<p>কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার ওপর দিয়ে বয়ে যাওয়া খরস্রোতা গোমতী নদী দখল ও দূষণে বিপর্যস্ত। নদীর চরের মাটি তুলে নেওয়ায় বেড়িবাঁধ যেমন হুমকিতে, তেমনি নদীর গতিপথ ক্রমাগত হয়েছে পরিবর্তন। নদীপারের বাজার ও বাসাবাড়ির বর্জ্য ফেলার কারণে ভরাট হয়েছে নদীর তলদেশ। এতে নদীটি হারিয়েছে এর পানির ধারণক্ষমতা। ফলে অল্প জোয়ারেই ফুলে-ফেঁপে ওঠে নদীর পেট। এতে প্লাবিত হয় আশপাশের এলাকা।</p> <p>পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, গোমতী নদীর উৎপত্তি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের উত্তর-পূর্ব পার্বত্য অঞ্চলের ডুমুর নামক স্থানে। নদীটি কুমিল্লার বিবিরবাজার সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে কুমিল্লা-বুড়িচং-মুরাদনগর উপজেলা হয়ে দাউদকান্দির মেঘনা নদীতে পড়েছে। গত কয়েক বছরে ৯০ কিলোমিটার দীর্ঘ এই নদীর ৫৪টি স্থানে দুই পার দখল করে অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ করেছে এমন ৫২২ জনের তালিকা তৈরি করেছিল জেলা প্রশাসন। এরপর দখলদারদের নদীর জায়গা ছেড়ে দিতে ১০ বারের বেশি নোটিশ দেয় প্রশাসন। তবে তাতেও কোনো ফল মেলেনি।</p> <p>গত এক সপ্তাহ গোমতী নদীর পার ঘুরে দেখা গেছে, মুরাদনগরের কোম্পানীগঞ্জ সেতুর উত্তর পাশে বিশাল বালুমহল আর দক্ষিণের মাটি কেটে নেওয়া হয়েছে ইটভাটায়। সেতুর পশ্চিম উত্তরে বেড়িবাঁধের ভেতর কোম্পানীগঞ্জ পানি উন্নয়নের জায়গা দখল করে সাবেক এমপি ইউসুফ হারুনের লোকজন। সেখানে ২০০ দোকানঘর নির্মাণ করে বিক্রি করে তারা। এ ছাড়া কোম্পানীগঞ্জ বাজারে থাকা আড়াই হাজার দোকানের বর্জ্য ফেলা হয় গোমতী নদীতে।  বাজারের বেড়িবাঁধ ধরে পশ্চিম দিকে ৩০০ গজ এগোলেই ত্রিশ  গ্রাম। এই এক গ্রামেই রয়েছে ১২টি ইটভাটা। গ্রামের পাশে বেড়িবাঁধের ভেতর দিয়ে পাইপ ঢুকিয়ে নদীতে ড্রেজার মেশিন বসিয়েছিলেন স্থানীয় যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর। কয়েক বছর মাটি তোলার পর তুহিন নামের এক ছাত্রলীগ নেতা নদীর ভেতর থেকে ট্রাক্টর দিয়ে মাটি তোলেন। ফলে সপ্তাহ দুয়েক আগে ভারতের ডুম্বুর গেট খুলে দেওয়ায় গোমতীর পানির চাপে ত্রিশ, শীবানীপুর ও নয়াকান্দি গ্রামের বেড়িবাঁধ ছিল হুমকিতে। ভুক্তভোগীরা রাত জেগে পাহারা দিয়ে বাঁধের গর্ত মাটি দিয়ে ভরাট করে।</p> <p>এ ছাড়া আবাসিকের বর্জ্যও গোমতী নদীর সেতুর ওপর থেকে নদীতে ফেলা হচ্ছে গত চার দশক ধরে। এতে নদী ভরাট ও সরু হয়ে যাওয়ায় বর্ষা মৌসুমে পানিবন্দি থাকে প্রায় চার হাজার পরিবার। আর শুকনা মৌসুমে নদীর কোনো কোনো অংশে ছেলেরা ফুটবল খেলে।</p> <p>স্থানীয় বাসিন্দা আফসার উদ্দিন বলেন, ‘গোমতী এখন মুরাদনগর উপজেলার দুঃখ। তবে সঠিক পরিকল্পনা নিলে এ নদী হয়ে উঠতে পারে আমাদের ফুসফুস।’</p> <p>মুরাদনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সিফাত উদ্দিন বলেন, ‘গোমতী নদী থেকে মাটি কাটা চক্রের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, নিচ্ছি। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে জরিমানা ও সাজা দেওয়া হয়েছে অনেক বার। ড্রেজার মেশিন সকালে জব্দ করলে শুনতাম বিকেলেই স্থাপন করে ফেলত।’</p> <p>এ ব্যাপারে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো), কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, ‘আমরা দখলদারদের তালিকা তৈরি করেছি। সেই তালিকা জেলা প্রশাসনকেও দেওয়া হয়েছে। আমাদের পর্যাপ্ত লোকবল নেই। তবু আশা করছি, জেলা প্রশাসনসহ অভিযান চালিয়ে নদীর সম্পত্তি উদ্ধার করতে পারব।’</p> <p> </p> <p> </p>