মায়ের কবরের পাশে শপথ করলাম, আজ থেকে আমি জয় বাংলা বলব : কাদের সিদ্দিকী

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
টাঙ্গাইল প্রতিনিধি
শেয়ার
মায়ের কবরের পাশে শপথ করলাম, আজ থেকে আমি জয় বাংলা বলব : কাদের সিদ্দিকী

কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, ‘গত ২৫ বছর একবারের জন্যও জয় বাংলা বলিনি। আজ আমার মায়ের কবরের পাশ থেকে শপথ করে গেলাম, আজ থেকে আমি জয় বাংলা বলব। জয় বাংলা হবে আমাদের সবার।’

শুক্রবার (৪ এপ্রিল) সন্ধ্যায় টাঙ্গাইলের কালিহাতী উপজেলার ছাতিহাটি গ্রামে মায়ের ২১তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত মিলাদ মাহফিলে বক্তব্য দেওয়ার সময় কাদের সিদ্দিকী এ কথা বলেন।

এ সময় তিনি গত ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে জয় বাংলা স্লোগান দেওয়ায় কয়েকজনকে গ্রেপ্তারের নিন্দা জানান। 

তিনি বলেন, ‘জয় বাংলা কোনো দল, ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর স্লোগান নয়; এটা স্বাধীনতার স্লোগান। যত দিন বাংলাদেশে থাকবে, তত দিন জয় বাংলা থাকবে।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘গত ২৫ বছর একবারের জন্যও জয় বাংলা বলিনি।

আজ আমার মায়ের কবরের পাশ থেকে শপথ করে গেলাম, আজ থেকে আমি জয় বাংলা বলব। জয় বাংলা হবে আমাদের সবার।’

কাদের সিদ্দিকী বলেন, ‘আজকে যে নেতারা একটা বিপ্লব ঘটিয়েছেন, তাঁদের আমি সাধুবাদ জানাই। তাঁরা যদি ঠিকভাবে চলতে পারতেন, তাহলে বহু বছর তাঁদের মানুষ স্মরণ রাখত।

তাঁরা স্বাধীনতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেলেছেন। তাঁরা বঙ্গবন্ধু, জিয়াউর রহমানসহ তাঁরা আমাদের কাউকে মানেন না। এটা ভালো নয়। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আল্লাহ আমাদের জয় দিয়েছিলেন। বাংলাদেশ স্বাধীন না হলে এই যে দালানকোঠা, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট—এসব কিছুই হতো না।
৫ আগস্ট হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে। কেউ কেউ মনে করে, স্বাধীনতার পতন হয়েছে। না, কোনোমতেই না।’

এ সময় বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর বড় ভাই সাবেক মন্ত্রী আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, কাদের সিদ্দিকীর সহধর্মিণী নাসরিন সিদ্দিকী, ছেলে দ্বীপ সিদ্দিকী, মেয়ে কুঁড়ি সিদ্দিকী, কুঁশি সিদ্দিকীসহ কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের স্থানীয় নেতা–কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন, একমত নয় বিএনপি

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন, একমত নয় বিএনপি

আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার যে তাগিদ দিয়েছেন, তার সঙ্গে একমত নয় বিএনপি। তারা ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন চায়। বিএনপি এর বাইরে অন্য কোনো সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিরুদ্ধে বলে জানিয়েছেন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমদ।

শনিবার (১২ এপ্রিল) বিকেলে প্রধান উপদেষ্টা ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের সহসভাপতি অধ্যাপক আলী রীয়াজ ও সদস্য বদিউল আলম মজুমদার বৈঠক করেন।

সেখানে প্রধান উপদেষ্টা এ তাগিদ দেন বলে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং গণমাধ্যমকে জানিয়েছে। এরপর রাতে বিএনপির বিভিন্ন সংস্কার প্রস্তাব তৈরির সঙ্গে যুক্ত সালাহ উদ্দিন আহমদ এ প্রতিক্রিয়া জানান।

এর আগে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টা জাতীয় ঐকমত্য কমিশনকে সংস্কার কার্যক্রম দ্রুত এগিয়ে নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছিল প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং। তখন সালাহ উদ্দিন আহমদ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘যদি তিনি (প্রধান উপদেষ্টা) এ কথা বলে (ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্য) থাকেন, তাহলে সেটাকে আমরা পজিটিভলি দেখছি।

