ঢাকা, রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
৯ চৈত্র ১৪৩১, ২২ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, রবিবার ২৩ মার্চ ২০২৫
৯ চৈত্র ১৪৩১, ২২ রমজান ১৪৪৬

শতাধিক সাহাবির সান্নিধ্যে ইলম অর্জন করেছিলেন যে ইমাম

মুফতি মানজুর হোসাইন খন্দকার
মুফতি মানজুর হোসাইন খন্দকার
শেয়ার
শতাধিক সাহাবির সান্নিধ্যে ইলম অর্জন করেছিলেন যে ইমাম

আলী (রা.) তখন আমিরুল মুমিনিন। ছোট্ট শিশু সাবিত এসেছিলেন তার দরবারে। আলী (রা.) মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করলেন তার বংশধরদের জন্য। দোয়ার বীজ মহীরুহ হতে বেশি সময় লাগেনি।

তার দোয়ার অনেক বছর পর ৮০ হিজরিতে সাবিতের বংশে নূরের বাতি জ্বালিয়ে পৃথিবীতে আসেন নুমান নামের এক তুখোড় প্রতিভার অধিকারী মানবশিশু। তার পুরো নাম নুমান ইবনে সাবিত ইবনে জুতি ইবনে মাহ। গবেষকরা বলেন, ইমাম আবু হানিফার পূর্বপুরুষ পারস্যের সম্ভ্রান্ত বংশের লোক ছিলেন। তার মাতৃভাষা ছিল ফারসি।
[ইমাম আজম আবু হানিফা (রহ.), পৃষ্ঠা-২৭]

ইমাম আবু হানিফা পরিণত বয়সে বেশ কয়েকজন সাহাবির সাক্ষাৎ পেয়েছেন। ফলে জীবনীকাররা সন্দেহাতীতভাবে তাকে তাবেঈ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। বিশ্লেষকরা বলেন, আনাস ইবনে মালেক (রা.), সাহল ইবনে সাদ (রা.), আবু তোফায়েল আমর ইবনে ওয়াসেলা (রা.) এবং আবদুল্লাহ ইবনে আবু আওফাসহ (রা.) বেশ কয়েকজন সাহাবির সঙ্গে আবু হানিফার সাক্ষাৎ প্রমাণিত। ইমাম আজমের তাবেঈ হওয়ার বিষয়টি বিস্তারিত প্রমাণ পাওয়া যায় ইবনে সাদ, খতিব আল বাগদাদি, আবদুল করিম সামআনি, ইমাম নববি, ইমাম জাহাবি, হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি ও জাইনুদ্দিন ইরাকির লেখায়।

(মানাকিবে ইমাম আবু হানিফা, পৃষ্ঠা-২৯৬)

ইমাম আবু হানিফা যখন জন্মগ্রহণ করেন, তখন উমাইয়া শাসক হাজ্জাজ ক্ষমতায়। হাজ্জাজের পর ক্ষমতায় আসেন ওলিদ। এ দুই শাসকের সময়কালে শৈশব ও কৈশোর কেটেছে আবু হানিফার। এ সময় তিনি পৈতৃক ব্যবসা-বাণিজ্য দেখাশোনা করতেন। পড়াশোনা তখনো শুরু করেননি।

তার ইলমি সাগরে যাত্রা শুরু হয় সুলাইমানের শাসনের সময়। এ নিয়ে একটি সুন্দর গল্প প্রচলিত আছে। ঘটনাটি স্বয়ং ইমামের মুখে শোনা যাক : 

