সারা দিন মাসাই মারা ন্যাশনাল পার্কে গেম ড্রাইভ বা সাফারি শেষে জিপচালক বলেছিল, আফ্রিকার বিখ্যাত মাসাই গোত্রের একটি গ্রামে নিয়ে যাবে। দিনের আলো তখন ম্লান হতে চলেছে। একটু পরই নামবে সন্ধ্যা। জেঁকে বসবে ঠাণ্ডা।
কেনিয়ার রঙিন গ্রামে
- পূর্ব আফ্রিকার প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র কেনিয়া। বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি, বিশাল বনভূমি, বনাঞ্চলঘেরা কেনিয়ার গা-ভরা পুঁতির গয়না ও জমকালো সাজের মাসাই ও তাদের গ্রাম দেখে এসে লিখেছেন ফাতিমা জাহান

যাওয়ার সময় ধুলা ওড়ানো মেঠোপথ রোধ করে দাঁড়াল একপাল ভেড়া। প্রায় আড়াই-তিন শর মতো হবে। আমি এত পশু একসঙ্গে আগে কখনো দেখিনি। পালের পেছনে দূরে লাল-কালো রঙের বড় বড় চেক কাপড় পরা একজন মাসাই ভেড়াদের নিয়ে আবাসে ফিরছে।
সারা দিন জিপে বেড়ানোর সময় স্পেনের একটি মেয়ের সঙ্গে খুব বন্ধুত্ব হয়ে গেছে। ওর নাম অ্যালিসিয়া। ছুটি কাটাতে কেনিয়ায় এসেছে। ভারতীয় এক ছেলের সঙ্গেও বেশ কথাবার্তা হয়েছে। তাঁর নাম বিজয়। কর্মসূত্রে সে প্রায়ই কেনিয়ায় আসে। সে কারণেই আমার আর অ্যালিসিয়ার মতো যা দেখছে তাতেই অবাক হচ্ছে না।

