<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">কিছুদিন ধরেই মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা নিরসনে ইসরায়েল এবং হামাস নেতাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় কাতারের রাজধানী দোহায় আলোচনা চলছিল। এই আলোচনার মধ্যেই ইসরায়েল বারবার গাজায় হামলা করেছে। নির্বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করে যাচ্ছে। দফায় দফায় এমন হামলার কারণে যুদ্ধবিরতির সম্ভাবনা অনেকটাই ম্লান হয়ে এসেছে। সর্বশেষ গত মাসের শেষ দিকে ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ানের শপথগ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগ দিতে যাওয়া হামাসের শীর্ষ নেতা ইসমাইল হানিয়াকে তেহরানে তাঁর আবাসস্থলে গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে হত্যা করা হয়। তাঁর মৃত্যু পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তোলে। এ ঘটনার জন্য সরাসরি ইসরায়েলকে দায়ী করেছে ইরান। তাদের দেশের অভ্যন্তরে অনুপ্রবেশ করে এ ধরনের অপরাধ সংঘটনের জন্য ইসরায়েলের ভূখণ্ডে পাল্টা আঘাত হানার ঘোষণাও দিয়েছে ইরান। সঙ্গে হামাস এবং হিজবুল্লাহর পক্ষ থেকেও একই বার্তা দেওয়া হয়। সব মিলিয়ে ইসরায়েলে সম্মিলিত হামলার আশঙ্কা বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আবারও ইসরায়েলকে রক্ষায় এগিয়ে এলো।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ইসরায়েলের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনার প্রক্রিয়া চলমান থাকলে এবং বাস্তবে যদি এটি কার্যকর হয়, তাহলে এটিকে একটি অন্তর্বর্তী যুদ্ধবিরতি বলাই শ্রেয় হবে। এর মধ্য দিয়ে এই সমস্যার দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের সম্ভাবনা ক্ষীণ। এর সবচেয়ে বড় কারণ খোদ যুক্তরাষ্ট্র। একদিকে তারা যুদ্ধবিরতির কথা বলছে, অন্যদিকে ইসরায়েলের কাছে আবারও দুই হাজার কোটি ডলারের যুদ্ধবিমানসহ যুদ্ধসরঞ্জাম বিক্রির নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সাম্প্রতিক সময়ে গাজাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলের একের পর এক হামলা, এর মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন, শরণার্থী আইন, যুদ্ধ আইনসহ সমস্ত আইনের ব্যত্যয় এবং সর্বোপরি জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদ কর্তৃক যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে সর্বসম্মত প্রস্তাব পাসের পর থেকে ইসরায়েল কার্যত এক ধরনের আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে রয়েছে। এই চাপ কেবল ইসরায়েলের জন্য নয়, দেশটিকে সহায়তা করা সব রাষ্ট্রের জন্য, বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা বিশ্বের জন্য। সেই দিক থেকে স্বল্প পরিসরে হলেও একটি যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার মধ্য দিয়ে জাতিসংঘ প্রস্তাবের মান্যতা দেওয়াকেই গুরুত্বপূর্ণ করে দেখা হচ্ছে। সেই সঙ্গে ভবিষ্যতে আরো ব্যাপক পরিসরে হামলা পরিচালনার জন্য নিজেদের প্রস্তুতির দিকটিতেও মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে। সুতরাং ধরেই নেওয়া যায়, একটি যুদ্ধবিরতির দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ইসরায়েল এবং হামাস যোদ্ধারা।