আজ ১৪৩১ বঙ্গাব্দের শেষ দিন—চৈত্রসংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ সূর্য ডুববে আজ। আগামীকাল সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নতুন বাংলা বছর ১৪৩২।
চৈত্রসংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ—এই দুই দিন বাঙালির জীবনে বয়ে যায় আনন্দধারা।
আজ ১৪৩১ বঙ্গাব্দের শেষ দিন—চৈত্রসংক্রান্তি। চৈত্র মাসের শেষ সূর্য ডুববে আজ। আগামীকাল সূর্যোদয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হবে নতুন বাংলা বছর ১৪৩২।
চৈত্রসংক্রান্তি আর পহেলা বৈশাখ—এই দুই দিন বাঙালির জীবনে বয়ে যায় আনন্দধারা।
বর্ষপঞ্জির শেষ দিন হিসেবে চৈত্রসংক্রান্তি বাঙালির জীবনে এক বিশেষ দিন। কৃষি সংস্কৃতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এই দিনটি বাঙালিদের অনেকেই স্নান, দান, ব্রত, আচার ও বিশেষ খাবার গ্রহণের মাধ্যমে উদযাপন করে। অনেকাংশে এটি ধর্মীয় পর্বও, বাঙালি হিন্দুরা শিবের পূজা করে।
এ উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের উৎসব-অনুষ্ঠান ও মেলা হয়। আজ রাজধানীজুড়ে রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তির নানা আয়োজন। দুপুর ২টা থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে রয়েছে ‘চৈত্রসংক্রান্তির ব্যান্ড শো’। সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এ আয়োজন করছে শিল্পকলা একাডেমি।
গত বুধবার সংবাদ সম্মেলন করে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী জানিয়েছেন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বিকেল ৩টা থেকে গান গাইবে গারো সম্প্রদায়ের ব্যান্ড এফ মাইনর, মারমা সম্প্রদায়ের লা রং, ত্রিপুরা সম্প্রদায়ের ইমাং, খাসিয়া সম্প্রদায়ের ইউনিটি, চাকমা সম্প্রদায়ের ইনভোকেশন, বাঙালির মাইলস, ওয়ারফেজ, ভাইকিংস, অ্যাভয়েড রাফা, দলছুট, স্টোনফ্রি।
সংস্কৃতি উপদেষ্টা আরো জানান, একই দিনে শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে দেশের ১২ জেলায় হবে সাধুমেলা। সন্ধ্যা ৬টা থেকে সেখানে সাধুসঙ্গ ও আধ্যাত্মিক গানের আসর বসবে। শ্রীমঙ্গল ও মৌলভীবাজারে বসবে চা শ্রমিকদের ফাগুয়া উৎসব।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় চৈত্রসংক্রান্তির অনুষ্ঠান থাকবে। চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. আজহারুল ইসলাম শেখ জানিয়েছেন, বিকেল ৪টা থেকে নাচ-গানের আয়োজন শুরু হবে। চারুকলার বর্তমান ও প্রাক্তনরা রাত ১০টা পর্যন্ত আয়োজন মাতিয়ে রাখবেন।
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত বাংলা বছরকে বিদায়ের অনুষ্ঠান করবে সংগীত শিক্ষার প্রতিষ্ঠান ‘সুরের ধারা’। এবার তাদের চৈত্রসংক্রান্তি ও বর্ষবরণের দুটি অনুষ্ঠানই হবে ধানমণ্ডির রবীন্দ্রসরোবরে। দুটি অনুষ্ঠানই সরাসরি সম্প্রচারের কথা রয়েছে চ্যানেল আইয়ের।
অন্যদিকে ‘ভুলে যাই দ্বন্দ্ব কেটে যাক ভ্রান্তি, শুভ বার্তা আনুক চৈত্রসংক্রান্তি’ স্লোগানে লোকগানের আসর করবে বাংলাদেশ উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী। বিকেল সাড়ে ৫টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের বিপরীতে সত্যেন সেন চত্বরে অনুষ্ঠিত হবে এ অনুষ্ঠান। থাকবে গান, আবৃত্তি, নৃত্যসহ নানা ধরনের পরিবেশনা।
গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ পার্কেও রয়েছে চৈত্রসংক্রান্তির আয়োজন। আজ বিকেল ৪টায় রয়েছে চারুকারু প্রদর্শনী, রাত ৮টায় ইসলাম উদ্দিন পালাকারের পালাগান, রাত ৯টায় আছে আলপনা আলাপ। রাত ১০টায় পার্কের সামনে থেকে গুলশান ২ মোড় পর্যন্ত রাস্তাজুড়ে আলপনা আঁকা হবে। গুলশান সোসাইটির উদ্যোগে ‘অলিগলি বর্ষবরণ বন্ধুগণ’ এ আয়োজন করছে।
সম্পর্কিত খবর