মাসাই গ্রামে জিপ থেকে নামতে নামতেই একদল রঙিন পোশাক পরা মাসাই পুরুষ আমাদের স্বাগত জানাল। এ দেশে সবে বর্ষাকাল শুরু হয়েছে। আশপাশের তৃণভূমি সবুজ হয়ে আসছে। আমাদের বসিয়ে গ্রামপ্রধান নিজের পরিচয় দিলেন। তাঁর নাম রাফেল। ইংরেজি বেশ বলে। বয়স ৪৫, কিন্তু দেখে বোঝার উপায় নেই। ততক্ষণে মাসাই পুরুষরা দল বেঁধে নিজেদের সংগীত গাওয়া শুরু করেছে। সঙ্গে দুলে দুলে নাচতে নাচতে সারিবদ্ধভাবে আমাদের সামনে এসে আবার পেছনে চলে গেল, আবার সামনে এলো। এভাবেই তাঁরা অতিথিদের অভ্যর্থনা জানায়। এদের সবার পরনে লাল, ম্যাজেন্টা, কমলা, খয়েরি চেক কাপড় আর পুঁতির গয়না। সবার মাথা কামানো, হাতে লম্বা লাঠি। এরা মূলত পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করে। তাই হাতে লাঠি রাখতে হয়। গান ও নাচের মধ্যে এরা এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যে যত উঁচুতে পারে লাফ দিতে লাগল। এটি তাদের সংস্কৃতির অংশ। যে যত উঁচুতে লাফ দিতে পারবে, নিয়ম অনুযায়ী বিয়ের জন্য সে তত উপযুক্ত পাত্রী পাবে। এখানে বিয়ের সময় কন্যার পিতাকে যৌতুক হিসেবে দিতে হয় ভেড়া। যার যত বেশি ভেড়া সে তত জলদি শাদি মোবারক সম্পন্ন করতে পারবে। জলদি শাদি করার কতই না তাড়া এদের! শুধু কি তাই, একজন পুরুষের যৌতুক দেওয়ার সামর্থ্য থাকলে একাধিক বিবাহও করতে পারে। এতে স্ত্রীর কোনো আপত্তি থাকে না। আগের যুগে সিংহ বধ করে আসাকে বিরাট সাহসিকতার কাজ গণ্য করতেন কন্যার পিতারা। ওই শিকারি পুরুষের হাতেই কন্যাকে সমর্পণ করতেন। এখন সে রেওয়াজ উঠে গেছে। সিংহ বধ এখন সরকারিভাবে নিষিদ্ধ। কন্যার পিতাকে খুশি করতে তাই যৌতুক হিসেবে এখন ভেড়া দিতে হয়। আমি রাফেলকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি কয়টা বিয়ে করেছ?’ বলল, ‘আমার দুজন স্ত্রী।’ অ্যালিসিয়া বলে উঠল, ‘আমি একটাই সামলাতে পারিনি, ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে। তুমি দু-দুটো একসঙ্গে সামলাচ্ছ? বাপরে!’ আমরা সজোরে হেসে উঠলাম। সামনে একদল মাসাই শিশু খেলা করছে, আমি ওদের সঙ্গে ছবি তুলতে চাইলে খুব আগ্রহভরে আমার পাশে এসে বসল। অথচ ছবি তোলায় তাদের মন নেই, তারা আমার পেছনে বসে সমানে আমার আর অ্যালিসিয়ার চুল টানতে লাগল। মজা পেয়ে আমরা হেসে গড়াগড়ি খেলাম। বিজয় বলল, ‘এদের চুল কোঁকড়া ও রুক্ষ বলে এরা ট্যুরিস্টদের সিল্কি চুল ছুঁয়ে দেখতে চায়।’ বুঝলাম এরা শিশু, তাই কৌতূহল দমিয়ে রাখতে পারেনি। প্রাচীন পদ্ধতি তারা এখনো ধরে রেখেছে। তার প্রমাণ একজন মাসাই পুরুষ কাঠের ভেতরে ছিদ্র করে আরেকটি পেন্সিলের মতো কাঠ ঢুকিয়ে আগুন জ্বালিয়ে দেখাল।
এরপর রাফেল আমাদের মাটির ছোট ছোট ঘর দেখিয়ে বলল, তোমরা যেকোনো মাসাইয়ের ঘরে গিয়ে তাদের জীবনযাপন পদ্ধতি দেখতে পারো। আমার দিকে ঘুরে তাকিয়ে বলল, ‘তুমি কোন ঘরটা দেখতে চাও?’ আমার আবার অল্পতে হয় না, তাই বললাম, ‘আমি তোমার মানে গোত্রপ্রধানের ঘর দেখতে চাই।’ রাফেল একটু থতমত খেয়ে গেল। এমন আবদার বোধকরি তার কাছে কেউ করেনি। বলল, ‘একটু সময় দাও, আমি ভেতর থেকে আসছি।’ তিন মিনিট পর রাফেলের ডাকে ওর মাটির কুটিরে ঢুকলাম। প্রথমেই রান্নাঘর। এরা সাধারণত জ্বালানি হিসেবে কাঠ ব্যবহার করে। কারো টাকা থাকলে শহর থেকে কয়লাও নিয়ে আনে। রাফেলের বাড়িতে রান্না শেষ হওয়ায় চুলা বন্ধ করে দিয়েছে। অল্প কয়েকটা হাঁড়ি আর বাসন সামনের তাকে গুছিয়ে রাখা। কুটিরের দেয়াল মাটি ও গোবরে তৈরি। চিকন বাঁশের মতো কাঠ দিয়ে তৈরি লম্বা ছাদ। এতে মাটিসুদ্ধ ঘাস রাখা, যাতে বাতাসে উড়ে না যায়। মাসাইদের জীবনযাপন খুবই মৌলিক ও সরল। সাধারণত এরা ভুট্টার আটা দিয়ে উগালি বা কেকের মতো মণ্ড তৈরি করে যেকোনো সবজির স্টু-এর সঙ্গে খায়। মাংস খায় উত্সবে। নিতান্ত প্রয়োজন না পড়লে দূরের বাজারে যায় না। পাশের পাহাড়ে শাক-সবজি, ভুট্টার চাষ হয়। মাসাই গোষ্ঠী পশুপালন করে বলে কৃষিকাজে তাদের ধারণা কম।
গ্রামে একটা প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। প্রাথমিকে পড়া শেষ হলে কারো আরো পড়ার ইচ্ছে এবং সামর্থ্য থাকলে জেলা শহরে যায়। এ গ্রামে কোনো হাসপাতাল নেই। রোগব্যাধি হলে খায় গাছগাছড়া থেকে তৈরি ভেষজ ওষুধ। খাওয়ার পানি দূরের নদী থেকে বহন করে আনে মেয়েরা। গ্রামে বিদ্যুত্ এসেছে, তবে সবার ঘরে নেই। আশ্চর্য হলাম গ্রামের কোথাও কোনো ময়লা-আবর্জনা নেই। আফ্রিকার কোথাও দেখিনি। এরা খুব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন জাতি। উচ্চৈঃস্বরেও কেউ কারো সঙ্গে কথা বলে না।
রাফেলের ছোট ঘরের ভেতরে দুটো পার্টিশন দেওয়া। একটা তাদের শোবার ঘর, আরেকটিতে বাচ্চারা থাকে। একেকটির আয়তন একটি কুইন সাইজ বিছানার সমান। রাফেলের আরেক স্ত্রীকে আলাদা ঘর করে দিয়েছে। সেখানেও রাফেল মাঝে মাঝে গিয়ে থাকে। পঞ্চদশ শতকে নীল নদের তীর হতে আসা এই মাসাই গোষ্ঠীর নারীদের কোনো সমস্যা নেই স্বামীর বহুবিবাহ নিয়ে। কেনিয়ার অন্য গোত্রের চেয়ে মাসাই গোষ্ঠীর ধর্ম আলাদা। তাদের ঈশ্বরও আলাদা। রাফেল বলল, তারা বিশ্বাস করে দুজন ঈশ্বর আছে, যারা তাদের পরিচালিত করে। একজন কালো ঈশ্বর যে ভালো, আরেকজন লাল ঈশ্বর যে মন্দ।
আশপাশে শুধু পুরুষ মাসাই দেখে আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘গ্রামের মেয়েরা কোথায়?’ বিজয় মাঝখান দিয়ে বলে উঠল, ‘তারা সবাই কাজে ব্যস্ত। কেউ রান্নার কাজে, কেউ সন্তান পালনে, কেউবা ভাঙা ঘর মেরামতের কাজে এদিকে-ওদিকে আছে।’ আমি তাজ্জব বনে গেলাম। আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘তাহলে পুরুষরা কী করে? বিজয় বলল, ‘এখন তারা কী করছে? গায়ে হাওয়া লাগিয়ে বেড়াচ্ছে। সকালে পশু নিয়ে বের হয় আর সন্ধ্যায় ফেরে। এর বাইরে তাদের কোনো কাজ নেই।’
আমি ঘুরে রাফেলকে বললাম, ‘আমি গ্রামের মেয়েদের দেখতে চাই।’ এবার রাফেল আমাকে গ্রাম থেকেই না তাড়িয়ে দেয়। সেই তখন থেকে একটার পর একটা ঝামেলা পাকাচ্ছি। বিজয় আবার ফোড়ন কাটল, ‘মেয়েরা এখনো কাজেই ব্যস্ত, দেখো গিয়ে।’
পরিচ্ছন্ন গ্রামের কয়েকটা বাড়ি পার হয়ে দেখি কয়েকজন নারী একটা ঘরের সামনে পা লম্বা করে মেলে দিয়ে বসে হয় গল্প করছে, না হয় শিশুদের খাওয়াচ্ছে। বিকেল গড়িয়ে গিয়েছে, তাই আজকের কাজে ছুটি। রাফেল বলল, ‘এসো, তোমাদের গ্রামের অন্য নারীদের সঙ্গে দেখা করিয়ে দিই।’
আরেকটু এগিয়ে খোলা সবুজ মাঠ। দেখি কয়েকজন মাসাই নারী সারিবদ্ধভাবে বসে আছে। নিজেদের তৈরি হস্তশিল্প পুঁতির ব্রেসলেট, মালা, কানের দুল, খেলনা, চাবির রিং, কাঠের শোপিস, খেলনা, পুতুল, মুখোশ ইত্যাদি সাজিয়ে বসে আছে। আমি এই রঙিন পোশাক পরা নারীদের হস্তশিল্পের ভুবনে ডুব দিলাম। যেখান থেকে খালি হাতে ফেরা যায় না। হাতভরে হস্তশিল্পের জিনিসপত্র নিয়ে ফিরে এলাম মাসাই গ্রাম থেকে।
সম্পর্কিত খবর

