শিশুদের প্রথম সলিড হওয়া চাই সহজপাচ্য ও পুষ্টিকর। পুষ্টিবিদদের পরামর্শ মেনে শিশুদের প্রথম খাবারের পাঁচটি রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী জান্নাতুল ফারহানা।
আপেলের পিউরি
বিশেষজ্ঞদের মতে, বুকের দুধের পাশাপাশি সলিড শুরু করার জন্য সবচেয়ে ভালো অপশন হচ্ছে, যেকোনো ফল বা সবজির পিউরি। কারণ ফল বা সবজির পিউরি সহজপাচ্য।
১. আপেল ভালো করে ধুয়ে খোসা ছাড়িয়ে কিউব করে কেটে নিন।
২. এবার এক কাপ পানি দিয়ে আপেল একদম নরম করে সিদ্ধ করে নিন। ১৫ মিনিটেই সাধারণত সিদ্ধ হয়ে যায়।
৩. এবারে সিদ্ধ আপেল ব্লেন্ড করে অথবা হাতে একদম মিহি করে ম্যাশ করে বাচ্চাকে দিন।
৪. ঠিক একইভাবে গাজর, পেঁপে, আলু, মিষ্টিকুমড়ার পিউরি বানিয়ে নেওয়া যাবে।
৬ মাস বয়সী বাচ্চার খিচুড়ি
চাল ২ টেবিল চামচ
মুগডাল ১ চা চামচ
মসুর ডাল ১ চা চামচ (চাইলে শুধু এক রকম ডাল দেওয়া যাবে।)
তেল ২ টেবিল চামচ
হলুদ গুঁড়া সামান্য
পানি ৩ কাপ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. সব উপকরণ মেখে ৩ কাপ পানি দিয়ে অল্প আঁচে খিচুড়ি রান্না করতে হবে।
রান্না করার সময় পাতিলে ঢাকনা দিয়ে দেবেন।
২. চাল ও ডাল সিদ্ধ হয়ে গেলে ডালঘুটনি দিয়ে ভালো করে ঘেঁটে নামিয়ে নিন। এতে খিচুড়ি খুব ভালো মিহি হয়ে যাবে। এবং বাচ্চাকে খাওয়ানোর উপযোগী হয়ে যাবে।
নোট : ৬ মাস থেকে ১ বছরের বাচ্চার খাবারে লবণ ব্যবহার করা যাবে না।
৭ মাস বয়স থেকে বাচ্চাকে খিচুড়ির সঙ্গে পছন্দমতো সবজি যুক্ত করতে হবে।
দই ওটস
ওটস আয়রন এবং ফাইবারের এক দারুণ উত্স। শিশু সলিড শুরু করার ২-৩ সপ্তাহ পর থেকে ওটস খাওয়ানো শুরু করতে পারেন। দই খুবই ভালো প্রোবায়োটিক এবং শিশুর রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভূমিকা রাখে। বাচ্চার দুপুরের খাবার কিংবা নাশতায় দেওয়া যেতে পারে।
উপকরণ
ওটস ১ চা চামচ
পানি আধা কাপ
দই ৩ টেবিল চামচ (টক দই অথবা মিষ্টি দই)
গ্রেটেড আপেল কুচি (অপশনাল)।
শিশুর পাঁচ রকম সলিড খাবার
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ওটসের সঙ্গে আধা কাপ পানি মিশিয়ে রান্না করুন ১০ মিনিট। ওটস নরম হয়ে যাবে।
২. ওটস ঠাণ্ডা করে দই মশিয়ে নিন। এর সণ্ডে কিছুটা আপেল মিহি কুচি করে গ্রেট করে যোগ করুন।
৩. টক দই হলে মিষ্টি ফল যেমন কলা বা পাকা আমের পিউরি মিশিয়ে দিতে পারেন।
আলাদা কোনো লবণ বা চিনি যোগ করার প্রয়োজন নেই। সলিড শুরু করলে অনেক সময় শিশুদের কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। সে ক্ষেত্রে এই রেসিপি কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
