ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা, বৃহস্পতিবার ১০ এপ্রিল ২০২৫
২৭ চৈত্র ১৪৩১, ১০ শাওয়াল ১৪৪৬

সাহাবিদের বর্ণনায় প্রিয় নবী (সা.)-এর দৈহিক অবয়ব

ইসমাঈল সাদী
ইসমাঈল সাদী
শেয়ার
সাহাবিদের বর্ণনায় প্রিয় নবী (সা.)-এর দৈহিক অবয়ব

পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর ছিলেন আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। চাঁদের মধ্যেও নাকি কালিমা আছে, কিন্তু আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) ছিলেন সব কালিমা ও মলিনতামুক্ত। একনজর তাঁর দিকে তাকালে চোখ ফেরানো যেত না।

প্রিয় নবী (সা.)-এর বিখ্যাত এক সাহাবি জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, ‘আমি একবার পূর্ণিমা রাতে চাঁদের  স্নিগ্ধ আলোতে প্রিয় নবীজি (সা.)-কে লাল চাদর ও লুঙ্গি পরিহিত অবস্থায় দেখলাম।

তখন আমি একবার আকাশের জোছনা ছড়ানো চাঁদের দিকে এবং একবার প্রিয় নবীর মোবারক চেহারার দিকে তাকাতে থাকলাম। আমার কাছে মনে হলো—তিনি পূর্ণিমার চাঁদের চেয়েও বেশি সুন্দর। (তিরমিজি, হাদিস : ২৮১১)

চাঁদের চেয়েও সুন্দর তিনি—এই অভিব্যক্তি শুধু জাবের ইবনে সামুরা (রা.)-এর নয়, বরং অমুসলিমরাও অকপটে স্বীকারোক্তি দিয়েছে এ কথার। পূর্ণিমার দ্যুতি ছড়ানো ওই চেহারা দেখে দ্বিধাহীনভাবে তারাও বলে উঠেছে—তিনি কখনো মিথ্যাবাদী হতে পারেন না।

হিজরতের পরের একটি ঘটনা স্মরণীয়। মদিনার বিখ্যাত ইহুদি ধর্মগুরু ছিলেন আবদুল্লাহ ইবনে সালাম। তাঁর কানে খবর পৌঁছল মক্কা থেকে নতুন এক দ্বিনের দাওয়াত নিয়ে মুহাম্মদ নামের এক ব্যক্তি মদিনায় প্রবেশ করেছেন। কৌতূহল চেপে রাখতে না পেরে সবার মতো তিনিও গেলেন নবাগত মানুষটির দরবারে।

প্রিয় নবী (সা.)-এর নুরানি চেহারায় প্রথম নজর পড়তেই তাঁর মন চিৎকার করে বলে উঠল—‘আন্না ওয়াজহাহু লাইসা বি ওয়াজহি কাজ্জাবিন।’ অর্থাৎ এই স্নিগ্ধ সুন্দর সুদর্শন চেহারা কোনো মিথ্যুকের চেহারা হতে পারে না। (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদিস : ১৫৫৪)

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.) হলেন গোটা পৃথিবীবাসীর মধ্যে সবচেয়ে বেশি সুন্দর, সুদর্শন এবং সুষম দৈহিক গঠনের অধিকারী। তাঁর প্রতিটি অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ এমন সুনিপুণভাবে গঠিত, যেন তিনি যেভাবে চেয়েছেন সেভাবেই গঠন করা হয়েছে।

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর উচ্চতা

তিনি বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার একেবারে বেটেও ছিলেন না।

তিনি ছিলেন মাঝারি গড়নের। আনাস ইবনে মালিক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বেশি লম্বাও ছিলেন না, আবার একেবারে বেটেও ছিলেন না। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৯০০)

বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ছিলেন মধ্যমাকৃতির। তাঁর দুই কাঁধের মধ্যবর্তী অংশ ছিল তুলনামূলক প্রশস্ত।(সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৫১)

তিনি মাঝারি গড়নের হলেও যখন সবার সঙ্গে হাঁটতেন তখন তাঁকে সবার মধ্যে সবচেয়ে বেশি লম্বা দেখাত। এটি ছিল মূলত তাঁর মুজিজা। (ফাতহুল বারি : ৬/৫৭১)