পাহাড়িদের প্রাণের উৎসবে
- পার্বত্যাঞ্চলে নতুন বছরকে বরণ করার বর্ণাঢ্য উৎসব—বৈসাবি। গত বছর এই উত্সব ঘুরে এসে লিখেছেন এলিজা বিনতে এলাহি

আমাদের এই ব-দ্বীপটি আসলে একটি ভূ-স্বর্গ। এই ভূ-স্বর্গের একটি রঙিন ভুবন হলো পার্বত্যাঞ্চল। বৈচিত্র্যে ভরপুর। এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য, সংস্কৃতি, আচার-অনুষ্ঠান, সামাজিক প্রথা, উত্সব, খাদ্যাভ্যাস বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চল থেকে একেবারেই ভিন্ন।
সেই ছেলেবেলা থেকেই পহেলা বৈশাখে রাজধানীর মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশ নিচ্ছি। বৈশাখের সময় বাংলাদেশজুড়েই ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের নানা উৎসবের রেওয়াজ। পার্বত্যাঞ্চলে নতুন বছরকে বরণ করার বর্ণাঢ্য উৎসব—বৈসাবি।

বেশ কয়েক বছর ধরেই পরিকল্পনা করছিলাম বৈসাবি উত্সব দেখতে যাব। সে হিসেবে গন্তব্যস্থল রাঙামাটি।
পরিকল্পনা মাফিক ঢাকা থেকে উৎসবের আগের দিন রাতে গিয়ে উপস্থিত হলাম রাঙামাটি শহরে। সেখানকার একটি আবাসন থেকে ভোর ৬টায় রওনা হলাম রাজবাড়ির ঘাটে। হ্রদ-পাহাড়ের শহর রাঙামাটি বিখ্যাত তার সৌন্দর্যের কারণে। শহরের প্রাণকেন্দ্র বনরূপায় রয়েছে শহরের সবচেয়ে প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী পাহাড়ি বাজার বনরূপা বাজার। সেদিনের বাজার তখনো জমেনি। ঝকঝকে মেঘহীন সকাল। পথে যেতে যেতে দেখছি, কলাপাতায় নানা ফুল সাজিয়ে লাল, হলুদ ও নানা রঙা থামি, শাড়ি, পাঞ্জাবি, ফতুয়া পরে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ যাচ্ছে ঘাটের দিকে। পুরো শহর মনে হচ্ছে রঙে মোড়ানো।

