<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ক্ষমতার পালাবদলের পর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের সমর্থনপুষ্ট এক হাজার ৬০০ চেয়ারম্যান আত্মগোপনে চলে গেছেন। আর সদস্য আত্মগোপনে রয়েছেন আড়াই হাজারেরও বেশি। নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত এসব ইউনিয়নে প্যানেল চেয়াম্যান ও প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে সরকার। তবে আত্মগোপনে থেকেও অনেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ম্যানেজ</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> করে চেয়ারম্যানশিপ ধরে রেখেছেন বলে তৃণমূল থেকে অভিযোগ এসেছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, দলীয় পদে নির্বাচনের সুযোগ থাকায় নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে অংশ নেওয়া এবং আওয়ামী রাজনীতিতে সক্রিয় থাকা চেয়ারম্যান ও ইউপি চেয়ারম্যানরা হামলা-মামলার ভয়ে গাঢাকা দিয়েছেন। এ ছাড়া এই সময় যেসব চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য মানুষের ওপর অত্যাচার ও প্রভাব খাটিয়েছেন, তারা ৫ আগস্টের দিন থেকেই পালিয়ে আছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পরিষদের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী কার্যালয়ে উপস্থিত থাকলেও চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যরা আত্মগোপনে থাকায় নাগরিকরা ওয়ারিশ সনদ, জন্ম ও মৃত্যু সনদসহ সংশোধিত জন্ম নিবন্ধন পেতে নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তাদের অনুপস্থিতিতে সেবাদান ব্যাহত হওয়ায় সরকার প্রশাসক ও প্যানেল চেয়ারম্যান নিয়োগ দিয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয় সরকার বিভাগের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সারা দেশে চার হাজার ৫৮১টি ইউনিয়ন পরিষদের মধ্যে দুই হাজার ৯৮১ জন চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। আত্মগোপনে রয়েছেন এক হাজার ৬০০ জন। প্রতিদিনিই এই সংখ্যা বাড়ছে। আত্মগোপন বা অনুপস্থিত থাকা চেয়ারম্যান পদে ৮৭২ প্যানেল চেয়ারম্যান দায়িত্ব পালন করছেন। এ ছাড়া প্যানেল চেয়ারম্যান না থাকায় ৫৫৫টি ইউনিয়নে প্রশাসক নিয়োগ করা হয়েছে। ১৭৩টি ইউনিয়ন পরিষদ এখনো শূন্য রয়েছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অন্যদিকে দেশের চার হাজার ৫৮১টি ইউনিয়নের প্রতিটিতে ১২ জন করে মোট ৫৪ হাজার ৯৭২ জন সদস্য থাকার থাকা। কিন্তু ৫ আগস্টের পর থেকে দুই হাজার ৬১৭ জন চেয়ারম্যান আত্মগোপনে রয়েছেন। এই সংখ্যা আরো বেশি হতে পারে বলে ধারণা করছেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আত্মগোপনে থেকেও চেয়ারম্যান : তৃণমূলে অভিযোগ রয়েছে, সাধারণ মানুষের ওপর আওয়ামী লীগের দলীয় চেয়ারম্যানরা জুলুম-নির্যাতন করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদকে তাদের দলীয় কার্যালয়ে পরিণত করেছিলেন। নিজেই ঠিকাদারি করেছেন কিংবা কাজ না করেই বিল তুলে নিয়েছেন। এই চেয়ারম্যানরা ৫ আগস্টের পর পালিয়ে থাকলেও চেয়ারম্যান পদে বহাল রয়েছেন। শুধু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করেই পদ ধরে রেখেছেন তারা। এতে বিস্ময় প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">পিরোজপুর জেলার ভাণ্ডারিয়া উপজেলাধীন তেলিখালী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান শামসু উদ্দিন ৫ আগস্টের পর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন। স্থানীয়রা খুঁজেও পাচ্ছে না। তারা নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। তবু উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আত্মগোপনে থাকা শামসু উদ্দিনকে চেয়ারম্যান পদে বহাল রেখেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। স্থানীয়রা বলছে, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই চেয়ারম্যানেকে অনৈতিকভাবে এই সুবিধা দিয়ে যাচ্ছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">একই উপজেলার