<p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ধলাই সেতু কিংবা এম সাইফুর রহমান সেতু। যে নামেই ডাকা হোক, সেতুটি পড়েছে অস্তিত্ব সংকটে। সেতুর গোড়া থেকে নির্বিচারে বালু উত্তোলনে বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। পিলারের গোড়া থেকে বালু সরে বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে, বেরিয়ে পড়েছে পাইলিং। স্থানীয়রা আন্দোলন প্রতিবাদ করেও রুখতে পারছেন না। প্রশাসনও অনেকটা গাছাড়া। ফলে ধলাই সেতুনির্ভর দুই ইউনিয়নের লাখো মানুষ মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার শঙ্কা নিয়ে দিন পার করছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জ রুস্তমপুর ঘেঁষা ধলাই নদীর ওপরের সেতুটি নানা কারণে গুরুত্বপূর্ণ। সীমান্তবর্তী প্রত্যন্ত দুই ইউনিয়ন ইসলামপুর পূর্ব এবং উত্তর রনিখাই ইউনিয়নকে উপজেলার সঙ্গে যুক্ত করেছে সেতুটি। দুই ইউনিয়নের লাখের ওপর মানুষের যাতায়াতেরও একমাত্র পথ এটি। দুটি ইউনিয়নে শতাধিক ক্রাশার মিল, উত্মা ছড়া পর্যটন কেন্দ্র, ঐতিহ্যবাহী উত্মা শিলপাটা ও পাথর মহাল যেতে হয় এ সেতু দিয়ে। ভারতে আমদানি-রপ্তানির সুবিধার্থে প্রক্রিয়াধীন শুল্ক স্টেশন কালাইরাগও এ সেতুনির্ভর। বালুলোভী চক্রের থাবায় সেতুটি এখন ধ্বংসের মুখে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গণ-অভ্যুত্থানের সুযোগে অশুভ ফায়দা</span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> : স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, ছাত্র-জনতার গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থেকেই শুরু হয় ধলাই নদী থেকে বালু লুট। কার্যত প্রশাসন অচল থাকার সুযোগ ষোলো আনা কাজে লাগিয়ে দিনরাত চলে শত শত নৌকায় করে ধলাই নদী থেকে বালু উত্তোলন। প্রশাসনের অনুপস্থিতিতে প্রথম তিন দিন ২৪ ঘণ্টা তোলা হয়। ৮ আগস্ট সেনাবাহিনী উপজেলায় ক্যাম্প স্থাপন করলে দিনে উত্তোলন বন্ধ হলেও রাতে থামেনি। ১৯ আগস্ট সেনাবাহিনী ফিরে গেলে ফের দিনরাত বালু উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়। প্রতিদিন শতাধিক নৌকাবোঝাই করে চুরি করা হয় বালু। তবে এক মাস ধরে দিনে বালু তোলা বন্ধ রয়েছে। এখন রাত ১১টা থেকে ভোরের আলো ফোটা পর্যন্ত চলে বালু উত্তোলন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সরেজমিন দেখা গেছে, ধলাই সেতুর একেবারে গোড়া থেকে হচ্ছে বালু উত্তোলন। দীর্ঘদিন শতাধিক নৌকায় বালু উত্তোলন চললেও এখন নদীর তলদেশ গভীর হয়ে যাওয়ায় দিনে ৩০ থেকে ৩৫টি নৌকায় বালু তোলা হয়। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এভাবে সেতুর ঠিক নিচের অংশ ও ৫০ থেকে ২০০ গজের মধ্যে বালু উত্তোলনে চরম ঝুঁকিতে পড়েছে ধলাই সেতু। পিলারের গোড়া থেকে মাটি সরে বড় বড় গর্ত হয়েছে। মাটি সরে পাইলিং দেখা যাচ্ছে।</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">নানা উদ্যোগে থামছে না উত্তোলন : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বালু উত্তোলনের প্রতিবাদে শুধু ভার্চুয়াল মাধ্যমেই নয়; বাস্তবেও হয়েছে প্রতিবাদ। বালু উত্তোলন বন্ধে মানববন্ধন, প্রতিবাদসভাসহ নানা কর্মসূচি করেছেন স্থানীয়রা। গত ৩১ অক্টোবর ধলাই সেতুর মুখে কলাবাড়ি এলাকায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বালু উত্তোলন বন্ধে মতবিনিময়সভা হয়। অংশ নেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নেতারা, সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও কোম্পানীগঞ্জ থানার ওসি। বালু উত্তোলন রুখতে সেতুসংলগ্ন এলাকায় ওয়ার্ডভিত্তিক নাগরিক কমিটি গঠন হয়। কিন্তু কিছুতেই বন্ধ হয়নি বালু উত্তোলন। </span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপজেলা পাথর ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি আব্দুল জলিল বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বালু উত্তোলন প্রশাসনের সামনে হলেও অভিযোগ জানিয়ে রোধ করা যাচ্ছে না।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উদ্বিগ্ন বিশেষজ্ঞরাও : </span></span></strong><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এমন কাজকে </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বিপজ্জনক</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"> আখ্যা দিয়েছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্ট ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক মুশতাক আহমদ। তিনি বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ব্রিজের নিচ থেকে বালু উত্তোলন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ব্রিজের পিলার আছে, নিচে পাইলিং আছে, এগুলোর জন্য মাটির সাপোর্ট দরকার। মাটির সাপোর্ট সরে গেলে লোড মাটিতে ট্রান্সফার হবে না। একটা পিলার যদি সামান্যও দেবে যায় তখন ওপর দিয়ে গাড়ি গেলে ওই জায়গায় চাপ বেশি পড়বে, অন্য জায়গায় কম পড়বে। এতে ফাটল শুরু হবে। এটাকে বলে ডিফারেন্টশিয়াল সেটলমেন্ট।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span> </span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লিডিং ইউনিভার্সিটির স্থাপত্যবিদ্যা বিভাগের সাবেক বিভাগীয় প্রধান স্থপতি রাজন দাশ বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পিলারের নিচ থেকে বালু তুলে নেওয়ায় সেতু ঝুঁকিতে পড়বে। এটা আত্মঘাতী কাজ। এটা থামানো দরকার।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p> <p style="text-align:left"><span style="font-size:10pt"><span style="font-family:Kantho"><span style="color:black"><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবিদা সুলতানা কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">‘</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">আমরা প্রায় প্রতিদিন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি। পুলিশ অভিযান চালাচ্ছে। স্থানীয়রা কমিটি করে দেখভাল করছেন, আমরাও দেখছি। এতে অনেকটা কমেছে।</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">’</span></span></span></span></span></p>