তিন দিনব্যাপী বৈসাবি উত্সবের প্রথম দিনকে বলা হয় ফুল বিজু। নদীতে ফুল ভাসিয়ে উদযাপন করা হয় ফুল বিজু। বছরের সব দুঃখ-কষ্ট ভাসিয়ে দিয়ে নতুন বছরকে স্বাগত জানানো হয় এই উৎসবে। আজ সেই দিন। যে ঘাটে গিয়ে উপস্থিত হলাম সেখান থেকে আরো দুটি ঘাট দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি ঘাটেই কলাপাতায় নানা রঙের ফুল হাতে নিয়ে নর-নারীর ভিড়।
সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির মিলনে পালিত হয় বিজু উত্সব। ফুল বিজু, মূল বিজু আর গোজ্যপোজ্য। এই উত্সবকে একেক নামে অভিহিত করে একেক সম্প্রদায়ের মানুষ। তবে বিজু উৎসব সব সম্প্রদায় একই দিনে পালন করে। চৈত্র মাসের শেষ দিনকে চাকমা সম্প্রদায় বলে মূল বিজু, আগের দিনকে ফুল বিজু আর পহেলা বৈশাখ পরিচিত গোজ্যপোজ্য দিন হিসেবে। ফুল বিজুতে অংশগ্রহণ করতে হলে পহেলা বৈশাখের দুই দিন আগেই উপস্থিত হতে হবে রাঙামাটি।
বিজু মানে আনন্দ, হৈ-হুল্লোড়, দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানো, খাওয়াদাওয়া, নতুন পোশাক পরা। বিজু মানে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি, সুখ-দুঃখ ভাগাভাগি করা। এ ছাড়া ফুল ভাসিয়ে দেওয়ার নানা অর্থ রয়েছে যেমন—নদী দেবীকে ফুল দিয়ে তুষ্ট করা, বুদ্ধকে নিবেদন করা। কয়েকজন কিশোরীকে দেখলাম মাটির পাত্রে জল সংগ্রহ করছে। কারণ জানতে চাইলে বলল, বাড়িতে বয়োজ্যেষ্ঠদের স্নানের জল নিয়ে যাবে। এতে পুণ্য হবে। চাকমা, মারমাদের কাছে খুব পবিত্র এই কাজ।
ঘাটের একপাশ থেকে অন্য ঘাটে যেতে ইচ্ছা করছিল। জনপ্রতি ৫ টাকা দিয়ে ভিন্ন ঘাটে যাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয়দের সঙ্গে উঠলাম নৌকায়। তিনটি ঘাটই ঘুরে দেখলাম। আমি ছাড়া বাকি সবাই স্থানীয়। কেউ কেউ ভীষণ আগ্রহ নিয়ে আমার সঙ্গে কথা বললেন। পোশাক আর কথায় বুঝতে পেরেছেন আমি অতিথি। নারীদের পরিহিত অলংকারগুলোর নাম জিজ্ঞাসা করলাম। উত্সবের নানা নাম ও পালন করার পদ্ধতি সেখানকার স্থানীয়জনদের থেকেই জেনেছি। ধীরে ধীরে সবাই ঘাট ত্যাগ করতে লাগল। স্থানীয় সাংবাদিক বিপ্লব বড়ুয়া আমাকে নিয়ে গেলেন চাকমা ও মারমাদের গ্রাম ঘুরে দেখতে। প্রায় প্রতিটি চাকমা ও মারমা বাড়ির আঙিনায় ফুল গাছ। বিজু উপলক্ষে দরজায় ফুল ও নিমপাতা ঝুলিয়ে দিয়েছে। গরু ও ছাগলের গলায় ফুলের মালা। সেখানকার একজন বললেন, আগে সিন্দুক-আলমারিতে নাকি কুরুক ফুল বেঁধে দেওয়া হতো। কুরুক হলো কুর্চি বা গিরি মল্লিকা। এর ফুল, ফল, বাকল সবই আমাশয়ের ওষুধ। চাকমা সাহিত্য ও গানে এই ফুলের জয়জয়কার।
দ্বিতীয় দিন থেকে শুরু হয় খাওয়াদাওয়া। উত্সবের মূল খাবার পাজন ত্যোন । এটি চাকমাদের ঐতিহ্যবাহী খাবার। সাতাশ পদের সবজি-শাক ও শুঁটকি দিয়ে পাজন ত্যোন রান্না করা হয়। বিভিন্ন ধরনের পিঠাও খাওয়া হয় এ সময়। আসলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উত্সবে এখন অনেক বদল এসেছে বললেন বিপ্লব বড়ুয়া। ফুল বিজুর দিনেই পাজন ত্যোন ও পিঠা খেয়েছি বিপ্লব বড়ুয়ার বাড়িতে। বিজু উত্সব চলাকালে কোনো জীবিত প্রাণী হত্যা করে না চাকমারা।
বৈসাবি শুধু উৎসব নয়, প্রকৃতির কাছে ফিরে যাওয়া, প্রকৃতির কাছে প্রার্থনা, প্রকৃতির কাছে নতি স্বীকার করা। বৈসাবি পার্বত্যাঞ্চলের প্রাণের উৎসব । শুধু পাহাড়ের নয়—এ আমাদের সবার নতুন বছর উদযাপনের প্রাচীন প্রথা। শুধু যে ফুল বিজুর রঙিন ভুবনে অবগাহন করেছি এমন নয়। আধবেলা ফুরোমন পাহাড়েও ঘুরে বেরিয়েছি। ফুরোমন পাহাড়ের চূড়া থেকে দেখেছি রাঙামাটি শহর।