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর গায়ের রং

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর গায়ের রং ছিল লাল-সাদা মেশানো উজ্জ্বল ফর্সা। গোলাপি ধরনের। অনেকটা দুধে আলতা মেশানো রঙের মতো। ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়।

আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, তাঁর শরীরের রং গোলাপি ধরনের ছিল, ধবধবে সাদাও নয় কিংবা তামাটে বর্ণেরও নয়। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩৫৪৭)

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর মাথা ও চুল

তাঁর মাথা ছিল সুষম বড়। চুল ছিল ঘন কালো। পুরোপুরি সোজাও নয়, আবার একেবারে কোঁকড়ানোও নয়; বরং ঈষৎ ঢেউ খেলানো। আনাস ইবনে মালেক (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর চুল পুরোপুরি সোজাও ছিল না আবার একেবারে কোঁকড়ানোও ছিল না। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬২৩৫)

বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর ঘন চুলগুলো কানের লতি পর্যন্ত লম্বা ছিল। তাঁর দেহে লাল লুঙ্গি ও লাল চাদর শোভা পেত। আমি তাঁর তুলনায় বেশি সুদর্শন অন্য কাউকে কখনো দেখিনি। (সহিহ  মুসলিম, হাদিস : ২১০; নাসাঈ, হাদিস : ৫২৩২)

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর মুখ ও চোখ

জাবির ইবনি সামুরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর মুখ প্রশস্ত ছিল। চোখের শুভ্রতার মধ্যে কিছুটা লালিমা ছিল। পায়ের গোড়ালি স্বল্প মাংসল ছিল। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬২১৬)

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর ঘাম

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর শরীরের ঘাম ছিল বিন্দু বিন্দু মুক্তার দানার মতো। যার সুঘ্রাণ মেশক আম্বরকেও হার মানায়। সহিহ মুসলিম শরিফে এসেছে, সাহাবায়ে কিরাম প্রিয় নবীজির ঘাম শিশিতে ভরে রাখতেন আতর হিসেবে ব্যবহার করতে।

প্রিয় নবীজি (সা.)-এর একজন বিখ্যাত সাহাবি, যাকে বলা হয় শায়েরুর রাসুল তথা রাসুলের কবি হাসসান বিন সাবেত (রা.) প্রিয় নবীজির শানে যে অমর কবিতা রচনা করে গেছেন, চৌদ্দ শ বছর পরও তা মুমিন হৃদয়ে মুগ্ধতার ঝড় তুলে দেয়। প্রিয় নবীজির শানে তিনি লিখেছেন—

আপনার চেয়ে সুদর্শন কোনো মানুষ/ আমার চোখ দেখেনি

আপনার চেয়ে সুন্দর কোনো পুরুষ/ জন্ম দেয়নি কোনো নারী

সকল অসুন্দর ও অসংলগ্নতা থেকে/ পবিত্র করে আপনাকে সৃষ্টি করা হয়েছে

যেন আপনি ঠিক তেমনই হয়েছেন/ যেমনটি আপনি চেয়েছেন

 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

প্রশ্ন-উত্তর

ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে নামাজ পড়লে নামাজ হবে?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে নামাজ পড়লে নামাজ হবে?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : ঘরের দরজা-জানালা বন্ধ করে নামাজ পড়লে নামাজ হবে? যদি না হয় তাহলে যারা এসি রুমে নামাজ পড়ে, তাদের দরজা-জানালা সব বন্ধ থাকে, তাদের নামাজের বিধান কী? আমার কিছু বন্ধু বলেছে, বদ্ধ ঘরে নামাজ হয় না।

-আব্দুর রহমান, চট্টগ্রাম

উত্তর : দরজা-জানালা বন্ধ করে নামাজ পড়লে নামাজ শুদ্ধ হবে। তাই এসি রুমে নামাজ পড়তেও কোনো অসুবিধা নেই। যিনি বদ্ধ ঘরে নামাজ হয় না বলেছেন, তাঁর কথা ভুল।

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার আমল

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
পরীক্ষায় ভালো ফলাফল করার আমল
সংগৃহীত ছবি

পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য পরিশ্রমের কোনো বিকল্প নেই। পরীক্ষার মাধ্যমেই নিজেকে যাচাইয়ের সুযোগ পান একজন শিক্ষার্থী। একজন শিক্ষার্থীর মেধা ও মান যাচাইয়ের মানদণ্ড হচ্ছে এই পরীক্ষা।

