দাঁত ভালো রাখতে সকালে দশন-সংস্কার চূর্ণ, পেট পরিষ্কার রাখার জন্য ত্রিফলা ভেজানো পানি, ভরপেট খাবারের পর লবণ ভাস্কর চূর্ণ কিংবা স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর জন্য ব্রাহ্মী রসায়ন—এসবই কবিরাজি চিকিৎসার দাওয়াই। কবিরাজি চিকিৎসা কয়েক হাজার বছরের পুরনো। এর উদ্ভবও হয়েছিল ভারতবর্ষে। একসময় গ্রামগঞ্জে চিকিৎসার একমাত্র ভরসা ছিলেন কবিরাজরা।
আধুনিক হাসপাতাল কিংবা ওষুধের দোকান সহজলভ্য হওয়ার আগে রোগবালাই হলে মানুষ ছুটে যেত কবিরাজের কাছে। গাছ-গাছড়া, শিকড়-বাকড় আর ভেষজ উপাদান দিয়ে তাঁরা চিকিৎসা করতেন। যুগ বদলেছে, আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত হয়েছে, কিন্তু তবু কবিরাজের প্রতি মানুষের আগ্রহ একেবারে হারিয়ে যায়নি। বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের গ্রামগঞ্জে এখনো এই চিকিৎসা পদ্ধতিটি বেশ জনপ্রিয়।
কবিরাজদের চিকিৎসার মূল ভিত্তি আয়ুর্বেদ ও ইউনানি শাস্ত্র। আয়ুর্বেদ শব্দটি দুটি সংস্কৃত শব্দ ‘আয়ু’ ও ‘বেদ’ থেকে এসেছে। এখানে ‘আয়ু’ অর্থ ‘জীবন’ এবং ‘বেদ’ অর্থ ‘জ্ঞান’ বা ‘বিদ্যা’। অর্থাৎ যে জ্ঞানের মাধ্যমে জীবের কল্যাণ সাধন হয় সেটাই আয়ুর্বেদ।
এই পদ্ধতিতে শরীরের ভারসাম্যকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হয়। রোগের ধরন বুঝে তাঁরা ভেষজ ওষুধ নির্ধারণ করেন, যা সাধারণত গাছের শিকড়, ছাল, পাতা, ফল ও বীজ দিয়ে তৈরি হয়। অনেক সময় মধু, দুধ কিংবা ঘি-ও মিশিয়ে দেওয়া হয়, যাতে ওষুধের কার্যকারিতা বাড়ে। শুধু শারীরিক অসুস্থতা নয়, কবিরাজরা মানসিক ও আত্মিক সুস্থতার দিকেও নজর দিতেন। তাঁদের মধ্যে অনেকেই ঝাড়ফুঁক ও তাবিজ-কবচের চর্চা করেন।
কালের পরিক্রমায় আধুনিক চিকিৎসাব্যবস্থার বিস্তারে কবিরাজদের গুরুত্ব অনেকটা কমেছে। তার পরও অনেক মানুষ এখনো বিকল্প চিকিৎসা হিসেবে তাঁদের দ্বারস্থ হয়, বিশেষ করে যখন আধুনিক ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার ভয় থাকে। সরকারও ভেষজ চিকিৎসাকে উৎসাহিত করছে।
বর্তমানে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান আয়ুর্বেদ ও ইউনানি চিকিৎসার ওপর গবেষণা এবং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করেছে। তবে কবিরাজদের মধ্যেও ভেজাল ওষুধ ও অপেশাদার চিকিৎসকের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলছে। দেশের বিভিন্ন বন-জঙ্গলে একসময় গন্ধগোকুলের দেখা মিলত। প্রাণীটিকে অঞ্চলভেদে তাল খাটাস বা ভাম অথবা নঙ্গর বলা হয়ে থাকে।
অবৈজ্ঞানিক কবিরাজি চিকিৎসার অবাধ শিকার হওয়ার কারণে এই প্রাণীটির অস্তিত্ব আজ প্রায় নির্মূলের পথে। সে জন্য অনেক পরিবেশবিদ কবিরাজি চিকিৎসাকে অনুৎসাহিত করেন।