গৃহে থাক বৈশাখী সাজ
- বাংলা নববষের্র প্রথম দিনটি উদযাপিত হয় আড়ম্বরের সঙ্গে। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় বর্ষবরণ। মঙ্গল শোভাযাত্রা, মেলা, পুতুল নাচ, লাঠিখেলাসহ দিনভর চলে নানা রকম অনুষ্ঠান। এই আনন্দে সেজে ওঠে আমাদের গৃহও। কেমন করে? জানাচ্ছেন চান্দ্রেয়ী মম

পহেলা বৈশাখ মানেই পুরনোকে ভুলে নতুন উদ্যমে এগিয়ে চলার আহ্বান। এর আয়োজন শুরু হয় মূলত চৈত্রসংক্রান্তির মধ্য দিয়ে। ঝেড়ে-মুছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নের পর চলে ঘর সাজানোর আয়োজন। এই দিন সবাই চেষ্টা করে বিভিন্ন দেশি উপকরণ ব্যবহার করে ঘর সাজাতে।
প্রবেশদ্বার
বাড়ির প্রবেশদ্বার থেকেই সাজসজ্জা শুরু করতে পারেন। প্রথমত দুই-তিনটা মাটির মালসা নিন। এগুলোর আকৃতি নির্ভর করবে বাড়ির আকারের ওপর।

বসার ঘর
বসার ঘরটাকে সাধারণত সবচেয়ে বেশি সুন্দর করে সাজানো হয়। কারণ অতিথিরা এ ঘরেই বেশির ভাগ সময় বসেন। জানালার পর্দাগুলো হতে পারে বিভিন্ন রঙের। সোফার কভারে একটু সফট টোনের রং ব্যবহার করা যায়। একটি কর্নারকে বড়-ছোট বিভিন্ন টবের গাছ, মানিপ্ল্যান্ট, ফার্ন ইত্যাদি দিয়ে সাজালে ঘরের আবহই বদলে যাবে। এর সামনে মাটির ঘোড়া, হাতি, পালকি, লণ্ঠন ইত্যাদি নানা শোপিস রাখা যায়। এই কর্নারের উল্টোদিকে ফ্লোরে ছোট ম্যাট্রেস দিয়ে তৈরি করা যায় একটি বসার স্পেস। তার ওপর চাদর দিয়ে কিছু ছোট-বড় কুশন রেখে দেওয়া যায় ভিন্নমাত্রা। সবাই যখন জমায়েত হবে তখন অল্প বয়সী বাচ্চারা এখানে বসতে পারবে।
খাবার ঘর
ডাইনিং স্পেসে টেবিলের চেয়ার কভার গ্রামীণ চেকের ছোট ছোট চেকের হালকা হলুদ, হালকা সবুজ রঙের কাপড় দিয়ে তৈরি করা যেতে পারে। টেবিলের রানার, ম্যাটও একই কাপড়ের হলে দেখতে ভালো লাগবে। খাবার পরিবেশনের সময় মাটির কাপ-পিরিচ, গ্লাস, জগ, প্লেট, বাটি ইত্যাদির সঙ্গে কাঠের চামচ বা নারকেলের মালা দিয়ে তৈরি চামচ ব্যবহার করা যায়। সাধারণত পহেলা বৈশাখে গরম থাকে। তাই অতিথিদের জন্য তেঁতুলের শরবত বা লেবুর শরবত তৈরি করে রাখা যেতে পারে।

