<p>রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে কর্মকর্তাকে ল্যান্ডফোনে প্রাণনাশের হুমকি ও গালাগাল করার অভিযোগ উঠেছে। বুধবার (২৩ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় সেদিন রাতে নগরের মতিহার থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন ওই কর্মকর্তা।</p> <p>ভুক্তভোগী ওই কর্মকর্তার নাম মো. রেজাউল করিম হাওলাদার (৫৮)। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার পদে কর্মরত আছেন।</p> <p>সাধারণ ডায়েরিতে রেজাউল করিম হাওলাদার উল্লেখ করেছেন, ‘গতকাল বুধবার দুপুর ১২টার দিকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের স্ত্রী নুসরাত পারভীন শান্তা ভাবি বিভাগের অফিসে আসেন। তিনি আমার হাতে স্যারের (অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ) ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসের একটি পত্র দিয়ে বলেন, ‘আপনার স্যার আপনাকে সভাপতির কাছ থেকে এটি রিসিভ করিয়ে দিতে বলেছেন।’ তখন আমি তাকে জানাই, ‘ভাবি, এটা তো সভাপতি স্যারকে লেখা পত্র। আর সভাপতি স্যার আজ ছুটিতে আছেন। আপনি আজকে রেখে যান। সভাপতি স্যার অফিসে এলে আমি তাকে দিয়ে রিসিভ করিয়ে পিয়নের মাধ্যমে রিসিভ কপি পাঠিয়ে দিব।’ এরপর ভাবি আমার কাছে জানতে চান, ‘বিভাগে টাকা-পয়সার ব্যাপারে কী হয়েছে। আপনাদের স্যার তো সব টাকা পরিশোধ করে দিয়েছেন।’ তখন আমি তাকে জানাই, বর্তমান সভাপতি অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন বকুল বলেছেন, সাবেক সভাপতি অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ এ যাবৎ পর্যন্ত ১০ লাখ, নাকি ২০ লাখ টাকা জমা দিয়েছেন, তা তো আমি জানি না। তাকে সব জমার তালিকাসহ রসিদের ফটোকপি সংযুক্ত করে সভাপতি বরাবর জমা প্রদান করতে বা পাঠাতে বলবেন। এরপর ভাবি ভারপ্রাপ্ত সভাপতি অধ্যাপক এ বি এম সাইফুল ইসলাম স্যার এর সঙ্গে আরো কিছুক্ষণ কথা বলে অফিস ত্যাগ করেন। তিনি অফিস ত্যাগ করার কিছুক্ষণ পরে দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে অফিসের ল্যান্ডফোনে কল এলে আমি নিজেই তা রিসিভ করি। ফোন রিসিভ করার পর ফোনের অপর প্রান্ত থেকে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ আমার কণ্ঠ শোনা মাত্রই আমাকে গালাগাল করে প্রাণনাশের হুমকি দেন।’</p> <p>তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, ‘অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তরের কয়েকদিন পর বিভাগের অফিস কক্ষে ঢুকে কয়েকজন সহকর্মীর সামনে আমাকে হুমকি প্রদানপূর্বক বলেন যে, ‘তোকে যদি জেলের ভাত খাওয়াতে না পারি, তবে আমার নাম মুসতাক না। তুই কী পেয়েছিস?’</p> <p>এ বিষয়ে রেজাউল করিম হাওলাদার বলেন, ‘অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বিভাগ থেকে যে টাকা-পয়সা নিয়েছেন, সেগুলো তিনি আমাকে সমন্বয় করতে বলেছিলেন। কিন্তু আমি তা করতে রাজি না হওয়ায় আমাকে গালাগাল ও প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছেন। আমি কিভাবে কাজলায় থাকি, তিনি দেখে নেওয়ার হুমকিও দিয়েছেন। আমি এখন কোনো আইনি প্রক্রিয়ায় যাব না। আমার জীবনের নিরাপত্তার জন্য সাধারণ ডায়েরি করে রেখেছি।’</p> <p>অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অধ্যাপক মুসতাক আহমেদ বলেন, ‘অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা, এ রকম কোনো ঘটনা ঘটেনি। আমার একাডেমিক অবস্থান ও সুনাম নষ্ট করার জন্য বিভাগের অভ্যন্তরীণ কিছু ব্যক্তি ষড়যন্ত্র করছে। আমি সভাপতির দায়িত্ব হস্তান্তরের তিন মাস পর পর্যন্ত কোনো অভিযোগ উপস্থাপিত হয়নি। কিন্তু ৫ আগস্টের পর অস্বাভাবিক পরিস্থিতিতে কিছু সুযোগসন্ধানী এ বিষয়গুলো করে যাচ্ছে।’</p> <p>মতিহার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল মালেক বলেন, ‘অভিযোগপত্রটি পেয়েছি। অভিযোগকারী ব্যক্তি পরবর্তীতে যেমন চাইবেন, সেভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’</p> <p>১ সেপ্টেম্বর অধ্যাপক মুসতাক আহমেদের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, ছাত্রলীগ নেতাকে ভুয়া প্রত্যয়নপত্র প্রদান, একাডেমিক পরিসরে দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগ তুলে অপসারণের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন বিভাগের স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। একসঙ্গে ওই শিক্ষকের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তিনি যেন বিভাগের কোনো ধরনের একাডেমিক কার্যক্রমে অংশ নিতে না পারেন, সেই মর্মে বিভাগের সভাপতি বরাবর আরেকটি অভিযোগ জমা দিয়েছিল। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরদিন বিভাগের একাডেমিক কমিটির সভায় অধ্যাপক মুসতাক আহমেদকে বিভাগের সব প্রকার একাডেমিক কার্যক্রম থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত না হওয়া পর্যন্ত এই অব্যাহতি বলবৎ থাকবে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ইতোমধ্যে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে বলে জানা গেছে।</p>