আবাসন সংকট নিরসনে গত ১২ জানুয়ারি তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। দাবির পরিপ্রেক্ষিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসসহ পুরান ঢাকায় দুটি অস্থায়ী আবাসন নির্মাণের কাজ গ্রহণ করে সেনাবাহিনী। দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের চলমান কাজ পুনর্মূল্যায়ন ও আরডিপিপি প্রণয়নে এরই মধ্যে প্রায় তিন মাস পার হয়ে গেলেও তা প্রণয়ন হয়নি। ফলে দৃশ্যমান কাজ এখনো শুরু করতে পারেনি সেনাবাহিনী।
তবে আজ রবিবার পাঁচটি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের প্রধান, ইউজিসি চেয়ারম্যান, জবি উপাচার্যসহ ১৪ সদস্য নিয়ে প্রস্তুতকৃত সংশোধিত ডিপিপি অনুমোদনের জন্য একটি সভা অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকে আরডিপিপি অনুমোদিত হলে দৃশ্যমান কাজে যেতে পারবে সেনাবাহিনী।
জানা যায়, গত ১৬ জানুয়ারি শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের কাজ সেনাবাহিনীকে হস্তান্তর করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, শিক্ষার্থীদের দাবি বাস্তবায়নে প্রশাসনের চেষ্টার কমতি ছিল না।
জানা যায়, আবাসন সংকট সমাধানে বিভিন্ন সময় হলের জন্য আন্দোলন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরিচালক (বিশ্ববিদ্যালয় থেকে নিয়োগকৃত) প্রকৌশলী মো. আমিরুল ইসলাম কালের কণ্ঠকে বলেন, দুটি অস্থায়ী হল নির্মাণের বিষয়টি আমরা সংশোধিত উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (আরডিপিপি) যুক্ত করেছি। যদি পরিকল্পনা কমিশন তথা মন্ত্রণালয় অনুমোদন করে তাহলে দ্রুত সময়ের মধ্যে হল নির্মাণের কাজ শুরু হবে।
সেনাবাহিনী থেকে নিযুক্ত দ্বিতীয় ক্যাম্পাসের প্রকল্প পরিচালক (পিডি) লে. কর্নেল ইফতেখার আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, চলমান প্রকল্পের কাজ পুনর্মূল্যায়ন, অ্যাসেসমেন্টসসহ যাবতীয় কার্যক্রম এরই মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। ডিপিপি সংশোধন করে আরডিপিপি প্রণয়নে আজ রবিবার পরিকল্পনা কমিশনে চূড়ান্ত মিটিং রাখা হয়েছে। চূড়ান্ত মিটিংয়ে আরডিপিপি অনুমোদন হলে সেনাবাহিনীর কাজ দৃশ্যমান দেখা যাবে।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম কালের কণ্ঠকে বলেন, রবিবার পরিকল্পনা কমিশনের মিটিং রয়েছে। সেখানে অনুমোদন হলেই অর্থ ছাড় হবে। দ্রুত কাজ শুরু হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কনীতি নিয়ে এখনো শঙ্কা কাটেনি বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল। তিনি বলেছেন, নির্বাচিত সরকার না এলে বিনিয়োগে স্বস্তি ফিরবে না। অন্তত নির্বাচনের তারিখ জানা থাকলেও উদ্যোক্তাদের জন্য কিছুটা সুবিধা হতো। নির্বাচনের তারিখ জানা না থাকলে বিনিয়োগ করবেন না উদ্যোক্তারা।
গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশান ক্লাবে বিটিএমএ আয়োজিত ‘ইউএস ট্যারিফ অন বাংলাদেশজ এক্সপোর্ট : রিসিপ্রোক্যাল স্ট্র্যাটেজিক্যাল অ্যান্ড ওয়ে ফরোয়ার্ড ফর নেগোসিয়েশন’ শীর্ষক আলোচনাসভায় উদ্বোধনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন শওকত আজিজ। এতে আরো বক্তব্য দেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, বিজিএমইএ প্রশাসক আনোয়ার হোসেন, বিপিজিএমইএ সভাপতি শামিম আহমেদ প্রমুখ।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, ‘আমাদের কী করা দরকার, কোন জায়গায় কী সুযোগ নিতে পারি, ট্রাম্প প্রশাসনকে কী প্রস্তাব দেওয়া যায়, এগুলো বিষয়ে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে।
মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘এই ট্যারিফের ফলে আমাদের খাতভিত্তিক প্রভাব কী হবে, কী কী পয়েন্টে আমরা আলোচনা করব, এ থেকে উত্তরণের পথগুলো কী হবে—এ বিষয়ে আলোচনা করে ঠিক করতে হবে। আমাদের ইউএস রিটেইলারদের সঙ্গে বাড়তি খরচ ভাগ করে নেওয়ার জন্য আলোচনা শুরু করতে হবে।’
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারকাজ করছে।
শিল্প-কারখানায় চাঁদাবাজি এবং আওয়ামী লীগের ডাকা হরতাল সম্পর্কে বিটিএমএ সভাপতি বলেন, কর্মসংস্থান না থাকলে চাঁদাবাজি হয়। চাঁদা আদায়কেই ব্যবসা হিসেবে নেয় কিছু লোক। হরতালও এ কারণেই ডাকা হয়। কর্মসংস্থান থাকলে হরতাল করার লোক থাকে না।
ভারতীয় সুতার কারণে ক্ষতির মুখে দেশীয় বস্ত্রকলগুলো ক্ষতির মুখে উল্লেখ করে শওকত আজিজ রাসেল বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে আমদানিকৃত ভারতীয় সুতা ডাম্পিং মূল্যে প্রবেশ করায় দেশীয় টেক্সটাইল মিলস ব্যাবসায়িক ক্ষতির মুখে পড়েছে।
বিটিএমএ সভাপতি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি তথা রপ্তানি আয়ের প্রধান চালিকাশক্তি দেশের টেক্সটাইল সেক্টর দীর্ঘদিন যাবৎ বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এর মধ্যে গ্যাস ও বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি, ডলারের সংকট, ব্যাংক সুদের হার ১৮ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি, এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের শর্তাবলি পূরণের অজুহাতে রপ্তানির বিপরীতে নগদ প্রণোদনার অস্বাভাবিক হ্রাস এবং টাকার অবমূল্যায়নের কারণে ওয়ার্কিং ক্যাপিটালের সংকট ইত্যাদি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
ব্যবসাবান্ধব পরিবেশের জন্য সামাজিক নিরাপত্তার বিকল্প নেই—আবদুল আউয়াল মিন্টু : এদিকে এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেছেন, ‘দেশে যদি শান্তি-শৃঙ্খলা না থাকে তাহলে ব্যবসাবান্ধব পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে না। এ জন্য সামাজিক শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে বর্তমান সরকার কাজ করবে বলে বিশ্বাস করি।’
গতকাল শনিবার যশোর চেম্বার অব কমার্সের উদ্যোগে শহরের টাউন হল মাঠে মাসব্যাপী শিল্প ও বাণিজ্য মেলা উদ্বোধনের সময় তিনি এসব কথা বলেন। প্রায় এক যুগ বিরতির পর চেম্বারের উদ্যোগে মেলাটির আয়োজন করা হয়েছে বলে আয়োজকরা বলেন। মেলায় সারা দেশ থেকে দেড় শতাধিক স্টল অংশগ্রহণ করবে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু আরো বলেন, এই মেলার মাধ্যমে ভোক্তা ও উদ্যোক্তা দুই পক্ষই উপকৃত হবে। এমন উদ্যোগ অব্যাহত রাখার জন্য আয়োজকদের প্রতি আহবান জানান তিনি।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলাম, পুলিশ সুপার রনওক জাহান, জামায়েতের জেলা আমির অধ্যাপক গোলাম রসুল, জেলা বিএনপির নির্বাহী সদস্য গোলাম রেজা দুলু, চেম্বার অব কমার্স আন্ড ইন্ডাস্ট্রি যশোরের সভাপতি মিজানুর রহমান খান, সহসভাপতি সাজ্জাদুর রহমান সুজা, জাহিদ হাসান টুকুন, যুগ্ম সম্পাদক মকছেদ আলী ও এজাজ উদ্দিন টিপু প্রমুখ।
বাহাত্তরের সংবিধানের সমালোচনা করে অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের যে মূল আদর্শ ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার; সেটাকে ১৯৭২ সালেই শহীদ করে দেওয়া হয়েছে। বাহাত্তরের সংবিধান অন্য কোনো কারণে নয়, শুধু এ কারণেই বাদ দেওয়া উচিত। বাহাত্তরের সংবিধান ফ্যাসিস্ট সংবিধান, এটা বুঝতে আমাদের ৫০ বছর লাগল? ছাত্ররা আন্দোলন করে ফ্যাসিস্ট সরকারকে না সরালে তো এটা বলার সাহস আমরা পেতাম না।