<p>স্বামীর সংসারে অভাবের কারণে সুখের দেখা পাননি গৃহবধূ কুলসুম বেগম। অভাব-অনটনের কারণে তিন ছেলে, এক মেয়ে নিয়ে স্বামীসহ সুখের আসায় প্রায় এক যুগ আগে ঢাকায় পাড়ি জমান। পোশাক কারখানায় চাকরি নেন। তিন ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে জীবনযুদ্ধ শুরু করেন। কিন্তু অভাবের কারণে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারেননি। তাই ছেলেরা একটু বড় হয়েই কাজ করতে শুরু করে। স্বামী নান্টু মিয়া, বড় ছেলে রাজিব ও মেজো ছেলে ইমন অটোরিকশা চালায়। হঠাৎ গত ২০ জুলাই ঢাকা উত্তর বাড্ডা জামতলা স্বাধীনতা সরণি এলাকায় পুলিশের গুলিতে মারা যায় মেজো ছেলে ইমন (১৪)। ইমনের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুতে তাঁদের সব কিছু স্তব্ধ হয়ে যায়। তাঁরা কিছুতেই ভুলতে পারছেন না ইমনের স্মৃতি। প্রায় তিন মাস ধরে ছেলে ইমনকে হারিয়ে নির্ঘুম রাত কাটাচ্ছেন মা কুলসুম বেগম।</p> <p>ইমনের মা কুলসুম বেগম জানান, জীবনে অনেক যুদ্ধ-সংগ্রাম করে তিন ছেলে ও এক মেয়েকে বড় করেছেন। মেয়ে সুমি আক্তারকে বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলে রাজিবও বিয়ে করেছেন। গত জুলাই মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হলে বেশ কয়েক দিন রিকশা চালানো বন্ধ থাকে। সেই সময় ছাত্রদের সঙ্গে আন্দোলনে যোগ দেয় ইমন। প্রথম দুই-তিন দিন তাকে আন্দোলন থেকে ফিরিয়ে আনেন মা কুলসুম বেগম। গত ২০ জুলাই শনিবার সকালে বাসা থেকে আন্দোলনের উদ্দেশে যায় ইমন। দুপুরে বাসায় এসে খাবার খেয়ে আবারও বাসার কাছের উত্তর বাড্ডা স্বাধীনতা সরণি এলাকায় যায়। সেখানে বিকেল ৫টার দিকে পুলিশের সঙ্গে ছাত্রদের সংঘর্ষ চলাকালে গুলিবিদ্ধ হয় ইমন। থুতনির নিচে গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মারা যায় সে। পরে তার সঙ্গের ছেলেরা বাসায় এসে খবর দিলে পরিবারের লোকজন গিয়ে ঘটনাস্থল থেকে ইমনের মরদেহ উদ্ধার করে বাসায় নিয়ে আসে। এরপর স্থানীয় লোকজনের আর্থিক সহায়তায় অ্যাম্বুল্যান্স ভাড়া করে ঢাকা থেকে ভোলায় নিজ বাড়িতে এনে ২১ জুলাই রবিবার সকালে বাড়ির কাছের মসজিদের পাশে দাফন করা হয় তাকে।</p> <p>কুলসুম বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘আমার ছেলের কী দোষ ছিল যে তাকে গুলি করে মারা লাগবে। আমি আমার ছেলে হত্যার বিচার চাই।’</p> <p>এদিকে ছেলে ইমনকে হারিয়ে যে রকম বাকরুদ্ধ মা, তেমনি বাকরুদ্ধ বাবা নান্টু মিয়া ও ভাই রাজিব। প্রায় তিন মাস ধরেই তাঁদের সংসারে সবাই শোকে কাতর। মা কুলসুম বেগমও কাজে যেতে পারেন না। ছেলের শোকে গত তিন মাস ঘুমাতে পারছেন না। চোখ বুঝলেই ছেলে স্মৃতি মনে পড়ে তাঁর। বাবা নান্টু মিয়াও সারা দিন ঘরে শুয়ে থাকেন। রিকশা চালাতে যান না ছেলের শোকে।</p>