যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন সমহারে শুল্কারোপের আওতা থেকে স্মার্টফোন ও কম্পিউটারকে বাদ দিয়েছে, যার মধ্যে চীনা পণ্যের ওপর আরোপিত ১২৫ শতাংশ শুল্কও অন্তর্ভুক্ত। এতে জনপ্রিয় প্রযুক্তিপণ্যের দাম নিয়ে মার্কিন ভোক্তাদের ওপর সম্ভাব্য চাপ কিছুটা কমবে।
শুক্রবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস ও বর্ডার প্রটেকশন এক নোটিশ প্রকাশ করে জানায়, এসব পণ্যকে ট্রাম্পের অধিকাংশ দেশের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ বৈশ্বিক শুল্ক ও চীনের পণ্যের ওপর আরোপিত আরো উচ্চ হারে শুল্ক থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। ফলে যেসব ইলেকট্রনিক পণ্য চীন থেকে আমদানি হয় এবং বর্তমানে ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত অতিরিক্ত শুল্কের আওতায় রয়েছে, তাদের মধ্যে অনেকগুলোই এবার ছাড় পাচ্ছে।
এ ছাড়া শুল্ক মওকুফ পাওয়া অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের মধ্যে রয়েছে সেমিকন্ডাক্টর, সোলার সেল ও মেমোরি কার্ড। এসব পণ্য বাদ পড়েছে বেশির ভাগ বাণিজ্যিক অংশীদারের ওপর আরোপিত ১০ শতাংশ ‘মূল শুল্ক’ ও চীনের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত ১২৫ শতাংশ শুল্ক থেকে।
এই ছাড়ের ফলে ট্রাম্পের চলতি মাসে ঘোষিত ১০ শতাংশ বিস্তৃত শুল্ক ও চীনা পণ্যের ওপর নতুনভাবে আরোপিত শাস্তিমূলক শুল্কের পরিধি কিছুটা সংকুচিত হলো। এই সিদ্ধান্ত এমন এক সময় এলো, যখন মার্কিন প্রযুক্তি কম্পানিগুলো আশঙ্কা প্রকাশ করছিল, শুল্কারোপের কারণে অনেক ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম হঠাৎই কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে।
কারণ এসব পণ্যের বেশির ভাগই চীনে উৎপাদিত।
সমহারে শুল্কারোপের মাধ্যমে ট্রাম্প চীনের বিরুদ্ধে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছেন, যেটিকে ওয়াশিংটন ‘অন্যায্য বাণিজ্যচর্চা’ বলে মনে করে। সম্প্রতি চীনা পণ্যের ওপর নতুন ১২৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হয়েছে, যার লক্ষ্য বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশ চীন। এই নতুন হারে যুক্ত হয়েছে আগের ২০ শতাংশ শুল্ক, যা চীনের ফেন্টানিল সরবরাহে ভূমিকার অভিযোগে আরোপ করা হয়েছিল।
এর সঙ্গে আগের প্রশাসনগুলোর সময় থেকে আরোপিত অন্যান্য শুল্কও যোগ হয়ে অনেক পণ্যের ক্ষেত্রে মোট শুল্কের হার পৌঁছেছে অন্তত ১৪৫ শতাংশে।
কিছু অনুমান বলছে, শুল্কের বাড়তি খরচ ক্রেতাদের ওপর চাপিয়ে দিলে মার্কিন বাজারে আইফোনসহ অন্যান্য ইলেকট্রনিক পণ্যের দাম তিন গুণ বেড়ে যেত। যুক্তরাষ্ট্র অ্যাপলের একটি বড় বাজার। কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের তথ্য অনুযায়ী, গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রি হওয়া স্মার্টফোনের অর্ধেকের বেশি ছিল অ্যাপলের তৈরি। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে বিক্রির জন্য নির্ধারিত অ্যাপলের আইফোনের প্রায় ৮০ শতাংশ চীনে ও বাকি ২০ শতাংশ ভারতে উৎপাদিত হয়।
চীনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরতা কমাতে অ্যাপল ও স্যামসাংয়ের মতো অন্য স্মার্টফোন নির্মাতারা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাদের সরবরাহব্যবস্থা বৈচিত্র্যময় করার চেষ্টা করছে। এ ক্ষেত্রে বিকল্প উৎপাদনকেন্দ্র হিসেবে ভারত ও ভিয়েতনাম এগিয়ে এসেছে। শুল্ক কার্যকর হওয়ার পর অ্যাপল ভারতে তাদের ডিভাইসের উৎপাদন বাড়াতে আরো তৎপর হয় বলে জানা গেছে।
এই সপ্তাহে ট্রাম্প বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর কঠোর শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা করেছিলেন। তবে বুধবার হঠাৎ অবস্থান পরিবর্তন করে তিনি ঘোষণা দেন, চীন বাদে মার্কিন শুল্কের পাল্টা জবাব না দেওয়া অন্যান্য দেশের জন্য ৯০ দিনের বিরতি কার্যকর হবে। এ সময়ের মধ্যে তারা মাত্র ১০ শতাংশ শুল্কের আওতায় থাকবে। এ সিদ্ধান্ত জুলাই পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
হোয়াইট হাউস জানিয়েছে, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ মূলত অন্যান্য দেশের কাছ থেকে আরো ভালো বাণিজ্য চুক্তি আদায়ের একটি কৌশল। এ ছাড়া বাদ দেওয়া অনেক পণ্যের উৎপাদন সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রে হয় না, যেমন হার্ড ড্রাইভ ও কম্পিউটার প্রসেসর। যদিও ট্রাম্প দাবি করে আসছেন, শুল্ক আরোপের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন ফিরিয়ে আনা যাবে, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, দেশীয় উৎপাদন বাড়াতে এখনো বহু বছর সময় লাগবে।