মুসলমানের জীবনযাপনে শালীনতা

আলেমা হাবিবা আক্তার
আলেমা হাবিবা আক্তার
শেয়ার
মুসলমানের জীবনযাপনে শালীনতা

আরবিতে ‘হায়া’ অর্থ লজ্জা বা সংকোচ বোধ করা, ইতস্তত বোধ করা ইত্যাদি। সহজভাবে বলা যায়, লজ্জা হচ্ছে এক ধরনের মানবীয় অনুভূতি, যা মানুষকে মন্দ কাজে বাধা দেয় এবং জনসমক্ষে সম্মানহানির ভয় সৃষ্টি করে। ইবনুল কাইয়িম (রহ.) বলেন, ‘হায়া’ অর্থ শরম, বৃষ্টি, তরতাজা ইত্যাদি, যা ‘হায়াত’ শব্দমূল থেকে উৎপন্ন। এর অর্থ হলো ‘জীবন’।

আর ‘হায়াত’ বললে দুনিয়া ও আখিরাতের জীবনকে বোঝানো হয়। অতএব, যার হায়া অর্থাৎ লজ্জা নেই, সে দুনিয়ায় মৃত এবং আখিরাতে হতভাগ্য।...অতএব যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতা করার সময় তাঁকে লজ্জা করে, আখিরাতে সাক্ষাৎকালে আল্লাহ তাকে শাস্তিদানে লজ্জা বোধ করবেন। আর যে ব্যক্তি আল্লাহর অবাধ্যতায় লজ্জা বোধ করে না, আল্লাহ তাকে শাস্তিদানে লজ্জা বোধ করবেন না।

(ইবনুল কাইয়িম, আল-জাওয়াবুল কাফি লিমান সাআলা আনিদ দাওয়াইশ শাফি, পৃষ্ঠা-৬৯)

আরো পড়ুন
আজ থেকে ব্যাংক লেনদেন ১০-৪টা

আজ থেকে ব্যাংক লেনদেন ১০-৪টা

 

 

ইসলামে লজ্জা ও শালীনতার গুরুত্ব

ইসলামের দৃষ্টিতে লজ্জা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি গুণ। যেমন—

১. লজ্জা ঈমানের অংশ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘লজ্জা ঈমানের অঙ্গ।’ (মুসলিম, হাদিস : ৫১)

২. আল্লাহর গুণ : লজ্জা মহান আল্লাহর গুণ। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীল, লজ্জাশীল।

তিনি লজ্জা ও শালীনতা পছন্দ করেন। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৪০৬)

৩. নবী-রাসুলদের গুণ : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, মুসা (আ.) ছিলেন অত্যন্ত লজ্জাশীল একজন ব্যক্তি। অধিক লজ্জার কারণে তাঁর শরীরের সামান্য ত্বকও দেখা যায়নি। (বুখারি, হাদিস : ৩৪০৪)

৪. লজ্জা কল্যাণের বাহক : মহানবী (সা.) বলেছেন, লজ্জা-শালীনতার পুরোটাই কল্যাণ। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৬)

৫. লজ্জা জান্নাত লাভের মাধ্যম : লজ্জা ঈমানের অঙ্গ, আর ঈমানদারদের স্থান জান্নাত।

অন্যদিকে নির্লজ্জতা দুশ্চরিত্রের অঙ্গ, আর দুশ্চরিত্রের স্থান জাহান্নাম। (তিরমিজি, হাদিস : ২০০৯)

৬. লজ্জা ইসলামের চরিত্র : রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, প্রতিটি ধর্মের একটা চরিত্র আছে, আর ইসলামের মূল চরিত্র হলো লজ্জাশীলতা।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস : ৪১৮১)

আরো পড়ুন
মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ

 

জীবনযাপনে লজ্জার প্রয়োগ
১. স্বভাবজাত লজ্জা রক্ষা : আল্লাহ সৃষ্টিগতভাবে মানুষের মধ্যে লজ্জা ও শালীনতার বোধ রেখেছেন। মুমিনের উচিত তা রক্ষা করা। এ জন্য নবীজি (সা.) কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতেন না, তিনি খোলা স্থানে গোসল করতেন না। পাপকাজে সংকোচ বোধ করা স্বভাবজাত লজ্জার একটি দিক। তাকে গুরুত্ব দেওয়া।
২. একান্ত ব্যক্তিগত জীবনে শালীনতা : একান্ত ব্যক্তিগত জীবনেও মুমিন লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করবে। যেমন—আয়েশা (রা.) বলেছেন, আমি ও রাসুলুল্লাহ (সা.) কখনো পরস্পরের লজ্জাস্থান দেখিনি।