তবে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আমরা মনে করি, উনি ডিসেম্বরে নির্বাচনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবেন, নির্দেশনা দেবেন এবং যথাযথ প্রক্রিয়ায় জাতির সামনে সে ঘোষণা দেবেন।’

পরে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে বক্তব্য সংশোধন করে জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তাগিদ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ বিষয়ে পরে সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানে প্রধান উপদেষ্টার তাগিদের বিষয়ে আমরা একমত নই। আমরা এ বছরের ডিসেম্বরের আগে নির্বাচন দাবি করি।

আশা করি, তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাপারে নির্দেশনা দেবেন।’

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা আমাদের কাছে পূর্বে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে ডিসেম্বরে নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে তিনি সব কার্যক্রম চালাচ্ছেন। আমরা সেটা জাতির কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে জানানোর অনুরোধ করেছিলাম, যাতে জাতি আশ্বস্ত হয়, গণতন্ত্রবিরোধী শক্তি যাতে কোনো ষড়যন্ত্রের সুযোগ না পায়। কিন্তু তিনি অন্য একটি ফোরামে গিয়ে নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে করার কথা বলেন। আমরা এর প্রতিক্রিয়া জানিয়েছি।

উনি এখনো সে কথা বললে আমরা তাঁর সঙ্গে একমত নই।’

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যদি ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে থাকেন, তাহলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে তাঁদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, তাঁরা কোনো কর্মসূচি দেবেন কি না।

সালাহ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘আগামী ১৬ এপ্রিল আমরা প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বসব। আমরা জানতে চাইব, আসলে উনি কী চাইছেন।’

মন্তব্য

‘জাতীয় সনদ’ ছাড়া রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়বে : স্বপন

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
‘জাতীয় সনদ’ ছাড়া রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়বে : স্বপন
সংগৃহীত ছবি

জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেছেন, জনগণের অংশগ্রহণে গণ-অভ্যুত্থানের পর জনগণের বিজয় ধরে রাখতে না পারলে এবং তাদের অভিপ্রায় ভিত্তিক প্রজাতন্ত্র নির্মাণে ‘জাতীয় সনদ’ গৃহীত না হলে, রাজনৈতিক নৈরাজ্য ও রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়বে।

শনিবার (১২ এপ্রিল) ময়মনসিংহ জেলা আইনজীবী সমিতিতে অনুষ্ঠিত সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সংসদের উচ্চকক্ষ, প্রদেশ, স্বশাসিত স্থানীয় সরকার ও জাতীয় সনদ প্রণয়নের দাবিতে ময়মনসিংহ বিভাগীয় প্রতিনিধি সভা করে জেএসডি।

শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন বলেন, পুরোনো রাজনৈতিক ব্যবস্থা দিয়ে স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে উচ্ছেদ করা সম্ভব হবে না।

আন্দোলন-সংগ্রামে এবং রাষ্ট্রীয় রাজনীতির সংস্কারের স্বপক্ষে জনগণের মধ্যে ঐক্য স্থাপিত হয়েছে। এই বাস্তবতা রাজনৈতিক দলগুলোকে উপলব্ধি করতে হবে। 

তিনি আরো বলেন, শ্রমজীবী-কর্মজীবী-পেশাজীবীদের ক্ষমতার অংশীদারিত্ব না দিলে, যেকোনো মুহূর্তে চরম সংকট ডেকে আনতে পারে। তা বিবেচনায় নিয়েই নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রবর্তন করতে হবে।

সভায় দলের সিনিয়র সহসভাপতি তানিয়া রব বলেন, ব্যাপক কাঠামোগত সংস্কার এবং রাজনৈতিক-সংস্কৃতি সংস্কার ছাড়া আওয়ামী দুঃশাসনের চরম প্রতিক্রিয়াশীল ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার সম্ভাবনা থেকে জনগণ নিরাপদ হতে পারবে না। স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা অক্ষত রেখে কোনো ধরনের আপস জনগণ মেনে নেবে না।

আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন ময়মনসিংহ জেলা জেএসডির সভাপতি অ্যাডভোকেট মিয়া হোসেন।

এ ছাড়া সভায় আরো বক্তব্য দেন- সহসভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ সিরাজ মিয়া, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মতিউর রহমান মতি, সাংগঠনিক সম্পাদক মোহাম্মদ আমির উদ্দিন, ফারজানা দিবা, সাইফুল ইসলাম ফকির, অ্যাডভোকেট তাজ উদ্দিন সবুজ, গোলাম ফারুক বুলবুল, তানজিদুর রহমান পিয়াস, ডা. শামসুদ্দিন, ছাত্রনেতা সোহেল রানা প্রমুখ।