‘একদিন আমি বাজারে যাচ্ছিলাম ব্যবসার কাজে। পথে কুফার বিখ্যাত আলেম ইমাম শাবির সঙ্গে দেখা। তিনি আমার দিকে তাকিয়ে বললেন, বাবা! তুমি কোথায় যাচ্ছ? আমি একজন সওদাগরের নাম বললাম। ইমাম বললেন, আমি জানতে চাচ্ছি, তুমি কারো কাছে পড়াশোনা করো কি না? আমার কণ্ঠে একরাশ আক্ষেপ ফুটে উঠল। দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম, আমি কারো কাছে পড়ি না। আমার জবাব শুনে ইমাম শাবি বললেন, তোমার ভেতর আমি বিশাল সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছি। তোমার অবশ্যই আলেমদের দরসে বসা উচিত। কথাগুলো আমার ভেতর ছুঁয়ে গেল। আমি ইলম সাধনার জন্য পাগল হয়ে গেলাম।’ (মানাকিবে ইমাম আজম, পৃষ্ঠা-৫৪)

ইমাম আবু হানিফার উস্তাদদের মধ্যে ইমাম হাম্মাদ (রহ.)-এর নাম বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কুফায় ইমাম হাম্মাদের মাদরাসা ছিল। তিনি বহু তাবেঈর উস্তাদ। আনাস (রা.) থেকে তিনি হাদিস বর্ণনা করেছেন। ফিকহের ক্ষেত্রে তিনি অন্যতম ফকিহ সাহাবি ইবনে মাসউদের ফিকহ শিক্ষা দিতেন। ইমাম আবু হানিফা ১০ বছর ইমাম হাম্মাদের কাছে ফিকহ শিক্ষা করেন। তিনি নিজেই বলেছেন, ‘আমি দীর্ঘ ১০ বছর ইমাম হাম্মাদের মাদরাসায় পড়াশোনা করেছি। ১০ বছর শেষে আমার মনে হলো, এবার আমি পড়াতে পারি। কিন্তু উস্তাদের সম্মানে আমি পড়ানো থেকে নিজেকে বিরত রেখেছি।’ (তারিখে বাগদাদি, খণ্ড-১৩, পৃষ্ঠা-৩৩৩)

ইমাম হাম্মাদের মাদরাসায় পড়ার সময়ই ইলমে হাদিসের ব্যাপারে আগ্রহী হন ইমাম আজম (রহ.)। হাদিস শিক্ষার জন্য ইমাম আজম কুফার আলেমদের মজলিসে বসতে শুরু করলেন। কুফার মুহাদ্দিসদের থেকে দরস শেষ করে তিনি ইলমে হাদিসের জন্য মক্কা-মদিনায় ভ্রমণ করেন। সেখানে তিনি জগদ্বিখ্যাত মুহাদ্দিস আতা ইবনে আবু রাবাহ আল কুরাইশির কাছে ইলমে হাদিস শিক্ষা করেন। আতা ছিলেন যুগশ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিস।

প্রায় দুই শ সাহাবির সান্নিধ্য থেকে ইলম আহরণ করেছেন তিনি। সাহাবিরাও তার মজলিসে বসত। তিনি সাহাবিদের উপস্থিতিতে ফতোয়া দিতেন এবং তার ফতোয়া গ্রহণযোগ্য হতো। এ ছাড়া হাফেজে হাদিস আবদুল্লাহ ইবনে ইকরিমা, সুলাইমান ইয়াসার, সালিম ইবনে আবদুল্লাসহ মক্কা-মদিনার শ্রেষ্ঠ মুহাদ্দিসদের থেকেও ইলমে হাদিস শেখেন ইমাম আজম (রহ.)। হাদিসের অন্যতম সেরা মনীষী ইমাম আওজায়ি (রহ.) ইমাম আবু হানিফাকে হাদিসের সনদ দেন।

হাদিসের জগতেও তিনি ছিলেন সম্রাট। ইমাম আজমের হাত ধরে ‘কিতাবুল আছার’ নামে প্রথম সহিহ হাদিস গ্রন্থ রচিত হয়। অসংখ্য হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে তিনি এই গ্রন্থ রচনা করেন। ছদরুল আয়িম্মা মুওয়াফফাক ইবনে মক্কি (রহ.) বলেন, ইমাম আবু হানিফা ৪০ হাজার হাদিস থেকে যাচাই-বাছাই করে কিতাবুল আছার সংকলন করেন। (মানাকিবু আবি হানিফা, পৃষ্ঠা-২৭)
 

মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৩ মার্চ ২০২৫

অনলাইন ডেস্ক
অনলাইন ডেস্ক
শেয়ার
আজকের নামাজের সময়সূচি, ২৩ মার্চ ২০২৫

ঢাকা ও এর পার্শ্ববর্তী এলাকার নামাজের সময়সূচি নিম্নরূপ—

জোহরের সময় শুরু ১২টা ৯ মিনিট। 

আসরের সময় শুরু - ৪টা ২৮ মিনিট।

মাগরিব- ৬টা ১৪ মিনিট।

এশার সময় শুরু - ৭টা ২৮ মিনিট।

আগামীকাল ফজর শুরু - ৪টা ৪৭ মিনিট।

আজ ঢাকায় সূর্যাস্ত - ৬টা ২ মিনিটে এবং আগামীকাল সূর্যোদয়- ৬টা ১০ মিনিটে।

সূত্র : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার, বসুন্ধরা, ঢাকা।
 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য
প্রশ্ন-উত্তর

অজু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জায় নামাজ না ছাড়লে গুনাহ হবে?

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
অজু ছুটে যাওয়ার পর লজ্জায় নামাজ না ছাড়লে গুনাহ হবে?
প্রতীকী ছবি

প্রশ্ন : নামাজের মধ্যে অজু ভেঙে গেলে লজ্জায় নামাজ ত্যাগ না করলে কোন ধরনের গুনাহ হয়? এ গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য ইসলামে কোনো পন্থা আছে কি?

-সালাউদ্দীন, কিশোরগঞ্জ

উত্তর : নামাজের মধ্যে অজু ভেঙে গেলে নামাজ ত্যাগ না করলে বড় ধরনের গুনাহ হয়। বহু ওলামায়ে কিরাম বিনা অজুতে নামাজ পড়লে ঈমান চলে যাওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করেছেন। তাই এ ধরনের পরিস্থিতিতে পতিত হলে নামাজ ছেড়ে দেবে। গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য বেশি মুসল্লিকে কষ্ট না দিয়ে বের হওয়া সম্ভব হলে বের হয়ে অজু করবে।

আবার নামাজে শামিল হবে। আর নামাজ শেষ হয়ে গেলে একাকী নামাজ পড়ে নেবে। বের হওয়া সম্ভব না হলে নামাজ ছেড়ে দিয়ে নিজ জায়গায় বসে থাকবে। (হিদায়া : ১/২৪৯, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল : ২/৩২৬)

সমাধান : ইসলামিক রিসার্চ সেন্টার বাংলাদেশ বসুন্ধরা, ঢাকা

মন্তব্য

যেসব কারণে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়

ইসলামী জীবন ডেস্ক
ইসলামী জীবন ডেস্ক
শেয়ার
যেসব কারণে ইতিকাফ ভঙ্গ হয়

ইতিকাফকারীর জন্য বিশেষ কিছু নির্দেশনা ইসলামে দেওয়া আছে। আছে কিছু করণীয় ও বর্জনীয় এবং বৈধ ও অবৈধ বিষয়। নিম্নে সেসব বিষয়ে আলোচনা করা হলো—

ইতিকাফকারীর জন্য যেসব কাজ করা জায়েজ :

ইতিকাফকারীর জন্য মসজিদে পানাহার ও ঘুমানোর অনুমতি আছে। তবে মসজিদের পবিত্রতা রক্ষণাবেক্ষণ করতে হবে।

এ ব্যাপারে সব ইমামদের ঐকমত্য আছে। তবে এ ব্যাপারে সতর্ক হওয়া উচিত;  কেননা আল্লাহর প্রতি একাগ্রচিত্ত ও একনিষ্ঠভাবে মনোনিবেশের জন্য কম খাওয়া, কম ঘুমানো সহায়ক বলে বিবেচিত।

আর জরুরি কাজের জন্য মসজিদের বাইরে যাওয়াও বৈধ। নিজ পরিবারের লোকদের বিদায় জানানোর জন্য বের হওয়া জায়েজ আছে।