৩. কথা ও কাজে শালীনতা রক্ষা করা : মুমিন তার কথা ও কাজে লজ্জা ও শালীনতা রক্ষা করে চলবে। কেননা লজ্জা ও শালীনতা না থাকলে ব্যক্তি যেকোনো অন্যায় কাজও করে ফেলতে পারে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তুমি নির্লজ্জ হয়ে পড়বে, তখন যা ইচ্ছা তা-ই করো।
(বুখারি, হাদিস : ৬১২০)

আরো পড়ুন
যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচারের অভিযোগ

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টে ফ্ল্যাট নিয়ে টিউলিপের মিথ্যাচারের অভিযোগ

 

৪. পোশাক-আশাকে শালীনতা রক্ষা করা : নারী ও পুরুষ উভয়ের জন্য শালীন পোশাক পরা আবশ্যক। কেননা আল্লাহ পোশাককে লজ্জা নিবারণের মাধ্যম বানিয়েছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে বনি আদম! তোমাদের লজ্জাস্থান ঢাকার জন্য ও বেশভূষার জন্য আমি তোমাদের পোশাক দিয়েছি। আর তাকওয়ার পোশাক, এটাই সর্বোৎকৃষ্ট।’
(সুরা : আরাফ, আয়াত : ২৬)

৫. সমাজ থেকে অশ্লীলতা দূর করা : সামাজিক জীবন থেকে অশ্লীলতা দূর করা না গেলে শালীন জীবন যাপন করা সম্ভব নয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘যারা মুমিনদের মধ্যে অশ্লীলতা ছড়িয়ে দিতে ভালোবাসে, তাদের জন্য দুনিয়া ও আখিরাতে রয়েছে মর্মন্তুদ শাস্তি। (সুরা : নুর, আয়াত : ১৯)

আল্লাহ সবাইকে সুমতি দান করুন। আমিন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ঘুম থেকে উঠে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
ঘুম থেকে উঠে মহানবী (সা.) যে দোয়া পড়তেন

মুমিনের সব কাজ ইবাদতের অংশ। তাই ঘুম ও সজাগ সর্বাবস্থায় মহান আল্লাহর স্মরণ জরুরি। ঘুমানোর সময় ও ঘুম থেকে উঠার পর কী দোয়া পড়তে হবে রাসুল (সা.) তা শিখিয়েছেন।

হুজাইফা বিন আল ইয়ামান (রা.) বলেছেন, নবী করিম (সা.) যখন বিছানায় ঘুমাতে যেতেন তখন তিনি বলতেন, 

«باسْمِكَ اللَّهُمَّ أمُوتُ وأَحْيَا» 

উচ্চারণ : বিসমিকা আল্লাহুম্মা আমুতু ওয়া আহইয়া।

অর্থ : ‘হে আল্লাহ, তোমার নামেই আমি মারা যাব এবং জীবিত হব। ’

এবং যখন তিনি ঘুম থেকে জাগ্রত হতেন তখন তিনি পড়তেন, 

 «الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِيْ أَحْيَانَا بَعْدَ مَا أَمَاتَنَا، وَإِلَيْهِ النُّشُوْرُ»

উচ্চারণ : ‘আলহামদু লিল্লাহিল্লাজি আহইয়ানা বাদা মা আমাতানা ওয়া ইলাইহিন নুশুর। ’ 
‘সব প্রশংসা আল্লাহর জন্য যিনি (ঘুমের মতো) মৃত্যুর পর আমাদেরকে জীবিত করলেন, আর তাঁরই কাছে আমাদের সবার পুনরুত্থান। ’ (বুখারি, হাদিস নম্বর : ৬৩২৪)
 

মন্তব্য

কিয়ামতের দিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি হবে

উম্মে আহমাদ ফারজানা
উম্মে আহমাদ ফারজানা
শেয়ার
কিয়ামতের দিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি হবে

ইসলামে উত্তম চরিত্রের বিশেষ গুরুত্ব ও ফজিলত রয়েছে। মুমিনদের জন্য বিভিন্ন গুণে চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করা ঈমানের দাবি। কেননা উত্তম চরিত্র ছাড়া একজন মুমিনের ঈমান পরিপূর্ণ হতে পারে না। ঈমানের পরিপূর্ণতার জন্য উত্তম চরিত্র অর্জন করা অপরিহার্য।

এ সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ওই মুমিন ঈমানে পরিপূর্ণ, যার চরিত্র সর্বোত্তম। (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৪৬৮২)