মন্তব্য

নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি হয়ে পড়তে পারে

শেয়ার
নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি হয়ে পড়তে পারে
ফাইল ছবি

শামসুজ্জামান দুদু, আশির দশকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের রাজনীতি দিয়ে যাত্রা শুরু, এরপর কৃষক দলের সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপির কৃষিবিষয়ক সম্পাদক হয়েছিলেন। সেখান থেকে হন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা। এখন তিনি দলটির ভাইস চেয়ারম্যান। পরিচ্ছন্ন রাজনীতিক হিসেবে পরিচিত দুদু দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন।

বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি, নিজ দল-দলের বাইরে বিভিন্ন আলোচনা-সমালোচনা ও আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন কালের কণ্ঠের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কালের কণ্ঠের নিজস্ব প্রতিবেদক শিহাবুল ইসলাম

কালের কণ্ঠ : প্রায় ৭ মাস দেশে নতুন সরকার, সামগ্রিক অবস্থা কেমন দেখছেন?

ইদানীং বাজারে কিছু পণ্যের দাম কমেছে। এই না যে সব পণ্যের দাম কমছে।

অর্থাৎ কিছু সম্ভাবনা দেখা দিলেও কিছু কিছু দ্রব্যের দাম আগের মতোই। এই রোজার মধ্যে ভোজ্য তেলে অনিশ্চয়তা ছিল। কিছু পণ্যের দাম কমেছে, কিছু পণ্যের দাম বেড়েছে। কিছু সবজির দামও কমেছে।
শিক্ষা ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। শিক্ষাঙ্গনে এখনো সবাই স্বাভাবিকভাবে ফিরতে পারেনি। আগে ছাত্রলীগের নামে হলগুলোতে দখলবাজি ছিল। এখন অন্যরা দখলবাজি করছে। যারা করছে তারা আবার সততার ধ্বজাধারী।
শিল্প ক্ষেত্রে দেখবেন ঈদে সব শ্রমিককে সেভাবে বেতন দেওয়া সম্ভব হয়নি। ঈদ উপলক্ষে ত্বরিত ব্যবস্থায় তাদের বেতন-ভাতা দিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত ছিল। এই সরকারের নিয়ন্ত্রণে সব কিছু নেই। শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি, শিক্ষা বাদেও গণতন্ত্র সংকটে আছে। হাসিনা কেড়ে নিয়েছে ভোটাধিকার, এখন সেই অবস্থায়ই আছে। সামগ্রিক সংকটের মধ্যে দেশ নিমজ্জিত।

কালের কণ্ঠ : আপনারা দ্রুত নির্বাচন চাচ্ছেন। বর্তমান সরকার দেশ পরিচালনায় তো ভালো করছে।

বাড়ির কর্তা যেভাবে সংসার নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বাড়ির দারোয়ান সেটা করতে পারবে না। কখনো কখনো বাড়ির কর্তাকে দারোয়ানের ওপর নির্ভর করতে হয়, যখন সে বাইরে যায়। যা অল্প সময়ের জন্য। কিন্তু উপযুক্ত হচ্ছে কর্তা। এটি মনে রাখতে হবে। তারা (সরকার) রাজনীতিবিদ না, রাজনৈতিক সংগঠকও না। এই কাজটি রাজনীতিবিদদের। রাজনীতিবিদদের আসার ব্যাপারে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। 

কালের কণ্ঠ : দেশ পরিচালনায় অভিজ্ঞতা আছে বিএনপি ও আওয়ামী লীগের। এখন আওয়ামী লীগ মাঠে নেই। তাহলে যদি নির্বাচন দ্রুত হয় তাহলে, আপনারা কি কিছুটা সুবিধা পাবেন না?

