ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর থেকে পাল্টা শুল্ক প্রত্যাহার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত শুক্রবার মধ্যরাতে এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও বর্ডার প্রটেকশন সংস্থা সিবিপি।
স্মার্টফোন, কম্পিউটার মনিটর ও অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের ওপর আপাতত চীনের জন্য নির্ধারিত ১৪৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে না। এ ছাড়াও সব দেশের জন্য নির্ধারিত ১০ শতাংশ শুল্কের বাইরে থাকবে এসব ইলেকট্রনিক পণ্য।
বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, গত ৫ এপ্রিলের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা পণ্য বা গুদাম থেকে সরানো পণ্যগুলোর ক্ষেত্রে এই অব্যাহতি প্রযোজ্য।
চীনের ওপর বসানো ১৪৫ শতাংশ শুল্ক অব্যাহত থাকলে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দাম হতো আকাশছোঁয়া। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বহুল বিক্রীত আইফোন মূলত চীনেই উৎপাদিত হয়। মোট উৎপাদিত আইফোনের ৮০ শতাংশ উৎপাদন করে চীন।
এসব পণ্য সহজে যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি করার সুযোগ নেই।
গ্লোবাল স্মার্টফোন শিপমেন্ট পর্যবেক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের মতে, আগামী ছয় সপ্তাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আইফোনের মজুদ ছিল। মজুদ শেষ হলে আইফোনের দাম বাড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছিল।
অর্থনীতিবিদদের মতে, শুল্কের খরচ ক্রেতাদের ওপরই চাপানো হতো।
মূল্যবৃদ্ধির ভয়ে গাড়ি ও ইলেকট্রনিকস কেনার হার বাড়িয়ে দিয়েছিলেন মার্কিন ক্রেতারা।
পরিকল্পনা থেকে যে কারণে সড়ে দাঁড়াল যুক্তরাষ্ট্র
কোনোভাবে যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন তৈরি করা যায় কি না সে বিষয়ে ২০১১ সালে অ্যাপলের প্রতিষ্ঠাতা স্টিভ জবসকে প্রশ্ন করেছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। কোনো রকম রাখঢাক না করেই জবস বলেছিলেন, দেশে আইফোন উৎপাদন করে কর্মসংস্থান বাড়ানোর সুযোগ নেই। এর মধ্যে ১৪ বছর পার হয়ে গেছে। এখনো ‘মেড ইন ইউএসএ’-এর ট্যাগ লাগানো আইফোন তৈরি করা সম্ভব হয়নি।
বর্তমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মতে, আইফোন তৈরির মতো জনবল ও রসদ যুক্তরাষ্ট্রের আছে। তবে এই দাবির সঙ্গে একমত হয়ে কোনো মন্তব্য করেননি অ্যাপলের সিইও টিম কুক। বাণিজ্য বিশ্লেষকরাও ট্রাম্পের করা দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেননি। উল্টো তাঁদের দাবি ছিল, আমেরিকায় আইফোন তৈরি করা অসম্ভব। আর যদি কোনোভাবে সম্ভবও হয় তবে এর দাম হবে অত্যন্ত বেশি।
যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ওয়েড বুশ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রে আইফোন উৎপাদিত হলে দাম বেড়ে দাঁড়াত তিন হাজার ৫০০ ডলার। আগামী তিন বছরে অ্যাপল সাপ্লাই চেইনের ১০ শতাংশও যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে এলে এতে খরচ হতো তিন হাজার কোটি ডলার।
চীনে তৈরি আইফোনের ওপর ১৪৫ শতাংশ শুল্ক বসলে দাম কী পরিমাণ বাড়ত তার একটি সম্ভাব্য তালিকা দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক ইউবিএসের বিশ্লেষকরা।
তাঁদের ধারণা অনুযায়ী, আইফোন ১৬ প্রো (২৫৬ গিগাবাইট স্টোরেজ) ম্যাক্সের দাম ৭৯ শতাংশ বেড়ে যেত। এতে এক হাজার ১৯৯ ডলার থেকে দাম বেড়ে দাঁড়াত দুই হাজার ১৫০ ডলার। সূত্র : সিএনএন