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ইনিশিয়েটিভ ফর দ্য প্রমোশন অব লিবারেল ডেমোক্রেসি (আইপিএলডি) আয়োজিত ‘বাংলাদেশে টেকসই গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রতিবন্ধকতা’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক শাসনব্যাবস্থা চালু করা এবং গুম, খুন, ক্রসফায়ার করাকে ফ্যাসিজমের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘অনেকে এখন হাসিনাকে ফিরিয়ে আনার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছেন। ইউনূস মে বি ওয়ার্স্ট দ্যান হাসিনা, বাট হাসিনা ক্যান নট রিটার্ন (ইউনূস হাসিনার চেয়েও খারাপ হতে পারে, কিন্তু হাসিনা ফিরে আসতে পারবে না)। এই হাসিনাপ্রীতিটা এসেছে কোথা থেকে? বলে, হাসিনা তো মুক্তিযুদ্ধের উত্তরাধিকারী। ফ্যাসিজমের অ্যাপিলটা (আবেদন) এখানেই তৈরি হচ্ছে যে আপনি এটাকে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে জড়িত করছেন।
সংখ্যালঘু নির্যাতন সম্পর্কে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘ভারতীয়রা আমাদের বিরুদ্ধে যে প্রচারণা করছে খামোখা, যে এখানে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। ভারত যদি নিজেদের দিকে তাকাত, তাহলে উত্তরটা ভালো পেত। তারা (ভারত) নিজেদের ওপর যে ডায়াগনসিস করছে, সেটা আমাদের ওপর প্রক্ষেপ করেছে।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গে সংখালঘুদের প্রতি এই সহিংসতা আরো তীব্র বলে মত দেন সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুসলমানের সংখ্যা কত শতাংশ? কেউ বলে ২০, কেউ বলে ২৫।
টেকসই গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় শিক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে বাংলা একাডেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত এই লেখক বলেন, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার একটি প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে সর্বজনীন শিক্ষার অভাব। জাতীয় আয় বা জিডিপির মাত্র ২ শতাংশ খরচ করা হয় শিক্ষায়। শ্রীলঙ্কার নতুন সরকার বলছে, তারা শিক্ষা খাতে ১০ শতাংশ ব্যয় করবে। বাংলাদেশ ১০ শতাংশ না পারলেও অন্তত ৬ শতাংশ করা উচিত। জাতিসংঘ ১৯৬৮ সালেই বলেছে, নিরক্ষরতা দূর করতে হলে একটি রাষ্ট্রকে তার জিডিপির কমপক্ষে ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে।
বাংলাদেশে ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষাকে প্রাধান্য দেওয়া এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলার চেয়ে ইংরেজিকে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার সমালোচনা করে সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘আমি মনে করি, গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার পথে প্রথম প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে এটি—আমরা ইংরেজিতে চিন্তা করি, বাংলায় চিন্তা করতে এখনো সক্ষম হইনি। ইংরেজিতে নাম দিলে সংগঠনের মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে—এ রকম একটা জিনিস আমাদের মাথায় কাজ করে। বাংলাদেশে ইংরেজি ভাষাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য এখন আর ব্রিটেনের দরকার নেই। এটা আমেরিকানরা করছে। আমেরিকানদের দরকার নেই, বিশ্বব্যাংক করছে। সব বিশ্ববিদ্যালয় প্রাইভেট হবে, সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি মাধ্যম হবে। শুধু তাই নয়, নিচের দিকে কিন্ডারগার্টেন পর্যন্ত ইংরেজি মাধ্যম চলে যাচ্ছে।’
গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশকে ঔপনিবেশিক চর্চা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে বলে মত দেন অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান। তিনি বলেন, ‘এখানে কলোনিয়াল লিগ্যাসি (ঔপনিবেশিক পরম্পরা) এখনো শেষ হয়নি। আপনাকে কমনওয়েলথ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। আপনাকে ওয়াশিংটন কনসেনসাস (ওয়াশিংটন ঐকমত্য-আইএমএফ প্রচারিত এক ধরনের মুক্তবাজার অর্থনৈতিক নীতি) থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। সেটা বলার সাধ্য এক শ ইউনূসেরও নেই। হাসিনার তো ছিলই না। হাসিনা যেটা সবচেয়ে আমাদের ক্ষতি করেছে, পাশের দেশের (ভারত) চরম দাসে পরিণত করেছিল আমাদের। আমেরিকানদের দাসত্বটা দেখা যায় না, একটু দূরে তো।’