তবে বিনা প্রয়োজনে বের না হওয়াই ভালো।

এ ছাড়া গোসল করা, চুল আঁচড়ানো, তেল ও সুগন্ধি ব্যবহার, ভালো পোশাক পরা—এসবের  অনুমতি আছে। আয়েশা (রা.) বর্ণিত হাদিসে এসেছে, তিনি মাসিক অবস্থায় নবী (সা.)-এর মাথার কেশ বিন্যাস করে দিতেন, যখন রাসুল (সা.) মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় থাকতেন, আয়েশা (রা.) তাঁর কক্ষে থাকা অবস্থায় রাসুল (সা.)  মাথার নাগাল পেতেন। (বুখারি, হাদিস : ২০৪৬)

ইতিকাফকারীর পরিবার তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে পারবে, কথা বলতে পারবে।

কেননা নবী (সা.)-এর স্ত্রীরা  ইতিকাফকালীন তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতেন। কিন্তু সাক্ষাৎ দীর্ঘ না হওয়া বাঞ্ছনীয়।

যে কাজ দ্বারা ইতিকাফ ভঙ্গ হয় :

ইতিকাফের স্থান থেকে ইসলামসম্মত প্রয়োজন বা স্বাভাবিক প্রয়োজন ছাড়া বের হয়ে গেলে তবে ইসলামসম্মত প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে বের হওয়া যায়।

স্ত্রী সহবাস করলে, চাই বীর্যপাত হোক বা না হোক। ইচ্ছাকৃত হোক বা ভুলক্রমে হোক।

সহবাসের আনুষঙ্গি কাজ যেমন চুম্বন, আলিঙ্গন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত হলে ইতিকাফ নষ্ট হয়ে যাবে।

তবে চুম্বন ইত্যাদির কারণে বীর্যপাত না হলে ইতিকাফ বাতিল হবে না। তবে ইতিকাফ অবস্থায় এসব করা হারাম। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর তোমরা তোমাদের স্ত্রীদের যৌন মিলন করো না যখন তোমরা মসজিদে ইতিকাফে থাকো।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

এ ছাড়া পাগল হয়ে গেলে, নারীদের হায়েজ-নেফাস হলে এবং কেউ ধর্মত্যাগী (মুরতাদ) হলে ইতিকাফ ভেঙে যায়।

মসজিদ থেকে বের হওয়ার বিধান :

১.  ইতিকাফকারী যদি বিনা প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হয় তাহলে তার ইতিকাফ ভেঙে যাবে।

২.  আর ইতিকাফের স্থান থেকে যদি মানবীয় প্রয়োজন মিটানোর জন্য বের হয় তাহলে ইতিকাফ ভঙ্গ হবে না।

৩.  মসজিদে থেকে পবিত্রতা অর্জন সম্ভব না হলে মসজিদ থেকে বের হওয়ার অনুমতি আছে।

৪.  বাহক না থাকার কারণে ইতিকাফকারীকে যদি পানাহারের  প্রয়োাজনে  বাইরে যেতে হয় অথবা মসজিদে খাবার গ্রহণ করতে লজ্জা বোধ হয়, তাহলে এরূপ প্রয়োাজনে বাইরে যাওয়ার অনুমতি আছে।

৫.  যে মসজিদে ইতিকাফে বসেছে সেখানে জুমার নামাজের ব্যবস্থা না থাকলে জুমার নামাজ আদায়ের প্রয়োজনে মসজিদ থেকে  বের হওয়া ওয়াজিব এবং আগেভাগেই রওনা হওয়া তার জন্য মুস্তাহাব।

৬.  ইসলামসমর্থিত ওজরের কারণে ইতিকাফকারী মসজিদ থেকে বের হতে পারে।

৭.  কোনো নেকির কাজ করার জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন রোগী দেখতে যাওয়া, জানাজায় উপস্থিত হওয়া ইত্যাদি। আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘ইতিকাফকারীর জন্য সুন্নত হলো, রোগী দেখতে না যাওয়া, জানাজায় অংশ গ্রহণ না করা, স্ত্রী স্পর্শ না করা এবং সহবাস না করা এবং খুব বেশি প্রয়োজন না হলে মসজিদ থেকে বের না হওয়া।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ২৪৭৩)

