুরের আনসার ক্যাম্পে। আমার শরীরে ছিল ৮০টির মতো ছররা গুলি। অপারেশনের পর এখনো শরীরে আছে ৭০টির মতো গুলি। এগুলো ভীষণ ব্যথা করে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">সাহারিয়ার  বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এখন আমি গাজীপুরের মিড এশিয়া গার্মেন্টসের চাকরি হারিয়ে বেকার হয়ে গ্রামের বাড়িতে বসে আছি। সরকার আমাদের জন্য কিছু করেনি। কার কাছে গেলে সাহায্য পাব তা-ও জানি না। দেখেন, আমার জন্য যদি কিছু করা যায়।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আহতদের সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে রংপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">কেউ যদি আসে এবং আন্দোলনকারী হিসেবে পরিচয় দেয়, তাহলে সর্বোচ্চ ভালো চিকিৎসা পাবে এবং আমরা দেওয়ার চেষ্টা করব। তবে রিসেন্ট কেউ আসেনি।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি আরো বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উনারা আমাদের কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বের। এখানে এলে আমি সব সময় জানব, এমনটা না-ও হতে পারে। সব ডিপার্টমেন্টে বলা আছে, এমন কেউ এসে পরিচয় দিলে তাকে সেবা দিতে হবে এবং শুধু স্লিপ লিখে নয়, প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা করতে হবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p>