<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আকারে ছোট হলেও বৈদেশিক মুদ্রা আহরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত অফশোর ব্যাংকিং। সংকটকালীন এই সময়ে বিদেশি সহায়তা না নিয়েও ডলারের অভাব মেটানো সম্ভব। তবে তার জন্য সঠিক নীতিমালা ও বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে থাকা বাংলাদেশিদের উৎসাহিত করা প্রয়োজন। এরই মধ্যে অফশোর ব্যাংকিং আইন প্রণয়ন করে সেই দরজা উন্মুক্ত করেছে সরকার। ধীরে ধীরে তার ফলাফল আসতে শুরু করেছে। এখানে আস্থা তৈরি করা গেলে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা আহরণ করা যাবে বলে মত সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অফশোর ব্যাংকিং হলো ব্যাংকের অভ্যন্তরে পৃথক এক ব্যাংকিং ব্যবস্থা। বিদেশি কম্পানিকে ঋণ প্রদান এবং বিদেশি উৎস থেকে আমানত সংগ্রহের মাধ্যমে ব্যবসা হয় অফশোর ব্যাংকিংয়ে। অফশোর ইউনিটের ব্যবসার পুরোটাই হয়ে থাকে বৈদেশিক মুদ্রায়। ব্যাংকের প্রচলিত কোনো নিয়ম বা নীতিমালা অফশোর ব্যাংকিংয়ে প্রয়োগ হয় না। শুধু মুনাফা ও লোকসানের হিসাব যোগ হয় ব্যাংকের মূল হিসাবে।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">দেশের আমদানি ব্যয় মেটানোর জন্য যে পরিমাণ বিদেশি মুদ্রার প্রয়োজন, তা রপ্তানি আয় দিয়ে পরিশোধ করা সম্ভব হয় না। সে জন্যই প্রতিবছর বড় অঙ্কের বাণিজ্য ঘাটতিতে পড়ে বাংলাদেশ। ফলে আমদানি দায় মেটাতে নির্ভর করতে হয় প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের ওপর। তবে বাছরে প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলার রেমিট্যান্স এলেও আমদানির পুরো দেনা ও বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধ সম্ভব হয়ে ওঠে না। সে জন্য রিজার্ভ থেকে বাজারে ডলার বিক্রি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ফলে তৈরি হয় অভ্যন্তরীণ নানা সমস্যা। এসব সমস্যা সমাধানের একমাত্র উপায় ডলারের আন্তঃপ্রবাহ বাড়ানো।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ডলারের আন্তঃপ্রবাহ বাড়াতে নতুন যে বিষয়টি অফশোর ব্যাংকিং সেবায় যুক্ত হয়েছে, সেটি হলো আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব। ফলে বাংলাদেশে বিনিয়োগকারী অনিবাসী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের মনোনীত নিবাসীর নামে অফশোর অ্যাকাউন্ট খুলতে পারবেন। অফশোর ব্যাংকিং অ্যাকাউন্ট নিয়ে আগেও বেশ কিছু প্রডাক্ট চালু ছিল। নতুন করে আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব নামে একটি ডিপোজিট সেবা চালু করা হয়েছে। বর্তমানে বিভিন্ন ব্যাংক ডলারে আমানত রাখার ক্ষেত্রে বার্ষিক ৮.৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ অফার করছে। এর মাধ্যমে ভালো সাড়াও পাচ্ছে ব্যাংকগুলো।</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">বর্তমানে অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানতের পরিমাণ প্রায় ৮০ হাজার কোটি টাকা। এর বেশির ভাগই বিদেশি আমানতকারী বা বড় বড় আন্তর্জাতিক কম্পানির অর্থ। বাকিটা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের কম্পানিগুলোর আমানত। অতি সামান্য আমানতের মালিক ব্যক্তি খাত। অনশোর ব্যাংকিংয়ের ডলারের পাশাপাশি এসব অফশোর ব্যাংকিয়ের অর্থ দিয়েও আমদানিকারকদের দায় পরিশোধ করে থাকে ব্যাংক। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, এই আমানত থেকে ৮৩ হাজার ৮২৬ কোটি টাকা বিতরণ করেছে ব্যাংকগুলো। এর মধ্যে খেলাপি হয়ে পড়েছে এক হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ২.০৯ শতাংশ। অফশোর ইউনিটের ঋণের ২২ শতাংশই সংকটে থাকা ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশের। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">আমানতের চেয়ে ঋণ বেশি হওয়ার কারণ বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি প্রজ্ঞাপন। মূল ব্যাংক থেকে মোট আমানতের ৩০ শতাংশ পর্যন্ত অফশোর ব্যাংকিংয়ে স্থানান্তর করার সুযোগ রয়েছে। তাই অনেক ব্যাংকই তহবিল স্থানান্তর করে। এ কারণে আমানতের চেয়ে অফশোর ব্যাংকিংয়ের ঋণের পরিমাণ বেশি। