<p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">বাংলাদেশের উপকূলবর্তী অঞ্চলে অবস্থিত একটি প্রশস্ত বন সুন্দরবন। এটি ম্যানগ্রোভ বন নামেও পরিচিত।  এর আয়তন প্রায় ১০ হাজার বর্গকিলোমিটার। মোট আয়তনের ৪.০৭ শতাংশ ম্যানগ্রোভ বন। এসব বনের বেশির ভাগ এলাকায় জোয়ার-ভাটা হয়। ফলে এই বনের গাছপালা বেশ লবণাক্ততা সহনশীল হয়ে থাকে। সুন্দরী, গেওয়া, গরান, বাইন, ধুন্দুল, কেওড়া, গোলপাতা ইত্যাদি এই বনের প্রধান বৃক্ষ। এখানকার উল্লেখযোগ্য বন্য প্রাণী হলো বেঙ্গল টাইগার, চিত্রা হরিণ, বানর ইত্যাদি। সুন্দরবনে প্রায় ২৮৯ প্রজাতির স্থলজ প্রাণীর বসবাস। এর মধ্যে ৪২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, আট প্রজাতির উভচর ও মাছসহ ২১৯ প্রজাতির জলজ প্রাণী আছে। এখানে প্রায় ৫০ প্রজাতির পাখির বাস। একটি তথ্য মতে, সুন্দরবনে হুমকির মুখে আছে দুই প্রজাতির উভচর, ১৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৫ প্রজাতির পাখি ও পাঁচ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী। ১৯৯৬ সালে সুন্দরবনে তিনটি অভয়ারণ্য প্রতিষ্ঠা করা হয়। ২০১২ সালে এখানে তিনটি ডলফিন অভয়ারণ্য করা হয়। ২০১৪ সালে সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডকে মেরিন প্রটেক্টেড এরিয়া ঘোষণা করা হয়।  ১৯৯২ সালে এটি ৫৬০তম রামসার সাইট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে। ১৯৯৭ সালে ইউনেসকো ৭৯৮তম বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">উপকূলবর্তী হওয়ায় এই বনটি সমুদ্র দ্বারা প্রভাবিত। সৈকত, মোহনা, জলাভূমি, মাটির প্রকৃতির কারণে এটি একটি স্বতন্ত্র বাস্তুতন্ত্র গঠন করেছে। এর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব রয়েছে। ইউনেসকোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির কারণে সুন্দরবনের ৭৫ শতাংশ ধ্বংস হয়ে যেতে পারে। বিভিন্ন সময়ে আইলা, আম্ফান, ইয়াসের মতো ঘূর্ণিঝড়ের কারণে সুন্দরবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে বনে লবণাক্ত পানি প্রবেশ করে। মিষ্টি পানির প্রবাহ কমে যায়। এতে সুন্দরবনের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যায়। ফলে সুন্দরী, কেওড়া, গোলপাতাসহ বিভিন্ন গাছ মারা যায়। কিছুদিন আগে ঘূর্ণিঝড় রিমালের কারণেও সুন্দরবনের অনেক জায়গা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">ঘূর্ণিঝড় রিমালের সময় উঁচু জোয়ার হয়। জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটে। স্বাদু পানির উৎস শতাধিক পুকুর তলিয়ে যায়। একটি পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, রিমালের আঘাতের পর ১৩২টি মৃত বন্য প্রাণী উদ্ধার করে বন বিভাগ। এর মধ্যে ১২৭টি মৃত হরিণ, চারটি মৃত বন্য শূকর ও একটি অজগর রয়েছে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi"><img alt="সুন্দরবনের বাস্তুতন্ত্রে বন্যার প্রভাব" height="300" src="https://cdn.kalerkantho.com/public/news_images/share/photo/shares/1.Print/2024/09.September/02-09-2024/5.jpg" style="float:left" width="500" />সম্প্রতি পূর্ণিমার জোয়ার, ভারি বৃষ্টি ও পূর্বাঞ্চলের বন্যার কারণে সুন্দরবন অঞ্চলে পানির চাপ বেড়েছে। সেখানে জোয়ারের সময় স্বাভাবিকের চেয়ে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় পানি প্রবাহিত হয়েছে। কয়েক ফুট উচ্চতার পানিতে সুন্দরবন তলিয়ে যায়। সেখানে দুই থেকে চার ফুট উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসও হয়। তবে কোনো বন্য প্রাণী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। উঁচু টিলা থাকার কারণে বন বিভাগও বন্য প্রাণীর তেমন কোনো ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করছে না বলে পত্রিকায় প্রকাশ।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">গ্রান্থাম রিসার্চ ইনস্টিটিউট অন ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড দ্য এনভায়রনমেন্ট এবং সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ ইকোনমিকসের প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকের বেশি মানুষ বন্যার ঝুঁকিতে রয়েছে। এতে বলা হয়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশে বন্যা সংকট আরো ভয়াবহ হতে পারে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">এ অবস্থায় সুন্দরবনের বন্য প্রাণীদের জন্য উঁচু টিলা ও শেল্টার রাখা হলে এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বন্য প্রাণী বাঁচিয়ে আনা সম্ভব। এ ছাড়া সুন্দরবনে যেহেতু মিঠা পানির অভাব, তাই সেখানে মিঠা পানির যেসব উৎস রয়েছে, যেমন</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:"Times New Roman","serif"">—</span></span><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">পুকুর, সেসবের পার উঁচু করে দিতে হবে। বন্যা মোকাবেলায় সবাইকে আরো দক্ষ হতে হবে।</span></span></span></span></p> <p><span style="font-size:11pt"><span style="font-family:"Calibri","sans-serif""><span style="font-size:14.0pt"><span style="font-family:SolaimanLipi">লেখক : শিক্ষক ও গবেষক </span></span></span></span></p> <p> </p>