ইসলাম ভালো ফলাফলের জন্য অলসতা ত্যাগ করে পরিশ্রম করতে উৎসাহিত করে।

তাই পরীক্ষায় ভালো ফলাফলের জন্য যে কাজটি সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ, তা হলো কঠোর পরিশ্রম। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আর সবার জন্যই তাদের কর্ম অনুসারে মর্যাদা রয়েছে। আর আল্লাহ যেন তাদেরকে তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিফল দিতে পারেন। আর তাদের প্রতি কোনো জুলুম করা হবে না।
’ (সুরা আল-আহকাফ : ১৯)

রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তির আমল তাকে পিছিয়ে দেয়, তার বংশ-পরিচয় তাকে কখনোই এগিয়ে দিতে পারে না।’ (সহিহ মুসলিম : ৭০২৮)

আরো পড়ুন
আমল কবুল হওয়ার দোয়া

আমল কবুল হওয়ার দোয়া

 

আল্লাহর ওপর ভরসা করার মানে এই নয় যে পড়ালেখা না করেই উত্তম ফলাফলের অপেক্ষায় থাকবে। আল্লাহ তাআলা দুনিয়াকে দারুল আসবাব তথা উপকরণের কেন্দ্রবিন্দু বানিয়েছেন। তাই পড়ালেখা করতে হবে।

ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, লোকজন হজ করত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় নিয়ে আসত না। আবু মাসউদ বলেন, ইয়েমেনের কিছু লোক হজে যেত কিন্তু সঙ্গে পাথেয় আনত না এবং তারা বলত যে আমরা আল্লাহর ওপর ভরসা করেছি। অথচ মক্কায় পৌঁছার পর তারা ভিক্ষা করত। ফলে মহান আল্লাহ অবতীর্ণ করলেন, ‘তোমরা হজের সফরে সঙ্গে পাথেয় নিয়ে যাবে, আর জেনে রেখো তাকওয়াই হলো উত্তম পাথেয়।’ (আবু দাউদ : ১৭৩০)

পরীক্ষাকেন্দ্রে যাওয়ার আগে দুই রাকাত ‘সালাতুল হাজত’ পড়ে মহান আল্লাহর সাহায্য প্রার্থনা করে পরীক্ষার উদ্দেশ্যে বের হওয়া যেতে পারে।

কারণ রাসুলুল্লাহ (সা.) যখন কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতেন, তখন ‘সালাতুল হাজত’ বা প্রয়োজন পূরণের নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ : ১৩১৯)

এটি পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোনো সুরা পড়া জরুরি নয়। বরং সাধারণভাবে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়ে নিজ প্রয়োজনগুলো মহান আল্লাহর কাছে পেশ করা ও তাঁর সাহায্য প্রার্থনা করা। 

তাড়াহুড়ার কারণে ভুল হয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, তাড়াহুড়া শয়তানের অভ্যাস। রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেন, ‘কাজে ধীরস্থিরতা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে আর তাড়াহুড়া করা শয়তানের পক্ষ থেকে।’ (সুনানে বায়হাকি : ২০৭৬৭)। 

যেকোনো ভালো কাজই বিসমিল্লাহ বলে শুরু করতে হয়। তাই পরীক্ষার্থীরাও প্রশ্নপত্র গ্রহণ করার সময় এবং উত্তর লেখা শুরু করার সময় বিসমিল্লাহ বলবেন। সঙ্গে দরুদ শরিফও পাঠ করে নিতে পারেন। কারণ কোনো ব্যক্তি রাসুল (সা.)-এর ওপর একবার দরুদ পড়লে মহান আল্লাহ তার ওপর ১০ বার রহমত বর্ষণ করেন। বিসমিল্লাহ পড়ার ব্যাপারে হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, যেসব কাজ আল্লাহর নাম না নিয়ে শুরু করা হয়, সেগুলো বরকতশূন্য। কোনো বর্ণনায় আল্লাহর প্রশংসার কথাও বলা হয়েছে।

অনেক সময় দেখা যায়, ভালোভাবে মুখস্থ করে যাওয়া জিনিসও মনে পড়ে না। কেউ এ ধরনের পরিস্থিতিতে পড়লে নিম্নোক্ত দোয়া পড়তে পারেন।