রাষ্ট্র পরিচালনা করে দৃশ্য একটি রাজনৈতিক দল, কিন্তু অদৃশ্যত জনগণ। নির্বাচিত হয়ে আসার পাঁচ বছর পরে, ওই জনগণের কাছে তাদের ফিরে যেতে হয়। অতীতে বিএনপি ক্ষমতায় এসেছে, জনগণ কর্তৃক রাষ্ট্র পরিচালনা করেছে। এখন যে সরকার আছে সেটি তো জনগণের সরকার নয়। এখন আওয়ামী লীগ তার বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়েছে। তার কৃতকর্মের জন্য ধ্বংস হয়ে গেছে। বিএনপির সঙ্গে যখন জামায়াতে ইসলামী থাকে, তখন তারা ১৮-১৯টি আসন পায়। আর তারা (জামায়াত) বিএনপি ছাড়া নির্বাচন করলে পায় ২-৩টি। এর বাইরে কিছু দলের একটা দুইটা আসল পাওয়ার নজির আছে। তাহলে বিএনপির সঙ্গে রাজনৈতিক ক্ষমতা, দেশ পরিচালনা করা, এগুলোর সম্পর্ক আছে। তাই বিএনপিকে কেউ যদি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে, সেটা ভুল হবে।

কালের কণ্ঠ : এনসিপি ও জামায়াত চাচ্ছে সংস্কারের পরে নির্বাচন। তাদের চাওয়াটা আপনি কিভাবে দেখছেন?

নির্বাচন সম্পর্কে কেউ যদি আস্থাশীল হয়, তাহলে সে যেকোনো সময় নির্বাচনকে স্বাগত জানাবে। আর আস্থাশীল না হয় তাহলে, একটি ভিন্ন পথ খোঁজার চেষ্টা করবে। কিভাবে অন্যভাবে ক্ষমতার ওই জায়গায় পৌঁছানো যায়। সে তো জানে নির্বাচন হলে, তিনটা সিট পাবে। আর না হলে হয়তো একটাও পাবে না। আর যারা নতুন তারাও যদি নির্বাচন না চায় তাহলে তাদেরও ওই দলভুক্ত করা যায়। মানে তারা নির্বাচনের ওপর আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে পারছে না। এখন জনগণের ডিমান্ড নির্বাচন ও গণতন্ত্র। আমরা যদি সঠিক সময়ে সঠিক কাজটা না করে ফেলে পারি, তাহলে সংকট ঘনীভূত হবে। এই জায়গাটিতে যদি শূন্যতা রাখি, তাহলে মানুষ একসময় ক্ষুব্ধ হবে।

কালের কণ্ঠ : এনসিপি গণপরিষদ নির্বাচন চাচ্ছে, আর বিএনপি নির্বাচিত সংসদে সংবিধান সংশোধন চাচ্ছে। নতুন গঠিত দলসহ অন্যান্যদের সঙ্গে আপনাদের চাওয়ার পার্থক্য হয়ে যাচ্ছে না?

না, এখানে পার্থক্য নাই। আমি রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মাস্টার্স কমপ্লিট করেছি। ছাত্রদের পড়াতেও পারতাম, কিন্তু আমার মনে হয়েছে যে, রাজনীতি করাটা আমার জন্য ঠিক। এ জন্য রাজনীতিতে এসেছি। আমার বুঝে আসে না সেকেন্ড রিপাবলিক কেন লাগবে। আমাদের স্বাধীন এবং সার্বভৌম দেশ। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশে গণপরিষদ নির্বাচন লাগবে কেন। 

কালের কণ্ঠ : তারা তো বর্তমান সংবিধান বাদ দিয়ে নতুন সংবিধান চায়।

সংবিধান বাদ দেয়া যায় না, সংবিধান সংস্কার করা যায়। এমনকি নতুন সংবিধান করতে হলে সংসদে যেতে হবে। পার্লামেন্টে যেতে হলে পার্লামেন্ট বানাতে হবে। আর এটা বানাতে হলে নির্বাচনের দরকার। তো ইলেকশনে না গিয়ে আমি এসব সংবিধানে হাত দেব? আমাদের দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বিবেচনায় এটা এক ধরনের পাগলামি। জিয়াউর রহমান স্বাধীনতার ঘোষণা করেছে, যুদ্ধ করেছে। একটি ক্ষুদ্র অংশ পাকিস্তানের পক্ষে মুক্তিযোদ্ধাদের হত্যা করেছে। তাদের কাছে ৭১ মানে স্বাধীনতা মনে হয় না। তারা স্বাধীনতার বিপক্ষে। তারা এ জন্যই ২৪ কে দ্বিতীয় স্বাধীনতা মনে করে। সে কারণেই সেকেন্ড রিপাবলিক, সে কারণেই গণপরিষদ চায়। যারা স্বাধীনতাকে মানতে না পারবে, তাদেরই আরেকটি স্বাধীনতার কথা তাদের বলতে হয়, হবে। 

কালের কণ্ঠ :  ছাত্র আন্দোলনকারীদের দুজন এখন সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে আছেন, অন্যদিকে ছাত্ররা নতুন দল গঠন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আপনি কি মনে করেন আগামী নির্বাচন নিরপেক্ষ হবে?

