<p>নোংরা শহর বলে বদনাম আছে ময়মনসিংহ নগরীর। এই বদনামের কারণ যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, ডাস্টবিন বা স্তূপাকার ময়লা নিয়মিত অপসারণ না করা, পরিবেশসম্মতভাবে বর্জ্য ব্যবস্থাপনার সুযোগ না থাকা ইত্যাদি। এসব সমস্যা সমাধানের উদ্দেশ্য নিয়ে ময়মনসিংহ নগরীতে এখন চলমান বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। ২০২২ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া প্রকল্পটি আগামী ২০২৫ সালের জুনে শেষ হওয়ার কথা হলেও বর্তমানে প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি মাত্র ৩০ শতাংশ। প্রকল্প কর্মকর্তারা এখন প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনপ্রক্রিয়া শুরু করেছেন।</p> <p>এদিকে জানা গেছে, বরাদ্দপ্রাপ্তিতে ধীরগতি, নির্মাণসামগ্রীর উচ্চমূল্য, প্রকল্প বাস্তবায়নে স্থান নির্ধারণে, বিশেষ করে ডাস্টবিন নির্মাণে জটিলতা, গাড়ির মূল্যবৃদ্ধি ইত্যাদি কারণে এমন সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটির মোট ব্যয় বরাদ্দ ১২২ কোটি ১৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। এখন পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ২৩ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। আরো ছয় কোটি টাকা অনুমোদন করা হয়েছে।</p> <p>এ প্রকল্পের আওতায় নগরীর ময়লা-আবর্জনার ডাম্পিংস্থল শম্ভুগঞ্জের ময়লাকান্দা এলাকার চারদিকে সীমানাপ্রাচীর হবে। থাকবে যানবাহন চলাচলে অভ্যন্তরীণ সড়ক। থাকবে ফটক। বর্জ্যকে পরিবেশসম্মত ব্যবস্থাপনার যান্ত্রিক সুবিধাদি থাকবে এখানে। বর্তমানে এখানে এসব কাজ চলমান। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নগরীর নোংরা দৃশ্যের চিরচেনা রূপ আর থাকবে না বলে আশা করছে সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ।</p> <p>সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, প্রাচীন ময়মনসিংহ নগরীর প্রধান সড়ক, গুরুত্বপূর্ণ মোড়সহ অলিগলিতে সব সময়ই আবর্জনার স্তূপ চোখে পড়ে। অনেক স্থানে প্রয়োজনীয় ডাস্টবিনও নেই। এসব বর্জ্য অপসারণে সিটি করপোরেশনের নেই আধুনিক যানবাহন, ডাস্টবিন সুবিধা ও অত্যাধুনিক ডাম্পিং স্টেশন। নিয়মিত অপসারণ না করার কারণে অনেক এলাকায়ই ময়লা জমে থাকে। এসব বর্জ্য অপসারণে নেই প্রয়োজনীয় গাড়ি। এ ছাড়া বর্তমান ডাম্পিংস্থলটিও পুরোপুরি অপরিকল্পিত।</p> <p>এসব সমস্যা সমাধানে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষ একটি বড় আকারের প্রকল্প তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে পাঠালে তা গৃহীত হয়। ২০২২ সালের এপ্রিলে প্রকল্পটি পাস হয়। ব্যয় ধরা হয় ১২২ কোটি ১৩ লাখ ৩৭ হাজার টাকা। প্রকল্পের মেয়াদকাল ধরা হয় ২০২২ সালের জুলাই থেকে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত।</p> <p>তবে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, ২০২২ সালের জুলাইয়ে প্রকল্পের কাজ শুরু হলেও অর্থপ্রাপ্তি, কার্যাদেশ দেওয়া, ঠািকাদার নিয়োগ ইত্যাদি আনুষঙ্গিক কাজ সেরে পুরোদমে কাজ শুরু হয় মূলত ২০২৩-২৪ সালের দিকে। তবে অর্থপ্রাপ্তিতে ধীরগতি আছে। বর্তমানে ময়লাকান্দা এলাকায় ডাম্পিংস্থলটির কাজ চলছে ভালোভাবে, কিন্তু একেবারেই খারাপ অবস্থা ডাস্টবিন নির্মাণের বিষয়টি। ২০০ ডাস্টবিন নির্মাণের কাথা থাকলেও মাত্র ২০ থেকে ২২টির মতো ডাস্টবিন নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। ডাস্টবিন নির্মাণে নাগরিকরা স্থান দিতে নারাজ। গণশৌচাগার নির্মাণের কথা ৩০টি। এর মধ্যে ২৪টির কাজ চলমান।</p> <p>জানা গেছে, প্রকল্পের বড় কাজটি হলো গাড়ি ক্রয়। প্রায় ৭০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রয়োজনীয়সংখ্যক গাড়ি ক্রয় করা হবে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অগ্রগতি হতাশাজনক। প্রকল্পের শুরুর সময় গাড়ি কেনার অনুমতি ছিল না। যখন অনুমতি পাওয়া গেছে, তখন আবার গাড়ির দাম বেড়ে গেছে ডলারের দাম বাড়ার কারণে। এ কারণে গাড়ি ক্রয়ের দরপত্রগুলো আবার পুনর্মূল্যায়ন করতে হচ্ছে। প্রকল্প কর্মকর্তারা বলেন, সিটি করপোরেশনের তিনটি জোনে তিনজন নির্বাহী প্রকৌশলী কাজগুলো দেখভালের দায়িত্বে আছেন। প্রকল্পের ভালো-মন্দ সব কিছু দেখার দায়িত্ব তাদের।</p> <p>নগরীর একাধিক নাগরিক বলেন, প্রকল্পটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। প্রকল্পটির কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ হলে ভালো হতো।</p> <p>প্রকল্প পরিচালক জীবন কৃষ্ণ সরকার বলেন, কিছু সমস্যার কারণে নির্ধারিত সময়ে প্রকল্পটি শেষ হবে না। আশা করছি, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ হবে।</p>