উচ্চারণ : ‘রব্বিশরাহলি সদরি, ওয়া ইয়াসসিরলি আমরি, ওয়াহলুল উকদাতাম মিল্লিসানি, ইয়াফকহু কওলি।’

অর্থ : ‘সে বলল, হে আমার রব, আমার বুক প্রশস্ত করে দিন। এবং আমার কাজ সহজ করে দিন। আর আমার জিহ্বার জড়তা দূর করে দিন—যাতে তারা আমার কথা বুঝতে পারে।’ (সুরা ত্বহা : ২৫-২৮)

এই দোয়া মৌখিক পরীক্ষার সময় বেশি বেশি পড়া যেতে পারে।

মন্তব্য

মুমিনের দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর নির্দেশনা

মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
মো. আলী এরশাদ হোসেন আজাদ
শেয়ার
মুমিনের দুঃখ-দুর্দশায় আল্লাহর নির্দেশনা

বিশ্ব সন্ত্রাসী ইসরায়েলি হামলায় মসজিদে আকসা আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। পাখির মতো উড়ে যাচ্ছে গাজাবাসী। কাঁদছে নিষ্পাপ শিশুরাও। এক লাখ ১৭ হাজার মানুষের শহর রাফাহ, সেখানে হয়তো কেউ বেঁচে নেই।

এমন রূঢ় বাস্তবতায়ও মহান আল্লাহর অভয় বার্তায় আস্থা রাখতে চাই—‘তোমরা হীনবল হইয়ো না এবং দুঃখিতও হইয়ো না; তোমরাই বিজয়ী, যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ১৩৯)

অচিরেই অলৌকিক সাহায্য ও নিরাপত্তার পরিবেশ তৈরি হবে। কেননা, মজলুম জনগণের হাহাকার আল-কোরআনের শাশ্বত আবেদন : ‘আর তোমাদের কী হলো যে দুর্বল পুরুষ, নারী ও শিশুদের পক্ষে—যারা বলে : হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের অত্যাচারীদের এ জনপদ থেকে উদ্ধার করো। তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য অভিভাবক পাঠাও এবং তোমার পক্ষ থেকে আমাদের জন্য সাহায্যকারী পাঠাও।

’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ৭৫)

মুসলমানদের বিপদ-বিপর্যয়ের কারণ

অত্যাধুনিক সমরাস্ত্রসমৃদ্ধ সম্মিলিত মুসলিম বাহিনী না থাকা

ইস্পাতকঠিন একক মুসলিম নেতৃত্ব না থাকা

তাওবা, তাকওয়া ও দোয়ার পথ ছেড়ে দেওয়া

ইলম আমলের ত্রুটি ও প্রযুক্তিবিমুখিতা

অনৈক্য, বিলাসিতা ও বিধর্মীদের সঙ্গে সখ্য ইত্যাদি।

দুঃখজনক সত্য—ইরান, ইরাক, পাকিস্তান, তুরস্ক প্রভৃতি পারমাণবিক শক্তিধর মুসলিম দেশ গাজার মুসলমানদের রক্ষার্থে একটি বোমাও ফাটায়নি। সৌদি আরব ও আরব আমিরাতের রয়েছে বিপুল তেল সম্পদ। কিন্তু গাজার অ্যাম্বুল্যান্সগুলো দাঁড়িয়ে থাকল নিরূপায় নীরব আর্তনাদে।

তবু তেল দিয়ে কেউ সহযোগিতা করেনি।

জাতিসংঘ মিশনে শান্তিরক্ষা বাহিনী প্রেরণে শীর্ষস্থানের অধিকারী বাংলাদেশ; গোটা বিশ্বের মুসলমানদের ৫০ লাখ সৈন্য, অসংখ্য ট্যাংক, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, স্যাটেলাইট এবং ঈমানি শক্তি নিয়ে গাজার দিকে কেউ হাঁটেনি। বিশ্ব মুসলমান ও তাদের বিবেক নিশ্চুপ... অথচ সুরা সাফের ১৩ নম্বর আয়াত ‘নাসরুম মিনাল্লাহি ওয়া ফাতহুন কারিব।’ (আল্লাহর সাহায্য ও বিজয় নিকটবর্তী)!