বাংলাদেশের গণতন্ত্র কতটা টেকসই তা বোঝার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রামের দিকে তাকানোর পরামর্শ দিয়ে এই লেখক-অধ্যাপক বলেন, ‘বাংলাদেশের পার্বত্য চট্টগ্রামে যে ভায়োলেন্স (সহিংসতা) হচ্ছে ৫০ বছর ধরে, সেটা ধরলে পার্বত্য চট্টগ্রামে যদি আপনি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন, তাহলে বাংলাদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে পারবেন।...পার্বত্য চট্টগ্রামে আমরা যা করছি তা কলোনিয়াল ফ্যাসিজমের চেয়ে কম কিছু নয়।’
শ্রমিকদের অমানবিক ও নিম্ন মজুরি প্রসঙ্গ তুলে ধরে সলিমুল্লাহ খান বলেন, বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার ও ছাত্রদের নতুন দলও বিষয়টি নিয়ে ভাবছে না।
আইপিএলডির সভাপতি মোহাম্মদ ফজলুল আজিমের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন আইপিএলডির নির্বাহী সদস্য লেখক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী, আইপিএলডির বোর্ড মেম্বার এহসান শামীম প্রমুখ।
ব্যয়বহুল পরিশোধিত তেল আমদানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে দেশের রিজার্ভ সাশ্রয়ে ইস্টার্ন রিফাইনারি লিমিটেডের (ইআরএল) দ্বিতীয় ইউনিট চালু করতে চায় সরকার। যদিও প্রথম ও একমাত্র শোধনাগারটি প্রায় পাঁচ দশক আগে চালু হয়েছিল। সরকার বারবার উদ্যোগ নিলেও হয়নি। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বর্তমানে প্রায় সাড়ে ৩৬ হাজার কোটি টাকা প্রয়োজন।
আজ রবিবার রাজধানীর শেরেবাংলানগরে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি-২ সম্মেলনকক্ষে বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান কমিটির ৬৮তম সভা অনুষ্ঠিত হবে। সভায় ইআরএল-২ প্রকল্পসহ ২৫টি প্রকল্পের ঋণের বিষয়ে ইআরডি ও প্রকল্পসংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সংস্থার আলোচনা হবে। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের সচিব মো. শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী এতে সভাপতিত্ব করবেন।
সভায় আলোচনার অপেক্ষায় থাকা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে দুই লাখ কোটি টাকা ব্যয় হতে পারে। এই ব্যয়ের অন্তত দেড় লাখ কোটি টাকা প্রকল্প সহায়তা হিসেবে বিদেশি উৎস থেকে ঋণ ও অনুদান সংগ্রহ করতে চায় সরকার।
জানা গেছে, ২০১০ সালে ইআরএল-২ নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হলেও প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়নি। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর বিপিসি নতুন করে প্রকল্পটি সচল করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এর মধ্যে সরকার বিভিন্ন উন্নয়ন অংশীদারের কাছ থেকে ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বৈদেশিক ঋণ সংগ্রহের পরিকল্পনা করেছে, বাকিটা বহন করবে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি)। বৈদেশিক অর্থায়ন সহজ করতে পরিকল্পনা কমিশনের নীতিগত অনুমোদনের পর বিপিসি নতুন প্রাথমিক উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) জমা দিয়েছে।
ইআরডি সূত্রে জানা গেছে, সৌদি জ্বালানি কম্পানি আরামকো ইআরএল-২ নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করলেও বাংলাদেশ এখনো এ বিষয়ে কোনো চুক্তি চূড়ান্ত করতে পারেনি। সরকার বর্তমানে ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং মধ্যপ্রাচ্যের অন্যান্য দেশ ও সংস্থার সঙ্গে অর্থায়ন নিয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে।
