ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৭ রমজান ১৪৪৬

ঢাকা, মঙ্গলবার ১৮ মার্চ ২০২৫
৪ চৈত্র ১৪৩১, ১৭ রমজান ১৪৪৬

উজ্জ্বল মুখ

notdefined
notdefined
শেয়ার
উজ্জ্বল মুখ

ব্রিটিশরা উপমহাদেশ ছাড়ার পর পঞ্চাশের দশকের মাঠকাঁপানো ফুটবলার ছিলেন আলাউদ্দিন খান ও ধীরেন্দ্র ভাওয়াল। আলাউদ্দিন খান ছিলেন ফরোয়ার্ড আর ধীরেন্দ্র ভাওয়াল গোলরক্ষক। জিমখানা স্টেডিয়ামের নামকরণ করা হয়েছে আলাউদ্দিন খানের নামেই। অবসরের পর আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নুসহ অসংখ্য খেলোয়াড় গড়ে তুলেছেন তিনি।

তাঁদের পরে জেলার ফুটবলের সুনাম বাড়িয়েছেন হাজি কাশেম। এই গোলরক্ষক পূর্ব পাকিস্তান দলে প্রথম সুযোগ পেয়েছিলেন ১৯৭০ সালে। নারায়ণগঞ্জ জেলা দলে সুনাম অর্জনের পর তিনি খেলেছেন মোহামেডান, আবাহনী, ওয়ান্ডারার্স, বিজেএমসি, ভিক্টোরিয়া, ইস্ট এন্ডের মতো ক্লাবে। কিংবদন্তি লেফট আউট আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু পুরো ক্যারিয়ারটাই কাটিয়ে দিয়েছেন আবাহনীতে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছেলে শেখ কামালের আমন্ত্রণেই এসেছিলেন আবাহনীতে। এরপর দেশের অন্যতম সেরা এই ড্রিবলার অসংখ্য প্রস্তাব পেলেও ছেড়ে যাননি আবাহনী। ১৯৮৪ সালে মোহামেডান ১০ লাখ টাকার সঙ্গে একটি গাড়ি দিতে চাইলেও সে প্রস্তাব ফিরিয়ে প্রাণের ক্লাবের সঙ্গে চুক্তি করেন আড়াই লাখ টাকারও কমে! ১৯৮৩, ’৮৪, ’৮৫—এই তিনটি মৌসুমই তাঁর ক্যারিয়ারের সেরা সময়। এ সময়ে যেমন হয়েছেন ক্রীড়া লেখক সমিতির সেরা খেলোয়াড়, তেমনি পেয়েছেন রাষ্ট্রীয় পুরস্কার।
আবাহনীও ভেসেছে সাফল্যে।

১৯৮৩ সালে নেপালের বিপক্ষে তাঁর হ্যাটট্রিক আছে। জাতীয় দলের হয়ে সে সময়ে করা চুন্নুর ২৪-২৫টি গোলই ছিল রেকর্ড। এখন তিনি জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি। গিয়াসুদ্দিন নামে তাঁর এক ‘কাজিন’ও খেলতেন কলকাতা মোহামেডানে।

জাতীয় দলের সাবেক তারকা এসএম সালাউদ্দিন এখন জেলা ফুটবল অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি। অনূর্ধ্ব-১৬ দলের ম্যানেজারও ছিলেন তিনি।  পাশাপাশি মোনেম মুন্নার মতো কিংবদন্তি আর গোলাম গাউস, সম্রাট হোসেন এমিলি, জাকির হোসেন, রবিউল হোসেনের মতো তারকারাও নারায়ণগঞ্জের। মোনেম মুন্না তো বাংলাদেশ ফুটবল ইতিহাসে অমর হয়ে আছেন সর্বকালের সেরা ডিফেন্ডার হিসেবে। ১৯৮৪-৮৫ মৌসুমে মুক্তিযোদ্ধা থেকে ব্রাদার্স ইউনিয়নে যোগ দেওয়া মুন্না সেবারই জাতীয় দলে ডাক পান মাত্র ১৮ বছর বয়সে। ১৯৮৭ সালে আবাহনীতে যোগ দিয়ে আর ক্লাব ছাড়েননি তিনি। আবাহনী-মোহামেডান-ব্রাদার্স টানাটানিতে তাঁর দামটা উঠে গিয়েছিল ৩০ লাখে! তবে ১৯৯১ সালে আবাহনীর সঙ্গে ২০ লাখ টাকার চুক্তি করেও রেকর্ড গড়েছিলেন মুন্না। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে অঙ্কটা অবিশ্বাস্যই ছিল সে সময়। ২০০৫ সালে পৃথিবীর ওপারে পাড়ি জমানো মুন্না খেলেছেন কলকাতার ঐতিহ্যবাহী ইস্ট বেঙ্গলেও। আজও কলকাতার মানুষের কাছে বাংলাদেশের ফুটবল মানে মুন্না; দুই মৌসুম ইস্ট বেঙ্গলের হয়ে এমনই মাঠ মাতিয়েছিলেন তিনি। এ ছাড়া জাতীয় ও ঢাকার ফুটবল মাতিয়েছেন ওয়ালী ফয়সাল, আবদুল্লাহ পারভেজ, মিঠুন চৌধুরী, খোকন দাস, হানিফ প্রধান, দুলাল সাহা, সুজন, তপু বর্মণসহ অনেকে।