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="গাজা নিয়ে এমন দ্বিচারিতা কেন" height="375" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/08.July/17-08-2024/Untitled-1.jpg" style="float:left" width="500" />ওপরের আলোচনার সূত্র ধরে আমরা বলতে পারি যে একটি যুদ্ধবিরতি সব কিছুর অবসান করতে পারে না। যে বিষয়গুলো যুদ্ধবিরতির আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে, এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে গাজার ক্ষতিগ্রস্ত স্থাপনাগুলোর পুনঃসংস্কার এবং সব ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসন করা। এর মধ্য দিয়ে যেসব মানুষ তাদের আবাসস্থল হারিয়েছে, তারা তাদের নিজেদের আবাসে ফিরে এলেও তারা ভবিষ্যতে কত দিন আসলে তাদের নিজ নিজ জায়গায় নিরাপদে বসবাস করতে পারবে, সে কথা বলা কঠিন। আমাদের মনে রাখতে হবে যে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য হামাসকে নিধন করা। তাই এই মুহূর্তে যুদ্ধবিরতি এই লক্ষ্যে তাদের নিজেদের আরো শক্তিশালী করার একটি কৌশল ছাড়া আর কিছুই নয়। এর মধ্য দিয়ে এই ভেবে কেবল স্বস্তি পাওয়া যেতে পারে যে অন্তত কিছুদিনের জন্য গাজার মানুষ ইসরায়েলের হামলা থেকে মুক্ত থাকবে, তবে তা ঠিক কত দিন, এটি বলা সত্যি খুব দুরূহ। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এই মুহূর্তে ইসরায়েলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ চিন্তা হচ্ছে ইরানের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য হামলা এড়িয়ে চলা। সঙ্গে হামাস আর হিজবুল্লাহ তো রয়েছেই। এরই মধ্যে ইরান জানিয়েছে, একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতিই কেবল ইসরায়েলকে ইরানের হামলা থেকে রক্ষা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে দোহা ও মিসরের যে আলোচনা চলছে, সে ক্ষেত্রে হামাসের পক্ষ থেকে এর আগেই হিজবুল্লাহকে অবহিত করা হয়েছে। বলা চলে হিজবুল্লাহর সম্মতি নিয়েই হামাসের পক্ষ থেকে এই আলোচনা শুরু হয়েছে। এখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্থতার ভূমিকায় রয়েছে। বোঝা যাচ্ছে, ইরানের হুমকিকে এবার খুব গুরুত্বপূর্ণ করে দেখা হচ্ছে। ইরান এই যুদ্ধবিরতি আলোচনাকে কত দিন পর্যন্ত সময় দেবে, সেটি নিশ্চিত করা না হলেও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে মিত্রদের সহায়তা কামনা করা হচ্ছে ইরানকে নিবৃত্ত করার জন্য। অন্যদিকে ইরানকে এ ধরনের সংযম দেখানোর আহ্বানকে আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে জানিয়েছেন জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের রাষ্ট্রদূত। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ইরানের পক্ষ থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দেওয়া না হলেও ধারণা করা হচ্ছে, তারা তাদের সুবিধামতো যেকোনো সময় ইসরায়েলে হামলা চালাতে পারে। বিষয়টিকে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের সঙ্গেই দেখছে। আর সে জন্য ইসরায়েলে সম্ভাব্য হামলা প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দ্রুত রণতরি পাঠানোর পাশাপাশি নতুন করে সাবমেরিন পাঠানো হচ্ছে। এরই মধ্যে অস্টিন ইউএস জর্জিয়া নামের সাবমেরিনটিকে মধ্যপ্রাচ্যে যেতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এই সাবমেরিনটি মূলত ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র সজ্জিত সাবমেরিন। এ ছাড়া অস্টিনের পক্ষ থেকে যুদ্ধজাহাজ আব্রাহাম লিংকন এবং এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এ ধরনের তৎপরতাকে ইরান ও মধ্যপ্রাচ্যে অপরাপর সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর জন্য বার্তা হিসেবে দেখা হচ্ছে। কোনো কারণে যদি যুদ্ধবিরতি আলোচনা সফল না হয় কিংবা ইরানের পক্ষ থেকে ইসরায়েলে হামলা চালানো হয়, সে ক্ষেত্রে ইসরায়েলকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে প্রস্তুতির বড় অংশ এগুলো। সেই সঙ্গে নতুন করে ইসরায়েলের কাছে দুই হাজার কোটি ডলারের অস্ত্র বিক্রির সিদ্ধান্ত কার্যত ইরানের সম্ভাব্য হামলা মোকাবেলায় ইসরায়েলকে আরো সক্ষম করে তোলার প্রয়াস, সেই সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যের যুদ্ধ আরো ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা এবং একটি আঞ্চলিক যুদ্ধ মোকাবেলার