৮.  ইতিকাফ-বিরুদ্ধ কোনো কাজের জন্য ইতিকাফকারীর মসজিদ থেকে বের হওয়া বৈধ নয়। যেমন ক্রয়-বিক্রয়, স্বামী-স্ত্রীর মিলন ইত্যাদি।

ইতিকাফকারীর জন্য যা যা মাকরুহ :

ইতিকাফ অবস্থায় চুপ থাকলে সওয়াব হয়, এই মনে করে চুপ থাকা মাকরুহে তাহরিমি। বিনা প্রয়োজনে পার্থিব কোনো কাজে লিপ্ত হওয়া মাকরুহে তাহরিমি। যেমন কেনাবেচা করা ইত্যাদি। তবে একান্ত প্রয়োজনবশত, যেমন: ঘরে খাবার নেই এবং সে ছাড়া অন্য কোনো বিশ্বস্ত মানুষও নেই—এরূপ অবস্থায় মসজিদে মালপত্র উপস্থিত না করে কেনাবেচার চুক্তি করতে পারে।
 

মন্তব্য

আল্লাহর জিকিরে অন্তরের প্রশান্তি

মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা
শেয়ার
আল্লাহর জিকিরে অন্তরের প্রশান্তি

ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ তখনই লাভ করা যায়, যখন তার উপযুক্ত কারণগুলো পাওয়া যায়। একজন মুসলমানের কর্তব্য হলো, এই কারণগুলো অর্জনের চেষ্টা করা, যাতে সে সুখময় জীবন উপভোগ করতে পারে।

নামাজ : নামাজের মাধ্যমে মুমিনের হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। হাদিস শরিফে এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বিলাল (রা.)-কে বলতেন, ‘হে বেলাল, আজান দাও, আমরা নামাজের মাধ্যমে প্রশান্তি লাভ করব।

’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৯৮৬)

এর দ্বারা বোঝা যায়, মহান আল্লাহ নামাজে প্রশান্তি রেখেছেন। যে ব্যক্তি তা পরিপূর্ণ হক আদায় করে পালন করতে পারবে, সে ইবাদতের স্বাদ পাবে।

ইবনুল কাইয়্যিম (রহ.) বলেন, ‘নামাজ সেই ব্যক্তির পাপ মোচন করে, যে তার হক আদায় করে পূর্ণ খুশুখুজু নিয়ে পড়ে এবং আল্লাহর সামনে দাঁড়ায় হৃদয় ও দেহের উপস্থিতিসহ। যখন সে নামাজ শেষ করে, তখন নিজেকে হালকা অনুভব করে, যেন তার সব বোঝা নামাজের মাধ্যমে দূর হয়ে গেছে।

এতে সে প্রশান্তি, আনন্দ ও স্বস্তি অনুভব করে, এমনকি সে চায় যে নামাজ কখনো শেষ না হোক। কারণ নামাজই তার চোখের শীতলতা, আত্মার প্রশান্তি, অন্তরের জান্নাত এবং দুনিয়ার বিশ্রামস্থল...।

নবীজির সাহাবিরা নামাজে পরম শান্তি অনুভব করতেন। যেমন—আব্দুল্লাহ ইবনু যুবাইর (রা.) নামাজে এতটাই খুশুখুজু রাখতেন যে মনে হতো তিনি একটি কাঠের গুঁড়ি।