বৈদেশিক সহায়তা অনুসন্ধান কমিটির সভায় আরো ২৪ প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে। সেগুলো হলো স্বাস্থ্য পদ্ধতির মাধ্যমে মহামারি প্রতিরোধ, প্রস্তুতি এবং প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রাণিসম্পদ পরিষেবা বিভাগের সক্ষমতা জোরদার করা, চরাঞ্চলে পুষ্টি-সংবেদনশীল জলবায়ু স্মার্ট কৃষির মাধ্যমে জীবিকা ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধি, ছয়টি নতুন জাহাজ ৪০ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার তিনটি রাসায়নিক/পণ্য তেল ট্যাংকার এবং ৫০ হাজার থেকে ৫৫ হাজার ডিডব্লিউটি ক্ষমতার তিনটি বাল্ক ক্যারিয়ার সংগ্রহ, তিন হাজার ৫০০ ঘনমিটার ট্রেলিং সাকশন হপার ড্রেজার, দুটি ২৮ ইঞ্চি কাটার সাকশন ড্রেজার, আনুষঙ্গিক জাহাজ এবং খুচরা যন্ত্রাংশ সংগ্রহ, লাকসাম-চিনকি আস্তানা-পাহাড়তলী মিটার গেজ ডাবল ট্র্যাককে ডুয়াল গেজ ডাবল ট্র্যাকে রূপান্তর, বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু প্রকল্প-পর্ব ১/ উপাদান ১ এবং ৩, জলবায়ু স্থিতিস্থাপক কৃষি উন্নয়ন প্রকল্প।
এ ছাড়া খুলনা শহরের জন্য জল, প্রাকৃতিক নিষ্কাশন সমাধান, খুলনা পানি সরবরাহ প্রকল্প (পর্ব-২), আরবি ভাষা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা প্রকল্প, চীন-বাংলাদেশ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফ্রেন্ডশিপ আবাসিক হল নির্মাণ প্রকল্প, পঞ্চম প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি, পটুয়াখালী ১০০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র, সোনাগাজী ২০০ মেগাওয়াট (+১০%) সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, গজারিয়া ৫০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র বিদ্যুৎ বিভাগ প্রকল্প, পদ্মা ৮০ মেগাওয়াট সৌরবিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্প, ভোলা-বরিশাল-খুলনা গ্যাস ট্রান্সমিশন পাইপলাইন নির্মাণ, বাংলাদেশে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা এবং অভিযোজন অর্জনের জন্য মিডিয়া সক্ষমতা জোরদার করা, বরিশাল-ভোলা সড়কে কলাবাদর ও তেঁতুলিয়া নদীর ওপর ভোলা সেতু নির্মাণ, সড়ক ও জনপথ বিভাগের অধীনে সেতুগুলোর স্মার্ট রক্ষণাবেক্ষণ প্রযুক্তির জন্য সক্ষমতা উন্নয়ন, বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু প্রকল্প (বিসিএপি)-প্রথম পর্যায়/উপাদান ২.২ সিটি বাস সংস্কার কর্মসূচি, বাংলাদেশ পরিষ্কার বায়ু প্রকল্প (বিসিএপি)-পর্যায় ১/উপাদান ২-নিয়ন্ত্রণ উপ-উপাদান২.১ (যানবাহন নির্গমন) ও প্রণয়ন ও হ্রাস কর্ম পরিকল্পনা (এলডিআরআরপি) বাস্তবায়নে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে।
এদিকে চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) বৈদেশিক ঋণের অনুকূলে ১৫৪টি প্রকল্প নেওয়া হয়েছে। দুই থেকে সাত বছর মেয়াদি নেওয়া এই প্রকল্পগুলোর ব্যয় ধরা হয়েছে তিন লাখ ৮৩ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৭৮ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা, আর বৈদেশিক অর্থায়ন তিন লাখ চার হাজার ১০৯ কোটি টাকা।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে বিদেশি সহায়তা প্রাপ্তি চূড়ান্ত করতে এ ধরনের সভা নিয়মিতই আয়োজন করে থাকে ইআরডি। এই সভায় ইআরডি পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়, পরিকল্পনা কমিশন এবং প্রকল্প প্রস্তাবকারী সব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিরা উপস্থিত থাকেন।