ক্ষেত্রে ইসরায়েলের শক্তি বৃদ্ধির পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও প্রয়োজনে সহায়তার অংশ হিসেবে তাদের সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এদিকে যুদ্ধবিরতির আলোচনা নিয়ে হামাসের পক্ষ থেকেও ইসরায়েলকে চাপ সৃষ্টি করে জানানো হয়েছে যে আলোচনার নামে তারা সময়ক্ষেপণ করছে এবং যখন থেকে এই আলোচনা শুরু হয়েছে, তার পর থেকে ইসরায়েল গাজার অনেক স্থানে নতুন করে হামলা চালিয়ে কয়েক হাজার মানুষকে হত্যা করেছে। এই মুহূর্তে সব মিলিয়ে নিহতের সংখ্যা ৪০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। উপত্যকাটির ২৩ লাখ মানুষের প্রায় সবাই এখন ঘরছাড়া। মৃত এবং আহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি নারী ও শিশু। ইসরায়েলের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে এখনো সময়ক্ষেপণ করার প্রবণতা এবং হামাসের পক্ষ থেকে তাগিদ এবং ভবিষ্যতে যুদ্ধ আরো ভয়াবহ স্তরে ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কার মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখার প্রচেষ্টা হিসেবে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে এই যুদ্ধবিরতি আলোচনায় কাতার ও মিসরে পাঠানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। ব্লিনকেন জড়িত পক্ষগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে এটিকে দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য তাগিদ দিতে পারেন। </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">সব শেষে ইরানের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে যুদ্ধবিরতির বিনিময়ে ইসরায়েলে হামলার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে বলা হলেও ইরানের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান জানিয়েছেন, তাঁর শপথগ্রহণের দিন ইসমাইল হানিয়াকে ইরানের অভ্যন্তরে ঢুকে ইসরায়েল যেভাবে হত্যা করেছে, এর জবাব দেওয়ার অধিকার রয়েছে এবং যেভাবে ফ্রান্স, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্র হামলা না চালানোর জন্য ইরানের কাছে অনুরোধ করছে, সেখানে রাজনৈতিক যুক্তির অভাব রয়েছে এবং এসব আন্তর্জাতিক আইনের পরিপন্থী বলে গণ্য করছেন তিনি। যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকেও ধারণা করা হয়েছে যে ইরান, হামাস ও হিজবুল্লাহ সমন্বয়ে নতুন করে হামলা সংঘটিত হতে পারে। অন্যান্য পশ্চিমা দেশও উভয় পক্ষকে এই হামলা এড়াতে দ্রুত একটি কার্যকর যুদ্ধবিরতিতে আসতে অনুরোধ জানিয়েছে। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে পশ্চিমাদের এতটাই দায় রয়েছে যে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, যদি তারা আক্রান্ত হয়েই যায়, তাহলে পশ্চিমারাই তাদের হয়ে এগিয়ে আসবে। সে ক্ষেত্রে ইরান বা তার সমর্থিতদের বিরুদ্ধে যুদ্ধটা কেবল ইসরায়েলের একার সঙ্গে হবে না, বরং গোটা পশ্চিমা বিশ্বের এক ধরনের সম্পৃক্ততা থাকবে। আর এভাবেই বর্তমান নেতানিয়াহু সরকার জনপ্রিয়তার তলানিতে থাকা থেকে নিজেকে উদ্ধার করতে পারবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের তার হয়ে যুদ্ধ করে ইসরায়েলের পক্ষে বিজয় ছিনিয়ে আনার মধ্য দিয়ে। বর্তমানে দ্রুত একটি যুদ্ধবিরতি এবং এটিকে পুঁজি করে ইরানের সঙ্গে কার্যকর আলোচনা শুরুই মধ্যপ্রাচ্যের সম্ভাব্য অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়াকে রোধ করতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : অধ্যাপক, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় </span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif""><a href="mailto:mfulka@yahoo.com" style="color:blue; text-decoration:underline">mfulka@yahoo.com</a></span></span></span></span></p> <p> </p>