দাবায় বাংলাদেশের চতুর্থ গ্র্যান্ড মাস্টার হয়েছিলেন নারায়ণগঞ্জের আবদুল্লাহ আল রাকিব। ২০০৭ সালে গর্বের এই খেতাব অর্জন করেন তিনি। সেই বছর প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন জাতীয় দাবায়ও। ২০০৯ সাল থেকে চারবার অংশই নেননি। ২০০৩ সালে ফিরেই শিরোপা পুনরুদ্ধার করেন আবারও। এ বছর তিনি ওয়ালটন আন্তর্জাতিক রেটিং দাবায় অংশ নিয়েছিলেন নৌবাহিনীর হয়ে। সাড়ে আট পয়েন্ট নিয়ে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হন রাকিবই।

মহিলা আন্তর্জাতিক মাস্টার শামিমা আক্তার লিজা ২০১৩ সালে এশিয়ান জোনাল দাবায় চ্যাম্পিয়ন হয়ে আইএম খেতাব পান। সেই টুর্নামেন্টে শ্রেষ্ঠত্ব ধরে রেখেছিলেন পরেরবারও। জোনাল দাবায় প্রথমবার চ্যাম্পিয়ন হয়েই দেশের প্রথম মহিলা দাবাড়ু হিসেবে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করেন শামিমা।

১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ অলিম্পিক গেমসে (এখনকার বাংলাদেশ গেমস) অংশ নিয়ে দুটি ইভেন্টের দুটিতেই সোনা জেতেন কাজী শাহানা পারভীন। পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি আর। ২২ বছরের ক্যারিয়ারে অনেক প্রতিযোগিতায় ছেলেদের হারিয়েই সোনার পদক জিতেছেন তিনি! জাতীয় শুটিংয়ে ২০টি সোনা, সাতটি রুপা ও ছয়টি ব্রোঞ্জ জিতেছেন শাহানা পারভীন। বড় সাফল্যের শুরু ১৯৯১ কলম্বো সাফ গেমসে ৫০ মিটার থ্রি পজিশনে সোনা জেতা। ১৯৯৩ সালে সাফ গেমসেও জেতেন দুটি সোনার পদক। সে বছর ইসলামিক সলিডারিটি গেমসে পান ব্রোঞ্জ। অলিম্পিকে অংশ নেওয়া দেশের প্রথম মহিলা অ্যাথলেটও তিনি। ১৯৯৯ সালের সাফ গেমসে সাবরিনা ও আঁখির সঙ্গে মিলে থ্রি পজিশনের দলগত সোনা জয়ের পর আর শুটিংয়ে অংশ নেননি শাহানা পারভীন।

আশির দশকে বাংলাদেশের তারকা ক্রিকেটার আতাহার আলী খানের জন্ম নারায়ণগঞ্জে। নারায়ণগঞ্জের প্রিপারেটরি স্কুলের সাবেক এই ছাত্র ১৯ ওয়ানডেতে তিনটি ফিফটিসহ করেন ৫৩২ রান। মিডিয়াম পেসে নিয়েছিলেন ৬ উইকেটও। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ধারাভাষ্যে ‘ভয়েস অব বাংলাদেশ’ হয়ে ওঠা আতহার আলী দায়িত্ব পালন করেছেন জাতীয় দলের নির্বাচকেরও। বাংলাদেশের প্রথম সেঞ্চুরিয়ান হতে পারতেন শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুত্। ১৯৯৯ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে কেনিয়ার বিপক্ষে দুর্ভাগ্যজনকভাবে ৯৫ রানে আউট হয়ে যান তিনি। ২০ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে ৩৬২ আর ৩ টেস্টে এই ওপেনার করেছেন ৯৯ রান। ১৯৯৯ বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে ঐতিহাসিক জয়ের ম্যাচটিতে ৩৯ রান এসেছিল তাঁর ব্যাট থেকে। পেসার শাহাদাত হোসেনও নারায়ণগঞ্জেরই। এই জেলার প্রতিভা অন্বেষণ ক্যাম্প থেকে নজরে আসা শাহাদাত ৩৮ টেস্টে ৭২, ৫১ ওয়ানডেতে ৪৭ আর ছয়টি টি-টোয়েন্টিতে নিয়েছেন ৪ উইকেট। জেলার আরেক পেসার মোহাম্মদ শরীফ জাতীয় দলের হয়ে ১০ টেস্টে ১৪ আর ৯ ওয়ানডেতে নিয়েছেন ১০ উইকেট। তাঁদের পথ ধরে জাতীয় দলে উঠে এসেছেন রনি তালুকদার আর মোহাম্মদ শহীদ। ৫ টেস্টে শহীদের উইকেট ৫টি। একটা মাত্র টি-টোয়েন্টি খেলা রনি তালুকদার দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে অভিষেক ম্যাচটিতে খেলেছিলেন ২১ রানের ইনিংস। ২০০২ সালে একটি মাত্র ওয়ানডে খেলা মাজহারুল হক অকাল মৃত্যুতে এখন পৃথিবীর ওপারে।

সাঁতারে জাতীয় পুরস্কার আছে সেতারা বেগমের। তেমনি অ্যাথলেটিকসে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন সোনারগাঁর মেয়ে লুত্ফুন্নেছা বকুল। ভলিবল জাতীয় দলে খেলেছেন মোহাম্মদ ফারুক, খুকু, আসাদরা। ব্যাডমিন্টনে আলো ছড়িয়েছেন নারায়ণ চন্দ্র ঘোষ, আখতারুজ্জামান নান্টু, এনায়েত উল্লাহ খান, জোলেখা আখতাররা।

প্রাসঙ্গিক
মন্তব্য

সম্পর্কিত খবর

সর্বশেষ সংবাদ