ভরপেট খেয়ে গাড়িতে উঠলেন। গাড়ি চলতে না চলতেই গা-পাক দিয়ে উঠল। এমন সমস্যা হয় অনেকেরই। বাস, ট্রেন, প্রাইভেট কারে চড়লেই গা বমি ভাব, শরীরে প্রবল অস্বস্তি, তার পর বমি।
গাড়িতে এসি থাকলেও এ সমস্যাটি দেখা দেয়। চিকিৎসকরা একে ‘মোশন সিকেনস’ বা গতিজনিত অসুস্থতা বলে থাকেন।
ওষুধ খেয়েও এ সমস্যা সব সময় বন্ধ হয় না। পাহাড়ি পাকদণ্ডীতে গাড়িতে উঠলে, উত্তাল সমুদ্রে জাহাজে গেলে, আবার কারো কারো এসি কারেও মারাত্মক সমস্যা হয়।
তবে অদূর ভবিষ্যতে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে অন্য ভাবে। এ বিষয়ে জানাচ্ছেন গবেষকরা। চলুন, জেনে নেওয়া যাক।
জাপানের নাগোয়া ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অব মেডিসিনের গবেষকরা বলছেন, মাত্র ১ মিনিটের বিশেষ শব্দতরঙ্গ কর্ণকুহরে প্রবেশ করলেই দূর হবে শারীরিক অস্বস্তি।
কিন্তু কিভাবে? এ ক্ষেত্রে প্রথমেই জানা দরকার, গতির কারণে অসুস্থতা বা মোশন সিকনেস কেন হয়।
আরো পড়ুন
বৈশাখে বাড়িতে রান্না করতে পারেন কয়েক পদের ইলিশ
মোশন সিকনেস কেন হয়
চিকিৎসকরা বলছেন, চোখ, অন্তঃকর্ণ ও ত্বক—মানুষের শরীরের তিনটি অংশ গতির ভারসাম্য নির্ণয় করে। এই তিনটি অংশকেই ‘সেনসরি রিসেপ্টর’ বলা হয়। এরাই এই গতির অনুভূতিকে পাঠিয়ে দেয় মস্তিষ্কে। চিকিৎসক অরিন্দম বিশ্বাস বলেন, চোখ, কান ও মস্তিষ্কের সমন্বয় চলাফেরার ও কাজকর্মের জন্য জরুরি।
এই সমন্বয়ের কাজটি করে ভেস্টিবিউলার সিস্টেম। কানের ভেতরে থাকে ‘ভেস্টিবিউলার অ্যাপারেটস’। কোনো কারণে এই সমন্বয় বিঘ্নিত হলে ‘মোশন সিকনেস’ হতে পারে। অস্বস্তি হয়। কারো আবার বমি হয়ে যায়।
গতিজনিত অস্বস্তি বা সমস্যা কিভাবে কমানো যায়, তা নিয়ে তাকুমি কাগওয়া ও মাশাই কোটের নেতৃত্বে নাগোয়া ইউনিভার্সিটি গ্র্যাজুয়েট স্কুল অফ মেডিসিনে একটি সমীক্ষা ও গবেষণা হয়েছে। গবেষকরা জানাচ্ছেন, ১০০ হার্ডজের শব্দতরঙ্গ অন্তঃকর্ণে গেলে শরীরে ইতিবাচক প্রভাব পড়ছে। মাত্র ১ মিনিটের ‘সাউন্ড স্পাইস’ (বিশেষ ধরনের শব্দকে এই নামেই চিহ্নিত করা হয়েছে) এ ক্ষেত্রে বমি ভাব, শারীরিক অস্বস্তি কমিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছে।
আরো পড়ুন
নববর্ষের সঙ্গে পান্তা-ইলিশের কী সম্পর্ক
তাকুমি কাগওয়া বলছেন, ‘আমাদের গবেষণার উদ্দেশ্য হলো, স্বল্প সময়ে কিভাবে বিশেষ শব্দের মাধ্যমে অন্তঃকর্ণের বিশেষ অংশকে উদ্দীপিত করে গতিজনিত অসুস্থতা কমানো যায়, তা দেখা।’ তার দাবি, যে বিশেষ শব্দ শোনানো হচ্ছে, তা কান ও শরীরের জন্য একেবারেই নিরাপদ।
কিভাবে কাজ করছে শব্দ
বিশেষ যন্ত্রের মাধ্যমে তা কানে প্রবেশ করানো হচ্ছে। সেই শব্দ উদ্দীপিত করছে অন্তঃকর্ণের ওটোলিথিককে। এটি গতির সঙ্গে শরীর, মস্তিষ্কের ভারসাম্য রক্ষায় সাহায্য করে। আসলে বিশেষ শব্দতরঙ্গ অন্তঃকর্ণের ‘ভেস্টিবিউলার সিস্টেম’-এর ওপর প্রভাব ফেলছে। এই সিস্টেম বিগড়ে গেলেই সমস্যা দেখা দেয়। শব্দ সেই সমন্বয়টাই বজায় রাখতে সাহায্য করছে।
আরো পড়ুন
বৈশাখে পাতে রাখতে পারেন ভাপা সরষে ইলিশ
ফলাফলে পৌঁছানোর জন্য বেশ কয়েক জন স্বেচ্ছাসেবকের ওপর সমীক্ষা চালানো হয়। দোলনায় দুলছেন, গাড়িতে যাচ্ছেন, এমন লোকজনকে বিশেষ শব্দটি শোনানো হয়। ১০০ হার্ডজের শব্দতরঙ্গ তাদের কানে প্রবেশের পর গতিজনিত অসুস্থতা সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিতে বলা হয়। কারো কারো ক্ষেত্রে ইসিজি করেও দেখা হয়। তাতেই দেখা যায়, বমি ভাব, মাথা ব্যথা সংক্রান্ত শারীরিক অস্বস্তি কমে গেছে।
গবেষকরা বলছেন, আসলে বিশেষ শব্দটি সিমপ্যাথেটিক স্নায়ুযন্ত্রের ওপর প্রভাব ফেলছে। তার ফলেই সেই ব্যক্তি উপকার পাচ্ছেন। এই গবেষণা ফলপ্রসূ হলে তার যথেষ্ট ইতিবাচক প্রভাব মিলবে বলে আশা গবেষকদের। এ নিয়ে আরো গবেষণা চলছে।
আরো পড়ুন
কাপ থেকে চা-কফির দাগ দূর করবেন যেভাবে
সূত্র : আনন্দবাজার