গত সাত আট বছরে মানুষের মধ্যে যে ধারণা সৃষ্টি হয়েছে, সেই প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা সম্ভব কিনা? কারণ এই বর্তমান সরকার প্রধান শিক্ষার্থীদের দল গঠনে উৎসাহিত করেছে প্রকাশ্যে। সরকারে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিদের রেখেছে। যে সরকার আলাদা একটি দল গঠনে ও ঐ প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকে, তাদের প্রতিনিধি সরকারে থাকে, সে স্বাভাবিক কারণে ওই সরকারে ক্ষমতায় আসুক, সেই প্রক্রিয়া, সেই ইঞ্জিনিয়ারিং, সেই ব্যবস্থাপনা করবে না এটা বিশ্বাসযোগ্য না। সরকার প্রধান হিসেবে বড় উদাহরণ গত সাত মাস ধরে তিনি বলে আসছেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন হবে। হঠাত্ করে কয়দিন আগে তিনি বলেছেন, নির্বাচন জুনে হবে। হয়তো আবার কোনো এক মাসে আমরা শুনব জুনের সম্ভব হচ্ছে না, পরবর্তী বছরের (২০২৬) জুনে হয়তো সম্ভব হবে। তাই আমার মনে হয়, তিনি প্রমাণ করছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার জরুরি হয়ে পড়তে পারে। যেটা সরকারের কার্যক্রমে ওপর নির্ভর করছে।

কালের কণ্ঠ : তাহলে কি আপনারা সন্দেহ করছেন নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না?

সরকার গঠনে দুই উপদেষ্টা ও তাদের সহযোগীরা যে কাজগুলো করছে তাতে সন্দেহ না, বাস্তবতায় মনে হচ্ছে ওই দিকেই সরকার যাচ্ছে।

কালের কণ্ঠ : এনসিপিসহ আরো কিছু দল আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ চায়। গত ১৫-১৬ বছরে আওয়ামী লীগের মাধ্যমে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন বলে আপনারা দাবি করেন। তাহলে তাদের সঙ্গে আপনারা কেনো একমত হতে পারছেন না?

এগুলো রাজনৈতিক স্ট্যান্ডবাজি, যা বাদ দিতে হবে। আমরা ইলেকশন চাইলে, ইলেকশন দেয় না সরকার। অন্যদিকে আমরা কেনো সরাসরি আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধ চাচ্ছি না সেটা আবার বলে তারা। এগুলো ফাইজলামি। এসব বাদ দিতে হবে। আগে সরকারকে (আওয়ামী লীগকে) বাতিল করতে হবে। প্রেস নোট দিতে হবে। কিন্তু সরকার প্রধান বলছে, আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার পরিস্থিতি দেশে নেই। এনসিপি তো কিছু বলে না। না বলার আগে আমাদের প্রশ্ন আসছে কেনো। আমরা চাই, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক। যারা নির্বাচিত হয়ে আসার সমার্থ রাখে না, কিন্তু এমপি হওয়ার ইচ্ছা জাগে, তারাই নির্বাচন নিয়ে সময়ক্ষেপণ করতে চায়। বাহানা করতে চায়। সে জন্য বলি আগে কারা কী চায় সেটা ঠিক করুক। আর একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যবস্থা করতে হবে। তাহলে বোঝা যাবে কত ধানে কত চাল।

কালের কণ্ঠ : অনেক ক্ষেত্রে বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে, দল থেকেও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে, তার পরও কেনো নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না?