শোবার ঘর
উত্সব পার্বণে সাধারণত দরজা-জানালার পর্দা বদলানো হয়, বিছানার চাদরও বদলে নেন অনেকে। পহেলা বৈশাখে রঙিন পর্দা ব্যবহার করতে পারেন। জানালা বা দরোজায় দুদিকে দুটি লাল পর্দা এবং মাঝে একটি হলুদ, একটি কমলা পর্দা দিয়ে সাজাতে পারেন। এ ছাড়া কমলা, হালকা সবুজ, হালকা নীল, সি গ্রিন ইত্যাদি মাল্টিকালার ব্যবহার করলে দেখতে ভালো লাগবে। এ ক্ষেত্রে বিছানার চাদর ক্রিম, অফ হোয়াইট বেছে নিতে পারেন। কেউ চাইলে নকশি কাঁথা স্টিচ করা বিছানার চাদর, ব্লক-বাটিকের চাদর, বালিশের কভার ব্যবহার করতে পারেন। এমনকি বিছানায় শীতল পাটিও বিছাতে পারেন। এ ছাড়া ঘরের এক কোনায় মাটির মালসায় জল দিয়ে ফুল, পাপড়ি, মোমবাতি ভাসিয়ে দিলে মন হবে ফুরফুরে।
পহেলা বৈশাখকে কেন্দ্র করে ঘর সাজানোর ক্ষেত্রে দেশি উপাদান ও উপকরণ ব্যবহার করতে পারেন। এতে দেশি আমেজটা বজায় থাকবে। চাইলে ঘরের মেঝেতে ছোট আকৃতির আলপনা করতে পারেন। এ ছাড়া ফুলদানিতে কিছু রজনীগন্ধার স্টিক দিয়ে দিতে পারেন। সন্ধ্যায় চন্দন কাঠের ধূপ জ্বালিয়ে রাখলে সুগন্ধির আমেজে জমে উঠবে বৈশাখী বৈঠক।
কোথায় পাবেন
হাতে তৈরি নানা রকম মুখোশ, পেইন্টিং, শোপিসগুলো সাধারণত নববর্ষের ১০-১৫ দিন আগে থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদে পাওয়া যায়। মাটির তৈরি বাসনকোসন ও মালসা পাবেন আড়ং, ভূমি, আর্টিসানসহ নানা দেশি ব্র্যান্ডের শো রুমে। দোয়েল চত্বর, মিরপুর-২, মিরপুর-১০ বিভিন্ন জায়গায় এগুলো কিনতে পাওয়া যায়। শাহবাগ ফুলের মার্কেট থেকে তাজা ফুল কিনে নিতে পারেন। গ্রামীণ চেক, হোমটেক্স, আড়ং ব্র্যান্ডের দোকান থেকে বিছানার চাদর, বালিশের কভার, পর্দা, চেয়ার কাভার, রানার, ম্যাট পাওয়া যাবে। শাঁখারীবাজারের দোকানগুলোয় পাওয়া যাবে বিভিন্ন সুবাসের ধূপধুনো।

ছুটি শেষে ফিরুন আগের রূপে
- ছুটিতে অনেকেই যান গ্রামের বাড়ি। শহুরে জীবনে অভ্যস্ত মানুষের জন্য রোদ, বৃষ্টি, কাদা, পানি ও ধুলাবালি অনেক সময় ত্বক, চুল, নখের ক্ষতির কারণ হতে পারে। ছুটি কাটিয়ে শহরে এসে ফিরুন আগের ধাঁচে। রূপবিশেষজ্ঞ শোভন সাহার পরামর্শ নিয়ে লিখেছেন অলকানন্দা রায়

ত্বকের যত্ন
গ্রামের খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়াতে ভালো লাগে সবারই। কড়া রোদ গায়ে লেগে অনেক সময় ত্বক পুড়ে কালচে হয়ে যায়। মুখ, হাত, কপাল, ঘাড়, গলায় ছোপ ছোপ দাগ কিংবা ঠোঁট ফাটার সমস্যাও দেখা দেয় অনেকের। শহরে ফিরে এসে প্রথমে মনোযোগ দিন সেসব সারিয়ে তুলতে।
চুলের যত্ন
সরাসরি সূর্যের আলো এবং তাপের কারণে চুলের ক্ষতি হয়। চুল রুক্ষ, লালচে ও ভঙ্গুর হয়ে পড়ে। চুলের গোড়ায় ঘাম ও ময়লা জমে। এ কারণে চুল পড়ার প্রবণতা বেড়ে যায়। এসব সমস্যা মোকাবেলায় নারকেল, অলিভ বা ক্যাস্টর অয়েল হালকা গরম করে চুলে ম্যাসাজ করুন। ডিম, দই, মধু বা অ্যালোভেরা দিয়ে হেয়ার মাস্ক তৈরি করেও মাথার ত্বক ও চুলে ব্যবহার করতে পারেন। রুক্ষতা বেশি হলে সালফেট-ফ্রি শ্যাম্পু ব্যবহার করুন। অতিরিক্ত

