<p>অন্যায়ভাবে কাউকে কষ্ট দেওয়া, দুর্ভোগে ফেলা গুনাহের কাজ। নবীজি (সা.) এ ব্যাপারে তাঁর উম্মতকে সতর্ক করেছেন। বিশেষ করে রাস্তাঘাটে, বাজারে কিংবা যেসব জায়গায় জনসমাগম ঘটে, এসব জায়গায় এমন কোনো কাজ করা উচিত, যা জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করে বহু মানুষকে কষ্টে ফেলবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু মুসা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, তোমাদের কেউ যদি তীর সঙ্গে নিয়ে আমাদের মসজিদে কিংবা বাজারে যায়, তাহলে সে যেন তীরের ফলাগুলো ধরে রাখে কিংবা তিনি বলেছিলেন, তাহলে সে যেন তা মুষ্টিবদ্ধ করে রাখে, যাতে সে তীর কোনো মুসলিমের গায়ে না লাগে। (বুখারি, হাদিস : ৭০৭৫)</p> <p>এই হাদিসের মধ্যে নবীজি (সা.) এমন সব জায়গায় সতর্ক থাকার কথা বলেছেন, যেগুলোতে সাধারণত জনসমাগম বেশি হয়। মসজিদ, বাজার এ দুটোই জনসমাগমের জায়গা, যেখানে তীর খোলা রাখলে মানুষের কষ্ট হবে বিধায় তিনি এ ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরামকে সতর্ক করেছেন। বোঝা গেল যেখানে অনেক জনসমাগম হয়, সেখানে এমন কিছু করা ঠিক নয়, যা মানুষের কষ্টের কারণ হবে। যে কাজটি করেছে, সে বহু মানুষের অভিশাপে অভিশপ্ত হবে, যা তার জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর ব্যাপার।</p> <p>অন্য হাদিসে এ বিষয়ে সতর্ক করতে গিয়ে নবীজি (সা.) বলেন, হুজাইফা ইবনে উসাইদ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি মানুষের চলার পথে কষ্ট দেবে, তার জন্য তাদের অভিশাপ ওয়াজিব হয়ে যাবে। (মুজামুল কাবির) কোনো কোনো হাদিসে তো নবীজি (সা.) সাহাবায়ে কেরামকে রাস্তায় বসতেই নিষেধ করেছন; কিন্তু তারা যখন যৌক্তিক কারণ দেখিয়ে তাদের জরুরি প্রয়োজনের আরজ করেন, তখন নবীজি (সা.) তাদের রাস্তার হক আদায় করে রাস্তায় বসার অনুমতি দিয়েছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু সাঈদ খুদরি থেকে বর্ণিত, মহানবী (সা.) বলেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা ছেড়ে দাও। লোকজন বলল, এ ছাড়া আমাদের কোনো পথ নেই। কেননা এটাই আমাদের উঠাবসার জায়গা এবং আমরা এখানেই কথাবার্তা বলে থাকি। নবী (সা.) বলেন, যদি তোমাদের সেখানে বসতেই হয়, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা বলল, রাস্তার হক কী? তিনি (সা.) বলেন, দৃষ্টি অবনমিত রাখা, কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকা, সালামের জবাব দেওয়া, সৎকাজের আদেশ দেওয়া এবং অন্যায় কাজে নিষেধ করা। (বুখারি, হাদিস : ২৪৬৫)</p> <p>অর্থাৎ একান্ত প্রয়োজনে যদি রাস্তায় কোনো কার্যক্রম করতে হয়, তাহলে পথচারীদের যাতে কোনো কষ্ট না হয়, যে জন্য নবীজি (সা.) তাদের কিছু শর্ত জুড়ে দিয়েছেন। অতএব, প্রতিটি মুমিনের উচিত, রাস্তাঘাটে দুর্ভোগ তৈরি হয়—এমন কাজ থেকে বিরত থাকা।</p> <p>মানুষকে কষ্ট না দেওয়া। বরং সম্ভব হলে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরানোর চেষ্টা করা। মানুষ যাতে নিরাপদে ও স্বচ্ছন্দে রাস্তাঘাটে চলতে পারে, সে পরিবেশ বজায় রাখতে সহযোগিতা করা। এতে মানুষের দোয়া পাওয়া যাবে, আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমা ও কল্যাণ পাওয়া যাবে। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, এক ব্যক্তি রাস্তা দিয়ে চলার সময় কাঁটাদার গাছের একটি ডাল রাস্তায় পেল, তখন সেটি রাস্তা থেকে অপসারণ করল, আল্লাহ তার এ কাজকে কবুল করলেন এবং তাকে মাফ করে দিলেন। (বুখারি, হাদিস : ২৪৭২)</p> <p>মহান আল্লাহ সবাইকে বোঝার তাওফিক দান করুন। আমিন</p>