ধাওয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান টুলু বর্তমানে পলাতক। তবু তাকে স্বপদে রাখা হয়েছে। এই উপজেলার আরো কয়েকটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পলাতক থাকলেও তারা স্বপদে রয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসীর ক্ষোভের অন্ত নেই। সাধারণ মানুষ নানা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইয়াসিন আরাফাত রানা বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">চেয়ারম্যানরা নিরাপত্তার কারণে উপজেলার কোনো সভায় আসেন না। প্যানেল চেয়ারম্যানকে পাঠান।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black"> আত্মগোপনে থাকার পরও তাকে কেন ওই পদে রাখা হয়েছে? এ বিষয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বিষয়টি আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করব।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগ দলীয় একজন চেয়ারম্যান বলেন, ৫ আগস্টের পর পর্যায়ক্রমে জেলা প্রশাসককে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা এখনো একই উপজেলায় কর্মরত। এই নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে ইউনিয়ন পরিষদে আওয়ামী লীগ দলীয় চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সখ্য তৈরি হয়েছে। চেয়ারম্যান বা সদস্যরা আত্মগোপনে বা পালিয়ে থাকলেও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এই চেয়ারম্যান আরো বলেন, চেয়ারম্যানরা নানাভাবে নানা কৌশলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করছেন। যদিও আইন অনুযায়ী চেয়ারম্যান না থাকলে প্যানেল চেয়ারম্যান বা প্রশাসক দেওয়ার কথা। সাধারণ মানুষ ভোগান্তির শিকার হলে এর দায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব (ইউনিয়ন পরিষদ) পলি কর বলেন, চেয়ারম্যান অনুপস্থিত থাকলেও প্যানেল চেয়ারম্যান বা প্রশাসক নিয়োগের জন্য জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি জানান, শূন্য চেয়ারম্যানের তালিকা প্রতিনিয়ত আসছে। সেই আলোকে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। চেয়ারম্যান পরিষদে না এলে প্রশাসক বা প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেওয়ার জন্য নির্বাহী কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় সরকার বিভাগের নতুন করে অনুমতি নেওয়ার প্রয়োজন নেই।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিএনপি অংশ না নেওয়ায় শতভাগই আওয়ামী লীগ ও তাদের সমর্থিত দল থেকে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। যারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন তারাও আওয়ামী লীগের দলীয় নেতা বা কর্মী। তাদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য বিএনপিসহ অন্যান্য দল শুরু থেকেই দাবি জানিয়ে আসছিল। কিন্তু জনগণের ভোগান্তির বিষয়টি মাথায় রেখে সব চেয়ারম্যান বা সদস্যকে অপসারণ করেনি সরকার।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক আদেশ জারি করে। সেখানে বলা হয়, অনুপস্থিত চেয়ারম্যানদের কাজ পরিচালনা এবং জনসেবা অব্যাহত রাখার জন্য স্থানীয় সরকার (ইউনিয়ন পরিষদ) আইন, ২০০৯-এর ধারা ৩৩, ১০১ ও ১০২ অনুযায়ী বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রের সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যানদের আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করতে পারবেন। প্যানেল চেয়ারম্যানের অনুপস্থিতিতে অথবা যেকোনো জটিলতা পরিলক্ষিত হলে বর্ণিত আইনের ধারা ১০১ ও ১০২ প্রয়োগ করে বিভাগীয় কমিশনার বা জেলা প্রশাসক স্ব স্ব অধিক্ষেত্রে তার অধীন কর্মকর্তা, যেমন</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">—</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">উপজেলা নির্বাহী অফিসার বা সহকারী কমিশনার (ভূমি)-কে আর্থিক ও প্রশাসনিক ক্ষমতা অর্পণ করে প্রযোজ্য ক্ষেত্রে ইউনিয়ন পরিষদগুলোকে সচল রেখে জনসেবা অব্যাহত রাখবেন।</span></span></span></span></span></p> <p> </p>