নখের যত্ন
খোলা মাঠ পেয়ে অনেকেই দৌড়ে বেড়ান কিংবা ছেলেমেয়েদের সঙ্গে খেলায় মেতে ওঠেন। পুকুরের জলে সাঁতার কাটেন। এ সময় হাত বা পায়ের নখের কোনায় কাদা, ময়লা ঢুকে যায়। এমনকি কাদায় থাকা জীবাণুতে আঙুলের ফাঁকে ইনফেকশনও হতে পারে। এমন হলে পেডিকিউর, মেনিকিউর করিয়ে নিন। গরম পানিতে লবণ, লেবুর রস ও শ্যাম্পু মিশিয়ে হাত-পা ভালো করে ভিজিয়ে রেখে ব্রাশ দিয়ে নখ ঘষে নিন। দুর্বল নখ কেটে ফেলুন। কোনায় ঢুকে থাকা ময়লা বের করে নিন। নখ শুষ্ক হলে নিয়মিত ময়েশ্চারাইজ করুন। লেবু ও বেকিং সোডা নখের হলদে ভাব দূর করতে সাহায্য করে। বড় ধরনের কোনো সমস্যা হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।
দাঁতের যত্ন
শহর থেকে গ্রামে বেড়াতে অনেকেই দাঁত নিয়ে সমস্যায় পড়েন। অনেক টিউবওয়েলের পানিতে আয়রন, আর্সেনিক থাকে। এই পানি পান করলে অনেক সময় দাঁত কালো হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে বেকিং সোডার সঙ্গে সামান্য লেবুর রস মিশিয়ে ব্রাশ করুন। তবে এটি সপ্তাহে ১-২ বারের বেশি করা উচিত নয়। এ ছাড়া স্ট্রবেরির সঙ্গে বেকিং সোডা মিশিয়েও দাঁত পরিষ্কার করে নিতে পারেন। চারকোল পাউডার দিয়ে ব্রাশ করলেও দাঁত বেশ ঝকঝকে হয়ে উঠবে। দাঁত পরিষ্কার রাখতে ভালোভাবে ব্রাশ ও ফ্লাশ করুন। লবণ-পানি দিয়ে গার্গল করুন। এতে দাঁতের ফাঁকে ময়লা জমে থাকলে দূর হবে। আপেল, গাজর, শসা দাঁত পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। খাদ্যতালিকায় এসব ফল ও শাকসবজি রাখতে পারেন।

গরমে আরামের পাঁচ পদ
- গরমের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। এ সময় পাতে রাখতে পারেন এমন সব পদ যেগুলো শরীরের জন্য আরামদায়ক। এমন পাঁচটি রেসিপি দিয়েছেন রন্ধনশিল্পী সুতপা দে