যারা চাঁদাবাজি করে তারা বিএনপি করে না। ছাত্রদল করে না। স্বেচ্ছাসেবক দল করে না। আমি অন্তত বিশ্বাস করতে চাই না, কোনো ছাত্রদলের নেতাকর্মী চাঁদাবাজি করবে। এটা অসম্ভব হতেই পারে না। যখন কোনো মুসলিম কুরআন-হাদিস অস্বীকার করবে, আল্লাহকে অস্বীকার করবে, সে সময় থেকে সে আর মুসলিম থাকে না। ছাত্রদলের কিছু নির্দিষ্ট নির্দেশনা আছে, রাজনীতি আছে, নেতৃত্ব আছে। ওইটা যে অস্বীকার করবে, অস্বীকার করে চাঁদাবাজি করবে, সে তখন ছাত্রদলের কেউ না। স্পষ্ট করেই দল থেকে বলা হয়েছে। সে একটা দুষ্কৃতকারী। তাকে একটা সাধারণ লোক ধরে পুলিশে দিতে পারে। পুলিশও ধরে নিয়ে আইনসম্মত ব্যবস্থা নিতে পারে। সে তো আমার দলের না। বরঞ্চ এদের কাউকে কাউকে ব্যবহার করে এদের নাম ব্যবহার করে, দলকে কলুষিত করছে একটি বিশেষ একটি মহল। যারা চক্রান্ত করছে। এ ধরনের কাজ যারা করে তারা তার পদে থাকে না। আমি ইসলামের কোনো কিছু মানি না, তাহলে কী মুসলিম দাবি করতে পারি?

কালের কণ্ঠ: জামাতের সঙ্গে বিএনপির কী গভীর দূরত্ব সৃষ্টি হচ্ছে?

জামায়াতসহ অন্যান্য ছোট রাজনৈতিক দল আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। কমিউনিস্ট পার্টিও আমাদের কাছে আসে, জামায়াতও আমাদের কাছে আসে। গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সময় জামাতের সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক হয়েছে। কিন্তু যখন কেউ ফ্যাসিবাদের দোসর হবে; শুধু জামায়াত না, অন্য যেকোনো সংগঠন, তখন সে আর আমার বন্ধু না। এখানে দূরের, কাছের বলে কোনো কিছু নাই। জামাত একটি আলাদা সংগঠন। বিএনপি একটি গণতান্ত্রিক সংগঠন। জামায়াতের সিদ্ধান্ত অতীত থেকে একদম ২৪ সাল পর্যন্ত ভুলে ভরা। বিএনপি প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ভুল করেনি তা বলবো না, কিছু ভুল থাকতে পারে। কিন্তু জামায়াতের সঙ্গে তুলনীয় নয়। এটা দূরে আর কাছের ব্যাপার নয়।

মন্তব্য

‘অচিরেই জি এম কাদের তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করবেন’

নিজস্ব প্রতিবেদক
নিজস্ব প্রতিবেদক
শেয়ার
‘অচিরেই জি এম কাদের তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করবেন’
জি এম কাদের। সংগৃহীত ছবি

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের অচিরেই তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করবেন বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আরেকাংশের মহাসচিব কাজী মো. মামুনুর রশিদ। শনিবার রাতে দেওয়া এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

বিবৃতিতে দেশব্যাপী দলীয় সব নেতাকর্মীকে আস্থার সঙ্গে এরশাদের পতাকাতলে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানান কাজী মো. মামুনুর রশিদ। 

আরো পড়ুন
বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে ন্যায়ের পক্ষে শক্তিশালী মডেল হতে পারে : শিবির সভাপতি

বাংলাদেশ বিশ্বমানচিত্রে ন্যায়ের পক্ষে শক্তিশালী মডেল হতে পারে : শিবির সভাপতি

 

তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন থেকে নেতৃত্বের দুর্বলতার কারণে দলীয় নেতাকর্মীদের মনোবলে চিড় ধরেছে।

স্বঘোষিত চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের স্বজনপ্রীতি, অর্থলিপ্সা, সংগঠন ও দেশবিরোধী সিদ্ধান্তে সবাই বিক্ষুব্ধ। এ অবস্থায় কেন্দ্রীয়সহ বিভিন্ন জেলা-উপজেলার নেতৃবৃন্দ দল থেকে পদত্যাগের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছেন।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘দলের দায়িত্ব গ্রহণের পরবর্তীতে জি এম কাদের নেতৃবৃন্দকে অবমূল্যায়নের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত হয়েছেন। সবার সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে ২৪-এর জাতীয় নির্বাচনে অংশগ্রহণ কেউ মেনে নিতে পারেনি।

বিবৃতিতে সবাইকে ধৈর্য ধরার আহ্বান জানিয়ে কাজী মামুন বলেন, ‘ইনশাআল্লাহ অচিরেই জি এম কাদের তার কৃতকর্মের প্রায়শ্চিত্ত করবেন। আমরা ঐক্যবদ্ধভাবে সারা দেশে দলকে সংগঠিত করে পল্লীবন্ধু এরশাদের নতুন বাংলাদেশ গড়ে তুলব।’

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