খেজুর পায়েস
যেভাবে তৈরি করবেন
১. বিন্নি লাল চাল ১ কাপ পানি দিয়ে অল্প আঁচে ঢেকে রান্না করুন একদম সিদ্ধ হয়ে নরম না হওয়া পর্যন্ত।
২. প্রয়োজন হলে আরো পানি যোগ করুন। চাল ৭০ শতাংশ সিদ্ধ হয়ে গেলে খেজুরের বিচি ফেলে দিয়ে ছোট ছোট করে কেটে দিয়ে দিন। খেজুর সিদ্ধ হয়ে গেলে ২টি কাঠবাদাম গ্রেটার দিয়ে গ্রেট করে দিয়ে দিন (যদি বাচ্চার বাদামে এলার্জি থাকে, তাহলে এভোয়েড করবেন)।
৩. বাদাম দেওয়ার পর ২-৩ মিনিট ঢেকে রান্না করুন। যদি বেশি শুকিয়ে যায়, তাহলে অল্প পরিপাণ পানি দেওয়া যেতে পারে। সব ভালোমতো সিদ্ধ হয়ে গেলে নামানোর আগে ডালঘুটনি দিয়ে ভালো করে ঘুটে নরম করে নিন।
৪. এরপর আধা চা চামচ ঘি মিশিয়ে বাচ্চাকে পরিবেশন করুন। বিন্নি চাল সিদ্ধ হতে সময় নেয়। সে ক্ষেত্রে পানির পরিমাণ কম-বেশি হতে পারে।
উপকরণ
বিন্নি লাল চাল ১ চা চামচ
পানি ১ কাপ
কাঠবাদাম ২টি
খেজুর ৩টি
ঘি আধা চা চামচ।
অনেক সময় শিশুদের রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়। বিন্নি চাল, খেজুরে আয়রন থাকে। এ ছাড়া অন্যান্য পুষ্টিগুণ শিশুর জন্য উপকারী।
সেরেলাক
উপকরণ
ভাতের চাল ২ চা চামচ, পোলাও চাল ১ চা চামচ, মুসুর ডাল ১ চা চামচ, গম ১ চা চামচ, মাষকলাই ডাল আধা চা চামচ, ছোলার ডাল ১ চা চামচ, মুগডাল ১ চা চামচ, রাজমা ডাল আধা চা চামচ, কাজুবাদাম ২টি, কাঠবাদাম ২টি, ওয়ালনাট ১/২, এলাচ ১টি, কালিজিরা ১ চিমটি, ওটস ১ চা চামচ, তেল/ঘি ১ চা চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. সব চাল ও ডাল ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে শুকিয়ে নিতে হবে। একটা পাতলা কাপড়ে পানি ঝরানো চাল-ডাল ছড়িয়ে ফ্যানের নিচে শুকিয়ে নিতে হবে।
২. ওটস ছাড়া অন্য সক উপাদান শুকনা তাওয়ায় টেলে নিতে হবে। ঠাণ্ডা হলে ব্লেন্ডারে ওটসসহ সব উপকরণ ব্লেন্ড করে এয়ার টাইট জারে সংরক্ষণ করুন।
৩. রান্নার সময় প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে ১০ মিনিট রান্না করলেই সেরেলাক তৈরি হয়ে যাবে। রান্নার সময় তেজপাতা, সামান্য জিরা গুঁড়া দিতে পারেন (অপশনাল)। তেল ১ চা চামচ দিন। চাইলে এর সঙ্গে পছন্দমতো সবজি, মাছ, মাংস যোগ করতে পারবেন বাচ্চার বয়স এবং প্রয়োজনভেদে।
৪. ১ বছরের আগে বাচ্চার খাবারে কোনো লবণ দেওয়া যাবে না। তবে খাবারের স্বাদ বাড়ানোর জন্য নামানোর আগে সামান্য কিউব চিজ দেওয়া যেতে পারে।