আমাদের সমাজে মানুষের সর্বোত্তম হওয়ার বিভিন্ন মাপকাঠি আছে। বিভিন্নজনের কাছে ভিন্ন মাপকাঠিতে ভিন্ন ধরনের মানুষ সর্বোত্তম। কিন্তু ইসলামের দৃষ্টিতে সর্বোত্তম হওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ মাপকাঠি হচ্ছে উত্তম চরিত্র।

এ ব্যাপারে আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) বলেন, নবী (সা.) অশ্লীলভাষী ও অসদাচরণের অধিকারী ছিলেন না। তিনি বলতেন, তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তিই সর্বোত্তম, যার চরিত্র সর্বোত্তম। (বুখারি, হাদিস : ৩৫৫৯)

রাসুল (সা.) ছিলেন সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী। তিনি কখনো কারো সঙ্গে খারাপ আচরণ করেননি।

চরিত্রবান মানুষকে তিনি ভালোবাসতেন। তাই রাসুল (সা.)-এর প্রিয় মানুষদের কাতারে শামিল হতে চাইলে উত্তম চরিত্রের অধিকারী হওয়া আবশ্যক। উত্তম চরিত্রের সর্বোত্তম নমুনা ছিলেন রাসুল (সা.)। আবদুল্লাহ ইবনে আমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) জন্মগতভাবে বা ইচ্ছাপূর্বক অশ্লীলভাষী ছিলেন না। তিনি বলেছেন, তোমাদের মধ্যে ওই ব্যক্তি আমার কাছে সবচেয়ে প্রিয়, যে সর্বোত্তম চরিত্রের অধিকারী।
(বুখারি, হাদিস : ৩৭৫৯)

উত্তম চরিত্রের সওয়াব এত বেশি, যা আমরা কল্পনাও করতে পারি না। কিয়ামতের দিন মানুষের সওয়াব ও গুনাহ পরিমাপের জন্য দাঁড়িপাল্লায় ওজন করা হবে। সেদিন যে আমলের ওজন সবচেয়ে বেশি ভারী হবে তা হলো উত্তম চরিত্র। এ সম্পর্কে আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, কিয়ামতের দিন মুমিনের দাঁড়িপাল্লায় উত্তম চরিত্রের চেয়ে বেশি ওজনের আর কোনো জিনিস হবে না। কেননা আল্লাহ অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন। (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২০০২)

উত্তম চরিত্রের সওয়াব ওজনে সবচেয়ে বেশি ভারী হওয়ার রহস্য আরেকটি হাদিস থেকে জানা যায়। এক ব্যক্তি সারা দিন সাওম পালন করে এবং সারা রাত নফল সালাত পড়ে যেরূপ সওয়াব পায়, মহান আল্লাহ উত্তম চরিত্রের বদৌলতে সেরূপ সওয়াব দান করেন। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, নিশ্চয়ই মুমিন ব্যক্তি তার ভালো চরিত্রের মাধ্যমে (দিনে) সাওম পালনকারী ও (রাতে) নামাজ আদায়কারীর মর্যাদা লাভ করতে পারে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৭৯৮)

জান্নাতে মানুষের আমল অনুযায়ী সম্মানজনক জায়গায় অধিষ্ঠিত করা হবে। যার আমল যত ভালো হবে, সে তত বেশি সম্মানিত হবে। রাসুল (সা.) নিজে উত্তম চরিত্রবানদের জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে ঘর বরাদ্দের জিম্মাদারি নিয়েছেন। এ বিষয়ে আবু উমামা (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার। আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না, আমি তার জন্য জান্নাতের মাঝখানে একটি ঘরের জিম্মাদার এবং যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে, আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

মন্তব্য

আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ১৩ এপ্রিল ২০২৫

আজ রবিবার ১৩ এপ্রিল ২০২৫, ৩০ চৈত্র ১৪৩১, ১৩ শাওয়াল ১৪৪৬

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহর সময় শুরু- ১২টা ৩ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ৩০ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ২৩ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ৩৯ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ২৩ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ১৯ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৫টা ৪০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?

প্রশ্ন : মৃত ব্যক্তির আকিকা দেওয়া জায়েজ আছে কি?

-আতিক, মিরপুর

উত্তর : আকিকা জীবিত ব্যক্তির জন্য মুস্তাহাব। মৃত ব্যক্তির আকিকা করা মুস্তাহাবের অন্তর্ভুক্ত নয়, তাই তাতে আকিকার সওয়াব পাওয়া যাবে না। (রদ্দুল মুহতার : ৬/৩৩৬, ফয়জুল বারি : ৪/৩৩৭)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ, বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