প্রায় এক দশক আগে ২০১৬ সালে ঢাকার কল্যাণপুরের ‘জাহাজ বাড়িতে’ কথিত জঙ্গি আস্তানায় অভিযানের নামে ৯ তরুণকে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে একটি মামলা (মিসকেস) করা হয়েছে।
এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহিদুল হক, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া ও ডিএমপি মিরপুর বিভাগের সাবেক উপকমিশনার (ডিসি) মো. জসীম উদ্দীন মোল্লাকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
আরো পড়ুন
আপিল বিভাগে নিয়োগ পেলেন ২ বিচারপতি
সোমবার (২৪ মার্চ) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল এই আদেশ দেন। ট্রাইব্যুনালের দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
এর আগে পুলিশের এই তিন কর্মকর্তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় রাখার জন্য ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করতে পুলিশের এই কর্মকর্তারা ‘জঙ্গি নাটক’ তৈরি করেছিলেন বলে ট্রাইব্যুনালকে জানান চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। আগামী ৭ মে এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ রাখা হয়েছে।
শুনানি শেষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘২০১৬ সালের ২৫ জুলাই রাজধানীর কল্যাণপুরের জাহাজ বাড়ি নামের একটি বাড়িতে ৯ তরুণকে আটকে রেখে সোয়াত, সিটিটিসিসহ গিয়ে তাদের বাসার মধ্যে গুলি করে হত্যা করে।
পরে জঙ্গি হত্যা করা হয়েছে বলে তারা প্রচার করে।’
আরো পড়ুন
যান্ত্রিক ত্রুটিতে মেট্রো রেল চলাচল বন্ধ
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা জানতে পেরেছে, এই ৯ তরুণকে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বহু আগে গ্রেপ্তার করে এইখানে নিয়ে আসা হয়। কেউ কেউ দুই-তিন মাস ধরে ডিবি হেফাজতেও ছিলেন। সেখান থেকে তাঁদের ধরে নিয়ে রাতে ওই বাসায় জড়ো করা হয়।
পরে রাতের বেলা ব্লক রেইডের কথা বলে সেখানে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা সবাই হাজির হন। সেই লোকদের গুলি করে হত্যা করে জঙ্গি হত্যা করা হয়েছে বলে তাঁরা প্রচার করেন। সে সময় জঙ্গি নাটক নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটি ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করার জন্য ইসলামিক ভাবধারার মানুষদের জঙ্গি নাম দিয়ে হত্যা করা হয়েছে।’
এদিকে জুলাই-আগস্ট গণআন্দোলনের সময় রাজধানীর রামপুরায় ভবনের কার্নিশে ঝুলে থাকা ১৮ বছর বয়সী এক কিশোরকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পুলিশ কর্মকর্তা হলেন চঞ্চল চন্দ্র সরকার ও সাবেক এসি রাজন কুমার সাহাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
পরে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল আগামী ২৮ এপ্রিল এই মামলায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন। আরেক মামলায় মিরপুর এলাকার সাবেক এডিসি এম এম মইনুল ইসলামকেও ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। পরে প্রসিকিউশনের আবেদনে ট্রাইব্যুনাল আগামী ১৮ জুন এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য করেন।
ট্রাইব্যুনালে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলামের সঙ্গে ছিলেন, প্রসিকিউটর আব্দুস সোবহান তরফদার, বি এম সুলতান মাহমুদ, গাজী এম এইচ তামিম, শহিদুল ইসলাম, ফারুক আহমেদ ও মইনুল করিম।