তিনি সিজদায় গেলে চড়ুই পাখি তাঁর পিঠে বসে যেত, যেন তিনি কোনো গাছের ডাল।

কোরআন পাঠ : আল্লাহর কালাম তথা পবিত্র কোরআন পাঠে অপূর্ব সৌন্দর্য, আনন্দ ও প্রশান্তি রয়েছে। যখন আল্লাহর কালাম জিহ্বায় উচ্চারিত হয়, কানে বাজে, তখন অন্তর নরম হয়ে যায়, দেহ প্রশান্ত হয় এবং হৃদয় পরিতৃপ্ত হয়। কারণ প্রেমিকদের কাছে তাদের প্রিয়তমের বাণীই সর্বাধিক মধুর। এই স্বাদ অনুভব করতে অন্তরকে অধিক কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে পবিত্র করতে হয়।

যার অন্তর যত পবিত্র হবে, তার প্রেম তত গভীর হবে। তার তিলাওয়াতের আগ্রহ ও প্রশান্তি তত বৃদ্ধি পাবে, ফলে সে যতই তিলাওয়াত করবে, ততই তার তিলাওয়াতের স্পৃহা বৃদ্ধি পাবে। উসমান ইবনে আফফান (রা.) বলতেন, ‘যদি আমাদের হৃদয় পবিত্র হতো, তবে আমরা কখনো আমাদের প্রতিপালকের বাণীতে পরিপূর্ণ তৃপ্তি অনুভব করতাম না। আমি তো অপছন্দ করি সেই দিনকে, যখন আমি মুসহাফের (কোরআনের) দিকে তাকাতে পারি না।’ (আল জামি‘লিশুআবিল ঈমান : ৩/৫১০)

পবিত্র কোরআনের তিলাওয়াত এবং তা নিয়ে চিন্তা-ভাবনার মধ্যে এমন সুখ রয়েছে, যা অন্য কিছুতে নেই। মুমিন যদি প্রকৃত ঈমান রাখে, তার হৃদয় বিশুদ্ধ হয়, তবে সে কখনো কোরআন শুনে তৃপ্ত হবে না।

আল্লাহর জিকির : আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে মুমিন হৃদয়ে প্রশান্তি আসে। অন্তর জীবিত হয়। এটি এমন এক আমল, যা সবচেয়ে কম কষ্টসাধ্য, অথচ সবচেয়ে বেশি সুস্বাদু ও আত্মার ঘোরাক। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর স্মরণে যাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রেখ, আল্লাহর স্মরণেই অন্তর প্রশান্ত হয়।’ (সুরা : রাআদ, আয়াত : ২৮)

দান ও সহমর্মিতা : আল্লাহর সন্তুষ্টির আশায় অর্থ ব্যয়ের মধ্যেও এক অনন্য সুখ রয়েছে। তাই তো সাহাবায়ে কিরাম তাদের প্রিয় ও মূল্যবান জিনিসও আল্লাহর রাস্তায় দান করে দিতে দ্বিধাবোধ করতেন না।

আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘তোমরা যা ভালোবাস তা থেকে ব্যয় না করা পর্যন্ত তোমরা কখনো পুণ্য লাভ করবে না।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৯২) অথবা ‘কে সে ব্যক্তি যে আল্লাহ তাআলাকে উত্তম ঋণ প্রদান করবে? তিনি তার জন্য তা বহু গুণে বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ২৪৫) আয়াত অবতীর্ণ হলে আবু তালহা (রা.), যার একটি ফলের বাগান ছিল, বললেন, হে আল্লাহর রাসুল! আমার বাগানটি আল্লাহ তাআলার পথে দান করে দিলাম। আমি গোপনে এটি দান করতে পারলে এর প্রকাশ্য ঘোষণা দিতাম না। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, তোমার আত্মীয়-স্বজনের মধ্যে তা বণ্টন করে দাও। (তিরমিজি, হাদিস : ২৯৯৭)

তা ছাড়া যারা মানুষের উপকার করে, মানুষের প্রতি দয়া করে, মহান আল্লাহও তাদের প্রতি দয়া করেন। ফলে তারা ঈমানের স্বাদ পায়, ইবাদতে প্রফুল্লতা অনুভব করে।

আল্লাহ আমাদের সবাইকে ইবাদতের প্রকৃত স্বাদ আস্বাদন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

 

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সর্বশেষ সংবাদ