<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণ-আন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনে দুই দফায় ৩৫২ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়। তবে সীমাহীন অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে এর সুফল মেলেনি। ফলে প্রকল্পের বরাদ্দ অর্থ গোল্লায় গেছে। অন্যদিকে জরিপে দেখা গেছে, শিশুশ্রম না কমে বরং বেড়েছে। এ অবস্থায় ভবিষ্যতে এই ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করলে তাতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের শ্বেতপত্র প্রকাশ করা জরুরি বলে মনে করেন শ্রম সংস্কার কমিশন সভাপতি সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমদ।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১০ সালে দেশকে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রমমুক্ত করতে একটি নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়। এরপর ২০১৬ সালের মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। পরে তা ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। কিন্তু ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম বন্ধ না হওয়ায় নতুন করে প্রকল্প মেয়াদ বাড়ানো হয় ২০২৫ সাল পর্যন্ত। প্রকল্প বাস্তবায়নে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে ২০১২ সালে প্রথম দফায় ৬৮ কোটি টাকার </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (তৃতীয় পর্যায়)</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়। ওই প্রকল্পে ৫০ হাজার শিশুকে ঝুঁকিপূর্ণ শ্রম থেকে ফিরিয়ে আনতে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষা ও দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৮ সালে ২৮৪ কোটি ৪৯ লাখ টাকা ব্যয়ে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন (চতুর্থ পর্যায়)</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> নামের আরেকটি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">জানা গেছে, সর্বশেষ প্রকল্পের আওতা বাড়িয়ে ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত দুই লাখ শিশুকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ঝুঁকিমুক্ত জীবনে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়। এর মধ্যে এক লাখ শিশুকে উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা এবং এক লাখ শিশুকে কারিগরি প্রশিক্ষণ ও প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে বৃত্তি দেওয়া হয়। কিন্তু ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে ওই প্রকল্পের সুফল মেলেনি। প্রকল্পের উপবৃত্তির টাকা দরিদ্র শিশুদের পরিবর্তে সচ্ছল পরিবারের শিশুদের ঝুঁকিপূর্ণ পেশায় নিয়োজিত না থেকেও অনেকে প্রকল্পের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নিয়ে প্রতি মাসে এক হাজার টাকা করে পেয়েছে। আর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ শেষে এককালীন জনপ্রতি ১৩ হাজার টাকার প্রণোদনা নিয়েও হয়েছে ব্যাপক অনিয়ম। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সূত্র জানায়, সরকারের এডিপি অনুদানে পরিচালিত এই প্রকল্পে ১১২টি এনজিও কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগসাজশে বেশির ভাগ এনজিও প্রকল্পের টাকা লোপাট করেছে। মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর এবং আঞ্চলিক বিভিন্ন কার্যালয়ের আলাদা পরিদর্শন প্রতিবেদনে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পের এসব অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য উঠে এসেছে। এলাকা জরিপের মাধ্যমে সুবিধাভোগী শিশু নির্বাচন, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম ও উপবৃত্তির টাকা পরিশোধসহ সব পর্যায়ে অনিয়ম হয়েছে। উপবৃত্তির টাকা পৌঁছেনি ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে নিয়োজিত শিশুদের পরিবারের হাতে। এ নিয়ে স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) বৈঠকে অসন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে এ নিয়ে অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। তবে ওই কমিটি তদন্ত শেষ করে যেতে পারেনি। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ২০১৩ সালের জরিপের তথ্য অনুযায়ী, সেই সময় দেশে শিশুশ্রমিক ছিল ১৬ লাখ ৯৮ হাজার। আর ২০২৩ সালে বিবিএস সর্বশেষ যে জরিপ প্রকাশ করে তাতে দেখা যায়, দেশে শিশুশ্রমিকের সংখ্যা ৩৫ লাখ ৩৬ হাজার ৯২৭। এর মধ্যে ১০ লাখ ৭০ হাজার শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উন্নয়ন সংস্থা এডুকো বাংলাদেশের </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশু অধিকার ও কল্যাণ পরিস্থিতি বিশ্লেষণ</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বর্তমানে দেশে শিশুশ্রমে যুক্ত রয়েছে ৪.৪ শতাংশ শিশু। তাদের মধ্যে ১২ থেকে ১০ বছরের শিশু রয়েছে ৯ শতাংশের বেশি। আর ১৪ থেকে ১৭ বছরের ৭.৯ শতাংশ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে যুক্ত। এসব শিশুর মধ্যে মেয়েশিশুর চেয়ে ছেলেশিশু তিন গুণ বেশি। শিশুশ্রমে যুক্ত এসব শিশুর স্কুলে না যাওয়ার আশঙ্কা আগের চেয়ে ছয় গুণ বেড়েছে। আর পথশিশুদের প্রায় ৩৮ শতাংশ শিশু পরিবারের মাধ্যমেই শ্রমে যুক্ত হয়, যারা দিনে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা উপার্জন করে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে না পারলে শিশুশ্রম নিরসন হবে না বলে মনে করেন স্ট্রিট চিলড্রেন অ্যাক্টিভিস্ট নেটওয়ার্কের (স্ক্যান) সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মুকুল। কালের কণ্ঠকে তিনি বলেন, ২০২৫ সালের মধ্যে শিশুশ্রম নিরসনে বিগত দিনে একাধিক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। অথচ জরিপে দেখা যাচ্ছে, দেশে শিশুশ্রম বেড়েছে। তাহলে প্রকল্পের টাকা কোথায় গেল? কী কাজ হলো? সেটা জনসমক্ষে প্রকাশ করা দরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি ভবিষ্যতে প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">অন্তর্বর্তী সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশনের সভাপতি সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুকে শ্রমে রেখে বৈষম্যহীন বাংলাদেশ গড়ে তোলা অসম্ভব। তাই নতুন প্রকল্প গ্রহণের আগে বিগত সরকারের নেওয়া শিশুশ্রম নিরসন প্রকল্পগুলোর শ্বেতপত্র প্রকাশ করা জরুরি। কারণ প্রকল্প বাস্তবায়নে কী ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে সেটা সবার জানা দরকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">শিশুশ্রম নিরসন আমাদের কমিশনের কাজের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। আমরা চাই, কোনো শিশুই ঝুঁকিপূর্ণ শ্রমে থাকবে না। সব শিশু স্কুলে যাবে। এ কাজে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। সংস্কার কমিশন শিশুশ্রম নিয়ে কাজ করা সংগঠনগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এসংক্রান্ত সুপারিশ চূড়ান্ত করবে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p>