ডিমের বড়া দিয়ে কাঁচা আমের টক
এই পদটি খেতে একটু ব্যতিক্রমী ও দারুণ স্বাদযুক্ত। মাছের ডিমের বড়ার মচমচে স্বাদ আর কাঁচা আমের টক ঝাল ঝোল একসঙ্গে মিশে অসাধারণ একটা ফিউশন তৈরি করে
উপকরণ
মাছের ডিমের বড়ার জন্য, মাছের ডিম ১ কাপ (রুই, কাতলা বা যেকোনো), কাঁচা মরিচ ২টি (কুচি করা), লবণ স্বাদমতো, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, চালের গুঁড়া ২ টেবিল চামচ (কুড়মুড়ে করার জন্য), সরিষার তেল ভাজার জন্য
কাঁচা আমের টকের জন্য
কাঁচা আম ১টি (খোসা ছাড়িয়ে ফালি করে কাটা), পানি ২ কাপ, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ২টি, কালো সরিষা ১ চা চামচ, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো, চিনি ২ টেবিল চামচ
যেভাবে তৈরি করবেন
১. মাছের ডিম ভালো করে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিন।
২. একটি বাটিতে মাছের ডিম, কাঁচা মরিচ, হলুদ, লবণ, চালের গুঁড়া দিয়ে মাছের ডিম মিশিয়ে নিন।
৩. মাঝারি আঁচে কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে বড়া আকারে দিয়ে ভেজে তুলুন।
কাঁচা আমের টক রান্না
১. কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ ও কালো সরিষা ফোড়ন দিন।
২. এতে কাঁচা আম দিয়ে হালকা ভাজুন। এরপর হলুদ, লবণ ও পানি দিন।
৩. আম নরম হলে চিনি দিন ও কিছুক্ষণ ফুটতে দিন।
৪. টক একটু ঘন হলে মাছের ডিমের বড়াগুলো দিয়ে নেড়ে দিন। ২-৩ মিনিট দমে রেখে নামিয়ে ফেলুন।
৫. গরম গরম ভাতের সঙ্গে মাছের ডিমের বড়া দেওয়া কাঁচা আমের টক গরমকালে দারুণ লাগবে।
পোস্ত দিয়ে আলু ভাজি
পোস্ত দিয়ে আলু ভাজা একটি সহজ ও সুস্বাদু বাঙালি পদ।
উপকরণ
আলু ২টি (মাঝারি, লম্বা করে কাটা), পোস্ত (খসখসে দানা) ২ টেবিল চামচ, শুকনা মরিচ ২টি, কাঁচা মরিচ ১টি, সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো, হলুদ গুঁড়া সিকি আধা চামচ, কালো জিরা আধা টেবিল চামচ।
যেভাবে তৈরি করবেন
১. কড়াইয়ে সরিষার তেল গরম করুন। কালিজিরা, শুকনা মরিচ ও কাঁচা মরিচ দিন।
২. এরপর আলু দিয়ে লবণ ও হলুদ গুঁড়া ছড়িয়ে ভালো করে ভাজুন।
৩. ঢেকে মাঝারি আঁচে রান্না করুন ১ মিনিট। আলু নরম হলে ও পোস্ত ভালোভাবে মিশে গেলে নামিয়ে গরম ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন মজাদার পোস্ত দিয়ে আলু ভাজি।
গন্ধরাজ লেবু দিয়ে মসুর ডাল
দটি দারুণ সুগন্ধি ও রুচিকর, যা ভাতের সঙ্গে খেতে অসাধারণ লাগে।
উপকরণ
মসুর ডাল ১ কাপ, পানি ৩ কাপ, গন্ধরাজ লেবুর রস ১ টেবিল চামচ (স্বাদ অনুযায়ী), গন্ধরাজ লেবু ২-৩ টুকরা (ঐচ্ছিক), কালো সরিষা আধা চা চামচ, শুকনা মরিচ ২টি,
কাঁচা মরিচ ২টি (ফালি করা), সরিষার তেল ২ টেবিল চামচ, হলদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লবণ স্বাদমতো
যেভাবে তৈরি করবেন
১. ডাল ভালো করে ধুয়ে ৩ কাপ পানির সঙ্গে একটি পাতিলে দিন। হলুদ ও লবণ দিয়ে ঢেকে মাঝারি আঁচে ১০-১৫ মিনিট সিদ্ধ করুন।
২. কড়াইতে সরিষার তেল গরম করুন। শুকনা মরিচ, কাঁচা মরিচ ও কালো সরিষা দিন।
৩. সিদ্ধ করা ডাল কড়াইয়ের মধ্যে দিয়ে নেড়ে দিন। ২-৩ মিনিট ফুটিয়ে নিন। গন্ধরাজ লেবুর রস ও খোসার টুকরা দিয়ে ভালোভাবে মিশিয়ে দিন।
৪. চুলা বন্ধ করে ঢাকা দিন ১-২ মিনিট। এরপর নামিয়ে ভাত বা রুটি সঙ্গে গরম গরম পরিবেশন করুন।
লাউ শাক পোস্ত
উপকরণ
২টি লাউ শাকের ডগা, ২টি মাঝারি আলু লম্বা করে কাটা, ৫০ গ্রাম পোস্ত বাটা, লবণ স্বাদমতো, ৪টি কাঁঁচা মরিচ, পরিমাণমতো সরিষার তেল
যেভাবে তৈরি করবেন
১. লাউ শাক ও আলু কেটে নিয়ে ভালো করে ধুয়ে নিন। গরম পানিতে পোস্ত ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে বেটে নিন।
২. কড়াইতে সরিষার তেল দিয়ে কাঁচা মরিচ, আলু দিয়ে একটু ভেজে নিন। এবার শাক দিয়ে দিন।
৩. চুলার আঁচ কমিয়ে ঢাকা দিয়ে দিন। পানি বেরিয়ে শাক সিদ্ধ হয়ে এলে লবণ দিয়ে কষিয়ে নিন। আলাদা পানি দেওয়ার প্রয়োজন নেই।
৪. আবারও ঢাকা দিয়ে রান্নাটা হতে দিন। এরপর পোস্ত বাটা দিয়ে ভালো করে ফুটিয়ে নিয়ে মাখা মাখা হয়ে এলে নামিয়ে ভাতের সঙ্গে পরিবেশন করুন।
গুগলি (শামুক) ঝাল রেসিপি
গুগলি বা শামুকের ঝাল গ্রামবাংলার একটি জনপ্রিয় পদ। এটি একটু ঝাল-ঝোল স্বাদের হয় এবং ভাতের সঙ্গে খেতে দারুণ লাগে।
উপকরণ
গুগলি (শামুক) ৫০০ গ্রাম, পেঁয়াজ ২টি (কুচি করা), রসুন ৫-৬ কোয়া (বাটা), আদা ১ চা চামচ (বাটা), টমেটো ১টি (কুচি করা), কাঁচা মরিচ ৩-৪টি (ফালি করা), শুকনা মরিচ ২টি, হলুদ গুঁড়া আধা চা চামচ, লাল মরিচ গুঁড়া ১ চা চামচ, ধনে গুঁড়া ১ চা চামচ, জিরা গুঁড়া আধা চা চামচ, গরম মসলা গুঁড়া আধা চা চামচ, সরিষার তেল ৩ টেবিল চামচ, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, লবণ স্বাদমতো
যেভাবে তৈরি করবেন
১. গুগলির খোলস ভালো করে ধুয়ে নিন। ফুটন্ত পানিতে ৫-৭ মিনিট সেদ্ধ করুন। ঠাণ্ডা হলে খোলস ভেঙে ভেতরের অংশ বের করে ভালোভাবে ধুয়ে নিন।
২. কড়াইতে সরিষার তেল গরম করে শুকনা মরিচ ও পেঁয়াজ দিন।
৩. পেঁয়াজ হালকা বাদামি হলে রসুন-আদা বাটা দিয়ে ভালোভাবে ভাজুন।
৪. টমেটো, হলুদ, লাল মরিচ, ধনে ও জিরা গুঁড়া দিয়ে কষিয়ে নিন। এবার গুগলি দিয়ে ভালো করে নাড়তে থাকুন যাতে মসলা ভালোভাবে মিশে যায়। পরিমাণমতো পানি দিয়ে ঢেকে ১০-১২ মিনিট রান্না করুন।
৫. শেষে গরম মসলা, কাঁচা মরিচ ও ধনেপাতা ছিটিয়ে নামিয়ে গরম ভাত বা পরোটার সঙ্গে পরিবেশন করুন।