মহান আল্লাহর প্রতিশ্রুতি মিথ্যা নয় “...দুঃখ-দারিদ্র্য ও রোগবালা তাদের স্পর্শ করেছিল এবং তারা ভীত-কম্পিত হয়েছিল। তারা এত দূর বিচলিত হয়েছিল যে রাসুল ও তাঁর প্রতি বিশ্বাস স্থাপনকারীরা বলে উঠেছিল, ‘আল্লাহর সাহায্য কখন আসবে?’ জেনে রাখো, নিশ্চয়ই আল্লাহর সাহায্য নিকটবর্তী।

” (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২১৪)।

বর্তমান বিশ্বপ্রেক্ষাপটে আয়াতটির সামঞ্জস্যতা লক্ষণীয়। মদিনায় হিজরতের পর মুসলিমরা যখন ইহুদি, মুনাফিক ও আরবের মুশরিকদের পক্ষ থেকে বিভিন্ন পীড়া ও কষ্ট পেতে লাগল, তখন কোনো কোনো মুসলিম নবী করিম (সা.)-এর কাছে অভিযোগ করলে, মুসলিমদের সান্ত্বনা দেওয়ার জন্য এ আয়াত নাজিল হয় এবং রাসুল (সা.)ও বললেন যে ‘তোমাদের আগের লোকদের তাদের মাথা থেকে পা পর্যন্ত করাত দিয়ে চেরা হতো এবং লোহার চিরুনি দিয়ে তাদের গোশত ও চামড়া ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হতো। কিন্তু এ অকথ্য জুলুম-নির্যাতন তাদেরকে তাদের দ্বিন থেকে ফেরাতে পারেনি।’ অতঃপর বলেন, ‘আল্লাহর শপথ! মহান আল্লাহ এই দ্বিনকে এমনভাবে জয়যুক্ত করবেন যে, ...আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো ভয় থাকবে না।’ (বুখারি)

মদিনার মুসলমানরা যখন রাতে ঘুমাতে গেলে সকালে নিরাপদে জাগবে কি—এমন আতঙ্কগ্রস্ত, তখন ঘোষিত হলো মহান আল্লাহর আশ্বাসবাণী—‘তোমাদের যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে আল্লাহ তাদের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন, তিনি তাদের পৃথিবীর কর্তৃত্ব প্রদান করবেন; যেমন তিনি তাদের পূর্ববর্তীদের দিয়েছেন। তিনি তাদের দ্বিন প্রতিষ্ঠিত করবেন, যে দ্বিন তিনি তাদের জন্য মনোনীত করেছেন। আর ভয়ভীতির পরিবর্তে তাদের নিরাপত্তার ব্যবস্থা করবেন...।’ (সুরা : নুর, আয়াত : ৫৫)

পরিশেষে প্রিয় নবী (সা.)-এর একটি হাদিস উদ্ধৃত করছি—খাদ্য গ্রহণকারীরা যেভাবে খাবারের পাত্রের চতুর্দিকে একত্র হয়, অচিরেই বিজাতিরা তোমাদের বিরুদ্ধে সেভাবেই একত্র হবে। এক ব্যক্তি বলল, সেদিন আমাদের সংখ্যা কম হওয়ার কারণে কি এরূপ হবে? তিনি বলেন, তোমরা বরং সেদিন সংখ্যাগরিষ্ঠ হবে; কিন্তু তোমরা হবে প্লাবনের স্রোতে ভেসে যাওয়া আবর্জনার মতো। আর আল্লাহ তোমাদের শত্রুদের অন্তর থেকে তোমাদের পক্ষ থেকে আতঙ্ক দূর করে দেবেন, তিনি তোমাদের অন্তরে ভীরুতা ভরে দেবেন। আরেক ব্যক্তি বলল, হে আল্লাহর রাসুল! ‘আল-ওয়াহন’ ভীরুতা কী? তিনি বলেন, দুনিয়ার মোহ ও মৃত্যুকে অপছন্দ করা। (আবু দাউদ)
 

মন্তব্য

অন্যের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসার প্রতিদান

মাইমুনা আক্তার
মাইমুনা আক্তার
শেয়ার
অন্যের সম্মান রক্ষায় এগিয়ে আসার প্রতিদান

গিবত বা পরনিন্দা ইসলামের দৃষ্টিতে অত্যন্ত ঘৃণিত কাজ। তাই কেউ কেউ গিবত থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও গিবত শোনাও যে একটি বড় পাপ, সে বিষয়ে আমরা উদাসীন। তাই নিজে গিবত করার ব্যাপারে সতর্ক থাকলেও অসতর্কতাবশত গিবতকারীদের গিবত শুনে পাপে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ তাঁর বান্দাদের অনর্থক কথাবার্তা শোনা থেকে বিরত থাকার ব্যাপারে নির্দেশ দিয়েছেন।

পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেন, ‘আর যখন তুমি তাদেরকে দেখো, যারা আমার আয়াতগুলোর ব্যাপারে উপহাসমূলক সমালোচনায় রত আছে, তুমি তাদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নাও, যতক্ষণ না তারা অন্য কথাবার্তায় লিপ্ত হয়। আর যদি শয়তান তোমাকে ভুলিয়ে দেয়, তবে স্মরণের পর জালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গে বোসো না।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ৬৮)

যারা এ ধরনের কথাবার্তা শোনা থেকেও নিজেদের বিরত রাখে পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তাদের সুনাম করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তারা যখন অনর্থক কথাবার্তা শুনে তখন তা থেকে বিমুখ হয়।

’ (সুরা : কাসাস, আয়াত : ৫৫)

অর্থাৎ অর্থহীন ও অসার কাজ—এটি এমন সব কথা ও কাজকে বোঝায়, যা অপ্রয়োজনীয়, অনৈতিক কিংবা গুনাহের অন্তর্ভুক্ত। মুমিন কখনো এ ধরনের কাজে লিপ্ত হতে পারে না। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ মুমিনের পরিচয় দিতে গিয়ে বলেছেন, ‘যারা অহেতুক বিষয় পরিহার করে।’ (সুরা : মুমিনুন, আয়াত : ৩)

তাই কেউ আমাদের সামনে এসে কোনো গুনাহের কথা কিংবা পরনিন্দা ইত্যাদি করলে, আমাদের উচিত তাদের এড়িয়ে চলা।

আমাদের প্রিয় নবীজি (সা.)-এর সামনে কেউ কারো ব্যাপারে অনাকাঙ্ক্ষিত কিছু বলতে চাইলে তিনি প্রসঙ্গ ঘুরিয়ে দিতেন। এবং ওই ভাইয়ের সম্মান বাঁচানোর চেষ্টা করতেন। ইতিবাচক কথা বলতেন। ইতবান ইবনে মালিক (রা.) বলেন, একবার রাসুল (সা.) সকালে আমার কাছে এলেন। তখন এক লোক বলল, মালিক ইবনে দুখশুন কোথায়? আমাদের এক ব্যক্তি বলল, সে তো মুনাফিক; সে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে ভালোবাসে না।
তা শুনে রাসুল (সা.) বলেন, তোমরা কি এ কথা বলোনি যে, সে আল্লাহর সন্তুষ্টি চেয়ে ‘লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলে। তারা বলেন, হ্যাঁ। তিনি বলেন, যেকোনো বান্দা কিয়ামতের দিন ওই কথা নিয়ে উপস্থিত হবে, আল্লাহ তার ওপর জাহান্নাম হারাম করে দেবেন।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৯৩৮)

তা ছাড়া পরনিন্দা করার মাধ্যমে নিন্দিত ব্যক্তির সম্মানহানি করা হয়, তাকে খাটো করার চেষ্টা করা হয়, যে ব্যক্তি পরনিন্দাকারীকে যেকোনোভাবে তা থেকে বিরত করবে এবং যার নিন্দা করা হচ্ছিল তার সম্মান রক্ষার্থে ইতিবাচক কথা বলে তার সম্মান রক্ষার চেষ্টা করবে, কিয়ামতের দিন মহান আল্লাহ তাকে পুরস্কৃত করবেন। আবুদ দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেছেন, যে লোক তার কোনো ভাইয়ের মানসম্মানের ওপর আঘাত প্রতিরোধ করে, কিয়ামত দিবসে আল্লাহ‌ তাআলা তার মুখমণ্ডল থেকে জাহান্নামের আগুন প্রতিরোধ করবেন। তিরমিজি, হাদিস : ১৯৩১)

আমাদের সবার উচিত পরনিন্দা থেকে বিরত থাকা, কেউ অন্যের পরনিন্দা করলে তা শোনা থেকেও বিরত থাকা।

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