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অফশোর ব্যাংকিংয়ের আমানত সম্পর্কে জানতে চাইলে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিস এ খান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">ডলার সরবরাহ বাড়াতে এখন নানা স্কিম ঘোষণা করা হচ্ছে এবং ভালো মুনাফা অফার করা হচ্ছে। এতে আগ্রহ বাড়ছে প্রবাসী ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের। এটা ভালো। দুই বছর আগেও এ রকম কোনো স্কিম ছিল না। এখন যেহেতু আন্তর্জাতিক ব্যাংক হিসাব চালু করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে, সেহেতু এখানে আস্থা ধরে রাখা জরুরি। কারণ আমাদের অতীত খুব বেশি ভালো না। ওয়েজ আর্নার্স ডেভেলপমেন্ট বন্ডে বিনিয়োগ করেও অনেক বিদেশি সময়মতো অর্থ ফেরত পাননি। তাই অনেকেই দেশে ডলার জমা রাখা থেকে বিমুখ হয়েছেন। এ বিষয়ে অফশোর ব্যাংকিং আইনে যেসব কথা বলা হয়েছে, তা সঠিকভাবে পরিপালন ও বাস্তবায়িত হলে ডলার সংকট নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে অফশোর ইউনিট।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অফশোর ব্যাংকিং আইন-২০২৪ অনুযায়ী, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, বেসরকারি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল, অর্থনৈতিক অঞ্চল এবং হাই-টেক পার্কগুলোর শতভাগ বিদেশি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে আমানত নেওয়া যাবে। পাশাপাশি অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট তাদের স্বল্পমেয়াদি ঋণ ও অগ্রিম বা বিনিয়োগ, ঋণপত্র ও গ্যারান্টি সুবিধা প্রদান, বিল ডিসকাউন্টিং, বিল নেগোশিয়েটিং এবং অন্যান্য বৈদেশিক বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট বহির্লেনদেন সেবা দিতে পারবে। অনিবাসী বাংলাদেশি, বিদেশি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অফশোর ব্যাংকিং ইউনিট আমানত ও ঋণ গ্রহণ করতে পারবে। এই আমানতের ওপর মুদ্রাভেদে রেফারেন্স রেটের (সোফর) অতিরিক্ত ১.৫০ শতাংশ থেকে ৩.২৫ শতাংশ পর্যন্ত সুদ বা মুনাফা দিতে পারবে ব্যাংক। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অফশোর ব্যাংকিং ইউনিটের আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের প্রদেয় সুদ বা মুনাফা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ করমুক্ত থাকবে। আমানতকারী বা বৈদেশিক ঋণদাতাদের হিসাব যেকোনো শুল্ক ও লেভি মুক্ত হবে। </span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">স্বাধীনতার পর থেকেই কাজের উদ্দেশ্যে বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন বাংলাদেশের মানুষ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তাঁদের অনেকেই এখন মোটা অঙ্কের টাকা আয় করেন, যাঁরা রেমিট্যান্স আকারে দেশে টাকা পাঠাতে পারেন না। তাঁদের জন্য বিশেষ বন্ড ও সরাসরি আমানত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। আর সেটা করতে হবে পুরোপুরি অনলাইনভিত্তিক। যাতে তাঁরা যেকোনো দেশে বসেই বাংলাদেশে অর্থ জমা করতে পারেন। আবার চাইলে উঠিয়ে নিতে পারেন। অনেক বেশি কাগজপত্রের ঝামেলা রাখা যাবে না। তাহলেই দেশের ডলারপ্রবাহ বৃদ্ধি পাবে।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">তিনি আরো বলেন, </span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">‘</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><span style="color:black">অনেক শ্রমিক এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বিদেশে থাকেন। অনেকে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। আয় বেড়েছে কয়েক গুণ। কিন্তু ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও তিনি ব্যাংকিং চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠাতে পারেন না। কারণ তাঁর প্রথামিক বেতনের বেশি দেশে পাঠানোর বৈধতা নেই। কিন্তু গ্রামে জমি কিনতে বা বাড়ি বানাতে তিনি বেশি টাকা পাঠাতে চান। শুধু এই একটি কারণে অনেক প্রবাসী বাধ্য হয়ে হুন্ডির মাধ্যমে দেশে টাকা পাঠান।</span></span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><span style="color:black">’</span></span></span></span></span></p> <p> </p>